সেই ঘরটির দিকে যেতে যেতে অমিয়বাবুর আজ মনে পড়ে যাচ্ছিল সৌরীনের কথাগুলো,
-একজন সফল সাহিত্যিককে বড় মাপের অসৎ হতেই হবে।
-কেন? হতবাক অমিয়বাবু হাতের বইটা থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করেছিলেন, -কোন মাপকাঠিতে?
-সমাজের মানদণ্ডে। সংক্ষেপে বলেছিল সৌরীন।
অমিয়বাবু এত ছোট উত্তর আশা করেন নি। থুতনিতে হাত রেখে কিছুক্ষণ ভাবলেন। কিন্তু থই পেলেন না। ডেস্কের উপরে দু’হাত জড়ো করে মুখের কাছে ধরে কৌতূহলী চাহনি মেলে অমিয়বাবুর দিকে তাকিয়ে ছিল উঠতি কবি সৌরীন। অমিয়বাবু অবশ্য কবিতা বেশি লেখেন না। মাঝে মাঝে টুকি-টাকি গল্প লিখে থাকেন। তবে খ্যাতির আশা রাখেন না। সেরকম পদের নয় তাঁর লেখাগুলি। কিন্তু সাফল্যের হাতছানি সবার মতন তাঁকেও আহ্বান করে।
মুখে মৃদু হাসি মাঝে মাঝে খেলে গেলেও ওই দু’টি শব্দের বেশি আর কিছু উচ্চারণ করল না সৌরীন। অমিয়বাবুই শেষে আর থাকতে না পেরে বললেন,
-আরে, একটু বুঝিয়ে বলো।
-তাকে বহু লোকের সঙ্গে মিশতে হয় ঘনিষ্ঠভাবে, অতি নিবিড়ভাবে। জানতে হয় তাদের আচার-আচরণ, আশা-নিরাশা, আবেগ-দুর্বলতা। তবেই সে তার কলমে সেগুলো সঠিকভাবে, সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। এসব উপর উপর দেখে আর যাই হোক সাহিত্য হয় না। এদিকে নিবিড় অন্তরঙ্গতার খেসারত দিতে সমাজের মানদন্ডে প্রায়শই অসৎ হতে হয় নিজের পরিবারের কাছে। কী, বুঝতে পারলে?
বলে অমিয়বাবুর দিকে তাকাল সৌরীন। মুখে মৃদু হাসি, কিন্তু দৃষ্টি বেশ তীক্ষ্ণ। সে যেন বুঝতে চেষ্টা করছে অমিয়বাবুর অন্তর। সেই দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলেন না অমিয়বাবু। বললেন,
-সে না হয় বুঝলাম। ঘরের লোকের কাছে সে অসৎ কিন্তু বাইরের লোক?
-একজন সাহিত্যিককে সবসময় সংগ্রাম করতে হয়, স্ট্রাগল ফর এক্সিস্টেন্স! সে হারতে শেখে না। পুরোটাই তার কাছে যুদ্ধ। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে হারতে হারতেও শেষে সে জিতে যায়। অ্যাণ্ড দেয়ার ইজ নাথিং আনফেয়ার ইন লাভ অ্যাণ্ড ওয়ার!
শেষের শব্দটার দিকে জোর দিয়েছিল সৌরীন। কেন জানি না কথাটা তাঁর মনে গেঁথে গিয়েছিল। তবে কথাটা না শুনলেই বোধহয় ভালো হত। কিন্তু যুদ্ধের সঙ্গে ভালবাসার কী সম্পর্ক? আশ্চর্য এই যে কথাটা সেদিন মনে না এলেও আজ বারে বারে মনে আসছে।
-সাহস আছে? মিটি মিটি হাসতে হাসতে সৌরীন জিজ্ঞেস করল, -বড় সাহিত্যিক হতে চাও?
