ফিরে আসার কথাই তো ছিল তোমার। অনুচ্চারিত প্রতিশ্রুতি ছিল কিছু। যে প্রতিশ্রুতির প্রহর গুনেছিল আপামর ভারতবাসী, আর জার্মানিতে থাকা তোমার প্রিয়জন৷
তোমার অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে একটা প্রজন্ম শৈশব থেকে বৃদ্ধদশায় পৌঁছে গেল। প্রতি বছর তোমার জন্মদিনে হিসেব কষত তারা, বেঁচে থাকলে কত বয়স হত তোমার। মনে মধ্যে ক্ষীণ আশা, যদি তুমি ফিরে আসো! আশি-নব্বই-একশ বছর পর্যন্তও তো মানুষ বেঁচেই থাকে, তাই না?
তুমি এলে না। ক্লান্ত আঙুল কর গুনতে গুনতে শ্রান্ত হয়ে একসময় গোনাই থামিয়ে দিল। নেই তুমি, কোত্থাও নেই তুমি।
জানো তো, তোমার শৌর্য, তোমার ঋজুতা, তোমার ওই দৃপ্ত বাচন, তোমার অকুতোভয় মানসিকতা – কোথাও এমন আচ্ছন্ন করে রেখেছিল আমাদের যে তুমি আসবে না ভাবতেই পারিনি। তোমার এই না-ফেরা কে নিয়েই যে কত গল্প, কত কথকতা যে হয়ে গেল, সে খবর কি রাখো? শৌলমারীর সাধু, গুমনামী বাবা- তুমি কি লুকিয়ে ছিলে কোথাও কোনোখানে?
কিন্তু জানো, দরকার ছিল তোমাকে। খুউব, খুউউউউব দরকার। যা কিছু তোমার ছিল অপছন্দ, তারই মধ্যে ডুবে আছি এখন আমরা। তুমি ছিলে সেই মসিহা- যাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা যায়! সেই মসিহা, যে স্বপ্নের জন্ম দেয়!
প্রয়োজনই বা কী ছিল তোমার? বাঙালির ঘরের ছেলে, দিব্যি তো জীবন চলেই যেত! তা না, দেশ আর দশকে উদ্ধার করার ভূত তোমার ঘাড়ে চেপে বসল!
ভাগ্যে চেপেছিল! নাহলে আজ কী নিয়ে গর্ব করতাম, বলো? আমাদের গর্ব করার জায়গা ক্রমশ: কমে আসছে, খবর রাখো কি? তুমি অবশ্য একাও ছিলে না- বাংলার মানবসম্পদের স্বর্ণযুগে তোমার আগে-পরে কত উজ্জ্বল উপস্থিতি! সেই সব অগণিত তারামণ্ডলীর ভিড়ে দৃপ্ত চন্দ্রমার গৌরবরশ্মির বিকিরণ তোমারই।
অপমান- যন্ত্রণা – লাঞ্ছনা কম তো সহ্য করোনি তুমিও। কিন্তু ওই, প্রতিকূলতা যতই দুর্লঙ্ঘ্য হয়ে উঠেছে, তাকে জয় করার ইচ্ছেও ততোই হয়ে উঠেছিল অদম্য। শিরদাঁড়া একটা ছিল বটে তোমার। জানো, আজকের এই অমেরুদণ্ডীর ভিড়ে তোমার ওই মেরুদণ্ডখানাকে বড্ডো মিস করি!
আর কিছু চাই না নেতাজী! খালি তোমার ওই মেরুদণ্ডখানাকে একটু দিয়ে যাবে বাংলার বুকে? বিশ্বাস করো, ওতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
তোমার জন্মদিনে তো উপহার দেবার কিছু নেই। যার নিজের এত সম্পদ- তাকে আর কী- ই বা দেওয়া যায়? বরং আমরাই আজ নি:স্ব, রিক্ত। ধুঁকতে ধুঁকতে নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে পারিপার্শ্বিকের ওপর থেকে। নোংরামি, দুর্নীতি আর ধান্দাবাজির পাহাড় ক্রমশ: উঁচু থেকে উঁচুতর হচ্ছে। দুর্বিষহ লাগে জানো এক একসময়। তাই এই উপহারটুকুই চাইলাম নেতাজী। এটুকু তো চাওয়াই যায়, তাই না?
ভালো থেকো। স্যালুট রইলো। জয় হিন্দ!