পেচক মহারাজ মূষিক অন্বেষণে বাহির হইয়াছেন। মনুষ্য সমাজের দাপটে খাদ্য শৃঙ্খল ভাঙিয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছে- আহার অন্বেষণ করাও দিনদিন ক্রমশঃ বিড়ম্বনাজনক হইয়া পড়িয়াছে। যেরূপ অবস্থা, প্রক্রিয়াজাত মূষিক পাইলে বোধকরি উত্তম হইত!
উলূকপ্রবর এইরূপ চিন্তা করিতেছেন, হেনকালে বোধ হইল কেউ ছুটিয়া আসিতেছে। পদ চতুষ্টয়ের শব্দ অতীব চেনা ঠেকিল। অন্তরাল হইতে সম্মুখে আসিয়া দেখিলেন, যা ভাবিয়াছিলেন, ঠিক তাই। বরাহ! উদভ্রান্তের ন্যায় ছুটিয়া আসিতেছে।
বরাহটি নিতান্তই সুবোধ ও ভদ্র। পেচক মহারাজ তাহাকে অতিশয় স্নেহ করিয়া থাকেন। বরাহকে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া দৌড়িয়া আসিতে দেখিয়া উলূকপ্রবর উদ্বিগ্ন হইলেন, “কী ব্যাপার, বরাহ? এত বিচলিত দেখিতেছি যে!”
বরাহ একটি ঘোঁত ছাড়িল, “পেচক মহারাজ! এইমাত্র এক অদ্ভুত অলৌকিক ব্যাপার প্রত্যক্ষ করিলাম। তদবধি ভয়ে ব্যাকুল হইয়া দৌড়াইতে দৌড়াইতে আপনার কথা স্মরণ হইল। আপনিই সদুত্তর দিতে পারিবেন।”
পেচক মহারাজ স্নেহকোমল স্বরে প্রশ্ন করিলেন, “কী প্রত্যক্ষ করিয়াছ, বরাহ?”
“মহারাজ! নিদ্রা আসিতেছিল না। হাওয়া খাইলে সুনিদ্রা হইতে পারে, এমত বোধ করিয়া আমি ইতস্ততঃ পরিভ্রমণ করিতেছিলাম। পরিভ্রমণ করিতে করিতে ওইপার্শ্বে যে জনপথ, তাহার ধারে একটি ছাইগাদা দেখিতে পাইয়া ভাবিলাম, এইখানে কিঞ্চিৎ বিশ্রাম করি। এমন সময়… অহো! কী দেখিলাম!”
বরাহ চুপ করিল। তাহার চোখেমুখে একই সঙ্গে ভয় ও বিস্ময়ের অভিব্যক্তি স্পষ্ট। পেচক মহারাজ কৌতূহলী হইলেন, “তাহার পর? কী দেখিলে?”
“মহারাজ! রাজপথে নৈশবাতি জ্বলিতেছিল। সেই আলোকে দেখিলাম যে, এক দৈত্যাকার ট্রাক ভীমগতিতে রাজপথের অপর প্রান্ত হইতে আসিতেছে। আমার ছাইগাদাটির কিয়ৎদূরেই একটি নির্মীয়মাণ পূজামণ্ডপ। ট্রাকটি প্রায় আমার ছাইগাদার কাছাকাছি আসিয়া পড়িয়াছে, এমত সময় সেই মণ্ডপের নিকট হইতে দুই মনুষ্যমূর্তি বাহির হইয়া আসিল। তাহারা কীসব ইঙ্গিত করিল, ট্রাকটি একেবারে থামিয়া গেল। তাহার পর তাহারা কীসব আদেশ করিল, ট্রাক চালক প্রথমতঃ বিস্তর কাকুতিমিনতি করিল। কিন্তু তাহার পর সুড়সুড় করিয়া একগোছা নোট বাহির করিয়া দিল। কোন্ মন্ত্রবলে ওইরকম দৈত্যাকার ট্রাক থামিয়া গেল, কেনই বা তাহারা খেসারত দিল, কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। ইহার পর ওই যুবামূর্তিগণ আমার ছাইগাদার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাইতে থাকিল। উহাদের হাবভাব সুবিধার ঠেকিতেছিল না। আমি কপর্দকশূন্য বরাহ, যদি আমাকে ধরিয়া লইয়া গিয়া মেষ বানাইয়া দেয়, সেই ভয়ে পালাইয়া আসিয়াছি।”
উলূক মহাশয় হাসিবার কথঞ্চিৎ চেষ্টা করিলেন। কিন্তু তাঁহার বদনে হাসিটি তেমন পরিস্ফুট হইল না। বরাহ ততক্ষণে বিচলিত হইয়া পড়িয়াছে, “মহারাজ! যাহাদের দেখিলাম, সেই অপদেবতাগুলি কে? এই ঘোর নিশীথে কী করিতেছে?”
পেচক মহারাজ শান্তস্বরে কহিলেন, “বরাহ! যাহাদের দেখিয়াছ, উহাদের নাম চাঁদাসুর। বিশেষ করিয়া শরৎকালেই উহাদের প্রাদুর্ভাব হয়।”
বরাহ সংশয়চিত্তে কহিল, “চাঁদাসুর? ইহারা কি মহিষাসুরের জ্ঞাতি ভ্রাতা?”
পেচক মহারাজ কিঞ্চিৎ নড়িয়া চড়িয়া বসিলেন, “তাহা বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। তবে কিনা, ইহারা অবধ্য- সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ইহাদের বধ করা যায় না।”
বরাহ আতঙ্কিত হইয়া বলিল, “তাহা হইলে? সকলি তো রসাতলে যাইবে।”
পেচক মহারাজ কিঞ্চিৎ বিরক্তই হইলেন, “আহা বরাহ! নির্বোধের ন্যায় মন্তব্য করিও না। আমি চাঁদাসুরের মাহাত্ম্য সবিশেষ বর্ণনা করিতেছি, মন দিয়া শ্রবণ কর। সমুদয় জিজ্ঞাসার উত্তর আপনি পাইবে।”
ধমক খাইয়া বরাহ শান্তভাবে উপবেশন করিল। পেচক মহারাজ বলিতে শুরু করিলেন, “বর্ষাকালে যেরূপ কলেরা, উদরাময় প্রভৃতি রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, সেইরূপ মূলতঃ শরৎকালেই এই চাঁদাসুরদের উৎপত্তি। কালীপূজার পর প্রকৃতিগত ভাবেই ইহাদের অবলুপ্তি ঘটিয়া থাকে। ইহারা যূথবদ্ধ প্রজাতি। দলগতভাবে বিচরণ করাই ইহাদের অভ্যাস। এক একটি গোষ্ঠীর নিজস্ব এলাকা থাকে। ইহারা যৌবনের পূজারী। প্রবীণেরা স্বভাবতই ইহাদের যূথে ঠাঁই পান না। শত বাধাবিঘ্নেও ইহারা লক্ষ্যে অবিচল থাকে। ছলে- বলে-কৌশলে, যে প্রকারেই হউক- উহারা যাহা প্রাপ্য বলিয়া স্থির করে, অর্জন করিয়া লয়। ম্লেচ্ছাভাষায় যাহাকে ‘কিলার ইনস্টিংক্ট’ বলে, তাহা ইহাদের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান।”
বরাহ হকচকিয়া গেল, “মহাশয় ইহারা উপকারী জীব না অপকারী প্রাণী?”