তারপরে তাঁকে জরীপ করতে করতে ধীর গলায় বলল, -ডানা মেলে দাও আকাশে। পোস্ট ইন্ডিপেন্ডেন্স চড়া পড়া বাঙলা সাহিত্যে আমরা জোয়ার আনব। সৌরীনকে দেখতে দেখতে কেমন একটা হিপনোটাইজড চোখে তার বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে উষ্ণতার সঙ্গে আলিঙ্গন করলেন অমিয়বাবু।
(২)
-যা মনে হচ্ছে, সৌরীন একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে ঘোষণা করল, -আমাদের আরো খানিকটা ট্রেক করে যেতে হবে।
-আর পারব না সৌরীনদা, ছেড়ে দাও। টিনা হাঁফাতে হাঁফাতে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, -খুব টায়ার্ড।
ওকে দেখে অবশ্য বোঝাই যাচ্ছিল যে আর পারছে না। আসলে পুরানো আমলের ভাঙাচোরা এই লেপচা দুর্গটা বেশ দুর্গম এলাকায়। আগে দুর্গ অবধি গাড়ি গেলেও এইবারের বর্ষায় একজায়গায় ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ট্রেকিং ছাড়া গতি নেই। ওরা অবশ্য জেনেশুনেই বেরিয়েছিল। কিন্তু এতটা কষ্ট হবে, সেটা আগে থেকে ভাবতে পারেনি। শেরপাগাঁওতে গাড়ি রেখে তারপরে ট্রেকিং শুরু হয়েছে। সেই দুর্গের পাশেই একটা হোম স্টে সদ্য তৈরী হয়েছে। ওদের গন্তব্য সেখানেই। হোম স্টে’র মালিকের ছেলেটি ওদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। শুরুতে ওদেরকে সে জিজ্ঞেস করেছিল যে তাড়াতাড়ি শর্টকাটে তারা যেতে চায় কিনা।
-অবশ্যই, টিনাই বলেছিল, -কে আর হ্যাপা বাড়াতে চায়?
-জীবনে শর্টকাটে কোন সাফল্য আসে না। দার্শনিকের মতন মন্তব্য করেছিল মোম।
-আরে ছাড় তো, অমিয়বাবুই আগ বাড়িয়ে বলেছিলেন, -এসেছি অ্যাডভেঞ্চারের টানে। ইচ্ছেমতন কি আর এদিকে আসা হবে আমাদের?
-তাহলে তো টান-টাই কেটে যাবে। সৌরীন বলেছিল।
-অতএব এই পথে যাওয়া যেতেই পারে। অমিয়বাবু বললেন।
-চলুন।
মোম মাথা ঝাঁকিয়ে বলল। সে খুব ইচ্ছুক হয়তো ছিল না। কিন্তু প্রতিবাদ করেনি। ছেলেটি তাঁদের পথ দেখিয়ে আগে আগে চলল। একটু পাথর বিছোনো রাস্তায় গিয়ে সে ডানদিকে পায়ে চলা রাস্তা ধরল। মোটামুটি খাড়াই সে রাস্তা উপরের কুয়াশামাখা পাহাড়ি জঙ্গলে হারিয়ে গেছে। বেশ রোমান্টিক চোখে চেয়ে দেখতে থাকলেন অমিয়বাবু। শেষে সৌরীনের ঠেলায় পা মেলালেন তাদের সঙ্গে।
পথ হয়তো সংক্ষেপ হল, কিন্তু তাঁরা মুশকিলে পড়লেন। একে তো খাড়াই রাস্তা। পাহাড়ি লোকেদের পক্ষে অসুবিধের নয়, কেননা তাদের এটা অভ্যাস আছে। কিন্তু তাঁরা একে সমতলের বাসিন্দা তায় অনেকটা পথ জার্নি করে ক্লান্ত হয়েও লাগেজ বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। আগে থেকে কোন কুলী বলে রাখলে সুবিধে হত। এসবও যদি বাদ দেওয়া যায়, তাও ভয়ঙ্কর সমস্যা একটু পরেই প্রকট হল। সারাটা জঙ্গল জোঁকে ভর্তি। কোথাও দাঁড়ানো যাচ্ছে না। দাঁড়ালেই কোথা থেকে একদল জোঁক তেড়ে আসছে। সঙ্গে ছেলেটি অবশ্য সাহায্য করছিল। ওঁদের কাউকে ধরলেই সে এগিয়ে এসে ছাড়িয়ে দিচ্ছিল। স্রেফ হাত দিয়ে জোঁকটিকে দু’টুকরো করে ফেলছিল। কিন্তু ক্লান্তিতে, ভয়ে, ঘৃণায় তাঁদের অবস্থা কাহিল। মনে হচ্ছিল যে কোন মুহূর্তে ফুসফুস ফেটে যাবে! কিন্তু দাঁড়াবার উপায় নেই। এভাবেই চলতে চলতে কোনমতে বড় রাস্তায় উঠে টিনা স্রেফ মাটিতে বসে পড়ল।
-আর কিছুটা রাস্তা ম্যাডাম, ছেলেটি বলল।
-আরে, টিনা রাগত গলায় বলল, -তুমি তখন থেকে “অলিকতি বাটো, অলিকতি বাটো” বলে চলেছ। তা রাস্তাটা কখন শেষ হবে শুনি?
