ভক্তিভরে মহামায়ার উদ্দেশে প্রণাম করলেন উমাপ্রসাদবাবু। প্রণামশেষে অনিমেষলোচনে দেখছেন মাতৃমূর্তির রূপ। আর তখনই প্রভাতী বাতাসে ভেসে এল “আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর…”।
নিমেষেই অদ্ভুত এক প্রসন্নতায় ভরে গেল দেহমন। পবিত্র সকাল যেন পবিত্রতর হয়ে উঠল। অদ্ভুত এক প্রশান্তি নিয়ে বেরিয়ে এলেন তিনি মন্দির ছেড়ে। মন্দিরপ্রাঙ্গণেই একটা ঝাঁকড়া শিউলি গাছ। একটি মেয়ে কোঁচড় ভরে শিউলিফুল কুড়োচ্ছে। আবহে স্তোস্ত্রপাঠ চলছে “যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা…”
সবটা আর শুনতে পেলেন না। কারণ, ঝমঝম করে ট্রেন পেরিয়ে গেল একটা। মন্দিরের ঠিক গা ঘেঁষেই অনেকটা উঁচু দিয়ে রেললাইন চলে গেছে। ওপর থেকে কয়েকজন যাত্রী পয়সা ছুঁড়ে দিল মহামায়ার উদ্দেশ্যে। তিনি জানেন, একটু পরেই পয়সাগুলো আর থাকবে না। দিনমানে প্রচুর ভিখিরি থাকে এখানে। এখন যদিও তাদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।
ট্রেনটা চলে গেল। মেয়েটারও ফুল কুড়োনো শেষ। চটিটা গলিয়ে পা বাড়ালেন তিনি। বাড়ি গিয়ে নিত্যপূজার আগেই খোকাকে ডেকে কথাটা বলে নিতে হবে।
শহরসুদ্ধু লোক একডাকে চেনে উমাপ্রসাদকে। এই মফস্বল শহরের সবচেয়ে বড়ো কাপড়ের দোকানের মালিক। এই মুহূর্তে প্রশস্ত বৈঠকখানার বিলাসী সোফায় গা ডুবিয়ে দিয়ে কিছু ভাবছেন তিনি। গিন্নী চা-বিস্কুট পাঠিয়ে দিয়েছেন। বনমালী এসে প্রভাতী কাগজখানাও নামিয়ে দিয়ে গেছে সুদৃশ্য টি টেবিলে। বনমালীকেই বলে দিয়েছেন, খোকাকে খবর দিতে। গিন্নী ভেতরে কাজে ব্যস্ত। এবাড়ির মেয়েবৌরা পারতপক্ষে বৈঠকখানায় ঢোকে না। ভেবেচিন্তেই এই সময়টা বেছেছেন।
দামী চায়ে ভেজানো বিস্কুটটা মুখে দিতেই মাথার ভেতরে একটা আরাম চারিয়ে গেল যেন। কাগজটা আলগোছে হাতে নিলেন। খবরের কাগজ পড়ার অভ্যেস তাঁর কোনকালেই নেই। কাগজটা নেন সোনার দর জানতে। আর মাঝেমধ্যে সেরকম কোন খবরে চোখ আটকে গেলে পড়েন।
সোনার দর এখন একটু কমের দিকেই। ঝামেলাটা ভালোয় ভালোয় মিটে গেলে বৌমাকে একটা দামী নেকলেস কিনে দেবেন। গিন্নীকে নিয়ে গিয়ে একদিন একটা ভালো ডিজাইন পছন্দ করে অর্ডার দিয়ে আসতে হবে।
“বাবা, ডেকেছিলেন?”
“হ্যাঁ, দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে ওখানে বসো। কথা আছে।”
দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছেলে বসল মুখোমুখি। বোঝাই যায়, উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে।
তিনি সামান্য ঝুঁকলেন, “বৌমার টেস্টটা হয়েছে?”
“হ্যাঁ, বাবা।”, আশঙ্কার চোরা মেঘ ঘনিয়েছে ছেলের মুখে।
ব্যাপারটা তাঁর নজর এড়াল না। তবু নিরুত্তাপ সুরেই বললেন, “রিপোর্ট কী?”
রিপোর্টের খবর কাল রাতে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গিন্নীর থেকেই জেনে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু ছেলেকে বুঝতে দিলেন না।
মাথা নীচু করেছে খোকা, “মেয়ে।”
“হুম্। আমারো তাই মনে হচ্ছিল। যাকগে, আপদ পুষে রেখে লাভ নেই। জামশেদপুরে আমার এক পরিচিত বিশ্বস্ত ডাক্তারবাবু আছেন। ওঁকে বলে দিচ্ছি। বৌমাকে নিয়ে গিয়ে পরিষ্কার করিয়ে আনবে।”
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে খোকা। যেন ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না। বাধ্য হয়েই গলা ওঠালেন উমাপ্রসাদ, “শোন খোকা, দেরী করার দরকার নেই। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখছি। বাড়ির বড় গাড়িটা নিয়ে যাও। এসি আছে, বৌমার অসুবিধা হবে না। ক্যাশিয়ারবাবুকে বলে দিচ্ছি। ক্যাশবাক্স থেকে নগদ এক লাখ টাকা তোমাকে আজই দিয়ে দেবে।”
“বাবা!”, কেমন যেন আর্তনাদের মত শোনাচ্ছে ছেলের গলা, “মেয়ে হলে ক্ষতিটা কী? এ নাহয় থাকুক। পরে নাহয় আবার…”
কড়া চোখে তাকালেন উমাপ্রসাদ, “শোন খোকা, এ বংশের রীতিই হচ্ছে যে, প্রথম সন্তান সবসময় পুত্রই হবে। তুমি বংশের বড়ো ছেলে, আমিও তাই। আমার বাবা, তাঁর পিতা…পুরুষানুক্রমে এই চলে আসছে। বৌমা আমাদের মুখে চুনকালি মাখিয়েছেন।”
“বাবা। আমি রাজী নই। মনে হয়না সেও রাজী হবে। দরকারে আমরা মেয়েকেই ছেলের মত মানুষ করবো।”
ছেলের ধৃষ্টতা দেখে আপাদমস্তক জ্বলে যাচ্ছে তাঁর। যে ছেলে বাবার সামনে মাথা তুলে কথা অব্দি বলতে পারে না, তার এত ঔদ্ধত্য হয় কোথা থেকে? নিশ্চয়ই বৌমার সঙ্গদোষ! এখন মনে হচ্ছে, ভুল জায়গায় ছেলের বিয়েটা দিয়েছিলেন!
“খোকা, তোমাদের রাজী হওয়া না হওয়ায় কিছু আসে যায় না। এ বাড়িতে আমার কথাই শেষ কথা। তোমার ইচ্ছে হয়, সদর দরজা খোলা আছে, বৌমাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারো। আর একটা কথা। যদি এতই আপত্তি থাকে, আজকেই দোকানের মালিকানায় তোমার সিকিভাগ বাদ দিয়ে দিচ্ছি। লেখাপড়া সব করে নেব।”
খোকা বসে বসে নখ খুঁটছে। গলাটা সামান্য কোমল করলেন তিনি, “শোনো, পরে যখন কোলে পুত্রসন্তান আসবে, বৌমা আপনিই ভুলে যাবেন। তুমিও। অত ভাবাভাবির কিছু নেই। আর চারদিন পরে মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষের শুরু। তার আগেই শুভকাজ সেরে ফেলতে হবে। বৌমা পবিত্র হয়ে মায়ের আরাধনায় বসুন- এই আমি চাই। যাইহোক, এবারে আমি নিত্যপূজায় বসবো। গদিতে যাবার আগে তোমার মতামত জানিও। সেই অনু্যায়ী সব বন্দোবস্ত হবে।”
খোকা বেরিয়ে গেল। মুখচোখ দেখে মনে হল, ওষুধ ধরেছে। চায়ের কাপটা অন্যমনস্কভাবে মুখে ঠেকালেন তিনি। এ হে! পুরো জুড়িয়ে জল!
হাঁক পাড়লেন, “বনমালী!”
বনমালী হাজির সঙ্গে সঙ্গেই। মনে হয় কাছাকাছিই ছিল।
“বনমালী, ভেতরে গিয়ে গিন্নীমাকে বল, আর এককাপ ভালো করে চা বানাতে। এটায় পোকা পড়ে গেছে।”
গদীতে এখন প্রবল ব্যস্ততা। মাত্র ক’দিন বাদেই পুজো। এবারে বাড়তি ষোলোজন ছেলে রাখতে হয়েছে পুজোর সিজনে। জনা চল্লিশেক কর্মচারী পুরো হিমশিম খাচ্ছে। এবারের পুজো অনেকটাই আগে বলে শেষমুহূর্তের ভিড়ও তুঙ্গে। হাঁকডাক, হইরই। হলুদরঙা জামদানী, ময়ূরকণ্ঠী টাঙ্গাইল, গোলাপী সিল্ক- মনকাড়া সব রঙের বাহারি শাড়িরা খদ্দেরলক্ষ্মীদের মনজয়ের এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে যেন!