পেচক মহারাজ সাতিশয় রুষ্ট হইলেন। বেগে পক্ষ আন্দোলিত করিয়া কহিলেন, “অপকারিতার কী দেখিলে? ইহারা সমাজের পক্ষে, মনুষ্যের পক্ষে, বিশেষতঃ বঙ্গজাতির পক্ষে পরম উপকারী ও চরম প্রয়োজনীয় একটি প্রজাতি। ইহারা না থাকিলে মনুষ্যের বিষয়ভার লাঘব হইত কী করিয়া? বিষয় আর বিষ যে প্রকৃতপক্ষে সমার্থক- তাহা ইহাদের অবর্তমানে মনুষ্যকুল অনুধাবন করিতে পারিত? সময়বিশেষে নিজের গৃহের মাতাকে পরিত্যাগ করিয়াও মৃন্ময় মাতৃমূর্তির আরাধনায় এই যে কৃচ্ছসাধন- ইহার তুলনা কিসে? এই ঘোর নিশাকালে, নিদ্রা বিসর্জন দিয়া যানবাহন আটকাইয়া, প্রয়োজনে ভীতি প্রদর্শন করিয়া এই চাঁদা সংগ্রহের ন্যায় ক্লেশ স্বীকার- ইহাতেও দেবী যদি সন্তুষ্ট না হইয়া থাকেন, তবে আর কিসে হইবেন?”
কিয়ৎক্ষণ নীরব থাকিয়া পেচক মহারাজ কহিলেন, “চল। আমরা ঐ রাজপথের সমীপবর্তী হই। অন্তরালে থাকিয়া উহাদের কার্যবিধি পরোক্ষভাবে প্রত্যক্ষ করি। তুমি প্রভূত জ্ঞানলাভ করিতে পারিবে।”
বরাহটি নিতান্তই জ্ঞানপিপাসু। ফলতঃ সে বিনা বাক্যব্যয়ে পেচক মহারাজের পশ্চাদ্গমন করিল। রাজপথের সমীপবর্তী হইয়া পেচক মহারাজ বরাহকে ইঙ্গিত করিলেন। বরাহ থামিল। দুইজনে মিলিয়া একটি ঝোপের অন্তরালে থাকিয়া যাহা পর্যবেক্ষণ করিলেন, তাহা যেমন অদ্ভুত, তেমনই চিত্তাকর্ষক।
দুইজন যুবাব্যক্তি নির্মীয়মাণ পূজামণ্ডপের সম্মুখের একটি চালায় বসিয়া আছে। দুইজনেরই পরনে অত্যন্ত আঁটোসাঁটো প্যান্ট ও জামা। প্যান্টগুলি আবার স্থানে স্থানে জীর্ণ ও ছিদ্রিত। তাহার অদূরে আরও দুই তরুণ কেবলমাত্র কৌপিন জাতীয় কোন বস্তু পরিধান করিয়া পথের ধূলায় বসিয়া কীসব খাইতেছে।
বরাহ বলিল, “আমি নাহয় জাতিতে শূকর। সময়বিশেষে ছাইগাদায় থাকি। কিন্তু ইহারা ভদ্রসন্তান হইয়া কিরূপে ধূলায় বসিয়া আছে?”
পেচক কহিলেন, “উহারাও বর্তমানে বরাহ অবতার ধারণ করিয়াছে। যাহা পান করিতেছে, উহা কারণবারি। প্রকৃতিস্থ অবস্থায় যে গালিগুলি দেওয়া সম্ভবে না, অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ইঁহারা সেইগুলি বর্ষণ করিয়া থাকেন। যিনি যত বেশি গালি দিতে পারেন, চাঁদাসুর সমাজে তিনি তত বেশী গণ্যমান্য বলিয়া পরিগণিত হইয়া থাকেন।”
পেচক এইমাত্র বলিয়াছেন, এমত সময়ে দেখা গেল, নীল রঙের বাতি জ্বালাইয়া একটি অ্যাম্বুলেন্স ভ্যান আসিতেছে। ভ্যানটিকে দেখিবামাত্রই প্রথমোক্ত যুবকদ্বয় সত্বর রাজপথে দাঁড়াইয়া ভ্যানের পথ অবরোধ করিল। পেচক চাপাস্বরে বরাহকে বলিলেন, “দেখিতে থাক, চাঁদাসুর কেমন করিয়া শিকার ধরে।”
ভ্যানটি থামিয়া গিয়াছে। ভ্যানচালককে বলিতে শোনা গেল, “দাদা, পেশেন্ট আছে। সিরিয়াস কণ্ডিশন।”
“ওসব ভ্যানতাড়া রাখ। সিরিয়াস কণ্ডিশন বলে কি তুই তোর ভাড়া নিবি না?”
পেচক ফিসফিসাইয়া কহিলেন, “অহো! কী অকাট্য যুক্তিজাল!”
বরাহ সহমত পোষণ করিল, “পদধূলি লইবার যোগ্য।”
ভ্যানচালক চালকের আসন হইতে নামিয়া আসিয়াছে, “দাদা, একটু কমসম করেই করুন না!”
“নে, তোর জন্য কম করেই ধরেছি। আবার পেশেন্ট আছে বলছিস। আমরা আবার লোকের দুঃখ একদম দেখতে পারি না। পাঁচশো টাকা ছাড়। ওতেই হবে।”
“পাঁচশো!”, এতদূর হইতেও পেচক মহারাজ বুঝিতে পারিলেন চালকের চক্ষু বর্তুলাকার ধারণ করিয়াছে।
“এত পারব না।”, চালক বোধকরি কাঁদিয়াই ফেলিবে।
“তাহলে তোর গাড়ি নিয়ে এইখানেই আটকে থাক। ভুটা, নজর রাখিস তো যেন পালাতে না পারে।”
“দাদা, একটু দয়া করুন। পেশেন্ট নিয়ে পোঁছোতে দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
“দেরী হয়ে যাচ্ছে! এখন যদি ঝড়জল হয়ে রাস্তা আটকে যেত, তখন কী করতিস? ধর, এইখানটায় একটা গাছে ভেঙে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল, নইলে কোন দল রাস্তা অবরোধ করল। তখন কী করতিস? তার বেলা পেশেন্টের দেরী হত না?”
পেচক বলিয়া উঠিলেন, “আহা! অপূর্ব যুক্তি তীক্ষ্ণ শরের ন্যায় বর্ষিতেছে। প্রাণমন জুড়াইয়া যাইতেছে।”
এইক্ষণে গাড়ির ভিতর হইতে রুগীর কোন আত্মীয়ই সম্ভবতঃ বলিয়া উঠিল, “টাকা যা চাইছে, দিয়ে দাও না!”
চালক মুখ ফিরাইয়া উচ্চস্বরে বলিল, “দিতে হলে আপনি দিন। এত তাড়া যখন।”
পেচক কহিলেন, “চাণক্যের ভেদনীতির কী অপরূপ প্রয়োগ!”
যে দুই যুবক ‘কারণবারি’ পান করিতেছিল, তাহারা আসিয়া গাড়িখানাকে ঘিরিয়া ধরিল। তখন রুগীর আত্মীয় এবং চালক মিলিয়া ভাগ ভাগ করিয়া চাঁদাসুরদের প্রাপ্য মিটাইয়া দিল। চালক মিনমিন করিয়া একবার রসিদের প্রসঙ্গ তুলিল, তার প্রত্যুত্তরে এক চাঁদাসুর বলিল, “বই ফুইরে গেছে। পরশু আসিস।”
চালকের তখন ছাড়িয়া দে মা কাঁদিয়া বাঁচি অবস্থা। সে বিনা বাক্যব্যয়ে গাড়িতে উঠিয়া বসিয়া চক্ষুর পলকে গাড়িসহ অন্তর্হিত হইয়া গেল।
বরাহ আঁতকাইয়া উঠিল, “কী ভয়ানক ব্যাপার প্রত্যক্ষ করিলাম, মহারাজ!”