ছেলেটি রাগল না। হাসল। সুন্দর লাল লাল ছোপ ফুটে উঠল ভুটিয়া ছেলেটির দুই গালে। হাত তুলে কিছুটা দূরের পাহাড়টা দেখাল। রাস্তাটা বেঁকে গিয়ে সেই পাহাড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে। আশ্বাসের সুরে বলল,
-ওপারেই।
-দ্যাখ অমিয়দা, মোম-ই মধ্যস্থতা করে বলেছিল, -আর বড়জোর আধ ঘণ্টা, বেশি হলে কিন্তু আমরা ফিরে আসব।
-আমি আধ ঘণ্টা টানতে পারব না। টিনা বলল, -মরেই যাব।
-আরে মরে গেলে চলবে, সৌরীন উৎসাহ দিয়ে বলল, -আজ সন্ধ্যা থেকে পুরোদমে পার্টি হবে। পুরো ফূর্তি দু’টো দিন!
-কিন্তু আর পারছি না দাদা। টিনা করুণমুখে অজানা পথের দিকে চেয়ে বলল।
-একটু রেস্ট নাও, কিছুক্ষণ পরে না হয় আমরা রওনা দেব।
এইসময়ে একটা ফোন এসেছিল অমিয়বাবুর, বাড়ি থেকে। একবার দেখে নিয়ে কেটে দিলেন। অপর্ণাকে বলেই এসেছিলেন যে তাঁদের ম্যাগাজিনের পুরো টিম নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছেন। দিন দুই থেকে ফিরে আসবেন। তা, এই অসময়ে ফোন করে উৎপাত করলে ভালো লাগে? কিরকম বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে সে দিনে দিনে। কয়েক মাস হল পৃথক ঘরেই থাকেন তাঁরা। কিছুদিন আগে হঠাৎই রাতে তাঁর ঘরে চলে এসেছিল অপর্ণা।
-কী, শুয়ে পড়েছো?
আহা কি কথা! আলো নিভিয়ে উনি যেন তপস্যা করছেন। বিরক্ত স্বরে শুধু বলেছিলেন,
-দেখতেই পাচ্ছ।
বলতে বলতেই বাইরে থেকে আসা হালকা আলোতে দেখতে পেলেন মশারী তুলে বিছানায় ঢোকার প্রয়াস করছে অপর্ণা। বিরক্ত হলেন তিনি। এতটুকু শান্তি নেই। নেহাত সৌরীনের উৎসাহে, সাহচর্যে তিনি নানান আড্ডায় যাচ্ছেন, নতুন নতুন ব্যক্তিদের বিশেষত মহিলাদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। তাদের কারুর কারুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুধুই চার দেওয়ালের মধ্যে থাকছে না, তাকে সর্বাঙ্গে সফল করে তুলতে ওষুধের দোকানীর সাহায্য নিতে হচ্ছে। একটা আনন্দের স্রোতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, সেই নিয়েই বুঁদ হয়ে আছেন, তারি মধ্যে এ কিসের উৎপাত? ভিতরে ঢুকে মশারী গুঁজে দিল সে। বেশ কিছুটা মেক আপ করেই এসেছে। সেন্টের তাজা গন্ধ ক্রমশ সজীব হয়ে উঠল। তাঁর পাশে শোওয়ার জায়গা করে নিতে নিতে অনুযোগের সুরে অপর্ণা বলল,
-সারাদিন কোথায় ঘুরে বেড়ালে?
-আরে, তোমাকে তো বলেই গেছিলাম, অমিয়বাবু উদাসীন গলায় বললেন, -আমাদের সাহিত্যসভার আজ মিটিং আছে। আর খাওয়া-দাওয়া।
-এদিকে আমি তোমার জন্য বসে থেকে থেকে সেই বিকেলে খেলাম। অনুযোগের গলায় অপর্ণা বলল, -বলিনি তোমার জন্য অপেক্ষা করব?
মধ্যবয়সে এসে আর এত অভিযোগ-অনুযোগ ভাল লাগে না। ভাবছিলেন অমিয়বাবু, এই উৎপাত মনে হয় খুব শিগগিরি এখান থেকে নড়বে না। গেল ঘুমটা। এখন আবার অন্য কিছু চেয়ে বসলে মুশকিল। বিকেলেই সৌরীনবাবুর সঙ্গে গাজলডোবার কাছে গেস্ট হাউসটাতে পাশাপাশি ঘরে উঠতি দুই মহিলা কবিকে নিয়ে জমিয়ে ফূর্তি করেছেন। বেশ ধকল গেছে। আর এখন পেরে উঠবেন না। বয়স তো হচ্ছে।
কিন্তু অপর্ণা যদি শুনতে না চায়? যদি জোরাজুরি করে?
