Home / ছোটদের গল্প / পুচুম ও গুল্লু কুকুরছানা -মৌসুমী পাত্র

পুচুম ও গুল্লু কুকুরছানা -মৌসুমী পাত্র

puchum-o-gullo-mp

ওই ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটা কে বলো তো দেখি? ওই যে, লাল-নীল রঙের স্কুল ড্রেস পরে মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছে? আরে, ও হোলো পুচুম। ভারি ভালো মেয়ে। সবসময় হাসিখুশি থাকে আর সকলের সঙ্গেই ওর ভাব।
এ গলি সে গলি পেরিয়ে পুচুমের স্কুল। মায়ের হাত ধরে কথা বলতে বলতে হাঁটছে পুচুম। একটা গলির বাঁক পেরিয়েই থমকে পড়ে পুচুম। আরে, কী সুন্দর একটা গুল্লু কুকুরছানা! পুচুম ছানাটার দিকে চেয়ে হাসল। ছানাটাও অমনি পুচুমের কাছে চলে এল। মা তাড়া লাগালেন, “পুচুম, স্কুলের দেরি হয়ে যাবে যে!”
পুচুম মিনতিভরা চোখে চাইল মায়ের দিকে, “মা, একটু খেলি না!”
মা বকতে গিয়েও থেমে যান। বলেন, “ঠিক আছে, অল্প খেলে নে।”
কুকুরছানাটার সঙ্গে খেলা ভালোই জমে গেল পুচুমের। পুচুম একটু সরে যায়, ছানাটা ওর দিকে দৌড়ে দৌড়ে আসে। এরকম কিছুক্ষণ চলার পর মা আর খেলতে দিলেন না। পুচুমের হাত ধরে স্কুলের দিকে এগোতে এগোতে বললেন, “পুচুম, ফেরার পথে তুই বরং ওর সঙ্গে যত খুশি খেলিস।”
পুচুম বলল, “মা, ওই কুকুরছানাটাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবো ফেরার পথে।”

মা আপত্তি করলেন না। বললেন, “ঠিক আছে, তাই হবে। বাড়ি নিয়ে যাবো ওকে। তুই ওর সঙ্গে খেলতে পারবি।”

স্কুলে ড্রয়িং ক্লাসে মণিকা দিদিমণি এসে বললেন, “শোন, আজ আমি তোমাদের কিছু আঁকা দেব না। তোমরা নিজের নিজের পছন্দমত আঁকবে।”
সবাই যে যার মতো আঁকতে শুরু করে দিয়েছে। কেউ আঁকছে ফুল, কেউ আঁকছে ঘরবাড়ি, কেউ বা আঁকছে পাহাড়ের কোলে সূর্য। আর পুচুমের চোখে ভাসছে সকালে রাস্তায় দেখা সেই গুল্লু কুকুরছানা। সে আর বেশি না ভেবে কুকুরছানাটার ছবিই আঁকতে আরম্ভ করে দিল। পাটকিলে রঙা একটা বাচ্চা কুকুরএকটা পা সামনের দিকে একটা পা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
সবার ড্রয়িং খাতা দেখে নিয়ে দিদিমণি বললেন, “আজ তোমরা সবাই খুব ভালো এঁকেছো, তবে সবচেয়ে ভালো হয়েছে এই কুকুরের ছবিটা।” এই বলে তিনি পুচুমের আঁকা ছবিটা সবার সামনে তুলে ধরলেন।
বাড়ি ফিরছে পুচুম, মায়ের হাত ধরে। সেই গলিটার বাঁকে এসে পুচুম আবার থমকে গেল। ওই তো, সেই গুল্লু কুকুরছানাটা! তাকে দেখে ছুটে আসছে। পুচুমও খেলা শুরু করে দিল। মা বলেন, “চল, ওকে বরং নিয়ে যাই ঘরে। একটা বাস্কেট এনেছি, ও তার মধ্যে দিব্যি যেতে পারবে।”

পুচুমের মা যেই এ কথা বলেছেন, অমনি কোথা থেকে একটা বড়ো মা কুকুর এসে হাজির। আর সেই গুল্লু কুকুরছানাটাও পুচুমকে ছেড়ে তার কাছে গিয়ে লাফাঝাঁপা করে নেচেকুঁদে অস্থির করে দিল।
পুচুম কিরকম চুপচাপ হয়ে গেল দুম করে। মা বললেন, “পুচুম, কী হল?”
পুচুম বলল, “মা, আমি কাছে না থাকলে তোমার কষ্ট হবে?”
মা উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, তা তো হবেই। তোকে ছাড়া কি আমি থাকতে পারি?”
পুচুম মাকে জড়িয়ে ধরল, “তাহলে তো কুকুরছানাটাকে আমাদের ঘরে নিয়ে গেলে ওদের দুজনেরও খুব কষ্ট হবে।”
মা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, “একদম ঠিক বলেছিস। ওকে আমাদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে কাজ নেই। তার চেয়ে বরং স্কুল আসা-যাওয়ার পথে তুই ওর সাথে খেলা করিস।”
পুচুম ঘাড় নাড়ল, “ঠিক আছে, মা। আজ কিন্তু বাড়ি গিয়ে তোমার কোলে চাপব।”

মা সামান্য হেসে পুচুমের মাথার চুলটা ঘেঁটে দিলেন।

Leave a comment

Check Also

শিল্পী- রিমিল জানা

পরীক্ষা দিলেন বাঘু- মৌসুমী পাত্র

(শিয়ালনীর পাঠশালায় প্রচুর মজাদার ব্যাপার স্যাপার চলে, যার প্রথম হদিশটা দিয়েছিলাম ‘বাগে এলো বাঘু’ গল্পে। …

ওযোধ্যা পাহাড়ে বাঘু

অযোধ্যা পাহাড়ে বাঘু – মৌসুমী পাত্র

(শিয়ালনীর পাঠশালায় প্রচুর মজাদার ব্যাপার স্যাপার চলে, যার প্রথম হদিশটা দিয়েছিলাম ‘বাগে এলো বাঘু’ গল্পে। …

শিয়ালনী কুপোকাত

শিয়ালনী কুপোকাত- মৌসুমী পাত্র

বর্ষা বিদায় নিয়েছে। আকাশে সোনা সোনা রঙের রোদ্দুর। সাদা সাদা মেঘ নীল আকাশে হামাগুড়ি দিয়ে …

বাঘু হলেন মনিটর

বাঘু হলেন মনিটর- মৌসুমী পাত্র

  পাঠশালার পোড়োগুলো বড্ডো ঝামেলা পাকাচ্ছে ক’দিন ধরেই। শিয়ালনী ক্লাস থেকে একটু উঠলেই চিৎকার, চেঁচামেচি, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *