Home / গল্প / রিকভারি সফটওয়্যার@মেঘ_কুয়াশা_খাদ -নির্মাল্য ঘরামী

রিকভারি সফটওয়্যার@মেঘ_কুয়াশা_খাদ -নির্মাল্য ঘরামী

megh-kuasa-khad-ng

-হঠাৎ চলে গেলে কেন ঋতু? কেন আমাকে একবার-ও জানালে না?
-তীব্র সেই মানসিক যন্ত্রণা আর আমি সহ্য করতে পারছিলাম না ঋষি।
-আমার কথা একবার-ও ভাবলে না। অভিমানভরা গলায় ঋষি বলল, -জান আমি কত খোঁজ করেছিলাম তোমার?
-আমি জানতাম। আমি জানতাম তুমি আমার অনেক খোঁজ করবে। বলতে বলতে মৃদু হাসি ফুটে উঠল ঋতুর ঠোঁটের একপাশে, ঠিক যেদিকটায় তার কৃত্রিম তিলটা বসানো আছে। হাসলেও যেদিকটার চামড়া কুঁচকে যায় না। ‘তাইত’, বলে একটু যেন দম নিল ঋতু। বলল, -তুমি যেন কোনভাবে আমার খোঁজ না পাও, সেই ব্যবস্থা করেই এসেছিলাম।
-কিন্তু দেখলে তো কোনকিছুই নিখুঁত নয়। হাসল ঋষি, -তোমাকে আমি ঠিক খুঁজে বের করলাম। তুমি লুকোতে পারলে না।
-আমি অপেক্ষা করেছিলাম ঋষি। অধীর আগ্রহে ওর দিকে তাকিয়ে ঋতু বলল, -জানতাম তুমি একদিন ঠিক আমাকে খুঁজে বের করবে।
-তাহলে? তীব্রস্বরে ঋষি বলল, -তাহলে আমাকে ছেড়ে দিলে কেন?
-কিন্তু আমি যে আর নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলাম না।
-তাহলে আমাকে নিজের করে নিয়েছিলে কেন?
-ডুবন্ত মানুষ খড়কুটোও আঁকড়ে ধরে। আর আমি তো……
-যাকগে……! তাহলে এখানে কোথায় থাকছ?
-ওই যে, বলে গেস্ট হাউসটার ব্যালকনি থেকে নিচে গভীর মেঘে ঢাকা জায়গাটার দিকে আঙুল তুলে দেখাল ও। একেবারে নিচে, অনেকটা নামতে হবে তোমাকে।
-পারব আমি?
কেমন একটা সন্দেহ ফুটে উঠেছিল ঋষির। নিজের উপরে, নিজের ক্ষমতার উপরে। আসলে ঋতু ওকে ছেড়ে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পর থেকে নিজের উপরে ওর আস্থাটাই হারিয়ে গিয়েছিল। নচেৎ এককালে ওর মানসিক স্থৈর্য যথেষ্টই ছিল।
-তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও ঋতু।
-ভয় পেলে?
-তোমার হাত ধরলে আর ভয় পাই না। মনে পড়ে সেইসব দিনের কথা?
-চলো, তাহলে যাওয়া যাক।
বলে ঋতু তার হাত বাড়িয়ে দিল। সেই বনলতা হাত শক্ত করে চেপে ধরল ঋষি।

 

(২)
মোবাইলটা ঋতুর!
চমকে উঠে নিজের মনেই বলে উঠল ঋষি।
তাছাড়া এটা আর কারুর হতে পারে না। নিয়তি বলে কি সত্যি কোন বস্তু আছে? তা নাহলে এমনটা হয় কী করে?

নামী কোম্পানীর এই পুরানো সেটটা দেখে প্রথম ওর স্মৃতিতে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল। এই ধরনের সেটটা ওর খুব চেনা। তখন সদ্য সদ্য অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ফোনগুলি ভারতের বাজারে আসছে। সেই সময়ে এই সেটটা বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ঋতু এই ধরনের-ই একটা ফোন ব্যবহার করত।

ওর দু’টো মোবাইলের মধ্যে একটা সমস্যা বেশ দিচ্ছিল। ঘুরতে এসে এই উটকো ঝামেলা এসে পড়ায় নিজের উপরেই বিরক্ত হয়ে উঠছিল ঋষি। থেকে থেকেই চার্জ শেষ হয়ে গিয়ে হঠাৎ করে সুইচড অফ হয়ে যাচ্ছিল। অবশ্য দোষ দেওয়াও যায় না। বেশ পুরানো মডেল এটা। বাধ্য হয়ে গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার রামবাহাদুরকে ডেকে মোবাইলটা কোথায় সারাতে দেওয়া যায়, সেটা জিজ্ঞেস করল ও।
-ধারে কাছে সেরকম কোন দোকান নেই সাহেব। মাথা নাড়িয়ে বলল সে, -আছে সেই কালিম্পং শহরে। তাও এক-দেড় ঘণ্টা লাগবে। কিন্তু এখন তো কোন গাড়ি পাবেন না।
-যাহ!
হতাশ হয়ে উঠল ঋষি। এখন গাড়ি পাওয়াও যাবে না। এই মোবাইলের বড় সিম-টা ওর অন্য মোবাইলের মাইক্রো সিম স্লটে ঢুকবে না। কিন্তু মূল ব্যালান্স আছে এই নর্ম্যাল সাইজের সিমটাতেই। এটা দিয়েই ও তার প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। কবে থেকে চেঞ্জ করে এটাকে মাইক্রো সিম করে নেবে বলে ভাবছে, কিন্তু নিজের-ই ঔদাসীন্যে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। এবারে তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে।

-আমার কাছে একটা মোবাইল আছে, নেবেন? রামবাহাদুর ওকে আশ্বস্ত করে বলল। আশার আলো দেখা দিল ওর চোখে-মুখে। মোবাইল ছাড়া আজকাল এক ঘণ্টা থাকাই মুশকিল।
নাঃ, স্বীকার করতেই হবে এই গেস্ট হাউসের লোকজন বেশ আন্তরিক। সে আসতে না আসতেই খাদা পরিয়ে তাকে স্বাগত জানিয়েই ছুটে গিয়ে ওর জন্য গরম গরম দার্জিলিং কফি আর কিছু হ্যাণ্ড মেড কুকীজ এনে হাজির করেছিল রামবাহাদুর।
সাগ্রহে জিজ্ঞেস করল ঋষি, -নেট চালানো যায়?
-নেট চালাতে পারবেন!
ঠিক-ই। ওর আগে বোঝা উচিত ছিল। পাহাড়ের লোকজন বেশ স্টাইল সচেতন। আর তারা গেস্ট-কে কখনই আলতু ফালতু জিনিস দেবে না।

পুরানো, দামী এই মোবাইল সেটটা প্রথমে হাতে পেয়ে এক অদম্য কৌতূহল ওকে পেয়ে বসেছিল। কী এক কৌতূহলে ফোনটার মেমোরি প্রথমে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখল ও। আর হতাশ হল। নাহ! একবারে পরিষ্কার। রামবাহাদুর আর তার পরিবারের কিছু ছবি ছাড়া আর কোন কিছু সেভ করা নেই। কিন্তু কোথাও একটা উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। পুরানো এই ফোনটা কেন জানি মনে হচ্ছে যে রামবাহাদুরের নয়। সেইসময়ে খুব দামী ছিল এই ফোনটা। রামবাহাদুরের পক্ষে এটা ম্যানেজ করা মুশকিল। ভালো করে নেড়ে চেড়ে ফোনটা দেখতে শুরু করল ও।

মোবাইলটায় একটা জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা ছিল। এটা দেখেই একটা ক্লু পেল ও। এই এন্ড টু এন্ড অ্যাপ্লিকেশন-টা দিয়েই না দূরে থেকেও ঋতুর সঙ্গে কত রাত আবেগে ভাসিয়েছে ও! কত ভিডিও চ্যাট হয়েছে। কত মেসেজ, ছবি আদান-প্রদান হয়েছে। তবে ইদানীং নতুন নতুন সব মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন এসে যাওয়ায় এই অ্যাপ্লিকেশন-টা মোবাইল সেটগুলিতে আর খুব একটা ব্যবহৃত হয় না। তবে আগের কনট্যাক্ট নম্বর-টা অ্যাপ্লিকেশনে ঢুকে চেঞ্জ করে না দেওয়া হলে নতুন সিম ঢোকালেও অন্য মোবাইলে পাঠানো মেসেজে পুরানো নম্বরটাই দেখাবে।
একটা চান্স নিয়ে দেখা যেতেই পারে।
ওর সিমটা খুলে এটাতে ভরিয়ে দিয়ে নেট করে নিজের অন্য নম্বরে একটা মেসেজ পাঠাল ঋষি। আর চমকে উঠল। অন্য মোবাইলটার স্ক্রীনে ফুটে উঠল একটি হাস্যময়ী মেয়ের প্রোফাইল পিকচার।
এ যে ঋতু!
সেই পুরানো নম্বর। সেই হাতছানি দেওয়া হাসি-হাসি মুখ। সব এক। শুধু ওদের বিচ্ছেদটা স্থায়ী। আর সব-ই এক…………।