তার-ও তো ক্ষিধে আছে। বহুদিন হলে সেও যে অভুক্ত। সে তো তাঁর মতন এখানে সেখানে চরে বেড়ায় না, হয়তো বা সমাজের চাপে তার দ্বারা সেটা হয়ে ওঠে না। হয়তো বা সে এসব ভাবেই না। মনটা একটু নরম হয়ে এলেও পরক্ষণেই নিজেকে শাসন করলেন উনি। গোল্লায় যাক অপর্ণা! তাঁদের রাস্তা পৃথক হয়ে গেছে। যদিও ছাদটা একই আছে। তবে তার বেশি কিছু নয়।
-আমার জন্য কি একটুও সময় পাও না?
নিঃসন্তান অমিয়বাবুর গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করছিল যে না, তোমার জন্য আমার কাছে কোন সময় নেই। তুমি থাকবে তোমার মতন, আমি আমার মতন। কিন্তু এখনই এটা বলা ঠিক হবে না। আজকের বিকেল-সন্ধ্যার স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে বেশ একটা মধুর আমেজ এসে গিয়েছিল। এখনি ঝগড়া-ঝাঁটি হলে মনটা তেতো হয়ে যাবে। তার চেয়ে একে শান্তিতে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিজের ঘরে ফেরত পাঠানোই ভালো।
-ঘুমোও, অপর্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তিনি বললেন, -যাও, গিয়ে শুয়ে পড়।
-ঘুম আসছে না যে। যেন চুরি করতে চলেছে, তাঁর অনুমতি চাইছে, এমন গলায় অপর্ণা বলল, -আজ খুব ইচ্ছে করছে।
-আমি আজ খুব টায়ার্ড অপু। অমিয়বাবু তার মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, -অনেক জায়গায় যেতে হয়েছে। অনেক আলোচনা, তর্কাতর্কি হয়েছে। তারপরে একটু থেমে নিরুৎসাহ গলায় বললেন, -ঠিক আছে, কাল হবে।
হঠাৎই তীব্র গলায় প্রায় চেঁচিয়ে উঠল অপর্ণা, -আমার জন্য তোমার হাতে টাইম নেই, না?
-আরে শোনই না।
ওকে শান্ত করার বৃথাই চেষ্টা করলেন অমিয়বাবু। অচিরেই হাল ছেড়ে দিলেন। সম্ভব নয়। সে কোন কথাই শুনবে না।
-সবাইকে তুমি অকাতরে সময় দিতে পার, আর আমার জন্য? আমি ওদের মতন ছেনালী করতে পারি না? বয়স হয়ে গেছে আমার? এইতো?
নাহ! সেদিন অপর্ণাকে তিনি শান্ত করতে পারেন নি। চলে যেতে যেতে সে বলেছিল, -তোমাকে ফিরে আসতেই হবে, একদিন না একদিন! আমার কাছেই। তারপরে ঈষৎ হতাশ কন্ঠে বলেছিল, -শুধু কবে, সেটা যদি জানতাম!
ওর সেন্টের মিষ্টি গন্ধ ফিকে হতে হতে বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল।
কিছু সময় পরে তাঁরা সেই হোম স্টে-টিতে পৌঁছলেন। গেস্ট হাউসের মালিক নিজেই এসে গলায় সাদা রঙের সিল্কের খাদা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানাল। লাগেজ নিয়ে তাঁদের ঘরে তুলে রাখতে গেল। ফিরে এসে তাঁদের নিয়ে গিয়ে বসাল একটা খোলা প্রাঙ্গণে। সেখানে কিছু চেয়ার সাজানো আছে। হাতে হাতে ধরিয়ে দিল ঠাণ্ডা ড্রিংক্সের গ্লাস। তাকিয়ে দেখলেন সামনে একটা লোহার বড় পাত্র রাখা। শুনলেন যে সেখানেই বনফায়ার করা হবে। আগুন জ্বালিয়ে তার চারিদিকে বসে তাঁরা আড্ডা দেবেন। সেই আগুনেই মাংস ঝলসে নিয়ে বা খাবার গরম করে খেতে পারবেন। শুনেই চোখ চকচক করে উঠছিল বাকিদের।
এখান থেকে একটু উপরে উঠলে একদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন্যদিকে ডুয়ার্সের সমতলভূমি চোখে পড়ে। ডুয়ার্সের সবুজ দেহে হিমালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলি শিরা-উপশিরার মতন বিস্তৃত। তাদেরই বয়ে নিয়ে আসা পলিমাটি ডুয়ার্সের এলাকা করে তুলেছে উর্বর, শস্যশ্যামলা। সন্ধ্যার হালকা আলোতে সব-ই মায়াবী লাগছিল। মুগ্ধ চোখে পায়চারি করতে থাকলেন উনি।
-আরে এসো অমিয়। সৌরীনের কথায় চমক ভাঙল তাঁর। বলল সে, -তোমাকে কখন থেকে ডাকছি আমরা।
চেয়ে দেখলেন চেয়ারে তারা তিনজনে বেশ জমিয়ে বসেছে। হোম স্টে-টির মালিক বেশ ছোটাছুটি করছে। সঙ্গে তার কুকুরটি। তারা কাঠকুটো একজায়গায় জড়ো করেছে। কিছুটা দূরে কিছু পাথর জড় করে তার মধ্যে লোহার বড় পাত্রটা বসান হয়েছে। সেখানেই আগুন জ্বালানো হবে। তার চারিদিকে তাঁদের বসার জন্য চেয়ার ছাড়াও নিচু নিচু একগাদা গুঁড়ি রাখা। একটা জায়গায় কিছু শিক রাখা আছে মাংস পোড়াবার জন্য।
মালিক লোকটি এসে আগুন জ্বালিয়ে তার উপরে একটা লোহার তারজালি বসিয়ে দিল। তারজালির উপরে তাঁরা মাংস সেঁকে নিতে পারবেন, খাবার গরম করতে পারবেন। একটু পরে এসে হাতে হাতে গরম পকোড়ার ট্রে ধরিয়ে দিল। একটা ফোল্ডিং টেবিল পেতে তার উপরে নামিয়ে রাখল। আর একটা বাটিতে সস দিল। শুনলেন যে সসটা নাকি এরা নিজেরাই তৈরী করে। সঙ্গে প্লেটে প্লেটে পাহাড়ী বড় বড় শসা ও পেঁয়াজের স্যালাড দিয়ে গেল। আর কিছু ঝাল কম লংকা। সঙ্গে বিটনুনের কৌটো। আরেকটু পরে এসে মালিক নিজেই সবার হাতে হাতে বাঁশের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে গেল। গ্লাসের ভিতরে সরু কঞ্চির নল রাখা। এটা নাকি স্থানীয় বীয়ার- তোংবা। কঞ্চির নল দিয়েই পান করতে হয়। গ্লাসের ভিতরে স্থানীয় মিলেট রাখা। সেটা ফার্মেন্টেড হয়েই বিয়ার হয়েছে। গ্লাসের বিয়ার কমার সঙ্গে সঙ্গে বোতল থেকে ঈষদুষ্ণ জল ঢালতে হবে। তাহলে সেটাও একটু পরে বিয়ার হয়ে যাবে।
-চিয়ার্স!
সৌরীন সহর্ষে বলে উঠল। সঙ্গে মোম ও টিনা। টিনার কষ্ট কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেছে। বেশ বাচ্চা মেয়েদের মতন হাবভাব তার। তারাও বাঁশের গ্লাস তুলে ‘চিয়ার্স’ বলে উঠল। একটা সিপ দিয়ে দেখলেন, টেস্ট মন্দ নয়!
