Home / গল্প / ফাঁদ- নির্মাল্য ঘরামী

ফাঁদ- নির্মাল্য ঘরামী

গল্প
ফাঁদ

ক্লান্ত এক সন্ধ্যায় একাকী ফাঁদের পাশে বসে লোকটা আজ ভেবে দেখল যে সে অনেকদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে পাখিটিকে ধরার। নয় নয় করেও কয়েক হাজার বছর হয়ে গেল। এটাকে ধরতে পারলেই আর কোন চিন্তা নেই। সমস্যা এটা যে এই পাখিটাকে ধরতে গেলেই এর সঙ্গী অন্য পাখিটা চলে আসছে। সঙ্গীটি মারাত্মক। ফলে আর পাখিটাকে ধরাই যাচ্ছে না। অথচ ফাঁদ পাতলে সঙ্গীটাই প্রথমে আসছে। এ এক মুশকিল! এদিকে সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে শরীরে আর শক্তি নেই মোটে। অথচ………

 

আবার সঙ্গীটা আসছে। বীভৎস দেখতে এটাকে। গা থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। সারা গায়ে বাবলা গাছের কাঁটার মতন পালক, ঠোট দু’টি করাতের মতন ধারালই শুধু না, সেইরকম দাঁত আছে একসারি। আর পা দু’টি একেবারে ভারি থামের মতন। মনে হচ্ছে একবার এলে শুধু জালই যে ফেঁসে যাবে তাই না, ওকেও হয়তো মুখে করে তুলে নেবে। যদিও আজ অবধি লোকটা যেমন পাখিটাকে পায়নি, তার সঙ্গীটাকেও এড়িয়ে গেছে। এত সুন্দর পাখিটার এই বিচ্ছিরি সঙ্গী? লোকটা মুখ তেতো করে চেয়ে জঘন্য গালি দেয়, বিশ্রী অঙ্গভঙ্গী করে। কিন্তু ওইটুকুই।

 

আসল সঙ্গীটা। খুব কাছে চলে এসেছে লোকটার। বেশ স্পষ্ট হয়ে অদূরেই দেখা যাচ্ছে সঙ্গীটাকে। ওর চোখের দিকে তাকালেই কেমন গা শিরশির করে ওঠে। ক্লান্ত লোকটা আজ আর পালাল না। ঠায় ওর ফাঁদের কাছে বসেই থাকল। খুব কাছে এসে গেল সঙ্গীটা। ভয়ে লোকটা চোখ বুঁজল। ছোঁ মেরে তুলে নিল সেটা লোকটাকে। উড়ে চলল বাসার দিকে। ভয়ে লোকটা চোখ বুঁজে বসে ছিল। কিন্তু এবারে চোখ খুলে দেখল কিছুটা কষ্ট যে হচ্ছে না, তা নয়। কিন্তু খুব একটা কই লাগছে না তো। প্রথমে খানিক কষ্ট হচ্ছিল, পরে তাও না। শুধু সঙ্গীটার দিকে তাকেলে কেমন শিউরে উঠছিল লোকটা।

 

-ও, মা এ তুমি কাকে নিয়ে এসেছ? পাখিটা তার সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করল।

-চিনতে পারছ না? সঙ্গীটা কৌতূক করে জিজ্ঞেস করল, -ঠায় তোমার জন্যে বসে থাকত।

-তুমি কমবয়সী কাউকে আনতে পারলে না? পাখিটা দুঃখিত মনে ঠোঁট নাড়াতে নাড়াতে বলল, -এর যে পৌনে চারকাল চলেই গেছে। এ কি পারবে?

-আমি পারব! লোকটা পাখিটার সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে গেছিল। সে বলল, -আমাকে একটা সুযোগ দিয়েই দেখ।

-তোমাকে, পাখিটাকে দেখিয়ে সঙ্গীটা লোকটার দিকে চেয়ে বলল, -আমি ওর সাথী করে দেব। ভেবে দ্যাখ, রাজি তো?

