সারাদিন টো-টো করে সারা পাড়া টহল দেওয়া ছাড়া আর কোন কাজ নেই শম্ভূর। মাথার উপর গার্জেন না থাকলে যা হয়। পাড়ার লোকেও ভয়ে কিছু বলে না, তাগড়াই চেহারা, লাল লাল চোখ, তবে শম্ভূ নেশা টেশা করে না। মদ, গাজা, আফিম, চরস কিছু খায় না, এমনকি বিড়ি, সিগারেট, খৈনি ও ছোঁয় না।
ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়লে জেলা স্কুল মাঠের উত্তর দিকে যে কয়টা ভাগ্যবান গাছ এখনো টিকে আছে সেখানে ডেরা নেয়। এই জায়গাটা বেশ মজার, যত আলসেদের আড্ডা। সামনে জগুর চায়ের দোকান , চায়ের সঙ্গে চলে হরেক কিসিমের গুলতানি। শম্ভূ অবশ্য এসব এ থাকে না। চায়ে ও না গুলতালি তে ও না। সে থাকে এক পাশে, আপন মনে, আনমনে ।
মাঝে মাঝে কোর্ট বাজারে হানা দেয় ,ওই তোলাবাজি আর কি। দোকানিরা ভক্তিতে যে যা পারে দেয়। শম্ভূ হাসিমুখে তাই নেয়, ঠিক হাসিমুখে নয়, কারণ সম্মুখে কেউ কখনো হাসতে দেখেনি।
কিছু দিন হল শম্ভূর নামে একটা অপবাদ শোনা যাচ্ছে । তার চরিত্রের দোষ ঘটেছে।পাড়ার সাধু স্বাধী রা তাই বলে ।শম্ভূ নাকি রোজ সাঝের মুখে শ্যামা দাসীর আখড়াই হাজরে দেয় । শ্যামা বৈষ্ণবীর বছর 40 বয়স, বিনোদ দাস বাবাজির সেবাদাসী। চেহারায় একটা দেখনদারি আছে। গলায় ঝোলে তুলসী মালা, কপালে রসকলি হাতে নামের ঝোলা। শ্যামা দাসের গানের গলাটা ও সুরেলা, যখন দাওয়ায় বসে প্রেমজুড়ি বাজিয়ে গান ধরে –সখি, কেবা শুনাইল শ্যাম নাম ….,তখন বিরহের ঝরনা ঝরে। সে একাই থাকে তার এক কুঠুরি টালি ছাওয়া ঘরে ঘরটা বিনোদ- দাস ই বানিয়ে ছিলেন। তিনি বছর তিনেক হলো সমাধি নিয়েছেন ।
শ্যামা দাসী দু দশ ঘরে মাধুকরী করে, ভালো আচার বানায়, ডালের বড়ি বানায়, তা থেকে তার দিন চলে যায় রাধা রানীর নাম নিয়ে ।
শ্যামা দাসী সাজের বেলায় তুলসী তলায়, বিনোদ বাবাজির সমাধিতে ধুপ সন্ধ্যে দেয়, তারপর মালায় বসে । আর শম্ভূ র আসার আশায় পথ চেয়ে বসে থাকে। দেরি হলে অভিমান করে বলে –“কি ঠাকুর, আজ আবার কোন চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে বেলা বয়ে এলে”?
একটা বড় বাটিতে মুড়ি আর চা ঢেলে দেয়, শম্ভূ আয়েশ করে খায় নিজেও চা মুড়ি খেয়ে নেয়, এটাই তো রাতের খাবার।
অনেকেই আড়াল থেকে নাকি দেখেছে শ্যামা দাসী আদর করে শম্ভুর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, ফিসফিসিয়ে কি যেন বলে । শম্ভূ অবশ্য কিছু বলে না, ও কাউকে কিছু বলে না, ফোস ফাঁস করে না, কাউকে গুতো মারে না। মাঘের মুলোর মতো একজোড়া সুডোল সিং আছে তাও।
সেদিন দেখা গেল শম্ভূর কপালে তিলক- ফোটা ,গলায় তুলসীর মালা। গতরাতে রাধারাণী কে সাক্ষী রেখে ওদের কণ্ঠি বদল হয়েছে ।