Home / প্রবন্ধ / এক পটুয়া চিত্রশিল্পীর কথা – রঞ্জন চক্রবর্ত্তী

এক পটুয়া চিত্রশিল্পীর কথা – রঞ্জন চক্রবর্ত্তী

এক পটুয়া শিল্পী
যামিনী রায়

 

বিশ্ববিখ্যাত ফরাসী চিত্রশিল্পী Henry Matisse একবার মন্তব্য করেছিলেন – “You must forget all your theories, all your ideas before the subject. What part of these is really your own will be expressed in your expression of the emotion awakened in you by the subject.” বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এই শিল্পীর সঙ্গে একমাত্র যে ভারতীয় শিল্পীর তুলনা করা যেতে পারে তিনি হলেন যামিনী রায়। ১৯৭৬ সালে ভারত সরকার যে নয়জন শিল্পীর কাজকে জাতীয় সম্পদ বলে ঘোষণা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে যামিনী রায় অন্যতম।

বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় চিত্রশিল্পের আকাশে যামিনী রায় স্বকীয়তার বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। ১৮৮৭ সালে বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। ১৯০৩ সালে মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি কোলকাতার ‘Government School of Art’ নামক শিল্পশিক্ষার সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। ভারতীয় চিত্রশিল্পে আধুনিকতার দিশারী শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন এই প্রতিষ্ঠানের সহ-অধ্যক্ষের পদে আসীন ছিলেন। যামিনী রায় ছিলেন অবনীন্দ্রনাথের ছাত্র। পাঁচ বছর পর ১৯০৮ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি Fine Arts-এ ডিপ্লোমা লাভ করেন এবং শিল্পীজীবন শুরু করেন।

শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথাগত শিক্ষালাভ করার বছরগুলিতে যামিনী রায় ক্ল্যাসিকাল ইউরোপীয় পদ্ধতিতে Landscape ও Portrait উভয়বিধ আঁকার পদ্ধতিই রপ্ত করেছিলেন। সেই সময় এই ইউরোপীয় পদ্ধতিতেই ছবি আঁকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া হত। সম্ভবত এইজন্যই বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের গোড়ার দিকে তাঁর অঙ্কনশৈলীতে পশ্চিমী রীতির প্রভাব বেশী মাত্রায় প্রকট ছিল। শিল্পীজীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে তিনি অনেকটা যেন ‘post-impressionist’ ঘরানার অনুসারী ছিলেন। একইসঙ্গে তাঁর উপর ‘Bengal School’-এর প্রভাবও পড়েছিল। শুরুর দিনগুলোয় তিনি নিসর্গচিত্র, অবয়ব বা প্রতিকৃতি অঙ্কনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট মুন্সীয়ানার পরিচয় রেখেছিলেন; একথা মেনে নিলেও বলতে হয় যে তখন তাঁর রেখা ছিল দুর্বল এবং রঙ ব্যবহারে ভাবপ্রবণতা বেশী প্রাধান্য পেত। চিরাচরিত ইউরোপীয় ধারায় শিক্ষিত হওয়ার ফলে তাঁর রঙের ব্যবহারে স্বকীয়তার অভাব ছিল, যেমনটি তাঁর ‘Bengal School’-এর অন্যান্য সতীর্থদের মধ্যেও দেখা যায়। তাছাড়া ভাবের আধিক্যও তাঁর ছবির কাঠামোকে কিছুটা দুর্বল করেছিল। সংক্ষেপে বলতে গেলে তখনও পযন্ত তাঁর কাজে স্বকীয়তার বৈশিষ্ট্যের অভাব ছিল।

