সাত সকালে শাশুড়ী মায়ের ফোন “বাবা , আত্মারাম, আগামী ৪ তারিখে জামাই ষষ্ঠী। তুমি যেন অবশ্যই বিলুকে নিয়ে আসবে। বয়স হয়েছে , আজ আছি কাল নেই। অনেক দিন তো আসনা , প্রণতির বিয়েতেও আসতে পারলে না।”
আত্মারাম সদ্য সিনিয়ার সিটিজেন হয়েছে। বুড়ো বয়সে জামাই ষষ্ঠী ভাদুরে বৃষ্টির মতই রোমাঞ্চহীন ষষ্ঠী!তবুও ….. দুহাতে পাহাড় ঠেলা যায় কিন্তু শাশুড়ি মা আর তার মেয়ের কথা ফেলে দেয়, এমন সাধ্যি দেবতাদেরও নেই।
জামাই ষষ্ঠীর দিন সকালে ধোপ দুরস্ত ধুতি –পাঞ্জাবি পরে রওনা দিল শ্বশুরবাড়ির দিকে । একাই। শাশুড়িমাতার কন্যা বিল্ববাসিনীর বাতের ব্যথা বেড়েছে। গরমে ঘুমও তেমন হয়নি রাতে। ঘরদোর পাহারা দেবারও ব্যাপার আছে।
ট্রেন চলছিলই ভালই , জানলার ধারে হাওয়া খেতে খেতে যাচ্ছে আত্মারাম , মেজাজটাও কেন জানিনা বেশ ফুরফুরে। হঠাৎ বে-জায়গায় ট্রেন গেল থেমে । লাইন অবরোধ করে বসে পড়েছে এক দল চ্যাংড়া। সরকারের কাছে তাদের দাবি –“আমরা বেকার, তাই আমাদের বিয়ে হচ্ছে না । হয় চাকরি দাও, নয়তো বউ এনে দাও।” অবরোধ উঠতে বেলা বয়ে গেল । এরপর বাস, চলতে চলতে বাস ঢুকলো পেট্রল পাম্পে , তেল ভরে কিছুদূর যেতেই চাকা গেল ফেঁসে। বাসস্ট্যান্ডে যখন নামল তখন আর বেলা নেই ।স্ট্যান্ডে আজ অটোর অভাব ।ইয়ং চালকরা গেছে জামাই ষষ্ঠীতে, আর বয়স্কদের ঘরে মেয়ে জামাই এসেছে । কোনক্রমে একটা অটো যোগাড় করে শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছতেই আঁধার নেমে এল, তার উপর লোডশেডিং । শুক্লা ষষ্ঠীর কিশোরী চাঁদের মায়াবী আলোয় চারদিক মোহময়। সেদিনে নজর দেওয়ার মত অবস্থা নয় আত্মারামের। ঝোড়ো কাকের মত অবস্থা তার । গায়ের পাঞ্জাবী ঘামে ভিজে ন্যাতা, গলা শুকিয়ে কাঠ।
বহুবার আসা যাওয়া বাড়ি, আত্মারাম গটগটিয়ে বাড়ি ঢুকতে যাচ্ছিল। বাড়ির সামনে আবছা আলোয় পায়চারি করছিল লুঙ্গি গেঞ্জি পড়া এক হোৎকা জোয়ান। আচমকা সে এসে দরজা আটকে দাড়ালো । হেঁড়ে গলায় বলে – “তুমি কে হে চাঁদু, বলা নেই কওয়া নেই সাঁঝের আঁধারে ভদ্রলোকের বাড়িতে ঢুকে পড়ছ।” আত্মারাম হতভম্ব, শুকনো গলায় বলে –“বাবা, আমি এ বাড়ির জামাই।”
-“জামাই ? শালা ……….. এর বাচ্চা , তুমি যদি এ বাড়ির জামাই, তবে আমি কে? পিটিয়ে চ্যাপ্টা করে দেব ঢ্যামনাকে যদি আর একপা এগোও। ”
(ভাগ্যিস পাঞ্জাবির কলার থাকে না)।
গোলমাল শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে প্রণতি। হাতের হ্যারিকেনটা তুলে ধরে বলে ,- ” ও মা, পিসেমশাই , আসুন আসুন।” বলে ঢিপ করে আত্মারামকে একটা প্রণাম করে । হোৎকা-র দিকে তাকিয়ে বলে “চ্যালা কাঠের মত দাঁড়িয়ে কী দেখছ, জাম্বুবান? পিসেমশাই, প্রণাম করো।”
কোনক্রমে নিচু হতে হতে হোৎকা বিড় বিড় করে বলে “ পিসেমশাই, পিসেমশাই, সেইটে বললেই হয়, আমি এবাড়ির জামাই- একথা বলা কেন? ”