বুধু অবাক হয়ে ছেলে তিনটির দিকে তাকিয়ে ছিল। তখন বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যা শুরু হবে প্রায়। মাঠের ধারে ঝাঁকড়া কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিচে কিছুটা ছায়া মতন। এখন সন্ধ্যা নামায় সেখানে ছায়া ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। এদিক সেদিক হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে সেখানে গিয়ে ঘাসে বসে পড়ল বুধু। আর তখনই নজরে এল এই তিনজনের উপরে। খালি হাতে তারা বসে ছিল ঘাসে। আর আপনমনে সমানে বকবক করে যাচ্ছিল।
-হাঃ হাঃ হাঃ……………একজনের হাসি আর থামতেই চায় না। হাসতে হাসতে সে লুটিয়ে পড়ল মাটিতে।
-তুই কিন্তু নাটক করবি না বলে দিলাম। অন্য একজন চোখ-মুখ শক্ত করে, ডান হাতের তর্জনী কাল্পনিক কারুর দিকে উঁচিয়ে বলল, -আমাকে চিনিস না। এসব ফাজলামি মারার বান্দা আমি না। পরক্ষণেই সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল, -আমার দিকটা একটু ভেবে দ্যাখ।
দেখে বেশ মজাই লাগছিল বুধুর। এবারে সে তৃতীয়জনের দিকে তাকাল,
-শোন তুমি, ছেলেটি ফিস ফিস করে বলে চলল, -কাল আমি তোমার কোন কথাই শুনব না। দেখ না………এইসা আদর করব না। ………………আরে তুমি তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারলে তো।
দেখে শুনে বেশ ভালই লাগল বুধুর। তার মতন লোকজন এখনও আছে তাহলে। মাঝে মাঝে নিজেকে এত একা লাগে। ছেলেগুলির পোশাক ভদ্র হতে পারে, কিন্তু আদতে ওর গোত্রেরই বলে মালুম হচ্ছে। একটু গল্প করা যাক।
এগিয়ে গিয়ে যে জায়গায় সে বসল, সেখান থেকে তিনজনেই খুব কাছে, প্রায় সমদূরত্বে। গুছিয়ে বসে সহজ হয়ে সবে সে প্রথম ছেলেটির সঙ্গে কথা বলতে যাবে, এমন সময় ছেলেটি তার কানে লাগানো ব্লু টুথ ইয়ারফোন খুলতে খুলতে ওর দিকে চেয়ে খেঁকিয়ে উঠল,
-আরে যা। একটা পাগল চলে এসেছে। দূর হ হতভাগা।
বলে ঘেন্নায় সে মুখ বাঁকাল। বাকি দু’জনও প্রথম জনের মতন গালি পেড়ে তাকে ভাগাতে এগিয়ে এল।
“আমার মতন পাগল না, সেয়ানা পাগল সব, নতুন জমানার” মনে মনে বিড় বিড় করতে করতে বুধু এগিয়ে চলল মাঠের অন্য ধারের দিকে, যেখানে খান কয়েক কুকুর মিলে প্রাগৈতিহাসিক সংস্কারে চিৎকার-চেঁচামেচি করছিল। তাদের জমানা বদলায় নি!
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++