চলচ্চিত্র পরিচালনার কথা আলোচনা প্রসঙ্গে আন্তোনিয়নি একবার বলেছিলেন, “A director is man, therefore he has ideas, he is also an artist, therefore he has imagination. Whether they are good or bad, it seems to me that I have an abundance of stories to tell.” তাঁর সারা জীবনের পরিশ্রমের ফসল একের পর এক সিনেমার মধ্যে দিয়ে তিনি একের পর এক গল্প বলেছেন। যা দেখেছেন, যা শুনেছেন সেগুলোর থেকেই তিনি গল্পের উপাদান সংগ্রহ করেছেন, এবং তা প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্রের ভাষায়। আধুনিকতার পূজারী এই ইতালিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক সারা জীবন সিনেমায় আধুনিকতার সাধনা করে গেছেন।
সিনেমায় সৌন্দর্য বিজ্ঞানের উপাসনা যে পরিচালকরা করেছেন তাঁদের মধ্যে আন্তোনিয়নি অন্যতম। তাঁর সিনেমা নিঃসন্দেহে সমকাল ও উত্তরকালের পরিচালকদের প্রভাবিত করেছে। ১৯১২ সালে আন্তোনিয়নির জন্ম, ২০০৭ সালে তাঁর মৃত্যু। আন্তোনিয়নি পরিষ্কার করে জানিয়েছিলেন যে তিনি সমাজবিজ্ঞানী বা রাজনীতিজ্ঞ ব্যক্তি নন, ভবিষ্যৎ কেমন হবে কেবলমাত্র সেটুকুই তিনি কল্পনা করেন এবং নিজের মত করে সিনেমায় রূপ দেন। তাঁর সৃষ্ট কোন চরিত্রই ভঙ্গুর নয় এবং তাদের মধ্যে কোনরকম দ্বিধার স্থান নেই।
আন্তোনিয়নির অবিস্মরণীয় কীর্তি হল তিনটি সিনেমা যেগুলির মধ্যে পরিস্ফুট হয়েছে আধুনিকত্বের ধারণা —
১৯৬০ সালের ‘L’Avventura’, ১৯৬১ সালের ‘La Notte’ এবং ১৯৬২-র ‘L’ Eclisse’। এই ত্রয়ী চলচ্চিত্রে যেভাবে তিনি আধুনিকত্বের রূপায়ন করেছেন সেরকম আর কোন পরিচালকের কাজে আমরা দেখতে পাইনা। এর পাশাপাশি যে সিনেমাটির কথা বলব সেটি হল ‘Blow-up’, প্রকাশকাল ১৯৬৬।
চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তনিয়নির একটা বড় অবদান হল এই যে বর্ণনামূলক সিনেমার ধারণাটাকেই তিনি একক প্রচেষ্টায় পাল্টে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় এর সঙ্গে গল্প বলার ধরণটাও আমূল বদলে দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যুগান্তকারী ভূমিকা নিয়েছিলেন। সিনেমার আঙ্গিককে পাল্টে ফেলে আধুনিকত্ব প্রতিষ্ঠা করা তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। এ হল তাঁর নিজস্ব জগৎ ষেখানে তিনি ও তাঁর চরিত্রগুলির অস্তিত্ব খুব বেশী করে প্রাসঙ্গিক, এতটাই প্রাসঙ্গিক যে সংলাপ ব্যবহার না করেও তিনি স্বচ্ছন্দে গল্প বলে চলার ক্ষমতা রাখেন। মুখের কথার বদলে অভিব্যক্তি ব্যবহার করেও তিনি ভাবপ্রকাশ করতে সক্ষম।
আন্তনিয়নি মনে করেন নাটকীয়তা অবশ্যই সিনেমার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং বাস্তববাদও নিশ্চয়ই স্বীকার্য, কিন্তু তাঁর বিশেষত্ব এইখানে যে তিনি উপাদানগুলিকে উপস্থাপন করেন নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তাধারা অবলম্বন করে। তিনি নিজেই একদা মন্তব্য করেছিলেন, “I am not a theoretician of the cinema. If you ask me what directing is, the first answer that comes to my head is: I don’t know.” আন্তনিয়নি নিজেকে সিনেমার তাত্ত্বিক বলে পরিচয় না দিলেও তত্ত্বের প্রভাব তাঁর সিনেমায় অবশ্যই আছে, তবে এটা বলা চলে যে নিছক তত্ত্বের কচকচি কোনসময়ই তাঁর সিনেমাকে ভারাক্রান্ত করেনি। তিনি সিনেমার ভাষায় গল্প বলে চলেন এবং গল্পের মোহে দর্শককুল আবিষ্ট হন।