ছেলেকে পাশে নিয়ে বসে আছেন উমাপ্রসাদ। দুজনের সামনে দুটো ক্যাশবাক্স। সঙ্গে ক্যাশমেমোর ছাপানো বই, পেন, স্ট্যাম্প। এক অল্পবয়সী স্বামী স্ত্রী দরাদরি করছে খোকার সঙ্গে। একটাই শাড়ি কিনেছে, তাও কমদামী- তার ওপর আবার পঞ্চাশ টাকা ডিসকাউন্ট চাইছে!
“আমার শাড়িগুলো এসেছে?”, সামনেই এক মাঝবয়সী মহিলা আর তাঁর মেয়ে। সচকিত হন উমাপ্রসাদ। হ্যাঁ, তাঁর সামনেই তিনটে শাড়ি পড়ে আছে।
“এগুলো আপনার?”
“হ্যাঁ, বিলটা করে দিন। দামটা ঠিক করে ধরবেন।”, মৃদু অনুরোধের ছোঁয়া মহিলার গলায়। বিলটা কাটতে যাবেন, এমন সময় পাশে রাখা মোবাইলটা স্তোস্ত্রপাঠ শুরু করল- যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা…।
ফোনের দিকে একঝলক তাকিয়ে সাইলেন্ট করে দিলেন তিনি। বেয়াইমশাই। কার্যকারণটা দিব্যি অনুমান করতে পারছেন। আড়চোখে দেখলেন ছেলেকে। নিজের মনে খদ্দের সামলাচ্ছে।
মহিলাটিকে বিদেয় করে খোকাকে একটু দেখতে বলে ভেতরপানে এলেন। ছোট্ট একটা নিজস্ব ঘর আছে তাঁর। ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে বেয়াইয়ের নাম্বারটা ডায়াল করলেন, “হ্যাঁ বেয়াইমশাই। বলুন। এই সময়টা প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকি, বোঝেনই তো।”
“হ্যাঁ, সেটা জানি। কিন্তু অত্যন্ত জরুরী বলেই ফোন করতে বাধ্য হলাম।”
“ঠিক আছে, বলুন।”, তাঁর অপ্রসন্নতাটা বেয়াই ধরেছেন দেখে কিঞ্চিত খুশিই হলেন।
“আজ মেয়ের কাছে শুনলাম… সত্যি না মিথ্যে তা অবশ্য জানিনা।”
বেশিক্ষণ খেজুরে করা আজ তাঁর পোষাবে না। পুজোর টাইম। বাইরে প্রচুর খদ্দের। খোকা একা সামলাতে পারবে না। আলোচনাটা তাড়াতাড়ি থামিয়ে দিতে চাইলেন তিনি, “যেটা শুনেছেন, ঠিকই শুনেছেন। আর আপনার মেয়ে আপনাকে মিথ্যে বলতে যাবেই বা কেন? বংশের প্রথম সন্তান পুত্র হবে- এ আমাদের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। আমি তো আর একদিনে ভেঙে দিতে পারি না।”
“কিন্তু…”
“কোন কিন্তু নয়, বেয়াইমশাই। আপনি যদি চান, আপনার মেয়েকে ফেরত নিয়ে যেতে পারেন। আমি স্বেচ্ছায় বৌমাকে ফেরত পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু আমার বাড়িতে থাকতে চাইলে আমার কথা মানতে হবে। আর তাছাড়া… আপনার মেয়েকে কিন্তু আমি খারাপ রাখিনি। তার সুখস্বাচ্ছন্দ্য… কোনকিছুরই কোন খামতি রাখিনি। মাসে মাসে মোটা হাতখরচ দিই। এরপরেও এই সামান্য ব্যাপারে যদি সে আপনাকে বিরক্ত করে, তাহলে আমাকেও অন্য কিছু ভাবতে হয়।”
ওপ্রান্তকে আর কিছু বলার সুযোগই দিলেন না তিনি। পালটা যুক্তিতর্ক করার বিন্দুমাত্র আগ্রহও এখন নেই তাঁর। এই পুজোর বিক্রিবাটাই তাঁর সম্বৎসরের প্রধান আয়। ফালতু কথায় নষ্ট করার সময় এখন বাড়ন্ত।
দরজার ছিটকিনি খুলে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে এলেন তিনি।
দুপুরে মেয়ে এল। একই শহরে শ্বশুরবাড়ি- বংশানুক্রমিক সোনার ব্যবসা। ষোলো পেরিয়ে সতেরোতে পড়তেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। শুধুশুধু ঘরে পুষে রেখে কী লাভ? মেয়েরও বিশেষ আপত্তি ছিল না। এখন বরং মেয়ের সঙ্গেই অল্পসল্প হলেও গল্পগাছা হয়। খোকা তো তাঁর দিকে ভয়ে চোখ তুলে তাকায় না পর্যন্ত।
উমাপ্রসাদ খেতে এসেছিলেন। আজ খাবারের আয়োজন অন্যদিনের তুলনায় কিঞ্চিত বেশিই যেন। চাকরবাকরও কেউ নেই ধারেকাছে। খাবার টেবিলে মেয়েকে দেখে কিছুটা আশ্চর্যই হয়েছিলেন। এমনিতে তার এবাড়ি আসার সময় বিকেল বা সন্ধেয়।
খাওয়া শুরু করেই ইতিউতি তাকালেন উমাপ্রসাদ, “আমার নাতনিটাকে আনিসনি?”