-এই একটু গান হোক, সৌরীন প্রস্তাব দিল, -মোম ভাল গান গায়।
-ভাল না হাতি, মোম বলল, -আমি তখনি গাইব যদি তোমাদের কেউ নাচতে রাজি থাক। তবে আগে এটা টেস্ট করতে দাও।
-ঠিক আছে। টিনা স্বাভাবিক গলায় বলল, -আমি রাজি। তবে গ্লাসটা শেষ করেই উঠব।
-স্যার, আমার গিটারটা আপনারা নিতে পারেন। কখন যে মালিক ভদ্রলোক দেখভালের জন্য ওঁদের কাছে নিজেই এসে দাঁড়িয়েছিল, সেটা ওঁরা খেয়াল করেননি। সে বলে চলল, -আমি গিয়েই ওটা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-ভাল কথা, সৌরীন বলল, -অমিয়, এটা তোমার ডিপার্টমেন্ট।
-ঠিক আছে, সতর্ক গলায় অমিয়বাবু বললেন, -তবে আগে একবার দেখে নিই।
-দেখ ভায়া, সৌরীন বলল, -ভাল দেখে একটা গান ধরো কিন্তু। কোন শ্যামা সঙ্গীত শুনতে এখানে আসি নি।
-হো-হো, ঠিক, ঠিক। মোম বলল। সে যেন এখনি হেসে লুটিয়ে পড়বে।
স্বভাব চাপা এই মেয়েটাও যে সময়মতন প্রগলভ হতে পারে, সেটা আগে জানতেন না। তবে সেরকম না হলে আসবেই বা কেন ওঁদের সঙ্গে? আজ রাতে মোম তাঁকে উষ্ণতা দেবে, এটা আগে থেকেই ঠিক করা আছে। তবে কালকের কথা কাল ভাবা যাবে।
খোলা মাঠে বসে তাঁদের উৎসব-টা বেশ রাত অবধি চলেছিল। টিনার নাচে, মোমের গানে, সৌরীনের পাগলামিতে, হোম স্টে’র অফুরন্ত আনুষঙ্গিক সরবরাহে জায়গাটা জমিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সৌরীন তো মাঝে মাঝেই উঠে টিনার কোমর জড়িয়ে ধরে নাচছিল। একবার তো ওকে কোলে তুলে চুমু খেয়েই ফেলল। তবে টিনাও ছাড়েনি। একটু পরে সেও শোধ তুলল। আর মোম কিছু পরেই তাঁর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে প্রেমের গান গাইতে থাকল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে আরেকটু এগিয়ে চটুল ভোজপুরি গান গাইতে শুরু করল। সৌরীন আর থামেনি। সে টিনাকে জড়িয়ে ধরেই গানের বাস্তব রূপ দিচ্ছিল। একবার তাকে পিঠে তুলে আগুনটাকে এক চক্কর দিল। আর গানের মাঝে মাঝে খিল খিল করে হাসতে হাসতে তাঁর সারাটা শরীরে হাত বুলিয়ে চলেছিল মোম। কখনও বা সুড়সুড়ি দিচ্ছিল, কখনও বা আদিম ইশারা করে চলেছিল। বেশ চলেছিল সবকিছু। তবে পরদিন সকালে বন্ধু সুশান্তের থেকে ফোনে যে সংবাদটা পেয়েছিলেন, তাতে চমকে উঠেছিলেন। এতটা তিনি আশা করেন নি।
(৩)
সৌরীনের স্ত্রী ববিতার দিকে আরেকবার ভালো করে তাকালেন তিনি। বয়স সৌরীনের চেয়ে বেশ কিছুটা কম। তায় প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে নিজেকে বেশ অ্যাট্রাকটিভ রাখতে সমর্থ হয়েছে। তবে চোখের দিকে তাকালে তারও যে বয়স হচ্ছে, সেটা বেশ বোঝা যায়। সঙ্গে কি স্বামীর জন্য যোগ হয়েছে দুশ্চিন্তা? হবেও বা।
-আচ্ছা, কোথায় এত ঘুরতে যান আপনারা? বিরক্তিভরা গলায় জিজ্ঞেস করল ববিতা।
-এদিক সেদিক। হাল্কা গলায় সতর্কভাবে জবাব দিয়েছিলেন অমিয়বাবু, -বিভিন্ন সাহিত্য সম্মেলনে।
-আর কোথায় কোথায় যান? পাহাড়ে?
-তা, কিন্তু কিন্তু করে অমিয়বাবু বলেই ফেললেন, -কাজে-কর্মে যেতেই হয়।
-নাকি অকাজে? তাঁর দিকে কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে জিজ্ঞেস করল ববিতা, -ঠিক করে বলুন তো।
-কি যে বলেন………। বলে আস্তে করে থেমে গেলেন অমিয়বাবু।
-আমি শুনেছি, তাঁর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে ববিতা বলল, -সেদিন রীনাও গেছিল আপনাদের সঙ্গে।
বুঝতে পারলেন রায়মাটাং-এ যে হোম স্টে-তে ছিলেন তাঁরা এক রাতের জন্য, সেই খবর পেয়ে গেছে ববিতা। কিন্তু খুব বেশি কেউ তো ব্যাপারটা জানে না। তাহলে কি ভদ্রমহিলা সবই জানেন?
-হ্যাঁ, মানে, কিন্তু কিন্তু করে বললেন উনি, -প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে আমরা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম।
-শুধু তাই নয়, শেরপাগাঁওয়ের দিকেও ফূর্তি করতে গেছিলেন। আর গাজলডোবার একটা প্রাইভেট গেস্ট হাউসে আপনারা প্রায়ই গিয়ে থাকেন। কঠিন দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাতে তাকাতে ববিতা বলল, -সত্যি করে বলুন, কথাগুলো আমি মিথ্যে বলছি?