সিনেমায় ব্যক্তিমানুষের বিচ্ছিন্নতা অন্যান্য পরিচালকদের মত আন্তোনিয়নিও দেখিয়েছেন, কিন্তু সেটা করেছেন একেবারে নিজস্ব ভঙ্গীতে। সংলাপের উপর তিনি জোর দেন নি এবং খুব বেশী সংলাপ তিনি ব্যবহার করেনও নি। শুধু তাই নয়, চরিত্রগুলির মুখে দীর্ঘ বক্তব্যও তিনি যতটা পেরেছেন পরিহার করেছেন। জীবন আমাদের সামনে অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে আসে, আন্তোনিয়নির সিনেমার মধ্যেও আমরা দেখতে পাই বহু সম্ভাবনার সমাহার। মনের ভাব, সামগ্রিক পরিকল্পনা ও মনোগত অভিপ্রায়কে তিনি সবসময় কাহিনী ও চরিত্রচিত্রণের থেকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
সত্যি কথা বলতে ফেলিনি, আন্তোনিয়নি, বুনুয়েল, ভিসকন্তি ও রসেলিনি — এই পাঁচজন পরিচালক চলচ্চিত্রের ধারণাটাই বদলে দিয়েছেন। ঋত্বিক ঘটক মনে করতেন বুনুয়েলের থেকে বড় মাপের পরিচালক খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু গল্প বলার গুণে আন্তোনিয়নি হয়ত অন্যদের থেকে একটু এগিয়ে থাকবেন। তাঁর সমসাময়িক ফেদেরিকো ফেলিনির থেকে তিনি একেবারে ভিন্ন গোত্রের পরিচালক।
আন্তর্জাতিক স্তরে আন্তোনিয়নির সাফল্যের সূচনা হয় যে ছবিটির হাত ধরে সেটি হল ‘L Avventura’। বিশেষ করে যে দুটো বিষয় তখনই তাঁকে আলাদা করে চিনিয়েছিল সে দুটি হল ঘটনার সংখ্যাল্পতা এবং খুব কম সংলাপের ব্যবহার। কিন্তু এটাই আন্তোনিয়নির নিজস্ব গল্প কথনের শৈলী, তাঁর ছবির স্বাভাবিক ধীর চলন এই শৈলীর সহায়ক। এই ছবিটি প্রদর্শনের সময় সব আলোচকেরা যে খুব সন্তুষ্ট হয়েছিলেন এমন কথা বলা যাবে না, ফলে তাঁর ভাগ্যে মিশ্র প্রশংসা জুটেছিল।
এর আগে ১৯৫৫ সালের ‘Le Amichhe’ ছবিতে আন্তোনিয়নি বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। একটা উদাহরণ দিলে পরিচালকের স্টাইলটা বুঝতে সুবিধে হবে – ঘটনাবলীর ধারাবাহিক বর্ণনা না করে বরং এমন কয়েকটি ঘটনার সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে যেগুলিকে মনে হতে পারে আপাতভাবে সংযোগবিহীন, এবং তার পাশাপাশি সংলাপ কমাবার চেষ্টা আগাগোড়াই আছে। তিনি এই শৈলীরই সুনিপুণ প্রয়োগ করেছেন ‘L’ Avventura’ ছবিতে। এরপর ‘La Notte’ (১৯৬১) ছবিতেও তিনি একই চলচ্চিত্রশৈলীর প্রয়োগ করলেন। এই ছবিতে অভিনয় করেন দুজন দিকপাল অভিনেতা জাঁ মোরিউ এবং মার্সেলো মাস্ত্রোইয়ানি। এই ধারার তৃতীয় ছবিটি হল ‘L’ Eclisse’ (১৯৬২), যেটিতে নায়কের ভূমিকায় ছিলেন অ্যালাইন ডিলন। এই তিনটি ছবি নিয়েই গঠিত হয়েছে আন্তোনিয়নির বিখ্যাত ট্রিলজি।
গঠনশৈলীর বিচারে উপরোক্ত তিনটি ছবি মোটামুটিভাবে একই ধাঁচের এবং তিনটিরই কেন্দ্রীয় বিষয় হল আধুনিক যুগে মানুষের বিচ্ছিন্নতা। এই সাদাকালো ছবিটি একটি মানুষ ও একটি মানুষীর প্রেমজ সম্পর্ক ধরে অগ্রসর হয়েছে। ছবিটির দুটি বিশেষ দিক পরিচালকের নিজস্ব স্বকীয়তার পরিচায়ক – প্রথমত দীর্ঘক্ষণ ধরে একটি ঘটনার দৃশ্যায়নের শৈলী, দ্বিতীয়ত একটি চরিত্রকে বেশী সময় ধরে অনুসরণ। একটি দৃশ্যের বর্ণনা দিলে বিষয়টা ব্যাখ্যা করা সহজ হবে। ট্রিলজির প্রথম ছবিতে একটি দৃশ্যে ক্যামেরা দীর্ঘসময় ধরে নায়িকা মোনিকা ভিট্টি-কে অনুসরণ করে গেছে।