শিল্পীজীবনের সূচনাপর্বের কাজে এইসব ত্রুটি থাকা সত্বেও সেই সময়ে আঁকা বেশ কয়েকটি ছবির মধ্যে রেখার ঋজুতা তাঁকে অনেকের ভিড়ে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়। তখন তিনি যে কাজগুলি করেছিলেন পদ্ধতিগতভাবে সেগুলিতে কোন ত্রুটি ছিল, কিন্তু মনের দিক থেকে তিনি কোনও উৎসাহ পাচ্ছিলেন না। আসলে যামিনী রায় শিল্পশিক্ষার প্রথাগতপদ্ধতির প্রভাব থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে চাইছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন ছবি আঁকার ক্ষেত্রে সমসাময়িক অন্যান্য শিল্পীদের থেকে স্বতন্ত্র ধারা তৈরী করতে হলে তাঁকে সর্বাগ্রে নিজস্ব শিল্পরীতি উদ্ভাবন করতে হবে। এবং তা করতে হলে ছবির যে মূল উপাদানগুলির উপর বিশেষভাবে জোর দিতে হবে সেগুলি হল রঙ (line), রেখা (colour) এবং রঙের আমেজ (tone)। মনে রাখতে হবে যামিনী রায় ইউরোপীয় শিল্পজগতের আধুনিকতাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সম্যকরূপে পরিচিত ছিলেন, বিশেষ করে পাবলো পিকাসোর অঙ্কনশৈলী দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়োছিলেন। পাশাপাশি জাপানের শিল্পীদের বাস্তববাদের নকল করে ছবি আঁকার প্রবণতা থেকেও তিনি মুক্ত হতে চেয়েছিলেন।

ছবিতে রেখার distortion এবং stretchability পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করা অবশ্যই কৃতিত্বের পরিচায়ক, কিন্তু তা করার ক্ষেত্রে যামিনী রায় ঝুঁকলেন দেশীয় রীতির দিকে। বাংলার লোকশিল্পের বৈশিষ্ট্যগুলির প্রতি তাঁর আগ্রহ যত বাড়ছিল ততই তিনি পূর্বের প্রথানুগ শিক্ষা থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছিলেন। ১৯২৫ সাল নাগাদ তিনি কালীঘাটের পটুয়াদের কাজের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। কালীঘা়টের পটুয়াদের চিত্রাঙ্কন শৈলীর বৈশিষ্ট্য ছিল মিলের কাগজের ওপর তুলির ঋজু টান এবং তার সঙ্গে মানানসই প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার। ছবি আঁকার এই বিশেষ শৈলীর উদ্ভব হয়েছিল কালীঘাটের মন্দিরের সংলগ্ন অঞ্চলে। পটুয়াদের ছবির প্রধান উপজীব্য বিভিন্ন পৌরণিক দেবদেবী ও কিংবদন্তীর নানা চরিত্র। তার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাবলীও তাদের তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠত।

যামিনী রায় যে কালীঘাটের পটুয়াদের চিত্রশৈলীর সহজ সরল আবেদন তিনি অন্তরে গ্রহণ করেছিলেন তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। কিন্তু নিজের কাজে তিনি এই শৈলী অনুসরণ করলেন কীভাবে? বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে গেলে বাহ্যিক জৌলুস ও চাকচিক্য পরিহার করে আমাদের ছবির একেবারে মূল উপাদানের দিকে যেতে হবে। যামিনী রায় নজর দিলেন রেখার দিকে। কালীঘাটের পটুয়াদের চিত্রশৈলী অনুসরণে তাঁর রেখার গতি জটিল থেকে ক্রমে সরল এবং ঋজু হল। তাঁর তুলির টান হল আরও দ্রুত, ফলে তিনি জীবনের বিভিন্ন জটিল মুহুর্তের অভিব্যক্তিগুলি নিজের মত করে ছবির ভাষায় প্রকাশ করতে সক্ষম হলেন। তবে এটা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে এখানেই থেমে গেলে চলবে না, সিদ্ধিলাভ এখনও দূরে। অতএব কালীঘাটের পটুয়াদের থেকে প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করার পর কলকাতা ছেড়ে তিনি পা বাড়ালেন গ্রামের দিকে, উদ্দ্যেশ্য গ্রামের শিল্পীদের আঁকার কৌশল আত্মস্থ করা।

