“যত্ত সব আদ্যিকালের জিনিস নিয়ে কাজকারবার! আর পারা যায় না বাপু!”, নিজের মনেই গজগজ করতে থাকেন বুড়ো চিত্রগুপ্ত।
“কী হে, কী বিড়বিড় করছ নিজের মনে? কাজকর্মে তোমার মন কিন্তু দিনদিন কমছে। এমনি হলে কিন্তু এবারে পুজোর বোনাস বন্ধ!”
“নিকুচি করেছে আপনার বোনাসের!”, বলতে বলতেই ধড়াম করে একমণি খাতাটা চিত্রগুপ্ত নামান যমরাজের সামনে, “এই এত ভারী ভারী খাতায় আর হিসেব রাখতে পারব না। ইচ্ছা হয়, নতুন লোক খুঁজে নিন!”
স্পষ্টতঃই বিব্রত যমরাজ। সাতসকালে কী গেরো রে বাবা! বুড়োটা তো মহা ঝানু! মাইনে বাড়ানোর মতলব নাকি? যাইহোক, এখন চটালে চলবে না! গত দুমাসের হিসেব খাতায় তোলা বাকি। ব্রহ্মা আবার আসছে সপ্তাহেই রিপোর্ট তলব করেছেন।
মিষ্টি হাসলেন যমরাজ, “আহা! চটছো কেন? সত্যি সত্যি তো আর পুজোর বোনাস বন্ধ করে দিইনি। ও আমি একটু মশকরা করলাম!”
চিত্রগুপ্তের রাগ তবু যায় না, “আপনার এই মান্ধাতার আমলের খাতায় রোজ রাশি রাশি হিসেবনিকেশ খাতায় তোলা, প্রতিদিন পাহাড়প্রমাণ লেখালিখি আমার আর পোষাচ্ছে না- আপনাকে সাফ সাফ বলে দিলাম।”
“সে তো তোমাকে দুবছর আগে একটা ক্যালকুলেটর কিনে দিলাম বলতে বলতেই। দিইনি?”, যমরাজ বলছেন আর ভাবছেন। ব্যাটার নিশ্চয়ই পেটে পেটে আছে কিছু। বলছে না। মহা ঘোড়েল মাল! খেলিয়ে খেলিয়ে বলবে।
গলার স্বরে একগ্লাস শরবত ঢেলে দেন যমরাজ, “আহা! তুমি ছাড়বে বললেই কি হল? এখানকার সংবিধানে অন্য কাউকে নেবার তো নিয়ম নেই। তোমারো অন্য কোথাও যাবার উপায় নেই।”, শেষের দিকটায় আলতো করেই মৃদু একটা হুঁশিয়ারি ভাসিয়ে দিলেন ইচ্ছে করে। হুঁ হুঁ বাবা, চাইলেও অন্য কোথাও চাকরি দিচ্ছে কে?
“ঠিক আছে। এখানেই থাকবো। কিন্তু কলমটি কাত করবো না। তখন কী করবেন?”
যমরাজ দেখলেন, আচ্ছা মুশকিল! এ তো অনন্তকাল ধরে এরকম চালিয়ে যাবে, যা মতিগতি দেখা যাচ্ছে! বাধ্য হয়েই গলা ওঠালেন, “বেশি ধানাইপানাই না করে কী বলতে চাও খোলসা করে বলো দেখি! আমার আবার একঘন্টা পরেই কৈলাসে জরুরী মিটিং। বিষ্ণুরও আসার কথা।”
ঘাড় চুলকালেন চিত্রগুপ্ত। আরো খানিকক্ষণ গোঁসা দেখানোর ইচ্ছে ছিল। ওতে দাম বাড়ে। কিন্তু কী আর করা!
“দেখুন, বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনারা এই স্বর্গের লোকজনেরা বড্ডো ব্যাকডেটেড। ক্যালকুলেটর দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মর্ত্যবাসী যখন ক্যালকুলেটার ছেড়ে কম্পিউটার ধরেছে, তখন। তাহলে?”
একটু একটু আঁচ পাওয়া যাচ্ছে যেন। চিত্রগুপ্ত কোনদিকে ইঙ্গিত করতে চাইছে? সামান্য বিরক্তই এবারে যমরাজ, “সেকথা ছাড়ো। এখন কী হলে সুবিধা হয় বল দেখি!”