দ্রুথাতে ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে ল্যাপটপের ইউ এস বি পোর্টের সঙ্গে মোবাইলটা জুড়ে দিয়ে রিকভারি সফটওয়্যারটা চালাল ঋষি। কিছুক্ষণ পর একে একে ডিলীট হওয়া সব ফাইল আবার নিজেকে প্রকাশ করতে আরম্ভ করল। বেশ কিছু ভিডিও, ছবি বাস্তব হয়ে ফুটে উঠল পর্দায়।
আর ফাইলগুলো সব-ই ঋতুর!
সহসা যেন ম্যাজিকে, নাটকীয়ভাবে পুরানো সেই দিনগুলো নেমে আসছে গেস্ট হাউসের এই পৃথিবীতে। ওর স্মৃতিতেও ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে মুছে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া পূর্বের সেই দিনগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসছিল। ল্যাপটপের সঙ্গে সঙ্গে ওর মনের রিকভারি সফটওয়্যার-টাও অ্যাক্টিভেট হয়ে গিয়েছিল।

জানালার ধারে বসে কাজ করছিল ঋষি। জানালা দিয়ে চেয়ে দেখল মেঘেরা ক্রমশঃ নিচের উপত্যকা থেকে উড়ে এসে চারিদিকে ছেয়ে গেছে। অন্য পাহাড়ের কালিম্পং শহরের নাগরিক আলোগুলো ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে সাদা-সাদা মেঘের আড়ালে। জানালা দিয়ে মেঘ ক্রমশ ঢুকে পড়ছে ঘরে। আর চেতন জগতটাকে মুছে দিচ্ছে বাস্তব থেকে। একসময় মেঘে ঢেকে গেল চারিদিক। এবং বোধশক্তি………।

দরজা খুলে বারান্দায় চলে এল ও। তাকিয়ে দেখছিল ব্যালকনির নিচে গভীর খাদটার দিকে। কিন্তু ওর মনের যে গভীরতা থেকে এখন নানান ভাবনা-চিন্তা উঠে আসছে, তা এই খাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়!

 

