Home / ছোটদের গল্প / ঘুমকাতুরে রেলগাড়িটা -মৌসুমী পাত্র

ঘুমকাতুরে রেলগাড়িটা -মৌসুমী পাত্র

ghumkaturer-railgarita2
ছবি- অর্চনা কোলে

 

এক যে ছিল রেলগাড়ি। ভোরবেলা হলেই সে কু-উ-উ-ঝিকঝিক সুর তুলে শুরু করত তার চলা। কখনো আঁকাবাঁকা পথে, কখনো বা সোজাই সে পাড়ি দিত। কত গাছপালা, নদনদী, বনজঙ্গলের বুক চিরে সে যখন দৌড়োত, ভারী সুন্দর লাগত তাকে দেখতে।

কিন্তু হলে হবে কী, রেলগাড়িটা ছিল মহা ঘুমকাতুরে। যেই না কোন স্টেশনে তাকে থামতে হত, অমনি সে যতটা পারা যায় ঘুমিয়ে নিত। নেহাত যখন আর না উঠলেই নয়, তখনই সে ঘুম ভেঙে চলা শুরু করত। এমনি করে করে রোজই তার গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়ে যেত। স্বাভাবিকভাবেই, ট্রেনে যারা যাত্রী থাকত, তারা চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দিত। কিন্তু রেলগাড়িটা এমনিতে ভালো হলে হবে কী, যাত্রীদের অসুবিধাকে পাত্তাই দিত না।  দিব্যি গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল তার।

একদিন এখন ঝিমলি নামের একটা বাচ্চা মেয়ে যাচ্ছিল সেই ট্রেনে। ট্রেনে যেতে তার দিব্যি লাগছিল। কী সুন্দর গাছপালা, ঘরবাড়ি, নদী, ফসলে ভর্তি খেত পেছনের দিকে ছুটে ছুটে চলে যাচ্ছে- খুব মজা লাগছিল তার দেখতে। কিন্তু তার মজাটা চলে গেল অল্প পরেই। একটা স্টেশনে রেলগাড়িটা এসে যেই না থামল, অমনি আর তার নড়াচড়ার কোন লক্ষণ নেই। পাশ থেকে কেউ একজন বলল- স্টেশন এলেই ট্রেনটা ঘুমায়।

অমনি ঝিমলি মনে মনে ভাবল, স্টেশন এলেই ঘুমোনো! দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা।

ট্রেন থেকে নেমে পড়ল ঝিমলি। গটগট করে রেলগাড়ির ইঞ্জিনের কাছে গিয়ে আচ্ছাসে কাতুকুতু দিয়ে দিল। ঠিক যেমন করে মা তাকে ঘুম থেকে তোলে। আর ও মা, ট্রেনটাও কাতুকুতু খেয়ে দিব্যি নড়েচড়ে বসল। ঝিমলিও চটপট চড়ে বসল ট্রেনে।

তারপর থেকে যেই না কোন স্টেশন আসে আর ট্রেনটা একটুখানি ঘুমোনোর তাল করে, অমনি ঝিমলির কাতুকুতুর খোঁচায় তার ঘুম ভেঙে যায়।

এই করে করে সেদিন ট্রেনটা প্রায় ঠিক ঠিক সময়েই গন্তব্যে পৌঁছে গেল। যাত্রীরা খুব খুশি। সকলে মিলে অনেক প্রশংসা করল রেলগাড়ির। রেলগাড়িটারও একটু খুশি খুশি লাগছিল। অন্যদিন সবাই তাকে গালমন্দ করে, আর আজ সকলে তাকে কত ভালো বলছে। ঝিমলিও যাবার সময় হাসিমুখে টা টা করে বলে গেল, রোজ রোজ এমনি করেই সবার মুখে হাসি ফুটিও।

পরের দিন রেলগাড়ি যখন প্রথম স্টেশনে পৌঁছল, তখন আর সে ঘুমোনোর মত জোরই পেল না। আগের দিন সকলে তাকে কত ভালো বলেছিল, সে কথাটাই তার কানে বাজতে থাকল। এমনি করে করে সে আর কোন স্টেশনেই ঘুমোল না। একদম সঠিক সময়ে সে উদ্দেশ্যে পৌঁছে গেল। আবারো যাত্রীরা হাততালি দিল। সে সেদিনও খুব খুশি হল।

তারপর থেকে ট্রেনটার স্টেশন এলে ঘুমোনোর ইচ্ছেটাই উবে গেল। সে তার পরের দিনও দেরি করল না। তার পরের দিনও না। আর কোনদিনও না।

যারা রেলগাড়িটাতে অনেকদিন ধরে চাপছে, তারা ভাবতে থাকল, ট্রেনটার হঠাৎ হলটা কী? আচমকা এত বদলে গেল কী করে?

আসল কথাটা তো আর কেউ জানে না।

 

Leave a comment

Check Also

শিল্পী- রিমিল জানা

পরীক্ষা দিলেন বাঘু- মৌসুমী পাত্র

(শিয়ালনীর পাঠশালায় প্রচুর মজাদার ব্যাপার স্যাপার চলে, যার প্রথম হদিশটা দিয়েছিলাম ‘বাগে এলো বাঘু’ গল্পে। …

ওযোধ্যা পাহাড়ে বাঘু

অযোধ্যা পাহাড়ে বাঘু – মৌসুমী পাত্র

(শিয়ালনীর পাঠশালায় প্রচুর মজাদার ব্যাপার স্যাপার চলে, যার প্রথম হদিশটা দিয়েছিলাম ‘বাগে এলো বাঘু’ গল্পে। …

শিয়ালনী কুপোকাত

শিয়ালনী কুপোকাত- মৌসুমী পাত্র

বর্ষা বিদায় নিয়েছে। আকাশে সোনা সোনা রঙের রোদ্দুর। সাদা সাদা মেঘ নীল আকাশে হামাগুড়ি দিয়ে …

বাঘু হলেন মনিটর

বাঘু হলেন মনিটর- মৌসুমী পাত্র

  পাঠশালার পোড়োগুলো বড্ডো ঝামেলা পাকাচ্ছে ক’দিন ধরেই। শিয়ালনী ক্লাস থেকে একটু উঠলেই চিৎকার, চেঁচামেচি, …