ম্যাকব্রুমের চমৎকার এক একর খামার সম্পর্কে এত বেশি বোকাবোকা অর্থহীন কথা বলা হয়েছে যে, আমাকে ব্যাপারগুলো খোলসা করতেই হচ্ছে । আমি ম্যাকব্রুম । জশ ম্যাকব্রুম । তরমুজগুলো সম্পর্কে আমি এক মিনিটের মধ্যেই ব্যাখ্যা করব।
ঘটনাগুলো একের পর এক, যেভাবে ঘটেছিল আমি ঠিক সেভাবেই তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।
তুমি বলতেই পারো যে গোটা ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল, সেইদিন যেদিন আমরা কানেকটিকাটের খামারটা ছেড়েছিলাম। আমরা আমাদের কচিকাঁচাদের এবং মালিকানাধীন আর সবকিছু আমাদের পুরোনো এয়ার-কুলড ফ্র্যাঙ্কলিন অটোমোবাইলে গুছিয়ে নিয়ে পশ্চিমে রওনা দিলাম।
নাক গণনা করতে হলে, আমার নিজের ছাড়াও, আমার প্রিয় স্ত্রী মেলিসা এবং আমাদের এগারোজন লাল চুলো, মেচেতা মুখের ছেলেপিলে ছিল। তাদের নাম ছিল উইল জিল হেস্টার চেস্টার পিটার পলি টিম টম মেরি ল্যারি এবং খুদে ক্লারিন্ডা ।
তখন গ্রীষ্মকাল, এবং পথের ধারের গাছগুলো পাখির গানে ভরে রয়েছে । আমার প্রিয় স্ত্রী মেলিসা যখন সেই চমকপ্রদ আবিষ্কারটা করল, আমরা তখন আইওয়া অবধি পৌঁছেছি । আমাদের সন্তান সংখ্যা নাকি বারো হয়ে গেছে, একটা বেশি! সে এইমাত্র আবার তাদের গুনল ।
আমি ঘ্যাচাং ক’রে সজোরে এমন ব্রেক কষলাম যে, তাতে ধুলোর ঝড় উড়তে লাগল । উইল জিল হেস্টার চেস্টার পিটার পলি টিম টম মেরি ল্যারি এবং খুদে ক্লারিন্ডা! আমি চিৎকার করে বললাম, ‘লাইন ক’রে সব দাঁড়িয়ে যাও!’
বাচ্চারা গাড়ি থেকে সব ছিটকে বেরিয়ে এল । আমি তাদের নাক গুনতে লাগলাম, এবং তাও বারোতেই দাঁড়াল । আমি আবারও গুনলাম। সেই বারো। অথচ সবগুলো মুখই তো আমার চেনা, ব্যাপারটা কী হলো রে বাবা! আমি আরও একবার গুনলাম, কিন্তু এই বার আমি ল্যারিকে ধরে ফেললাম, সে পিছন দিক থেকে পিছলে আসছিল । দুবার ক’রে তার নাক গোনা হচ্ছিল, এবং রহস্যটার সমাধান হলো। কেলেঙ্কারির একশেষ ! যদিও আমরা জোর হাসলাম, এবং এই ডামাডোলে আমাদের পাগুলোকে যাহোক একটু টানটান ক’রে নিতে থাকলাম ।
ঠিক তখনই সিড়িঙ্গে-মার্কা, লম্বা ঠ্যাংওয়ালা একটা লোক রাস্তা দিয়ে দুলকি চলে চলতে চলতে এসে উপস্থিত হলেন । তিনি এতটাই খ্যাংরাকাঠির মতো দেখতে যে, আমার মনে হলো কান সমেত সমস্ত কিছু নিয়েই একটা ফ্ল্যাগপোলের পিছনে তিনি দিব্যি লুকিয়ে থাকতে পারেন । তাঁর পরনে রয়েছে একটা লম্বা, শক্ত কলার-কোট, টাইতে একটা হীরার স্টিকপিন এবং মাথায় একটা কালো টুপি ।
‘তোমরা কি পথ হারিয়েছ প্রতিবেশী?’ যে সবুজ আপেলটা তিনি খাচ্ছিলেন, তার বিচিগুলো থুক ক’রে ফেলে দিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন।
‘মোটেই না,’ আমি বললাম। ‘আমরা পশ্চিম দিকে যাচ্ছি, মহাশয়, আমরা আমাদের খামার ছেড়ে দিয়েছি – ওটার অর্ধেক ছিল পাথর এবং বাকি অর্ধেক গাছের গুঁড়ি । লোকেরা আমাদের বলেছে যে, পশ্চিমে জমি আছে এবং শীতকালেও সেখানে সূর্য ঝলমল করে ।’
আগন্তুক তাঁর ঠোঁট বেঁকালেন, ‘চাষের জমির ব্যাপারে আইওয়াকে কেউ হারাতে পারবে না, তিনি বললেন।
‘তা হতে পারে,’ আমি মাথা নাড়লাম। ‘কিন্তু আমার টাকাপয়সার কমতি আছে । যদি না তারা আইওয়াতে খামারটামার বিলিয়ে দেয়, তাহলে আমরা সামনে এগিয়ে যাব ।’
লোকটি তাঁর চিবুক চুলকাচ্ছিলেন । ‘দ্যাখো, আমি যা চাষ করতে পারি তার চেয়ে বেশি জমি রয়েছে আমার । তোমাদের দেখে তো ভালো লোকই মনে হচ্ছে । তোমরা আমার প্রতিবেশী হ’লে ভালোই হবে । আমি তোমাকে সস্তায় আশি একর জমি পাইয়ে দেব । কোনো পাথর বা গাছের গুঁড়ি সেখানে নেই। এখন বলো তুমি কত দাম দিতে পারবে !’