(৩)
-এখন আমাদের কিছুদিন একটু দূরে দূরেই থাকা ভাল। ঋষি গম্ভীর গলায় বলল।
-কিন্তু তোমাকে ছেড়ে থাকতে যে এত কষ্ট হয়, তা কি বোঝ না? ঋতু মোবাইলটা ভাল করে বসিয়ে নিজের দিকে ভাল করে ক্যামেরাটা ফোকাস করে বলল, -রাখ সেই খবর? চেয়ে দেখেছ ভাল করে, কী হয়েছে আমার হাল?
-জানি আমি। কিন্তু এইমুহূর্তে নিজেদেরকে লাইমলাইট থেকে দূরে রাখতে হবে। ঋষি আগের চেয়ের গম্ভীর গলায় বলল, -অহেতুক লোকজন চিন্তা-ভাবনা শুরু করুক, তা আমি চাই না।
-কিন্তু এভাবে আর ক’দিন থাকা যায়? আমার মনের অবস্থা জানো?
-শুধু মন নয়, তোমার শরীরের অবস্থাও জানি। কিছুটা তরল গলাতেই বলল ঋষি। তারপরেই পূর্বের গম্ভীর মুডে ফিরে গেল। বলল, -কিছুদিন সবুর কর।
-জান, বলে ঋষির মনোযোগ মাপতে মাপতে ঋতু বলল, -একটা পাগল শুধু নিজেই পাগল হয় না, সে আর সবাইকেই পাগল বানিয়ে দেয়।
-জানি………। কিন্তু! কিন্তু আমাদের এখন কিছুটা সময় দরকার। বিষয়টা থিতিয়ে যেতে দাও।
-আমি আর পারছি না ঋষি! আর পারছি না। বলতে বলতে কান্নামাখা গলায় ঋতু বলল, -একটু আমাকে শান্তি দাও, একটু সুখ। সেই কবে থেকে আমার মানবী সত্তা যে হাহাকার করছে।
-আর কয়েকটা মাস একটু টেনে দাও ডার্লিং। ঋষি প্রায় মিনতির সুরে বলল, -দেখতে দেখতে সময় কেটে যাবে।
-কিন্তু এই মানসিক চাপ আর আমি নিতে পারছি না। আমি, আমি, আমি মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাব।
-আর কিছুদিন। একটু সবুর কর। প্লিজজ।
-নাকি তুমি আমাকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছ? হঠাৎই যেন ফণা উঁচিয়ে আক্রমণ করে বসল ঋতু। তীব্র গলায় বলল, -সত্যি করে বল তো, আমাকে দূর করে দিতে চাইছ কিনা?
-তুমি কী পাগল হয়ে গেলে? দু’হাত মুখের কাছে এনে হতাশার গলায় ঋষি বলল, -কিভাবে যে তোমাকে বোঝাই।
-এই ফ্ল্যাটটা যেন আমাকে গিলতে আসছে ঋষি! আমি যে আর পারছি না।
-আর কিছুদিন ধৈর্য ধারো ডার্লিং। আর কিছুদিন………। তুমি এতটা সময় আশা হারাও নি, আজ এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে?
-কিন্তু আর যে পারছি না আমি। চেঁচিয়েই উঠল ঋতু। নেহাত দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। নচেৎ লোকজন হয়ত ছুটে আসত।
-এতদিন তুমি শক্তহাতে সামলে এসেছ। ঋতুর মানসিক সক্ষমতা অটুট রাখার জন্য তাকে বাহবা দিয়ে ঋষি বলল, -সব নিজের হাতে ট্যাকল করেছ। আর ক’টা দিন পারবে না?
-ক’টা দিন? উত্তেজিত গলায় ঋতু বলল, -আরে কয়েক মাস! তুমিই তো বললে একটু আগে।
-কথা দিচ্ছি ডার্লিং, ঋষি অনুনয়ভরা গলায় বলল, -পরিস্থিতি অনুকূল বুঝলে আমিই ছুটে আসব। ততদিন একটু সময় দাও আমাদের এই সম্পর্কটাকে।
-এই নির্জনতা, একাকীত্ব, বিষণ্ণতা আর আমি সহ্য করতে পারছি না ঋষি। অনেকদিন আমি সব সহ্য করে এসেছি। এবারে একটু শান্তি দরকার। একটা ছায়া, একটু আশ্রয় দরকার। ওই মানসিক রোগীটার সঙ্গে থেকে থেকে আমি মানসিকভাবে পুরো ক্লান্ত। এখন আমাকে একটু আশ্রয় দাও।
-আরে এ তো আমাদের পারস্পরিক আশ্রয় ঋতু। আমিও যেন আর টানতে পারছি না। আর কিছুদিন………।
-সত্যি করে বলো তো আর কতদিন?
-আরে মহাদেবদা’র ওষুধের ওভারডোজে মৃত্যুটা নিয়ে কেউ এখনও কেউ কোন প্রশ্ন তোলেনি। আর কিছুদিন গেলেই এটা থিতিয়ে যাবে। তখন আর কোন চিন্তা থাকবে না।
-কিন্তু এই ঘরে আমি আর থাকতে পারছি না ঋষি। মনে হচ্ছে আমি যেন পাগল হয়ে যাব। ফাঁকা ঘরটা আমাকে যেন বিদ্রূপ করছে। আমাকে উপহাস করছে প্রতিনিয়ত। আর মনে হচ্ছে মহাদেব যেন আড়াল থেকে সবকিছু নজর করছে, আর মুচকি মুচকি হাসছে।
মনে হয় মোবাইলে নেটওয়ার্ক ঠিক না থাকায় ভিডিও কলিং-র কোয়ালিটি কিছুটা খারাপ হয়ে গেছিল। থেমে থেমে যাচ্ছিল ভিডিও। বেশ কিছু এবড়ো-খেবড়ো রেখা, অবয়ব ফুটে উঠেছিল স্ক্রীনে।
-আরে! আরে! কিরকম যেন আতংকগ্রস্ত গলায় বলে উঠল ঋতু, -আরে তোমার পিছনে কে ওটা?
-কোথায়?
-আরে তোমার পিছনে……সাবধান! চেঁচিয়েই উঠল ঋতু।
ঝটিতি নিজের পিছনে তাকাল ঋষি। কেউ নেই, কোত্থাও কিছু নেই। বদ্ধ ফ্ল্যাটে থাকার কথাও নয়।
-কোথায়? ঋষি অবাক হয়ে বলল, -কিছু তো চোখে পড়ছে না।
-আরে ছিল তোমার পিছনে। ওই, ওই তো……।
কিরকম যেন আঁতকে উঠল ঋতু। আর তারপরেই কানেকশনটা কেটে গেল।
দ্রুত বিছানা থেকে উঠে উৎকণ্ঠিত গলায় ফোন করল ঋষি,
-হ্যালো……।
-মহাদেব এখন তোমার এখানে গেছে। ঠান্ডা গলায় বলে উঠল ঋতু।
-কী উল্টো-পাল্টা বলছ তুমি?
-হ্যাঁ! আমি ঠিক-ই বলছি। কেমন খুশীভরা গলায় বলল ঋতু, -ওকে আমি এখানেই দেখছিলাম। বাথরুমের নির্জনতায়, রান্নাঘরের দরজার কাছে, বেডরুমের আলমারির পাশে। বেশ কিছুদিন ধরেই। তবে মনে হচ্ছে ও বেশ কিছুদিন আর এখানে ফিরবে না।
-কী পাগলের মতন বলছ ঋতু?
নাহ! ঋতু এবারে বিরক্তিকর আচরণ শুরু করেছে।
-আমার জায়গায় থাকলে, ওকে আমার মতন করে বছরের পর বছর সহ্য করতে হলে তুমিও ওকে আমার মতন করেই দেখতে পেতে। কপাল ভাল তুমি শুধু দূর থেকেই পরামর্শ দিয়ে গেলে।
-রাখছি এখন।
-আমার কথাটা শোন। বেশ জোরের সঙ্গে ঋতু জানতে চাইল, -তোমার পক্ষে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়, তাইত?
-সিদ্ধান্ত আমি আগেই নিয়ে নিয়েছি ডার্লিং! গম্ভীর গলায় ঋষি বলল, -তোমাকেই চাই, তবে কিছুদিন ধৈর্য ধর।
-তার আগে নয়?
-না!
-কোনমতেই নয়?
-নাহ! বুঝতে চেষ্টা কর।
-এই তোমার শেষ কথা?
-এটা তোমাকে শুরু থেকেই বলছি। প্লিজ……।
-রাখলাম!
বেশ জোর গলাতেই একথা বলে ফোন কেটে দিল ঋতু। সেদিন আর ফোন করেনি ঋষি। কিন্তু এরপরে আর কোনদিন ঋতুর সঙ্গে ফোনে কথাও হয়নি ওর।