আন্তোনিয়নি বলেছেন, “When a scene is being shot, it is very difficult to know what one wants it to say, and even if one does know, there is always a difference between what one has in mind and the result on film.” কথাটা ভেবে দেখার মত। পরিচালকের মনে যে চিন্তার স্রোত প্রবাহিত হয়ে চলেছে বা তিনি যা বলতে চাইছেন সেটা সিনেমায় কতটা প্রতিফলিত হয়েছে সেটা নির্ধারণ করা সহজ নয়। ঠিক এই জায়গাতেই আন্তোনিয়নির কৃতিত্ব। তিনি যা ভেবেছেন সেটাই সিনেমায় পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিফলিত করেছেন। সিনেমায় গালগল্প ফাঁদা আন্তোনিয়নির কাজ নয়। মিষ্টি প্রেমের নিটোল গল্প উপহার দেওয়া বা কেন্দ্রীয় চরিত্রের ট্র্যাজেডিতে শোকে আকুল হয়ে চোখের জলের বন্যা বইয়ে দেওয়ার জন্য তিনি সিনেমা তৈরী করেন নি। আন্তোনিয়নি ভিন্ন গোত্রের পরিচালক, এই মাপের প্রতিভা রোজ রোজ আসেন না। তাঁর মত পরিচালক যখন ছবি করেন তখন চলচ্চিত্র ভাবনায় আলোড়ন তোলেন, সকলকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেন।
আন্তোনিয়নির প্রথম রঙিন ছবি ‘II Deserto Rosso’ (The Red Desert, 1964) প্রায় একই রকম ধাঁচের, ক্যামেরার গতিও প্রায় একই রকম। এই সবকটি ছবিরই নায়িকা ছিলেন তাঁর তৎকালীন প্রেমিকা অভিনেত্রী মোনিকা ভিট্টি। এরপর তিনি বিরাট আকারে আন্তর্জাতিক সাফল্য পেলেন ১৯৬৬ সালে, ‘Blow Up’ ছবিটির জন্য। আর্জেন্তিনার লেখক জুলিও কোর্টেজার রচিত ‘The Devil’s Dool’ গল্পটি অবলম্বনে এই ছবিটি তৈরী। এর বিষয়টা কিন্তু অতীব জটিল — বস্তুগত আদর্শ ও উৎকর্ষের অসাম্ভব্যতা এবং স্মৃতির চিরসন্দিগ্ধ সত্যতা। ছবির নায়ক-নায়িকা যথাক্রমে ডেভিড হেমিংস ও ভেনেসা রেডগ্রেভ।
পরবর্তী ছবিটি হল ‘Zabriskie Point’ (১৯৭০), এর বিষয় প্রতিষ্ঠান বিরোধী কাউন্টারকালচার। এই ছবিটির সম্পর্কে আন্তোনিয়নি ১৯৭০ এর আগস্ট মাসে ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, “My work is like digging, it’s archaeological research among the arid materials of our times. That’s how I understand my first films, and that’s what I’m still doing. . . . . .”। ছবিটির সঙ্গীতাংশে আমরা পাই Pink Floyd, The Grateful Dead এবং The Rolling Stones এর মত গানের দলকে।
১৯৭২ সালে মাও-জে-দং এর চীন সরকার আন্তোনিয়নিকে আমন্ত্রণ জানায় চীনদেশে আসার জন্য। তিনি একটি তথ্যচিত্র, “Chung Kuo, Cina” তৈরীও করেন, কিন্তু সেটি তৎকালীন চীন সরকার মোটেই প্রশংসা করেন নি। তাঁর মনে করেছিলেন এই ছবিটি চীন-বিরোধী ভাবধারা সঞ্জাত।
এরপর এল ১৯৭৫ সালের ছবি ‘The Passengers’, প্রযোজক Carlo Pnti-র সঙ্গে তিনি তিনটি ছবির জন্য যে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন এটি হল তার তৃতীয় ছবি। এর নায়ক খ্যাতনামা অভিনেতা জ্যাক নিকলসন, নায়িকা মারিয়া স্নেইডার। সমালোচকদের বিচারে ছবিটি প্রশংসা লাভ করলেও জনপ্রিয়তার নিরিখে সাফল্য পায়নি। ১৯৮০ সালে আর একবার মোনিকা ভিট্টিকে নায়িকা করে আন্তোনিয়নি তৈরী করলেন II Mistero di Oberwald (The Mystery of Oberwald), এটি ছিল জাঁ ককটিউ এর নাটক The Eagle with Two Heads এর চলচ্চিত্রায়ণ। ইতালিতে প্রস্তুত পরবর্তী ছবি ‘Identificazione di una donna’ (১৯৮২)-তে তিনি আবার তাঁর প্রথম ট্রিলজির বিষয়বস্তুতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেন।
১৯৮৫ তে হৃদযন্ত্রের গুরুতর সমস্যায় আন্তোনিয়নি আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়েন এবং বাকশক্তিও চলে যায়। তা সত্ত্বেও তিনি পরিচালনা থেকে সরে আসেন নি, ১৯৯৫ সালে উইম ওয়েন্ডারস এর সঙ্গে ‘Beyond the Clouds’ ছবিটি তিনি পরিচালনা করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সারাজীবনের কৃতিত্বের জন্য ‘অস্কার’ পান।
সারা জীবনে আন্তোনিয়নি প্রায় ২৫টি সিনেমা পরিচালনা করেন। তিনিই একমাত্র পরিচালক যিনি Palm d’or, Golden Lion, Golden Bear ও Golden Leopard-এই চারটি পুরস্কারই পেয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে কুম্ভমেলা দেখার জন্য তিনি ভারতে আসেন। পরে আবার একবার তিনি এসেছিলেন কোলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে, তখন তিনি চলৎশক্তিহীন, হুইলচেয়ারে বসা।
আন্তোনিয়নি ও তাঁর সমসাময়িক ফেদেরিকো ফেলিনি বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইতালিয় সিনেমাকে নিও-রিয়ালিজম থেকে দূরে সরিয়ে আনতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। আন্তোনিয়নি এই বিষয়ে বলেছিলেন, “Neo-realism taught us to follow the characters with the camera, allowing each shot its own interior time. Well, I became tired of all this; I could no longer stand real time. In order to function, a shot must show only what is useful.” ঠিক এই জিনিসটিই তিনি সিনেমায় প্রতিফলিত করার জন্য আজীবন চেষ্টা করেছেন। বিষয়টা ভালো করে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন – একটি দৃশ্যে ঠিক ততটুকুই থাকবে যতটুকু ঐ দৃশ্যের জন্য দরকার, তার বেশীও নয় বা কমও নয়। চলচ্চিত্র নির্মাণকালে এই পরিমিতিবোধ তাঁকে বরাবর চালিত করেছে।
সিনেমার ভাষায় পরিচালকের বক্তব্য বিষয় দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে গেলে যে সবসময় সংলাপ উপর নির্ভর করতেই হবে তা নয়। অভিনয়ের মাধ্যমে, উপস্থাপনার কৌশলে বা গল্প বলার গুণে অনেক না বলা কথাও বলে দেওয়া সম্ভব। আন্তোনিয়নির তো নিজস্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি আছে, নিজস্ব বৌদ্ধিক মনন আছে। তাহলে তিনি প্রথাগত পদ্ধতি অনুসরণ করতে যাবেনই বা কেন? তাঁর ক্যামেরার গতি ধীর হতে পারে, কিন্তু আধুনিককত্ব ও কল্পনাশক্তির উপর নির্ভর করে তিনি বিশ্লেষণের কেন্দ্রে স্থিত হয়েছেন। আন্তোনিয়নি নিজেই বলেছেন, “I always want to tell stories. But they must be stories that evolve, like our own lives. Perhaps what I seek is a new kind of story.” তিনি আগাগোড়াই গল্প বলতে চেয়েছেন এবং নিজের মত করে গল্প বলেছেন।
আরো পড়ুন : কিছু ভাবনা কিছু চিন্তা