গ্রামবাংলার পটচিত্রের শিল্পীদের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে মিশলেন, কাছ থেকে দেখলেন তাদের কাজ। সেই সব চিত্রকরদের অঙ্কনশৈলী তিনি মনোযোগ সহকারে অনুধাবন করলেন এবং আত্তীকরণ করলেন। এই অঙ্কনরীতি একেবারে দেশজ, এর মধ্যে কোনওরকম কৃত্রিমতা নেই। এতদিন ধরে তিনি ঠিক যা চাইছিলেন এবার তা পেয়ে গেলেন। ফলে বাংলার গ্রামের চিত্রকরদের নিজস্ব চিরাচরিত অঙ্কনশৈলীর প্রভাব তাঁর কাজের মধ্যে অনিবার্যভাবে ফুটে উঠল। তিনি শিখলেন গোলাকার রেখা অঙ্কনের কৌশল, শিখলেন ছবির মূল অবয়বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত  উন্নত এবং ঋজু রেখা আঁকার ক্ষেত্রে দ্রুতগামী তুলির আঁচড় ব্যবহারের পদ্ধতি, শিখলেন কীভাবে রঙের আমেজ গোটা ছবিতে ছড়িয়ে দিতে হয়। সর্বোপরি তাঁর ছবিতে যেভাবে গ্রামের চিত্রকরের স্বভাবজ সরলতার প্রকাশ ঘটল শিল্পীজীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত সেটি ছিল অন্যতম চরিত্রলক্ষণ। তিনি সাঁওতাল উপজাতির মানুষদের কাছেও বারবার ছুটে গেছেন, তাদের শিল্পরীতিও অনুধাবন করেছেন।

যামিনী রায় কিন্তু অন্ধভাবে অনুকরণ করেন নি, গ্রামবাংলার চিত্রশিল্পীদের চিরকালীন শিক্ষার নির্যাসটুকুই কেবল অন্তর থেকে গ্রহণ করেছিলেন। এই খাঁটি দেশীয় চিত্রাঙ্কণ রীতি আত্তীকরণের পর দুটি সমান্তরাল চিন্তাধারা তাঁর শিল্পীমানসে যুগপৎ ক্রিয়াশীল ছিল। প্রথমত, তিনি দেশীয় শিল্পরীতি অবলম্বন করে ছবি আঁকার মধ্যে নিজের আত্মপরিচয় খুঁজে পেলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি সর্বশ্রেণীর শিল্পরসিকদের কাছে এই শিল্পরীতি পৌছে দেওয়ার তাগিদ মন থেকে অনুভব করলেন। এখন তিনি ইউরোপীয় ঘরানার প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে নিজস্ব অঙ্কনশৈলীতে দৃঢ় প্রত্যয়ে স্থির, তাঁর প্রেরণা সর্ব অর্থে খাঁটি ভারতীয়।

বিদেশী পদ্ধতি থেকে একেবারে দূরে সরে গিয়ে যামিনী রায় বিশুদ্ধ ভারতীয় ঘরানার চিত্রকলার শৈলীকে আত্মস্থ করে ছবি আঁকা শুরু করলেন। রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি ভুসোকালি, মাটি, গাছ-গাছড়া, লতাপাতা, বীজ, পাথরের গুঁড়ো প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ দিয়ে প্রস্তুত করা রং ব্যবহার করতে আরম্ভ করলেন। মোটামুটিভাবে ১৯৩০ সাল নাগাদ তিনি ক্যানভাস ব্যবহার করাও ছেড়ে দিলেন, তার পরিবর্তে কাপড়, কাঠ, চুনমাখানো কাঠ প্রভৃতি দেশীয় বস্তুর উপর ছবি আঁকা আরম্ভ করলেন। এইভাবে সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরী করা রঙ ব্যবহার করে কাপড় বা কাঠের উপর ছবি আঁকার কৌশলে নিঃসন্দেহে বৈপ্লবিক বলা চলে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলল রঙ নিয়ে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই পদ্ধতি আদ্যন্ত ভারতীয়, এতে কোনপ্রকার বিদেশী রীতির প্রভাবের লেশমাত্র নেই।

১৯৩৫ সালে সর্বভারতীয় ‘Academy of Fine Arts’-এর প্রদর্শনীতে যামিনী রায়ের ‘পুত্রের সেতুপার সাহায্যকারী মা’ ছবিটি সব বিচারকদের বিচারে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পায়। কলকাতায় ‘British India Street’-এ ১৯৩৮ সালেতাঁর প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী হয় এবং সারা ভারতে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৪৬ সালে লণ্ডনে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয় এবং বিশ্বের দরবারে তিনি একজন বরেণ্য শিল্পী হিসেবে বন্দিত হন। এরপর ১৯৫৫ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে তাঁর চিত্রের যে প্রদর্শনী হয়েছিল সেখানে তাঁর অঙ্কনশৈলী উচ্চপ্রশংসিত হয় এবং সারা দুনিয়ার শিল্পরসিকবৃন্দ তাঁকে একজন মহাশক্তিধর শিল্পী হিসাবে বরণ করে নেন।

ছবি আঁকার যে রীতি যামিনী রায় উদ্ভাবন করেছেন সেটা তাঁর একেবারে নিজস্ব, যার সঙ্গে মিশে আছে বিশুদ্ধ ভারতীয় ভাবধারা সঞ্জাত শিল্পবোধ। কালীঘাটের পটুয়াদের অঙ্কনশৈলী, টেরাকোটার মন্দিরের গায়ের কাজ বা গ্রামবাংলার চিত্রকরদের সনাতন চিত্রাঙ্কন পদ্ধতি – এ সবই ভারতীয় ঐতিহ্যের পরিচায়ক। যত দিন এগিয়েছে তাঁর অঙ্কনশৈলী তত পরিণত হয়েছে, আবেগের প্রকাশ পরিমিত হয়েছে এবং ভাবের প্রকাশ সূক্ষ্মতা পেয়েছে। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে পরিভ্রমণ করলেও মোটামুটিভাবে তিনটি ক্ষেত্র থেকে তিনি ছবির বিষয় নির্বাচন করেছেন। প্রথমত পৌরাণিক ও ধর্মীয় বিষয় – যেমন শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্য, রাধাকৃষ্ণ, যীশুখ্রীষ্ট, গণেশ, শিব-পার্বতী, গণেশজননী, নৌকাবিলাস, অশ্বপৃ্ঠে সাম্রাজ্ঞী, রামায়ণ, বিভিন্ন দেবদেবী প্রভৃতি। দ্বিতীয়ত গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন – যেমন বিভিন্ন ভঙ্গীতে মা ও শিশু, বিড়াল, দুই বোন, গ্রাম্য নারী ও পুরুষ প্রভৃতি। তৃতীয়ত সাঁওতাল উপজাতির মানুষের জীবনের নানা ঘটনা – যেমন বাদনরত সাঁওতাল পুরুষ, নৃত্যরত অবস্থায় সাঁওতাল, সাঁওতাল মা ও শিশু প্রভৃতি।

 

এক পটুয়া চিত্রশিল্পীর কথা

 

চিরায়ত গ্রামীণ লোকশিল্প ও ভারতীয়ত্বের প্রতি টান যামিনী রায়কে শিল্পসৃষ্টিকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। মূলত সরল অথচ ঋজু রেখার প্রতি তিনি জোর দিয়েছেন এবং রেখার গতি দ্রুত করার দিকেও মনোযোগী হয়েছেন বটে, কিন্তু সেখানেই থেমে যান নি। উল্লম্ব রেখা নিয়েও কখনও কখনও তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন, কিন্তু ঘুরেফিরে আবার সেই গোলাকার রেখার শৈলীতেই ফিরে গেছেন। কিন্তু এরকম হল কেন? এর কারণ মানুষের অবয়ব আঁকার ক্ষেত্রে এই উপায়টিই ছিল তাঁর সবথেকে পছন্দসই। অবয়বের সঙ্গে যুক্ত গোলাকৃতি রেখা অঙ্কণের জন্য দ্রুতগতির তুলির টান দিয়ে চরিত্রগুলি ফুটিয়ে তোলার পদ্ধতিকে তিনি প্রায় নিখুঁত করে তুলেছিলেন। এই কৌশল তিনি শিখলেন কোথা থেকে? আসলে তুলির উত্তরমুখী গোলাকার টানের সাহায্যে অবয়ব চিত্রিত করার এই কৌশল তিনি বাংলার গ্রামের পটুয়াদের কাজ খুব কাছ থেকে দেখে আয়ত্ত করেছিলেন। দেশীয় ঘরানার লোকশিল্প থেকে সংগৃহীত উপাদান ও অঙ্কনশৈলীকে আধুনিক ভারতীয় চিত্রশিল্পে যুগোপযোগী করে প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। যামিনী রায় এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন শিল্পে মৌলিকতা নিয়ে আসার জন্য, লোকশিল্পের চিরায়ত ধারাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাঁর সংগ্রাম আজীবন অব্যাহত ছিল। তাঁর কাজের সৃষ্টিমূলক সত্তা ও সৃজনশীলতা প্রাণশক্তিতে ভরপুর, তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে লোকশিল্পের ঐতিহ্য।

যামিনী রায় বহুতর বিষয়কে রং ও রেখায় ধরেছেন, কিন্তু এই বিষয়গুলি কখনই বর্ণনাত্মক নয়। বরং তিনি চেষ্টা করেছেন বিষয়গুলিকে যতটা সম্ভব সরলভাবে উপস্থাপন করতে। প্রকৃতপক্ষে তিনি সহজ-সরলভাবে ছবি আঁকতে প্রয়াসী হয়েছিলেন যাতে মানুষ সহজে তা বুঝতে পারে এবং মন থেকে শিল্পের রসগ্রহণ করতে পারে। সব জটিলতা ও তত্ত্বের কচকচিকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে তিনি সহজবোধ্য হতে চেয়েছিলেন, ঠিক যেরকম Henry Matisse একদা বলেছিলেন – “I have always sought to be understood and, while I was taken to task by critics or colleagues, I thought they were right, assuming that I had not been clear enough to be understood.” মাতিস যেমন ফরাসী শিল্পের ঐতিহ্যকে রং ও রেখার সাবলীলতার দ্বারা ছবিতে ধরতে চেয়েছিলেন এবং চিত্রশিল্পে আধুনিকতার অন্যতম দিশারী রূপে গোটা বিশ্বে বন্দিত হয়েছেন, একই ভাবে যামিনী রায়ও লোকশিল্পের চিরায়ত আঙ্গিকে রং ও রেখার সপ্রতিভ ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতীয় চিত্রশিল্পে আধুনিকতার আবাহন করেছেন। সেদিক থেকে তাঁকে মাতিসের সঙ্গে তুলনা করা যায়।

শিল্পী যামিনী রায়ের ছবির ভাষা ও ভঙ্গী একেবারে তাঁর নিজস্ব। তাঁর শৈলীকে অনেকে flat technique বলে অভিহিত করেছেন। বহুমূল্য রং তিনি ব্যবহার করেন নি, প্রাকৃতিক বস্তুসমূহ দিয়ে তৈরী রং তাঁর অবলম্বন। দামী ক্যানভাস ব্যবহার করা থেকেও তিনি বিরত থেকেছেন, তার বদলে সাধারণ কাপড় ও কাঠের ওপর সর্বোচ্চ মানের শিল্পসৃষ্টি করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজের ছবিকে পৌঁছে দিতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। সেইজন্য ছবির দামও খুবই কম রাখতেন যাতে সকল শ্রেণীর মানুষ তাঁর ছবি কিনতে পারেন। ভাবলে সত্যিই অবাক লাগে যে খুব কম ক্ষেত্রেই তিনি ৩৫০ টাকার বেশী দামে ক্রেতাকে ছবি দিয়েছেন। আবার যদি তিনি জানতে পারতেন যে ছবি অযত্নে রাখা আছে তাহলে নিজেই সেই ছবি ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করতেন। অবয়ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে তিনি নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন। তাছাড়া কাঠের ভাস্কর্য সৃষ্টির ক্ষেত্রেও তিনি যথেষ্ট মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।

আসলে যামিনী রায় ছিলেন একজন সত্যিকারের গুণী শিল্পী যিনি সর্বান্তকরণে চাইতেন সাধারণ মানুষের মধ্যে শিল্পকে ছড়িয়ে দিতে। তাঁর কাছে সার্থক শিল্পসৃষ্টিই ছিল মুখ্য বিষয়, খ্যাতি বা অর্থ ছিল গৌণ। মহাত্মা গান্ধী তাঁর ছবির গুণগ্রাহী ছিলেন। ১৯৫৫ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করেন। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালে ‘Archaeological Survey of India’ তাঁর কাজকে ভারতের জাতীয় সম্পদ বলে ঘোষণা করেন। সারাজীবন তিনি চেষ্টা করেছেন খাঁটি দেশীয় পদ্ধতিতে ছবি এঁকে সনাতন ভারতীয় শিল্পশৈলীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের পরিচিতি ঘটাতে। সে কাজে তিনি কতটা সফল হয়েছিলেন সময়ই তার উত্তর দিয়েছে।

যামিনী রায়ের ছবির কয়েকটি বিশেষত্ব তাঁকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়। প্রথমেই বলতে হয় নিজ মাধ্যমের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণক্ষমতা অসামান্য, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতুলনীয় পরিমিতিবোধ। তিনি জানেন কতটা এগোতে হয়, ঠিক কোথায় থেমে যেতে হয়। তাঁর অনেক বিখ্যাত ছবির মধ্যে দুটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করব যেগুলি খুঁটিয়ে দেখলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই ছবিদুটি হল ‘গণেশজননী’ এবং ‘নৌকাবিলাস’। কিন্তু মাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণক্ষমতা তো অন্যান্য খ্যাতনামা শিল্পীদেরও ছিল, তাহলে যামিনী রায়ের বিশেষত্ব কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে অন্যান্য শিল্পীদের কাজের সঙ্গে যামিনী রায়ের কাজের তুলনায় যেতে হয়। যেমন যামিনী রায়ের ‘গণেশজননী’ ছবিটির সঙ্গে নিকোলাস রোয়েরিখের ‘কৃষ্ণ’ ছবিটির তুলনা করলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। যামিনী রায়ের ছবিতে পরিমিতিবোধের কথা আলোচনাপ্রসঙ্গে মনে আসে ‘Pointillism’-এর প্রবক্তা ঊনবিংশ শতাব্দীর শিল্পী Georges Seurat-এর কথা। Seurat-এর ছবির ক্ষেত্রেও এই পরিমিতিবোধ লক্ষ্যণীয়, উদাহরণ হিসেবে বলব ‘A Sunday on La Grandde Jatte’ ছবিটির কথা। ছবি আঁকার সময় যামিনী রায় কখনও আবেগের বন্যায় ভাসেন নি, যে ছবিতে যতটুকু আবেগ সঞ্চারিত করা দরকার ঠিক ততটুকুই তিনি করেছেন।

পরিমিতিবোধের সঙ্গেই আছে রেখার অতুলনীয় ব্যবহার। একটি রেখাকে কতদূর পর্যন্ত প্রসারিত করা সম্ভব বা তার সীমাকে কতখানি বিস্তৃত করা যায় জাপানের শিল্পীরীতির চরম নমুনা দেখিয়েছেন। এই কারণে সারা বিশ্বের তাবৎ শিল্পবিশারদগণ জাপানী শিল্পীদের চিত্র অঙ্কণের শৈলীকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। ভারতীয় চিত্রশিল্পীদের মধ্যে রেখার ব্যবহারে যামিনী রায় অদ্বিতীয়। বস্তুত শুধু ভারত কেন, সারা পৃথিবীতেই এব্যাপারে তাঁর তুলনা মেলা ভার। তাঁর রেখার ব্যাপ্তি যেন বহুদুর পর্যন্ত প্রসারিত, তার পাশাপাশি কৌণিক রেখাগুলির ব্যবহারে তিনি যে স্পষ্টতা দেখিয়েছেন তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি নির্ভর করেছেন ঋজু রেখার ওপর। এর সঙ্গেই আছে উল্লম্ব রেখা নিয়ে পরীক্ষা, কিন্তু তাঁর স্বাভাবিক প্রবণতাই হল ঈষৎ গোলাকৃতি রেখার প্রতি। এর পাশাপাশি তাঁর রং ব্যবহারের কৌশল বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে খুব সহজেই তিনি বাংলার গ্রামীণ প্রকৃতির পেলবতা ও কোমলতাকে ছবিতে নিয়ে আসতে পারতেন। সেই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য রঙের এরকম সপ্রতিভ ব্যবহার একদম সঠিক, প্রয়োগকৌশলও একেবারে নিখুঁত বলা চলে।

যামিনী রায়ের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে গেলে এতক্ষণ পর্যন্ত যে আলোচনা করা হল তার থেকে আরো একধাপ এগিয়ে যেতে হবে। এই স্তরে আলোচ্য বিষয় হল অঙ্গবিন্যাসের কৌশল ও দৃঢ় অঙ্গসংস্থাপনের কৌশল। তাঁর মানুষের অবয়ব নিয়ে আঁকা ছবিগুলি দেখলে বোঝা যায় এবিষয়ে সমসাময়িক শিল্পীদের থেকে তিনি কতটা এগিয়ে ছিলেন। লোকশিল্প ও দেশীয় শিল্পের ঐতিহ্য বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞানের সারাৎসার তিনি আমাদের কাছে উপস্থিত করেছেন। এই বক্তব্যের সমর্থনে তাঁর ‘বাদনরত সাঁওতাল’ ছবিটির কথা বলব।

যামিনী রায়ের শিল্পচেতনা কোন অর্থেই বিশৃঙ্খল নয়। তাঁর সৃষ্টির সর্বাঙ্গে জড়িয়ে আছে শিল্পীর সত্য উপলব্ধি থেকে জাত প্রাণশক্তির প্রাচুর্য। কাঠিন্য কখনই তাঁর ছবির লক্ষণ নয়। বিপরীতক্রমে নমনীয়তার উপর তাঁর দখল প্রশ্নাতীত। এর প্রমাণ পেতে হলে তাঁর ছবিতে আয়তনের ত্রৈমাত্রিক ব্যবহার মন দিয়ে অনুধাবন করতে হবে। তিনি ছবির তিনটি মৌলিক উপাদানের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। এই তিনটি উপাদান হল রং, রেখা ও উপাদানের সামঞ্জস্য। তাঁর খাড়া লম্বা অবয়বযুক্ত ছবিগুলো দেখলে মিশরীয় উপাদান পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানেও ছবির এই তিনটি মৌলিক উপাদানের কোন ব্যত্যয় হয় নি।

কোন একটি ছবির শিল্পসুষমা সামঞ্জস্য ও ছন্দোময়তার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। সামঞ্জস্য ও ছন্দোময়তা কোন পর্যায়ে যেতে পারে তার একটি সেরা উদাহরণ যামিনী রায়ের ‘চার নারী’ ছবিটি। ‘পূজারিণী’ ছবিটির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। এখানে কোথাও বর্ণময় অলংকরণের অতিরেক নেই বা অপ্রয়োজনীয় উপাদানের সমাবেশ নেই। ছবিতে যতটুকু বিষয়গত উপাদান আছে তা একান্তভাবে নির্মাণকৌশলের কারণে ও অবয়ব অঙ্কন করার তাগিদে। তাঁর বিবরণ একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং ছবিরপ্রতিটি ইঞ্চিতে অবয়বের একতা অক্ষুণ্ণ থেকেছে। বস্তুত এই বিষয়ে তিনি সমসাময়িক শিল্পীদের থেকে আলাদা, ‘দুই বোন’ ছবিটি তার প্রমাণ।

ছবিতে সুষম অবয়বের ব্যবহার যামিনী রায়ের বিশেষত্ব। তার সঙ্গে রঙের ওপর নিয়ন্ত্রণ তাঁর ছবিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে, এক্ষেত্রে তিনি মাতিসের সমকক্ষ বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। ‘চিংড়ি মুখে বিড়াল’ ছবিটি তার অন্যতম উদাহরণ। সর্বোচ্চ স্তরের চিত্রশিল্পীর কাজ আলোচনা করতে হলে প্রয়োগকৌশলের দিকটিও বিচার করা জরুরী। এদিক থেকে বিচার করলে ‘গোপিনী’ ছবিটির কথা বলতেই হবে। তিনটি ক্ষেত্রে যামিনী রায় অদ্বিতীয় – নির্মাণকৌশলের নিজস্বতা, গোলাকৃতি রেখার ব্যবহার এবং দেশীয় শিল্পরীতির অনুসরণ। বস্তুত এই তিনটি ক্ষেত্রে অন্য কোনও ভারতীয় শিল্পী তাঁর সমকক্ষ নন। তিনি অন্তর থেকে বাংলার লোকশিল্পের পুনরভ্যুদয় ঘটাতে চেয়েছিলেন। চিত্রশিল্পে মৌলিকতা ও স্বকীয়তা যে কোন স্তরে পৌঁছাতে পারে তা তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।