পেচক মহারা রাগিয়া গেলেন, “ভয়ানকের কী দেখিলে? তুমি এখনো ইহাদের মাহাত্ম্য সম্যক অনুধাবন করিতে পারো নাই। মানুষ দাঁত থাকিতে দাঁতের মর্ম বুঝে না। নিশ্চিন্তে নিরুপদ্রবে যাইলে কি প্রিয়জনের জীবনটি তত দামী বোধ হইত? তীর্থপর্যটনে কি মানুষ ক্লেশ স্বীকার করে না? যত বেশি কষ্টস্বীকার, তত বেশী ফললাভ। ইহারা প্রত্যেকেই কোন না কোন গন্তব্যে যাইতেছে। তাও তো উত্তম মধ্যম দেয় নাই, সময়বিশেষে তাহাও দিয়া থাকে। তাহাতে বহুবিধ ফললাভ হয়। যাহার কর্ণ দিবারাত্র কটকট করিতেছে, সে কর্ণব্যথা বেমালুম বিস্মৃত হয়। যাহার গেঁটেবাত, সেও দ্রুতগতিতে পলাইবার চেষ্টা করে। অর্থাৎ, এক কথায়, বিষে বিষে বিষক্ষয়। বিনা পয়সায় এরূপ কার্যকরী চিকিৎসা কোথায় পাইবে? তদুপরি, ইহাদের যে সমদর্শিতা নীতি, তাহা সকলেরই অনুকরণযোগ্য। আইনের চোখে যেমন সকলেই সমান, এই চাঁদাসুররাও তেমনই ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ, বয়স্ক- অল্পবয়সী, ব্যবসায়ী-চাকুরিজীবী নির্বিশেষে একই নীতি অবলম্বন করিয়া থাকে।”
বরাহ কহিল, “বুঝিলাম। গৃহে গৃহে যেন এমত চাঁদাসুরের আবির্ভাব হয়!”
পেচক মহারাজ পশ্চাতে চাহিয়া দেখিলেন, রাজপথে আরও একটি অটো এবং তাহার পশ্চাতে একটি মিনিবাস আসিতেছে এবং চাঁদাসুরদের অঙ্গুলিহেলনে যথারীতি থামিয়া গেল। চাঁদাসুরেরা যথারীতি আসন্ন পূজা উপলক্ষ্যে গাড়িচালকদের কর্তব্যকর্ম স্মরণ করাইয়া দিতেছে।
বরাহ আঁতকাইয়া উঠিল, “ইহাদের চরিত্রে কি দয়ামায়া বলিয়া বস্তু নাই?”
উলূকপ্রবর বেগে পক্ষ আন্দোলন করিলেন, “দয়ামায়া নাই মানে? ইহারা কুত্রাপি কোন ভিক্ষুকের নিকট হইতে একটি আধুলিও চাঁদা দাবী করে না। ইহাকে যদি দয়ার লক্ষণ না বল, তবে আর কাহাকে বলিবে?”
বরাহ ঘোঁত ছাড়িল, “বুঝিলাম। চাঁদাসুরদের দয়ার শরীর!”
পেচক একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, “হরিবোল!”
বরাহ ক্ষীণস্বরে কহিল, “হরিবোল!” তাহার মাথা ঘুরিতেছিল। কোনমতে গাত্রোত্থান করিয়া কহিল, “মহারাজ! চাঁদাসুরের মাহাত্ম্য অনুধাবন করিলাম। অদ্য যাহা দেখিলাম, শুনিলাম- তাহাতে আমার জ্ঞানচক্ষু বিলম্বে হইলেও উন্মীলিত হইয়াছে। চাঁদাসুরেরা দীর্ঘজীবী হউন- উহাদের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।”
পেচক ঊর্ধ্বমুখ হইয়া কহিলেন, “এমন শ্রীমানেরা থাকিতে বঙ্গমাতার আর কী ভাবনা!”
বরাহ কহিল, “মহারাজ! চলুন, আমরাও সাফল্যের সঙ্গে পশ্চাদপসরণ করি। নতুবা চাঁদাসুরদের কৃপা আমাদের উপরও যে বর্ষিত হইবে না, কে বলিতে পারে?”
পেচক বরাহের পৃষ্ঠে আরোহণ করিলেন এবং সত্বর দৃষ্টিপথের অন্তরালে চলিয়া গেলেন।