“না, মানে, ইয়ে… মানে বলছিলাম কী, এই মর্ত্যের ইয়ং জেনারেশন কিছু এসেছে সম্প্রতি। তারা এসে সেদিন আমাকে যাচ্ছেতাই অপমান করে গেল। বলল, কম্পিউটার ছাড়া এতবড় সিস্টেম চলছে বলেই ম্যানেজমেন্ট এত বাজে। আরো কীসব ইংরেজিতে গালাগালি দিয়ে গেল। সবটা বুঝতে পারিনি। তবে আপনাকে ‘ওল্ড ফুল’ বলেছিল, সেটা খালি বুঝতে পারলাম।”
কী! এতবড়ো দুঃসাহস! তাঁকে ইংরেজিতে গালাগালি দেয়! চোখদুটোকে লাট্টুর মত বনবন করে ঘোরাতে থাকলেন যমরাজ, “তা তুমি কী বললে? প্রতিবাদ করোনি?”
“এজ্ঞে, করিনি আবার? ছেলেমেয়েগুলোকে দাবড়ে দিয়ে বললাম, “সাক্ষাৎ যমরাজের সম্পর্কে অমন বাজেভাবে বলে কেউ? নরমসরম করে কিছু বলতে হয়!”
অ্যাঁ? তার মানে এ ব্যাটাও ওদের দলে! যমরাজ এক দাবড়ানি দিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে পড়ল জরুরী মিটিং আছে। এইসময় আর চেঁচামেচি না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
গলাটাকে যথাসাধ্য বরফের মতো ঠাণ্ডা করলেন যমরাজ, “ওসব বালখিল্যদের কথা বাদ দাও। মোদ্দা কথাটা কী দাঁড়াল?”
“সেরকম কিছু না। আমিও ভাবছিলাম, ওরা নেহাত খারাপ বলেনি। একটা কম্পিউটার হলে মন্দ হয়না। এত লেখাজোখা, হিসেব রাখা, ছক কাটা- কম্পিউটার হলে সুবিধাই হত!”
সুবিধাই হত! কম্পিউটার কি গাছে ফলে? চিত্রগুপ্তকে গরমাগরম বকুনি দিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তখনই পরের সপ্তাহে ব্রহ্মার রিপোর্টের কথা মনে পড়ে গেল। চিত্রগুপ্ত বিগড়ে গেলে মহা অসুবিধেয় পড়ে যাবেন! সরাসরি প্রস্তাবটা নাকচ না করে অন্যভাবে প্যাঁচে ফেলতে চাইলেন চিত্রগুপ্তকে, “কিন্তু আপনি কম্পিউটারের কিছুই জানেন না। চালাবেন কী করে?”
“সে ওরা বলেছে, শিখিয়ে পড়িয়ে দেবে।”
ও! তার মানে এতদূর কথাবার্তা হয়ে গেছে! কী জিলিপির প্যাঁচ পেটে পেটে রে বাবা!