আর আজ এই ঋতুর সঙ্গে দেখা……কথা……। এতদিন পরে।
ঋতুরই আশ্রয়ের দিকে তার হাত ধরে চলতে গিয়ে হঠাৎই চোখ তুলে গেস্ট হাউসটার দিকে চোখ মেলে তাকাল ও। সাদা মেঘ-কুয়াশায় পুরো ঢেকে গেছে তা। ছিন্ন হয়ে গেছে বাস্তবের সঙ্গে তার যোগাযোগ। ওর মনের রিকভারি সফটওয়্যারটা ওকে নিয়ে এসেছিল চেতন-অচেতনের সন্ধিক্ষণে। ফিস ফিস করে বলল ঋষি,
-আমি তৈরী ঋতু। এবারে যাওয়া যাক…..

 

Leave a comment

Check Also

স্বীকারোক্তি

স্বীকারোক্তি- ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য্য

    আজই ফোনটা ডেলিভারি দিয়ে গেলো। অনলাইনে একবার দেখেই ভারি পছন্দ হয়ে গেছিল সমীর …

দর্পণে

দর্পণে – নির্মাল্য ঘরামী    

    -চল, আমি জোরের সঙ্গে বললাম, -ওসব একদম ভাবিস না। তোকে এতদিন পরে পাচ্ছি, …

ফয়সালা

ফয়সালা – নির্মাল্য ঘরামী

  -দেখুন স্যার। বলে সিকিউরিটি গার্ডটি বিজয়ীর দৃষ্টিতে মহাকুলসাহেবের দিকে তাকালো। তার হাতে ধরা ব্যাগটির …

রক্তগোলাপ/ মৌসুমী পাত্র/ পুণ্যতোয়া ধর

রক্তগোলাপ – মৌসুমী পাত্র

  একটা মোটা দড়ি থেকে পাশাপাশি ঝোলানো সারি সারি মৃতদেহ। ছাল ছাড়ানো। গত কদিন ধরেই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *