Home / ছোটদের গল্প / পুটকি আর ঝুটকি -মৌসুমী পাত্র

পুটকি আর ঝুটকি -মৌসুমী পাত্র

পুটকি আর ঝুটকি। দুই পুতুল। গলায় গলায় ভাব তাদের মধ্যে। অবশ্য মান অভিমানের পালা যে একেবারে চলে না, তা নয়। ঝিকু তখন দুজনকেই আচ্ছাসে ধমকধামক দিয়ে ভাব করিয়ে দেয়।

ও হো! এই দ্যাখো! বলতেই ভুলে গেছি। ঝিকু কে, তাইতো? ঝিকু হল পুটকি আর ঝুটকির গার্জেন। এই সবে চার পেরিয়ে পাঁচে পা দিয়েছে। তবে ঝিকুর কাছে ভুলেও যেন ওর বয়স জানতে চেও না। অমনি চোখ বড়ো বড়ো করে বলে দেবে, “বায়ো কি তেয়ো, মা বয়ে, আয়ো কম।”

putki-ar-juthki-1-mp

তা দেখতে গেলে, ঝিকুর তত্ত্বাবধানে পুটকি- ঝুটকির দিন কাটছে মন্দ না। রোজ রাতে ঝিকু তাদের একটা ছোট্ট লেপের তলায় ঘুম পাড়িয়ে দেয়, আর তার সঙ্গে গান শোনায়, “ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি মোদের বাড়ি এসো, খাট নেই পালং নেই, সোফায় তুমি বসো।” সকালে হলেই দুজনকে দুটো বই ধরিয়ে দিয়ে গম্ভীর গলা করে বলে, “পড়তে বসো।”
এখন সেদিন সকালে পুটকি আর ঝুটকির ঘুম ভেঙ্গে গেছে ঝিকুদের খাবার টেবিলের কথাবার্তায়। অমনি কান খাড়া করে শুনতে থাকে দুজনে।
ঝিকুর মা বলে, “ঝিকু, তুই কিন্তু একদম দেরি করবি না। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিবি। গাড়ি বলা আছে।”
ঝিকুর গলা পাওয়া যায়, “আমাকে তৈলি কলে দাও।”

পুটকি আর ঝুটকি নিজেদের মধ্যে একটু চোখাচোখি করে নেয়। তার মানে ঝিকুদিদির মা এখুনি ঝিকুদিদিকে তৈরি করে দিয়ে, নিজেরাও তৈরি হয়ে বেরিয়ে যাবে। তারপরই ওদের মজা। ঝিকুদিদি বেরিয়ে গেলে ওরা নিজেদের মত খেলবে, গাইবে, নাচ করবে, হইহই করবে। আর তারপর ঝিকুদিদিদের ফেরার আওয়াজ পেলে সুবোধ বালিকার মত ঘুমিয়ে পড়বে।
একটু পরেই ঝিকু ওদের ঘরে এল। এসেই চোখ পাকিয়ে পুটকি-ঝুটকিকে বলল, “শোন, আমি মা-বাবার সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছি। তোরা কিন্তু লক্ষ্মী মেয়ের মত থাকবি। একটুও দুষ্টুমি করবি না। দুজনে মিলে চুপচাপ শুয়ে ঘুমোবি। আর এখানে থালায় খাবার রেখে যাচ্ছি, খিদে পেলে দুজনে খেয়ে নিস।

এই বলে আরো একবার পুটকি-ঝুটকিকে ভালোভাবে থাকতে বলে ঝিকু নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেল। একটু পরেই সদর দরজায় তালা দেবার আওয়াজ পাওয়া গেল আর তার খানিক পরেই ঝিকুদের গাড়ি ছাড়ার শব্দ পাওয়া গেল।

কান খাড়া করে সব শুনছিল পুটকি আর ঝুটকি। গাড়ির আওয়াজ মিলিয়ে যেতেই ওরা দুজনে মিলে নামল খাট থেকে। নেমেই দুজনে একদফা নেচে নিল। তারপর পুটকি বলল, “ঝুটকি, চল। বসার ঘরে গিয়ে সোফায় গড়াগড়ি খাই বরং।” ঝুটকি বলল, “সেই ভালো।”

ওরা দুজনে মিলে সোফার ওপর নাচানাচি করল কিছুক্ষণ। তারপর এ খেলাটাও পুরোনো হয়ে গেল। ঝুটকি বলল, “ঝিকুদিদি থাকলেই বরং ভালো হত রে, পুটকি। ওই খেলাত আমাদের। নিজেদের আর এত ভাবতে হত না।”

পুটকি বলল, “সে ঠিকই বলেছিস। চল, আমরা বরং এক কাজ করি। গোলুকে ঘুম থেকে তুলি।”
গোলু একটা গোদা টেডি বিয়ার। সারাদিন শুয়ে থাকে, নাহয় বসে বসে ঝিমোয়। ঝিকু কদিন আগেই রামায়ণের গল্প শুনেছে তো, তাই ইদানীং ওকে কুম্ভকর্ণ বলেই ডাকে।
তা কুম্ভকর্ণ, থুড়ি, গোলু নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছিল, এমন সময় পুটকি আর ঝুটকি এসে তাকে নিয়ে মহা টানাটানি শুরু করে দিল। গোলু যত বলে, “ওরে, থাম, থাম, আমি আর একটু ঘুমিয়ে নিয়েই উঠছি”, ওরা দুজনে মিলে ততই ঠেলাঠেলি করতে থাকে। শেষে বাধ্য হয়েই গোলু উঠল। উঠেই একবার গা ঝাড়া দিয়ে গোলু বলল, “আমি দাঁত মাজব।” ঝুটকি মিছিমিছি খানিকটা জল এনে দিল। গোলু তাই দিয়ে দাঁত মেজে মুখ ধুয়ে ফেলল। এরপর গোলু বলল, “আমার খুব খিদে পেয়েছে। আমি খাব।” পুটকি তখন ওদের জন্য ঝিকুদিদি যে খাবার রেখে গিয়েছিল, তাই এনে গোলুকে দিল।

খেয়েদেয়ে চাঙ্গা হয়ে গোলু বলল, “আমি এবার কুম্ভকর্ণ হয়ে গেছি। আমি যুদ্ধে যাবো।”
বলেই গোলু বিকটসুরে গান ধরল, “যুদ্ধে যাবো, যুদ্ধে যাবো, যুদ্ধে যাবো রে… আমি যুদ্ধে গিয়ে চা-বিস্কুট খাবো রে…”
বলতে বলতে শরীর ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে গোলু তথা কুম্ভকর্ণ চলল যুদ্ধক্ষেত্রে। যুদ্ধক্ষেত্র মানে খাবার টেবিল। লড়াইয়ের গান গাইতে গাইতে গোলু তথা কুম্ভকর্ণ সেখানে এসে দেখে, ছোট ছোট একগাদা পিঁপড়ে এসে টেবিলের ওপর ভিড় জমিয়েছে। তাই দেখেই গোলু নাকিসুরে বলতে শুরু করেছে, “না, না, আমি যুদ্ধ করব না। আমার কান কটকট করছে, পেট ভুটভুট করছে, আমার দাঁত কনকন করছে, আমার নাক ফুরফুর করছে। আমি যুদ্ধ করবোঁ না, আমি বাঁড়ি যাঁবোঁ।” পুটকি-আর ঝুটকি কত বোঝাল যে যুদ্ধে এসে লড়াই করতে হয়, পালানো চলে না। বিশেষ করে যে কুম্ভকর্ণ হয়, তার তো আরোই। কিন্তু গোলুকে কিছুতেই রোখা গেল না। সে সটান পিঠটান দিয়ে বিছানায় এসে, আবার… ধপাস!

পুটকি আর ঝুটকি কী করে? কিছুক্ষণ কিতকিত খেলল, তারপর খানিক ‘আমপাতা জোড়া জোড়া’ খেলল। খেলতে খেলতেই ওদের দুজনের হাই উঠতে থাকল। পুটকি বলল, “ঝুটকি!” ঝুটকি বলল, “পুটকি!”
পুটকি বলল, “চল, ঘুমোই বরং।” ঝুটকি বলল, “তার আগে সব গুছিয়ে রাখি।”
যেখানে যা এলোমেলো হয়েছিল, দুজনে মিলে সব গুছিয়ে রাখল। তারপর গলা জড়াজড়ি করে ঠিক যেভাবে ঝিকু ওদের শুইয়ে গিয়েছিল, সেভাবেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

ঝিকু যখন বিকেলবেলায় ফিরল, তখন পুটকি-ঝুটকি ঘুমিয়ে কাদা। ঝিকু হাত-পা ধুয়ে জামাকাপড় বদলে ওদের ঘরে এসে দেখল, পুতুলের থালায় একটুও খাবার পড়ে নেই। সব শেষ। আর পুটকি-ঝুটকি অকাতরে ঘুমোচ্ছে। ঝিকুও সারাদিন ধরে ঘোরাঘুরি করে খুব ক্লান্ত হয়ে ছিল। সেও বিছানায় উঠে পুটকি-ঝুটকিকে জড়িয়ে ধরে পরম আরামে ঘুমিয়ে পড়ল।

Leave a comment

Check Also

শিল্পী- রিমিল জানা

পরীক্ষা দিলেন বাঘু- মৌসুমী পাত্র

(শিয়ালনীর পাঠশালায় প্রচুর মজাদার ব্যাপার স্যাপার চলে, যার প্রথম হদিশটা দিয়েছিলাম ‘বাগে এলো বাঘু’ গল্পে। …

ওযোধ্যা পাহাড়ে বাঘু

অযোধ্যা পাহাড়ে বাঘু – মৌসুমী পাত্র

(শিয়ালনীর পাঠশালায় প্রচুর মজাদার ব্যাপার স্যাপার চলে, যার প্রথম হদিশটা দিয়েছিলাম ‘বাগে এলো বাঘু’ গল্পে। …

শিয়ালনী কুপোকাত

শিয়ালনী কুপোকাত- মৌসুমী পাত্র

বর্ষা বিদায় নিয়েছে। আকাশে সোনা সোনা রঙের রোদ্দুর। সাদা সাদা মেঘ নীল আকাশে হামাগুড়ি দিয়ে …

বাঘু হলেন মনিটর

বাঘু হলেন মনিটর- মৌসুমী পাত্র

  পাঠশালার পোড়োগুলো বড্ডো ঝামেলা পাকাচ্ছে ক’দিন ধরেই। শিয়ালনী ক্লাস থেকে একটু উঠলেই চিৎকার, চেঁচামেচি, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *