অবশেষে বর্ষা আসিল । উহা আগের মতো পৃথুলা, মেদবতী নাই। কালের গতিকে স্লিমকায়া হইয়াছে। এই স্লিম, ছিমছাম বর্ষাই আমাদিগের বিশেষ পছন্দ । উহা কার্য সাধনে বাধাসৃষ্টি করেনা। বর্তমান সময়ে মনুষ্য জগৎ কী বিপুল কর্মব্যস্ত তাহা অবলোকন করিয়া স্বয়ং ঈশ্বর তাহার অভিলাষ কিঞ্চিৎ সংবরণ করিয়াছেন। জল ছাড়িতেছেন। তবে মৃদু মৃদু । খেলাইয়া, খেলাইয়া । উহাতে যে বিস্তর মজা তাহা তিনি বিলক্ষণ জানেন । উনি আবার আনন্দ বা মজা না পাইলে কোন কাজ করিতে চাহেন না । ঠাকুরমশাই তো কবেই গাহিয়াছেন, “ তাই তোমার আনন্দ আমার পর, তুমি তাই এসেছ নীচে…..”। তবে ইহাতেও কিঞ্চিৎ গেরো থাকিয়া গিয়াছে। ইহা কী বর্ষা? সত্য সত্যই বর্ষা ?? আবহ আপিসের বড় কর্তাও হলফ করিয়া তাহা বলিতে পারিবেন না। কারণ বর্ষাকে ভরসা নেই । উহা বর্ষার মুখোশধারী নিম্নচাপও হইতে পারে । তবে আমাদের অত শত বিশ্লেষণ করিয়া লাভ নাই। বৃষ্টি পড়িলে বর্ষা, না পড়িলে গ্রীষ্ম । সিধা নিয়ম। বর্তমান পৃথিবীতে শুধু গ্রীষ্মেরই খতু বৈচিত্র্য চলিতেছে । কবি ফুল না ফুটিলেও কল্পনার চক্ষুতে বসন্তকে অবলোকন করিয়া থাকেন কিন্তু আমরা স্থুল বুদ্ধির মনুষ্য গা না ভিজিলে বর্ষা বলিব কেমন করিয়া? তবে সাবধান! আবেগ বিহ্বল হইয়া কিশোর কিশোরীদের কাগজ তরণী জলে ভাসাইতে প্রেরণা জোগাইবার ভুল করিবেন না। ইহাতে ত্রিবিধ ব্যারামের সম্ভাবনা আছে। প্রথমত, আপনাদের প্রগলভতায় কিশোরকুল বিরক্ত হইতে পারে । উহারা আপনার মত আনপ্র্যাকটিক্যাল নহে। দ্বিতীয়ত – বর্তমান বর্ষায় সঞ্চিত জলধারা আগের মত বেগবান নাই । উহা খড়কুটা ভাসাইতে পারে না, তরণী তো দূর অস্ত। তৃতীয়ত – কিশোরকুল, শিশুকুলকে বোঝাইবার চেষ্টা করুন কতশত বৃক্ষের শবদেহের উপর একটি কাগজকল নির্মিত হয়। নতুবা পরিবেশ রক্ষকদের নিকট হইতে বীভৎস তিরস্কার অনিবার্য। এ.বি.পি. আনন্দে সান্ধ্য সভাও বসিয়া যাইতে পারে । ঘন্টা খানেক সঙ্গে নারদ, জমলে এবার উঠবে পারদ!
পরিশেষে আরও একটি কথা না বলিলেই নয় -বর্ষা আসিয়াছে বলিয়া লালসার জিহ্বাখানি যেন লকলকাইয়া না ওঠে। রক্তচাপ মাপাইয়া লন, ট্রাইগ্লিসারাইড, ক্লোরোস্টেরলাদি পরীক্ষা করিয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ লইয়া তবেই তেলেভাজার দিকে হস্ত প্রসারণ করিবেন । তবে মানস ভোজন চলিতে পারে, তাও যেন উদ্দাম না হইয়া যায়। না জলে ভিজিবেন, না তেলে মজিবেন। কারণ বর্ষাকে, আগেই বলিয়াছি, ভরসা নাই!
……০……