সেই বজ্রদৃষ্টির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলেন না অমিয়বাবু। বোঝা যাচ্ছে ববিতা সব জানে। তাছাড়া সুন্দরী মেয়েদের সামনে বেশিক্ষণ নিজেকে আগলে রাখতে পারেন না। সেটা তাঁর অনেক দুর্বলতার একটি। সংক্ষেপে শুধু বললেন,
-গেছিলাম। স্বীকার করছি।
-ঠিক করে বলুন তো, ববিতা বললে, -কে উদ্যোগী?
-প্ল্যান সৌরীন-ই ঠিক করে। উনি বলে চললেন, -আমিও সঙ্গে থাকি।
-লজ্জা লাগে না আপনার? ঝাঁঝালো স্বরে ববিতা বলল, -বিবেক বলে কিছুই কি নেই?
মুখ নিচু করে নিলেন অমিয়বাবু। কথাটা সত্যি। কিন্তু কেন লজ্জা পাবেন, সেটা বুঝতে পারলেন না। ধীর স্বরে শুধু বললেন,
-খিদে পেলে কি খেতেও নেই?
-আমার কি খিদে নেই? হিস হিস করা গলায় ববিতা বলল, -তাকান আমার দিকে। তাকান!
বলে কিছুক্ষণ ফুটন্ত দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে সে বলল, -আপনারা ফূর্তি করে বেড়াবেন। এদিকে আমার কী হবে, সেটা ভেবেছেন কখনও?
মাথা নিচু করে চুপ করে বসে ছিলেন অমিয়বাবু। এভাবে কোনদিন ববিতার কাছে জেরার মুখে পড়বেন, সেটা আগে কখনও ভাবেন নি। একটা অপরাধবোধ ক্রমশ জাগ্রত হচ্ছিল ভিতরে। সামনে কোন সুন্দরী মহিলা না থাকলে যেটা অনেকের কখনোই জাগ্রত হয় না। বিপরীত দিক থেকে কখন নিঃশব্দে উঠে ববিতা এসে তাঁর পাশে বসেছে, তিনি বুঝতে পারেন নি। চমক ভাঙল তার হাতের টোকায়। চমকে উঠে কি বলবেন, ভেবে পেলেন না অমিয়বাবু। এদিকে কেমন একটা মাদকতা মাখা গলায় ববিতা তাঁর দিকে চেয়ে বলল,
-আর আমি যদি আপনার সঙ্গে যেতে চাই, নিয়ে যাবেন তো আমাকে?
বলে কী মেয়েটা? মানে ভদ্রমহিলা। চমকে উঠলেন তিনি। রসিকতা করছে নির্ঘাত। তবে সংসারে কিছু লোক থাকে যারা উচ্ছিষ্টভোজী। যত্ন করে মুখের কাছে তুলে দিলেও তারা সেটা জাস্ট নিতে পারে না। কুড়িয়ে পাওয়া খাবার আহ্লাদে খেয়েই তারা বেঁচে থাকে। নাহলে ঘরে এমন একটা সুন্দরী, যৌবনবতী স্ত্রী থাকতে সৌরীন কেন এখানে সেখানে এঁটো খাবারের সন্ধানে ঘোরে? শুধুই কি সাহিত্যের মোহে? শরীরের আবেগে? নাকি স্রেফ স্বাদ বদলের জন্য?
-আমি………আমি……
ঠিক উত্তর দিতে পারছিলেন না অমিয়বাবু। সুন্দরী নারীদের ‘না’ করাটা তাঁর ধাতে নেই। কিন্তু, এ যে সৌরীনের স্ত্রী। সাক্ষাৎ ধর্মপত্নী! যদি ববিতা একান্তই চাপাচাপি করে তবে সৌরীন না জানলেই তো হল………। তাঁর ডান বাহুতে বাম হাত রেখে ববিতা বলল,
-কী হল? একটা মধুমাখা গলা বলে চলল, -উত্তর কিন্তু এখনও পেলাম না অমিয়দা।
সবে ওর হাতের উপরে তাঁর বাঁ হাতটি রাখতে চলেছেন, এমন সময় যেন বাজ পড়ল ঘরে।
-বলি হচ্ছেটা কী?