‘আপনার দয়ার জন্য ধন্যবাদ মশাই,’ আমি হাসলাম। ‘কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি, যদি আমার চামড়ার জেবের সবটুকুও দিয়ে দিই, তাহলেও আপনি আমাকে নিয়ে হাসবেন।’
‘ তা সেটা কত?’
‘ঠিক দশ ডলার ।’
‘যাও, বিক্রি করে দিলাম!’ তিনি বললেন ।
সেই শুনে আমি তো বিস্ময়ে প্রায় বিষম খেলাম । ভাবলাম লোকটা নিশ্চয়ই ঠাট্টা করছে, কিন্তু তিনি একটা মাছির মতো দ্রুততার সঙ্গে পুরানো এক খামের পিছনে রেখে একটা দলিলে কাটাকাটি করতে শুরু করে দিলেন ।
‘আমার নাম হেক্টর জোনস, প্রতিবেশী’, তিনি বলেন, ‘তুমি আমাকে হেক বলে ডাকতে পারো, সবাই ওই নামেই ডাকে আমাকে ।’
এর চেয়ে দয়ালু এবং উদার মানুষ কি কখনও কোথাও আছে?
তিনি দলিলে বেশ ঘটা ক’রে স্বাক্ষর করলেন, এবং আমি সানন্দে আমার জেবের বাঁধন খুললাম।
অমনি তিনটি দুধ-সাদা মথ উড়ে বেরিয়ে গেল। তারা সেই কানেকটিকাট থেকেই দশ-ডলারের বিল টার উপর ঝাঁপাঝাঁপি করছিল, কিন্তু খামার কেনার জন্য এখনও তার যথেষ্টই রয়ে গেছে । এবং সেটার উপর কোনো পাথর বা গাছের গুঁড়ি ও জুড়ে বসে ছিল না!
মিস্টার হেক জোনস তাঁর রানিং বোর্ডে লাফিয়ে চড়লেন এবং আমাদের সেই রাস্তা ধ’রে এক মাইল পথ এগিয়ে নিয়ে চললেন। আমার বাচ্চারা সারা পথটা তাঁকে মজা দেবার চেষ্টা করছিল। উইল তার কান ঝাঁকাল, জিল তার চোখ ট্যারা করল, এবং চেস্টার খরগোশের মতো নাক কুঁচকাচ্ছিল, কিন্তু আমার মনে হল মিঃ জোনস বাচ্চাদের সাথে তেমন অভ্যস্ত নন ।
হেস্টার একটা পাখির মত তার হাত নাড়াতে লাগল, পিটার তার সামনের দাঁতগুলি দিয়ে শিস বাজাল, সেগুলো অবশ্য ওখানে ছিলই না, এবং টম গাড়ির পিছনে তার মাথার উপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করল । মিঃ হেক তাঁদের সবাইকেই উপেক্ষা করলেন । অবশেষে তিনি তাঁর লম্বা হাত তুলে ইশারা করললেন।
‘ওই যে তোমার সম্পত্তি, প্রতিবেশী,’ তিনি বললেন ।
আমরা কি আর হুটোহুটি করে গাড়ি থেকে সব নামিনি? আমরা আমাদের নতুন খামারের দিকে আনন্দের সাথে তাকিয়ে রইলাম । সেটা প্রশস্ত এবং রৌদ্রোজ্জ্বল, দূরে একটা টিলা পাহাড়ের উপর একটা ওক গাছ রয়েছে । তবে, একটা খামতি রয়ে গেছে, সেটা নিশ্চিত । রাস্তার পাশে এক একর জুড়ে বিস্তৃত জলাভূমির মতো একটা পুকুর দেখা যাচ্ছে । এরম জায়গায় কারুর গরু হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু দর কষাকষি ক’রেই তো আমরা এটা পেয়েছি – এতে কোন সন্দেহ নেই ।
‘মামণি,’ আমি আমার প্রিয় মেলিসাকে বললাম, ‘পাহাড়ের উপর ওই চমৎকার পুরানো ওক গাছটা দেখতে পাচ্ছ? ওখানেই আমরা আমাদের খামারবাড়ি তৈরি করব।’
‘না তা তুমি করবে না, মিঃ হেক জোনস বললেন, ‘ওই ওক তোমার সম্পত্তির মধ্যে পড়ে না।’
‘কিন্তু, মশাই—-’
‘জলের তলায় যা যা দেখতে পাচ্ছ, সে সব তোমার। ওখানে একটাও পাথর বা গাছের গুঁড়ি নেই, যেমনটি আমি বলেছিলাম।’
আমি ভাবলাম তিনি নিশ্চয়ই ছোটমোটো একটা রসিকতা করছেন আমার সাথে, কিন্তু তাঁর মুখে হাসির চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না ।
‘কিন্তু মশাই, আমি বললাম। আপনি পরিষ্কার বলেছেন যে, খামারটা আশি একর।’
‘হ্যাঁ, তা ঠিক ।’
‘কিন্তু এই জলা-জমিটা তো মেরেকেটে মাত্র এক একর হবে ।’
‘এটা ভুল, তিনি বললেন, ওখানে পুরো আশি একর রয়েছে-একের উপর আরেক চাপানো, ভাজা স্তুপ-পিঠার মতো। আমি একথা বলিনি যে, তোমার খামার সবটাই জমির উপরে রয়েছে। এটা আশি একর গভীর, ম্যাকব্রুম, দলিলটা পড়ো একবার ।’
আমি দলিলটা পড়ি। হ্যাঁ, এ তো সত্যি!
