Home / জানা অজানার কথা / ধনধান্যপুষ্পভরা- মৌসুমী পাত্র

ধনধান্যপুষ্পভরা- মৌসুমী পাত্র

(আজ, ভারতের ৭২ তম স্বাধীনতা দিবসে তোমাদের জন্য শুরু করছি আমাদের নতুন বিভাগ জানা- অজানার কথা। তোমাদের জন্য নানারকম নতুন নতুন জানা অজানা কাহিনী নিয়ে হাজির হবো মাঝেমাঝেই। আজ আমরা জানবো ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’ গানটি ও তার গীতিকার সম্পর্কে।)

‘ধনধান্যপুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানটা নিশ্চয়ই আমরা অনেকেই শুনেছি। তাইতো? আমাদের স্বাধীনতা দিবস ১৫ ই আগস্টের দিন বা ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে আমরা অনেকেই শুনেছি বা নিজেরাও গেয়েছি। এতো সুন্দর একটি গান কে লিখেছিলেন সেটা নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে এবার? গানটি লিখেছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। তাঁর সময়ে তিনি ডি এল রায় নামেও পরিচিত ছিলেন।

সেই সময়টা আমাদের দেশের পক্ষে এক বড়ো আশ্চর্যের সময়। একদিকে বিদেশি ইংরেজরা আমাদের দেশের মানুষজনের ওপর নানা ধরনের দমন পীড়ন চালাচ্ছে, অত্যাচার করছে। দেশের মানুষের সেইসব দুঃখকষ্টের কথা ভাবলে আজো শিউরে উঠতে হয়। আবার ওই একই সময়ে আমাদের দেশের বড়ো বড়ো কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকারেরা ছড়া- কবিতা লিখছেন, গান বাঁধছেন, নাটক রচনা করছেন। আবার একদল স্বাধীনতা সংগ্রামীরা নিজের জীবনের পরোয়া না করে জীবনপণ লড়াইয়ে নেমেছেন।

রাজা রামমোহন রায় বা পুণ্যশ্লোক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মানুষেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সামাজিক আন্দোলনে। আবার স্বামী বিবেকানন্দ- ভগিনী নিবেদিতা মানবধর্মেরই নতুন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। অন্যদিকে ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র লিখে চলেছেন ‘রাজপুত জীবন-সন্ধ্যা’, ‘মারাঠা জীবন- প্রভাত’ প্রভৃতি একের পর এক জাতীয়তাবাদী উপন্যাস। আবার ওইরকম সময়েই দীনবন্ধু মিত্র লিখছেন ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচারের করুণ কাহিনী ‘নীলদর্পণ’ নাটক। বঙ্কিমচন্দ্র লিখলেন ‘আনন্দমঠ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ‘নাইটহুড’ উপাধি ত্যাগ করলেন, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় সূচনা করলেন ‘রাখীবন্ধন’ উৎসবের।

কত যে গান লেখা হয়েছিল সে সময়! পরাধীন দেশের মানুষজনের মধ্যে দেশভক্তি জগিয়ে তোলার জন্য, দেশবাসীকে নতুন দিশা দেখানোর জন্য, সর্বোপরি বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের অনুপ্রেরণা জোগানের জন্য। কাজী নজরুল ইসলাম একের পর এক লিখে যাচ্ছেন ‘কারার ওই লৌহকপাট’, ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’, ‘আজি রক্তনিশি ভোরে’ ইত্যাদি। অতুলপ্রসাদও একের পর এক গান বাঁধছেন।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ও (১৮৬৩-১৯১৩) লিখে গেছেন একের পর এক নাটক, কবিতা ও গান। তিনি ছিলেন একাধারে সুরকার, গীতিকার ও নাট্যকার। কিন্তু এ বাদেও তিনি পত্রসাহিত্য, ভ্রমণকাহিনী, প্রহসন, প্রবন্ধ ও অন্যান্য নানা রচনা করেছিলেন। তাঁর লেখা নাটকের মধ্যে ‘নূরজাহান’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’, ‘মেবার পতন’ ও’সিংহল বিজয়’ ইত্যাদি বিখ্যাত। ১৮৬৩ সালের ১৯শে জুলাই নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরে তাঁর জন্ম। বরাবরই তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তারপর কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়ার জন্য ইংল্যাণ্ড যান। ইংল্যাণ্ড থেকে ফেরার পর ১৮৮৬ সালে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন। এর কিছুদিন পরই তাঁর বিবাহ হয় সুরবালা দেবীর সঙ্গে। কর্মজীবনে বহুবার তাঁকে বদলি হতে হয়েছে।

প্রায় পাঁচশোর ওপর গান লিখেছিলেন তিনি। তাঁর লেখা গানগুলি দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত এবং বাংলা গানের জগতে একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে স্বীকৃত। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত অবশ্যই ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’ গানটি।

চিত্রশিল্পী- গুঞ্জা

তোমাদের সুবিধার জন্য ‘ধনধান্যপুষ্পভরা গানটির একটি নির্ভুল পাঠ এখানে দিলামঃ-

 

 

Leave a comment