Home / অণুগল্প / চাতকেরা- নির্মাল্য ঘরামী

চাতকেরা- নির্মাল্য ঘরামী

চাতকেরা- নির্মাল্য ঘরামী
শিল্পী- চন্দ্রা বিশ্বাস

 

 

জিভ দিয়ে ঠোঁটটা একবার চেটে নিল শাক্য। গরমও পড়েছে যথেষ্ট। কিন্তু তেষ্টা আর গরম কী শুধু এইরকমই হয়? বৃষ্টি নামবে কবে?

 

বৃষ্টি! বৃষ্টি! কী মিষ্টি এই নামটা! ওর দুষ্টু হাসির সঙ্গে একটু আদিম রসিকতা মাখানো নিষ্পাপ ধরনের কথাবার্তা, বঙ্কিম গ্রীবার চাহনি ওকে যে কী পরিমাণে আকর্ষণীয়া, আবেদনময়ী করে তোলে, তা কি বৃষ্টি বুঝতে পারে? বুঝতে পারে শাক্যর ছটফটানি? পারলেও খুব সম্ভবত বৃষ্টি মন দিয়ে উপভোগ করে মুহূর্তগুলি। গতকাল সকাল অবধিও বৃষ্টির সাহচর্যে ছিল সে। আর এখন ধূ-ধূ মরুভূমি!

 

একই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়েছিল ওরা- অভীক আর শাক্য। ভাগ্যের ফেরে বনগাঁ’র ছেলে অভীক চাকরি পেল দুর্গাপুরে, পাণ্ডবেশ্বরের শাক্য কোলকাতায়। পরিবারের জন্যে শাক্য ফ্ল্যাট নিল দুর্গাপুরে আর অভীক টালিগঞ্জে। নিজেরা থাকত মেসে।

 

কিভাবে যে শাক্য দ্রুত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল অভীকের স্ত্রী বৃষ্টির সঙ্গে! একদিন শপিংমলে দেখা, কয়েকদিন পর রাস্তায়। তারও কিছুদিন পর থেকে ……………। আজ বাড়ি ফেরার পথে হাওড়া স্টেশনে হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল অভীকের সঙ্গে। মনের অপরাধবোধ এড়িয়ে কিছু সৌজন্যমূলক কথা বলতে অবশ্য বাধেনি শাক্যর। স্যুটেড-বুটেড অভীকের জামার পকেটে সর্বদা দৃশ্যমান পার্কার কলমটার অনুপস্থিতি দেখিয়ে মস্করা করে বলেছিল,

-সঙ্গিনী কোথায়?

প্রথমে একটু অপ্রতিভ হয়ে গেলেও পরক্ষণেই ঠাট্টার সুরে জবাব দিয়েছিল স্মার্ট অভীক,

-ওর সতীনের কাছে ফিরছি বলে বিসর্জন দিয়ে এলাম।

প্রাণখুলে হো-হো করে হেসে উঠেছিল দুজনেই। টা-টা করে একে অপরকে বিদায় জানিয়ে নিজেদের পথ ধরল। আজ রাতে অভীকের সম্ভাব্য সৌভাগ্যের কথা ভেবে বৃষ্টির জন্য তৃষ্ণায়, কামনায় মনটা ছট-ফট করে উঠল শাক্য’র। যাকগে! মোটে তিন-চারটে দিন। এ’কদিন মহুয়া দিয়ে কোন গতিকে চালিয়ে নেবে। স্কচ না হোক, মহুয়ার স্বাদে নতুনত্ব নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে! অটো নিয়ে বাড়ির পথে ফিরতে ফিরতে আর তর সইছিল না শাক্য’র। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরল।

-আরে ছাড়! ছাড়! কে যে কখন দেখে ফেলবে? নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে উঠল মহুয়া।

-আরে নিজের বৌকে জড়িয়ে ধরেছি, তাতেও……।

-আরে, একটু সবুর কর। আগে চান-টান করে ফ্রেশ হও।

 

বাথরুমে চান করতে গিয়ে বালতি থেকে জল নিতে যাওয়ার সময় হঠাৎ-ই ওর নজরটা চলে গেল বালতি ও বাথরুমের দেওয়ালের মাঝে আলো-আঁধারি জায়গাটায়, বাথরুমের হাল্কা আলোটা স্থানটিকে সেরকম আলোকিত করতে পারেনি। একটা শোখিন পার্কার কলম লম্বা হয়ে শোভা পাচ্ছে সেখানে- এই ধরনের কলম ওর পরিচিতদের মধ্যে মাত্র একজনকেই সর্বদা ব্যবহার করতে দেখেছে ও!

……০……

অংকনঃ চন্দ্রা বিশ্বাস

Leave a comment

Check Also

লোনাজলের আঁকিবুঁকি

লোনাজলের আঁকিবুঁকি – রঘুনাথ মণ্ডল

  শেষ হেমন্তের পড়ন্ত বেলা। চারিদিকে ছড়ানো পলকা হলদে রোদ – আছে কিন্তু থাকবে না …

উতলধারা/জমানা

জমানা – নির্মাল্য ঘরামী

    বুধু অবাক হয়ে ছেলে তিনটির দিকে তাকিয়ে ছিল। তখন বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যা …

উতলধারা/জমানা

জমানা- নির্মাল্য ঘরামী

  বুধু অবাক হয়ে ছেলে তিনটির দিকে তাকিয়ে ছিল। তখন বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যা শুরু …

চানাচুরের স্বাদ/ রঘুনাথ মণ্ডল

চানাচুরের স্বাদ- রঘুনাথ মণ্ডল

    অনেক দিন পর শীলার সঙ্গে দেখা, তা প্রায় পঞ্চাশ বছর। হাইস্কুলে আমরা একসঙ্গে …