চিৎকার করতে করতে ঘরে ঢুকল সৌরীন। অমিয়বাবুর অবস্থা তখন অবর্ণনীয়। লজ্জায়, ভয়ে, দুঃখে একেবারে যেন মরমে মরে গেলেন। কেন সুন্দরী মেয়েদের ডাক তিনি উপেক্ষা করতে পারেন না? কেন ববিতার কথা শুনে কেন ছুটে এলেন সৌরীনের বাড়িতে? বন্ধুর সঙ্গে এমন বিশ্বাসঘাতকতা না করলেই কি চলছিল না? তবে ববিতা তুলনায় স্বাভাবিক। সে একটু সরে বসল মাত্র।
-জানতাম না, গম্ভীর স্বরে সৌরীন বলল, -তুমি অন্তত আমার সঙ্গে এমন তঞ্চকতা করবে।
-আমি……আসলে……শোন, আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি……সেরকম কিছু নয়
তোতলাতে তোতলাতে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন অমিয়বাবু। কিন্তু কী যে বলবেন, বুঝতে পারলেন না। তীব্র রাগে বেঁকে-চুরে যাওয়া সৌরীনকে দেখতে দেখতে কথার মাঝে খেই হারিয়ে ফেললেন।
-বেরোও আমার ঘর থেকে। চিৎকার করতে করতে সৌরীন বলল, -যে থালায় খায়, সেই থালা কেউ নোংরা করে?
ববিতা চুপ করে বসে ছিল। অমিয়বাবুকে আক্রান্ত হতে দেখে সে মোটেও এগিয়ে এল না। প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা।
স্বাভাবিক।
স্বামীর সংসারে থাকতে গেলে কিছু ক্ষেত্রে মুখ বুজেই বসে থাকতে হবে, বিশেষ করে যদি নিজের কোন সংস্থান না থাকে। হয়তো সেই কারণে সব জেনে বুঝেও অপর্ণা তাঁকে ছেড়ে যেতে পারছিল না। নাকি সে তাঁকে সত্যি সত্যি ভালবাসত? অন্তত সে ছাড়া অমিয়বাবুকে মন থেকে ভালবাসে, এমন কেউ নেই আজ এই কোলাহলমুখর পৃথিবীতে। এত লোক চারিদিকে, অথচ তিনি একা, বড়ই একা। তাঁর হয়ে বলার কেউ নেই আজ।
আচ্ছা, সবাই কী সেইরকম? এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতন?
কেউ কি তাঁকে বিশ্বাস করে না? একটা ছোট্ট ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা কি এত দিনের একটা সম্পর্ক চিরদিনের মতন শেষ করে দেয়?
তাহলে উনি যাবেন কোথায়? কে তাঁকে বিশ্বাস করে? কার কাছে খুঁজবেন আশ্রয়? কে শেষদিন অবধি তাঁর জন্য প্রতীক্ষায় থাকবে?
অপর্ণা! হ্যাঁ, অপর্ণাই! স্বার্থে অন্ধ এই পৃথিবীত আর কেউ নিজের নয়।
হ্যাঁ, ছেড়ে গেলেও অপর্ণা নিশ্চিত তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে সেই ঘরটিতে, যে ঘরটিতে অপেক্ষারত অপর্ণা বিদায় নিয়েছিল বাস্তব নামক স্টেজ থেকে।
তীব্রভাবে অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে এইসবই ভাবছিলেন অমিয়বাবু। আজ একবার ক্ষমা চেয়ে নেবেন অপর্ণার কাছে। সর্বতোভাবে! আজই! মনেপ্রাণে।
(৪)
একতলাটা ভালভাবে লক করে অনেকদিন পরে দোতলার সেই ঘরটির দিকে পা বাড়ালেন অমিয়বাবু। সন্ধ্যার অন্ধকারে আলো না জ্বেলেই সিঁড়ি দিয়ে ধীর পায়ে উঠে এলেন উপরে। তালা খুলে দরজার একটা পাল্লা সরিয়ে সদ্য বিবাহিতের ন্যায় খানিক সঙ্কুচিত মুখে ভিতরে প্রবেশ করলেন তিনি। হাতড়ে হাতড়ে দরজাতে ছিটকিনি তুলে দিলেন। তারপর অন্ধকারেই বাস্তবকে বিদায় জানিয়ে পরাবাস্তবের পর্দা টেনে দিলেন নিঃশব্দে। আর বড় ঘরটার পুরানো, পরিচিত অথচ অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই খাটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন,
-অপর্ণা, আমি ফিরে এসেছি!
বহু পুরানো অথচ চিরচেনা একটা সেন্টের হালকা সুগন্ধ ভেসে এল নাকে। ক্রমশ তা তীব্র হয়ে উঠল। ভরাযৌবনে অপর্ণা এই সেন্ট-ই ব্যবহার করত। ক্রমে সেই গন্ধ তাঁর চেতনা গ্রাস করে নিল।
কিছুসময় পরে বন্ধ ঘরটা ফিরে পেল তার নীরবতা।