চিত্রশিল্পের দুনিয়ার যামিনী রায় যে এক নতুন দিশার খোঁজ দিয়েছেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তুলির উপর অসামান্য নিয়ন্ত্রণ এবং ছন্দোময় অথচ ঋজু রেখার চরম ব্যবহার তাঁর কাজকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। চিত্রশিল্পে আধুনিকতার আবাহন করতে গিয়ে তিনি ভাবের পরিমিত প্রকাশ ঘটিয়েছেন, কোথাও এতটুকু বাড়াবাড়ি করেন নি। ‘মা ও শিশু’ বিষয়ক ছবিগুলি সে কথাই বলে। এমনকি ‘যীশুখ্রীষ্ট’ ছবিটিও তারই সাক্ষ্য দেয়।

যামিনী রায়ের মননে গ্রামবাংলার লোকশিল্পের প্রতি এই আকর্ষণের পিছনে প্রচ্ছন্নভাবে ক্রিয়াশীল ছিল নিজের সাধনালব্ধ স্বকীয়তার সাহায্যে চিত্রশিল্পে আধুনিকতার সন্ধান করার সক্রিয় প্রচেষ্টা। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা থেকে লব্ধ আধুনিকতার শিক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করেছিলেন। বাংলার সনাতন অঙ্কনশৈলীর মূল অনুসন্ধান করে নিজের উপলব্ধির রসে জারিত করে ছবির ভাষায় প্রকাশ করার এই সচেতন প্রয়াসের পিছনে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা থেকে সঞ্জাত অনুপ্রেরণা সক্রিয় ছিল। এর সঙ্গে মিশেছিল ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে নিজস্ব স্বতন্ত্র শিল্পরীতি তৈরী করার প্রচেষ্টা। ১৯৭২ সালে তাঁর জীবনাবসান হয়। সারা জীবন তিনি নিজের শিল্পধারণা ও বিশ্বাসে সুমেরুবৎ অটল ছিলেন এবং বিশুদ্ধ শিল্পসৃষ্টির প্রচেষ্টামধ্যে দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। যামিনী রায়ের চিত্রশিল্পের সাধনা সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করলে মহাশিল্পী Pablo Picasso–র সঙ্গে একমত হয়ে বলতেই হয় –“The purpose of art is washing the dust of daily life off our soul.”

 

……০……

 

 

 

Leave a comment

Check Also

একুশে ফেব্রুয়ারি

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো : একটি গান ও দুই বাংলার মিলনসেতু – বদরুদ্দোজা হারুন

[ভাষা শহীদ আবুল বরকতের ৯৬ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে লেখা l]   “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো …

মহাশিল্পী রবিশংকর : ভারতের মোৎসার্ট – রঞ্জন চক্রবর্ত্তী

  বিশ্বের সংগীতপ্রেমীদের কাছে রবিশংকর ও মোৎসার্ট দু’টি নামই সুপরিচিত। উভয়েই বহুশ্রুত হলেও সংগীতের গভীরে …

pablo neruda

পাবলো নেরুদা : জীবন ও কবিতার সংরাগ – রঞ্জন চক্রবর্ত্তী

।। এক।। দক্ষিণ আমেরিকার তিনজন অসীম প্রতিভাশালী কবি হলেন সোর জুয়ানা ইনেস ডি লা ক্রুজ, …

দু’একটা সত্য কথা – সুদীপ্ত বিশ্বাস

মাত্র ১০০০০ বছর আগে কোনো ধর্মই ছিল না। ছিলনা ধর্ম-ধর্ম করে মানুষের সাথে মানুষের বিভেদ। …