-আমি রাজী। লোকটা তড়িঘড়ি করে বলল। তার ভয় হচ্ছিল সম্বন্ধটি না কেটে যায়।

-দেখা যাক। সুন্দরী পাখিটি গম্ভীর গলায় বলল। শর্ত একটাই, -থামা যাবে না।

-আমিও তাই চাই। লোকটার মুখে এতক্ষণে হাসি দেখা গেল।

 

সুন্দরী পাখিটি লোকটাকে নিয়ে অদৃশ্য হল বাসার ভিতরে। তারপর লোকটাকে নিয়ে ঘুরতে থাকল, ঘুরতেই থাকল শূন্যে।

-আমি আর বাতাসে ভেসে থাকতে চাই না। লোকটা কাতর স্বরে বলল, -এবারে থামাও। কোথাও বসি। তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।

-আমি তো এখনই থামতে পারি না। তোমাকে এভাবেই পাক খেতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তৃপ্ত হই। বলতে চাইলে এখানেই বলে ফ্যাল।

-তোমার সঙ্গী? লোকটা অবাক হয়ে বলল, -তাকে তো নিয়ে এমন করে ঘুরে বেড়াও না?

-সে আমার জন্যে নিজেকে বিসর্জন দেয়নি। সুন্দরী পাখিটা বলল, -তাই সে মানুষ আছে।

-তাহলে আমার উপায়?

-যদি তুমি আবার মানুষ হয়ে যাও। পাখিটা বলল, -লাল, হলুদ, কালো যে কোন বর্ণের মানুষ। শুধু যার হাতে কোন ফাঁদ নেই।

-আর যদি আমি ভীষণ দর্শন হই? পাখিটির সঙ্গীটার প্রতি লোকটির বীতরাগ তখনও যায়নি।

-হাতে ফাঁদ থাকা যাবে না। ওই দ্যাখ আমার সঙ্গীকে। পাখিটা উপরের দিকে ইশারা করল। -আমরা দু’য়ে মিলে আদতে একটি।

লোকটি অবাক হয়ে দেখল ওর সঙ্গীটা উড়ে বেড়াচ্ছে উপরে। আর আস্তে আস্তে সে তার বীভৎস আকার ঝেড়ে ফেলে নতুন, সুন্দর একটি পাখিতে পরিণত হচ্ছে। এদিকে এই পাখিটা ক্রমশ বিকট, কদাকার আকৃতি লাভ করছিল। লোকটি ভয়ে চোখ বুজে ফেলল।

 

লোকটা এখন ফাঁদ হাতে একাকী ঘুরে বেড়ায়। দীর্ঘদিনে অভ্যাস একদিনে যাওয়ার নয়। তবে ও কিন্তু আর ফাঁদ পাতে না, পাতবেও না কোনদিন। নিজেই সে তার ফাঁদটি ছিঁড়তে থাকে প্রতিদিন।

 

 

……০……

Leave a comment

Check Also

স্বীকারোক্তি

স্বীকারোক্তি- ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য্য

    আজই ফোনটা ডেলিভারি দিয়ে গেলো। অনলাইনে একবার দেখেই ভারি পছন্দ হয়ে গেছিল সমীর …

দর্পণে

দর্পণে – নির্মাল্য ঘরামী    

    -চল, আমি জোরের সঙ্গে বললাম, -ওসব একদম ভাবিস না। তোকে এতদিন পরে পাচ্ছি, …

ফয়সালা

ফয়সালা – নির্মাল্য ঘরামী

  -দেখুন স্যার। বলে সিকিউরিটি গার্ডটি বিজয়ীর দৃষ্টিতে মহাকুলসাহেবের দিকে তাকালো। তার হাতে ধরা ব্যাগটির …

রক্তগোলাপ/ মৌসুমী পাত্র/ পুণ্যতোয়া ধর

রক্তগোলাপ – মৌসুমী পাত্র

  একটা মোটা দড়ি থেকে পাশাপাশি ঝোলানো সারি সারি মৃতদেহ। ছাল ছাড়ানো। গত কদিন ধরেই …