“মোদের গরব, মোদের আশা,
আ মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে তোমার বোলে
কতই শান্তি ভালোবাসা।”
-অতুলচন্দ্র সেন
“কী জাদু বাংলা গানে-
গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে।
এমন কোথা আর আছে গো!
গেয়ে গান নাচে বাউল,
গান গেয়ে ধান কাটে চাষা।”
বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণের ভাষা। জন্মমুহূর্ত থেকেই এ ভাষা পরতে পরতে জড়িয়ে আছে বাঙালির জীবনে। আমাদের মনে, মননে, চিন্তনে আজো এই ভাষার উতলধারা অবিরাম, অবিচ্ছিন্ন। তবুও, কালো মেঘেরা আছে… কালো মেঘেরা আসে। তাদের গুরুগুরু গর্জনে আমরা চমকে উঠি। হয়তো তখনই… হয়তো ঠিক তখনই… ঝরোঝরো উতলধারা এসে ঠেলে সরিয়ে দেয় সব কালো মেঘকে। অনাবিল হয়ে ওঠে ধরণী। রামধনু উঁকি মারে আকাশের এক কোণে।
বাংলা ভাষা নিয়ে দুশ্চিন্তার কালো মেঘকে মুছে ফেলে অনাবিল উতলধারায় তাকে সিক্ত করাই আমাদের এই পাতার উদ্দেশ্য। ইদানীং দেখি, বাংলা ভাষা নিয়ে একটা গেল গেল রব ওঠে প্রায়ই। নিশ্চয়ই কিছু কার্যকারণ আছে। যা রটে তার কিছু তো ঘটেই। আমরা নিজেকে চিনি না, চেনার চেষ্টাও বিশেষ করি না। আমরা অনুকরণ করতে ভালোবাসি এবং তাই করতে গিয়ে নিজেদের দেশজ ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাদ দিতেও আমাদের বিশেষ বাধে না। এটা খুবই সত্যি যে বিদেশি ভাষার শব্দগ্রহণের মাধ্যমে একটি ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু ক্রমান্বয়ে বিদেশি ভাষা বা ভারতেরই অন্য প্রদেশের ভাষার শব্দের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের একান্ত নিজস্ব অনেক সুন্দর সুন্দর শব্দ। আমরা পিকনিক অবশ্যই করবো, কিন্তু চড়ুইভাতিও যেন করি মাঝে মাঝে। আমাদের ড্রাইভারবাবুরা থাকুন, কিন্তু গাড়োয়ানদেরও যেন আমরা একেবারে ভুলে না যাই। আংকল- আন্টিরা থাকুন, কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে। আমাদের একান্ত নিজস্ব ‘মাসীমণি’, ‘পিসিমণি’, ‘কাকীমা’, ‘কাকু’, ‘জেঠু’ ডাকগুলো যেন আমরা যেন ডাকতে পারি অনায়াসে। ‘উতলধারা’র মাধ্যমে বাঙালিয়ানার সেই লুপ্তপ্রায় ভালোটুকুর আস্বাদ স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য।
আজকের শিক্ষিত বাঙালী অনেকাংশেই নেটনির্ভর। কিন্তু সেই অর্থে নেট দুনিয়ায় বাঙালির মনের খিদে মেটানোর সুযোগ বড় একটা নেই। মাউসের এক ক্লিকেই ভালো কিছু কবিতা, গল্প বা প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার সুযোগ বড়োই কম। আজকের ছোটরাও বড়দের দেখাদেখি মোবাইল বা কম্পিউটারে সমান সিদ্ধহস্ত। কিন্তু বাংলা ভাষায় তাদের মনের মত গল্প-ছড়া বা কবিতা আমাদের ওয়েব জগতে কোথায়? যেটুকু আছে, সেগুলি প্রায় সবই আমাদের প্রতিবেশী দেশটির। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলা ভাষার প্রচার বা প্রসারের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেশী দেশটি কিন্তু আমাদের চাইতে অনেক এগিয়ে। এপার বাংলার বাঙালিদের মনের সেই শূন্যতাকে পূরণ করাও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। অবশ্যই, ওপার বাংলার মানুষ বা বাংলায় উৎসাহী ভারতের অন্যান্য প্রদেশ বা বিদেশীরাও সমভাবে বরণীয়।
সেই উপলক্ষ্যেই আমরা বিশেষভাবে গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, রম্যরচনা বা ছড়ার পাশাপাশি চেনা জায়গার অজানা কথাও পাঠকের দরবারে তুলে ধরতে প্রয়াসী। চিন্তাশীল পাঠকের জন্য থাকছে কিছু ভাবনা, কিছু চিন্তা। এছাড়াও থাকছে সাবেকি রান্না। বাঙালি হেঁশেলের বিলুপ্তপ্রায় বা চলতি নানা রান্না গরমাগরম পাঠকের পাতে পরিবেশন করার পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের। এছাড়াও পাঠকের চাহিদামতো বা সময়োপযোগী নতুন নতুন বিভাগ খোলার পথ তো রইলোই।
আর একটা কথা। শিশু বা কিশোরদের জন্য আমাদের আলাদা বিভাগ খোলা হলেও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ই-পত্রিকার মতোই আমরা এটিকে রূপদানে বদ্ধপরিকর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানারকম নতুন উপচারে আমরা এটিকে সাজিয়ে তুলব। উতলধারায় সিক্ত পৃথিবীর টাটকা সতেজ হাওয়া যেন তারা নিতে পারে প্রাণমন ভরে- সেই পরিসরটুকু রাখতে আমরা আন্তরিকভাবে প্রয়াসী।
একদম যারা কচিকাঁচা, সবে বর্ণপরিচয় হয়েছে, বা যারা খানিক বড়ো, কিন্তু বাংলায় তেমন সড়গড় নয়, তাদের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদের বিশেষ বিভাগ- শিশুবাসর। একদম সহজ ভাষায় সামান্য যুক্তাক্ষর সহযোগে রচিত গল্পগুলি। একইসঙ্গে উপাদেয়।
আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আমাদের সদা কাঙ্ক্ষিত। উতলধারা পরিবারের আজ থেকে আপনিও একজন সদস্য। আপনাদের মতামত এবং সহযোগিতায় যেন আমরা ঋদ্ধ নেই- এই আবেদনটুকু রইলো।
পরিশেষে একটাই কামনা। উতলধারা পড়ুক ঝরে আমার, আপনার, আপামর বাঙালির জীবনে …