মুখে বললেন, “ঠিক আছে। ভেবে দেখছি।” আর মনে মনে ভাবলেন, মিটিং-এ বিষ্ণুর কাছে প্রস্তাবটা পেড়ে দেখি। অনুমোদন মিললে তখন দেখা যাবে।
বিষ্ণুর অনুমোদন পাওয়া গেল খুব সহজেই। বিশ্বকর্মাকে কম্পিউটার বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যমরাজ, চিত্রগুপ্ত দেখতে যান মাঝেমধ্যে। অন্যান্য দেব-দেবীরাও যান। স্বর্গরাজ্যে বেশ একটা হইচই পড়ে গেছে। প্রথম কম্পিউটার বলে কথা! যমরাজকে ফোন করে সকলে খোঁজখবর নিচ্ছেন। যে দেবদেবীরা এতদিন তাঁকে পুঁছতেনই না, তাঁরাও এখন পাত্তা দিতে শুরু করেছেন। ফলে যমরাজও মনের মধ্যে একটু একটু করে কম্পিউটারের বোল শুনতে পাচ্ছেন।
যাইহোক, এইসব চলতে চলতেই একদিন খবর এল, কম্পিউটার তৈরি হয়ে গেছে। যমরাজ গেলেন দেখতে। দেখেটেখে পুরো আপ্লুত। পেল্লায় দেখতে, সামনের পর্দায় ছবি ভাসছে। সঙ্গে তারে লাগানো গোলাকার একটা বস্তু। জিজ্ঞাসা করায় বিশ্বকর্মা জানালেন, ওটার নাম মূষিক।
নাম শুনে তিনি নাকমুখ কুঁচকোচ্ছিলেন, কিন্তু বিশ্বকর্মা বললেন, ওরকম নাম রাখাই নাকি নিয়ম।
কথাবার্তা চলতে চলতেই চিত্রগুপ্ত এসে উপস্থিত। সঙ্গে কমবয়সী কিছু ছেলেমেয়ে। যমরাজ বুঝলেন, এরাই তাঁকে ‘ওল্ড ফুল’ বলেছিল। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার আগেই একটি মেয়ে বলে উঠল, “হয়েছে, তবে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মডেল। এর চেয়ে মর্ত্য থেকে একটা লেটেস্ট মডেল আনিয়ে নিলেই হত। সস্তাও হত, পরিশ্রমও বাঁচত।”
পাশ থেকে একটি ছেলে ফোড়ন কাটল, “জিনিসটাও ঢের ভালো হত। এরকম পুরনো মডেলে কাজ চলে?”
আরেকটি মেয়ে সান্ত্বনা দিল, “আহা! যা হয়েছে, হয়েছে! বিশ্বকর্মা সাহেব প্রথমবার চেষ্টা করছেন- একটু আধটু ভুল ভ্রান্তি তো হবেই!”
বিশ্বকর্মা খানিকক্ষণ আগেও বেশ গর্বভরা চাউনিতে ইতিউতি তাকাচ্ছিলেন। ভাবখানা ছিল, কেমন বানিয়েছি, দ্যাখো! এখন ছেলেমেয়েগুলোর কথায় পুরো চুপসে গেলেন। কোনমতে মিনমিন করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেন, “আসলে বেশি সূক্ষ্ম মডেল বানালে চিত্রগুপ্ত যদি না সামলাতে পারেন, তাই আর কী!”
এই কথা শুনে ছেলেমেয়েগুলো ফিকফিক করে এমন হাসি হাসতে থাকল যে যমরাজেরই বিড়ম্বনার একশেষ! হাজার হোক, তাঁরই আবেদনক্রমে বিষ্ণুর আদেশে বিশ্বকর্মা কাজে লেগেছিলেন। তড়িঘড়ি চিত্রগুপ্তকে বললেন, “তুমি এদের নিয়ে যমালয়ে ফেরত যাও। আমি কম্পিউটার নিয়ে একটু বাদে ফিরছি।”
কম্পিউটারটা কিন্তু দিব্যি কাজে দিতে লাগল। চিত্রগুপ্তও ভালোই সড়গড় হয়ে গিয়েছেন। অত অত যমালয়বাসীর হিসেব, নথিপত্র এখন চাইবামাত্রই চিত্রগুপ্ত হাজির করে দিচ্ছেন। এক জিনিস বারবার লিখতে হচ্ছে না! সুবিধা বলে সুবিধা! এমনকি, আজকাল তাঁর মিটিং-র রিপোর্টগুলোও কম্পিউটারে হয়ে যাচ্ছে। ঝরঝরে টাইপ করা রিপোর্ট যখন মিটিং-এ পেশ করেন, তখন আশপাশের দেবদেবীর ঈর্ষার চাহনিও দিব্যি উপভোগ করেন। এমনকি, কানাঘুষোয় তাঁর কাছে খবর আসছে যে, কিছু দেবদেবী এর মধ্যেই নতুন কম্পিউটারের জন্য বিশ্বকর্মার কাছে রীতিমতো ঝুলোঝুলি শুরু করেছেন। ইদানীং আর তাই ওই ছেলেমেয়েগুলোকে দেখলে অতটা বিরক্ত হন না। মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন যে, চিত্রগুপ্ত সেদিন বায়না ধরায় আদতে ভালোই হয়েছে। অবশ্য মুখে কিছু বলেন না, চিত্রগুপ্ত পেয়ে বসতে পারে!
যমালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ হবে আগামীকাল। সকাল থেকেই তাই জোরকদমে রিপোর্ট তৈরি করায় ব্যস্ত চিত্রগুপ্ত। পাশে একটা পীঠিকা নিয়ে বসে পড়েছেন যমরাজও। টুকিটাকি জল মেশানোও চলছে রিপোর্টে। বার্ষিক প্রতিবেদন বলে কথা!
দিব্যি কাজ চলছে। আচমকা একটা পুরনো হিসেব বের করতে গিয়েই ঘটে গেল বিপত্তি। কম্পিউটারের পর্দা জুড়ে শুধুই নীল-গোলাপী কাটাকুটি। চিত্রগুপ্ত এটা নাড়ান, সেটা টেপেন- কিছুতেই কিছু হয়না। গলদ্ঘর্ম হয়ে শেষে সেই ট্রেনার ছেলেমেয়েদের খবর পাঠালেন। তারা এল। কিন্তু তারাও বিশেষ সুবিধা করতে পারল না।
যমরাজ রাগে রীতিমতো গরগর করছেন, “কাল আমার মিটিং। তার আগে যেভাবে হোক, রিপোর্ট চাই।”
সেই পাকা ছেলেটি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াল, “রিপোর্ট চাই?”
মেয়েটি ভুরু কোঁচকাল, “ব্যাক আপ নিয়েছেন?”
ব্যাক আপ? সে আবার কী বস্তু? চিত্রগুপ্ত তো আকাশ থেকে পড়লেন। কোনমতে বললেন, “না, সেরকম কিছু তো জানিনা।”
যমরাজ হাঁকড়ালেন, “আরে, নিয়েছো কি নাওনি সেটা বলবে তো?”
চিত্রগুপ্ত ক্ষীণকণ্ঠে বললেন, “মানে সেরকম কিছু নেবার কথা তো কেউ বলেনি।”
ছেলেটি এগিয়ে আসে, “কম্পিউটারে এতদিন কাজ করছেন, ব্যাকআপ নেন নি? আশ্চর্য!”
চিত্রগুপ্ত মৃদু প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলেন, “তোমরা তো আমাকে সেরকম কিছু শেখাওনি।”
“আরে, আপনি কম্পিউটারে কাজ করবেন, ব্যাক আপ রাখবেন না? হাউ ফানি!”
সেই ‘ওল্ড ফুলে’র কথাটা মনে পড়ে গেল যমরাজের। প্রায় ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বিদায় করলেন ছেলেমেয়েগুলোকে। তারপর জলদ্গম্ভীরস্বরে হাঁক দিলেন, “চিত্রগুপ্ত!”
চিত্রগুপ্ত ঠকঠক করে কাঁপছেন। ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে। যমরাজের অবস্থাও কহতব্য নয়। কম্পিউটার আসার পর থেকে হাতে লেখার পাট একরকম উঠেই গেছে।
“মহারাজ! বলছিলাম কী, একবার বিশ্বকর্মাকে খবর দিলে হত না?”, এতক্ষণে ভেবে ভেবে একটা উপায় বের করেছেন চিত্রগুপ্ত।
বিশ্বকর্মাকে খবর দেওয়া হল এবং ফিরতি খবর এলো যে, বিশ্বকর্মা দুখানা নতুন কম্পিউটার বানানো নিয়ে বেজায় ব্যস্ত। নিঃশ্বাস ফেলারও সময় নেই। দিন পনেরো বাদে সময় হলে একবার এসে দেখে যাবেন।
গরমাগরম নিঃশ্বাস পড়ছে যমরাজের। তিনিই সব্বার প্রথমে কম্পিউটার বানাতে দিলেন বলেই না বিশ্বকর্মার এত বোলবোলা! নাহলে তো ওর যন্ত্রপাতিতে মরচে পড়ার জোগাড় হয়েছিল!
আচমকাই চোখ পড়ল চিত্রগুপ্তের দিকে। এটাই যত নষ্টের গোড়া! কম্পিউটারের জন্য সেদিন অত ঘ্যানর ঘ্যানর না করলে তো কিছুই হোতো না!
“চিত্রগুপ্ত!”
সভয়ে তাকিয়ে দেখেন চিত্রগুপ্ত, যমরাজ রাগে ফুলছেন। চোখদুটো লাল টকটক করছে। ভয়ংকর রাগী একটা মোষের মতোই লাগছে তাঁকে। আর কিছু ভাবতে পারলেন না তিনি। চোঁচা দৌড় লাগালেন।
ছুটছেন চিত্রগুপ্ত। পিছনে কালান্তক যমরাজ। নারদও এসে পড়েছেন ঢেঁকিতে চেপে। দেবদেবীরাও অনেকে দাঁড়িয়ে পড়েছেন মজা দেখতে। নারদ কোত্থেকে একটা হুইশলও জোগাড় করেছেন। মাঝেমধ্যেই ফুরর ফুরর করে বাঁশি বাজাচ্ছেন আর চেঁচিয়ে বলছেন, “লাগ নারদ, লাগ!”
যমরাজের বয়স হয়েছে, তায় দৌড়োদৌড়ির অভ্যেস না থাকায় খানিক পিছিয়ে পড়ছেন। সেই ফাঁকে নারদ গিয়ে চিত্রগুপ্তকে বুদ্ধি দিলেন, “শোনো বাপু, ওই অপদার্থ যমরাজের জন্যই এত দুরবস্থা। তুমি বরং সোজা বৈকুণ্ঠে গিয়ে বিষ্ণুর কাছে নালিশ করো।”
চিত্রগুপ্ত একটা দিশা পেলেন এতক্ষণে। সিধা দৌড় লাগালেন বৈকুণ্ঠের দিকে।
নারদ এবারে গেলেন যমরাজের কাছে, “বুঝলে, ও ব্যাটা তো মনে হয় বৈকুণ্ঠের দিকে গেল। আমার বাপু ভালো ঠেকছে না। তুমিও বরং ওদিকপানেই যাও।”
বিষ্ণু দ্বিপ্রাহরিক শয়নের তোড়জোড় করছিলেন। এমন সময় হাঁফাতে হাঁফাতে সেখানে হাজির হলেন চিত্রগুপ্ত। আর তাঁর পিছন পিছন যমরাজ।
হাঁউমাউ করে নিজের বক্তব্য নিবেদন করলেন চিত্রগুপ্ত। যমরাজও পালটা বিবরণ পেশ করলেন। বিষ্ণু মুখ খুলতে যাবেন, এমন সময় চোখে পড়ল, নারদ দরজার কোণায় উঁকি দিচ্ছেন।
ব্যস, সিদ্ধান্ত স্থির করে মুখ খুললেন গোলোকপতি, “শুনুন, কম্পিউটার নিয়ে যখন অত গোলমাল, তখন ওই কম্পিউটার আপনাদের কাছে রাখার কোন মানেই হয়না। লক্ষ্মীদেবী বরং বলছিলেন, একটা কম্পিউটার হলে… যাকগে! সেকথা থাক। মোটমাট, কম্পিউটারটা বৈকুণ্ঠে পৌঁছে দেবেন। আমি বরং বিশ্বকর্মাকে দিয়ে… আচ্ছা, সে যাহোক হবে। মোটকথা, আজ বিকেলের মধ্যে কম্পিউটার যেন পৌঁছে যায়। আর ব্রহ্মাকে আমি বলে দিচ্ছি। আরো দুসপ্তাহ পরেই নাহয় বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেবেন।”
জোড়হস্তে ঘাড় কাত করলেন যমরাজ ও চিত্রগুপ্ত। নারদের দিকে এবার ফিরলেন বিষ্ণু, “আর নারদবাবু! এই দুসপ্তাহ কিন্তু আপনি বৈকুণ্ঠেই থাকবেন। বৈকুণ্ঠ থেকে এক পাও যেন নড়তে না দেখি।”
তিনজনে বেরিয়ে গেলেন। বিষ্ণুর মেজাজ এখন বেজায় ফুরফুরে। বিকেলেই কম্পিউটার দেখিয়ে লক্ষ্মীদেবীকে সারপ্রাইজটা দেবেন। পরম নিশ্চিন্তে এবারে শয্যায় শয়ান হলেন তিনি…
……০……