“না, বাবা। ওর বাবা, দাদু তো ফেরে এ সময়টায়। রিয়াকে দেখতে না পেলে কুরুক্ষেত্র করবে।”, চাপা গর্ব চলকে পড়ে মেয়ের মুখে।
যত্ত সব আদিখ্যেতা! কথাটা ঠোঁটের ডগায় এসে গিয়েছিল, জোর করে ফেরত পাঠালেন।
গিন্নী এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে, “তোমাকে আর একটা পিস ইলিশ দেবো?”
“দাও। খাসা বানিয়েছো আজ।”
“বাবা!”, আদুরে আদুরে গলা মেয়ের, “বাবা, বলছিলাম কী যে, রিয়া না অনেকদিন ধরেই একটা বুনুর জন্য বায়না করছে।”
“তো?”, চোখ সরু করে তাকালেন উমাপ্রসাদ, “আরেকটা বাচ্চা নিয়ে নিয়ে নে। আমি কি বারণ করেছি?”
“কী বলি বলো তো বাবা? তোমার জামাই রাজী নয় মোটে। বলে, এটাকে আগে ভালো করে মানুষ করো। দাদাটার একটা মেয়ে হলেও নাহয় কথা ছিল।”
ও! এই ব্যাপার তাহলে। নিমেষেই সব পরিষ্কার। এই জন্যই দুপুরবেলায় রিয়াকে না নিয়ে মেয়ের এবাড়ি আসা, ইলিশ রাঁধা…। ষড়যন্ত্র… সব ষড়যন্ত্র।
গিন্নী পাতে এক পিস ইলিশ তুলে দিতে দিতে মুখ খুললেন, “বল্ না রে তোর বাবাকে। একটা নাতনি হলে আমারো তোর শাশুড়ির মত কী সুন্দর সময় কাটে… সারাদিন কলকল করে কথা কইবে…।”
খাবার থালা ঠেলে উঠে দাঁড়ালেন উমাপ্রসাদ, “শোনো, তোমাদের ওই মেয়েলিপানা কথায় ভুলে আমি বংশের মান ইজ্জত ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারি না। কী ভেবেছো কী তোমরা? আমি কিছু বুঝি না? সকাল থেকে সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছ! কিছু বুঝি না, অ্যাঁ?”
রাগে কাঁপছেন উমাপ্রসাদ। মুখচোখ রক্তবর্ণ। এক নাগাড়ে বলে চলেছেন, “আমি বাড়ির কর্তা। আমি যা বলব, তাই হবে।”, বলতে বলতেই আবার ধপ করে বসে পড়েছেন চেয়ারে।
ক’দিন আগেই ডাক্তারবাবু এসে দেখে বলে গেছেন ঊমাপ্রসাদের হার্টের অবস্থা ভালো নয়। বেশি উত্তেজনা হলে যেকোন সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। গিন্নী ধীরে ধীরে এগিয়ে এসেছেন, “ঠিক আছে। তুমি যা বলবে তাই হবে। আর কেউ কোন আপত্তি করবে না।”
পাড়ার ছেলেরা দুর্গাপ্রতিমা তুলছে ট্রাকে। মা যেন সোজা তাকিয়ে আছেন উমাপ্রসাদের দিকে। চোখমুখ ছলোছলো। প্রতি বছরই এই সময়টা কেন জানি খুব কষ্ট হয় তাঁর। অপাঙ্গে দেখছেন মাতৃমূর্তি।
মায়ের গলার নেকলেসটার দিকে নজর গেল আচমকা। বৌমা সেই নেকলেসটা নেয়নি। যাকগে, ওটা মেয়েকে দিয়ে দেবেন। পেটের আপদ যে বিদায় হয়েছে এই ঢের।
ট্রাকটা এবার ছাড়ছে। ঢাক বাজছে সজোরে- দুনিয়ার সব কষ্ট, সকল দুঃখ, সমস্ত কান্না ছাপিয়ে যাওয়া আওয়াজ।
হাত জোড় করলেন উমাপ্রসাদবাবু। অস্ফুটস্বরে বললেন, “আবার এসো মা…”
………০………