‘হি-হাও! হি-হাও! তিনি ফোঁসফোঁস ক’রে উঠলেন। আমি তোমার ভালো করতেই চেয়েছিলাম ম্যাকব্রুম! শুভ দিন, প্রতিবেশী।’
তিনি ছুটে চলে গেলেন, মুচকি হাসতে হাসতে, সেই তাঁর বাড়ি ইস্তক । অচিরেই আমি জানতে পারলাম যে, মিঃ হেক সবসময় চেপে চেপে হাসেন । লোকেরা আমাকে বলল যে, তিনি যখন তাঁর কোটটি ঝুলিয়ে বিছানায় ঘুমোতে যান, তখন সেই সমস্ত সঞ্চিত হাসি উথলে বের হয়ে আসে এবং তাঁকে রাতের পর রাত জাগিয়ে রাখে। কিন্তু এসব কথার কোনো সত্যতা নেই।
আমি আর এক মিনিটের মধ্যেই সেই তরমুজগুলোর সম্পর্কে তোমায় বলব।
যাই হোক, আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলাম আমাদের এক একর খামারের দিকে, যেটা আর কোনো কাজেরই নয়, একমাত্র গরমের দিনে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া । এবং সেই দিনটা সবচেয়ে গরম ছিল, যদ্দুর আমার মনে পড়ে । রেকর্ডে উষ্ণতম, পরে দেখা গেছিল । সে ছিল এক দিন, মধ্যাহ্নের তিন মিনিট আগে, যখন আইওয়া জুড়ে ভুট্টা ক্ষেতগুলো সব ফুটে পপকর্ন হয়ে গিয়েছিল। সেটা একটা ইতিহাস। তুমি নিশ্চয় ওটার সম্পর্কে পড়েছ । এটা প্রমাণ করার জন্য অনেক ছবিও অবশ্য আছে ।
আমি আমার সন্তানদের দিকে ফিরে তাকালাম । ‘উইল জিল হেস্টার চেস্টার পিটার পলি টিম টম মেরি ল্যারি এবং খুদে ক্লারিন্ডা,’ আমি বললাম । সব কিছুরই একটা ভালো দিকও থাকে । ওই যে পুকুরটা আমরা কিনলাম, তা একটু কাদা কাদা ঠিকই, কিন্তু ভিজে তো আছে। চলো, আমরা ওখানে ঝাঁপ দিই এবং ঠান্ডা হয়ে নিই ।’ আমার পরিকল্পনাতে সকলেই সায় দিল, এবং খুব তাড়াতাড়িই আমরা আমাদের সাঁতারের পোশাকে তৈরি হয়ে নিলাম। আমি ইশারা করা মাত্র আমরা সকলে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে সেখানে ঝাঁপ দিলাম। সেই মুহুর্তে এমন এক শুষ্ক মন্ত্র আঘাত হানল যে, আমরা সোজা এক একর শুকনো মাটিতে এসে অবতরণ করলাম। দেখি, পুকুরটা বেমালুম বাষ্পীভূত হয়ে গিয়েছে । খুব আশ্চর্যজনক ব্যাপার!
আমার ছেলেরা মাথা সামনে এগিয়ে দিয়ে লাফ মেরেছিল, এবং তাদের আর কিছুই তখন দেখা যাচ্ছিল না, শূন্য বাতাসে শুধু তাদের পা গুলো লাথি ছুঁড়ছিল । মাটি থেকে গাজর তোলার মতোই তাদেরকে উপড়ে নিয়ে আসতে হলো আমাকে । আমার কয়েকটা মেয়ে তখনও তাদের নাক চেপে ধ’রে রেখেছিল। অবশ্যই, তারা নিদারুণ হতাশ হয়েছিল, তাদের নিচ থেকে সেই সাঁতারের গর্ত ছিনিয়ে নেওয়া হলো ব’লে ।
কিন্তু যে মুহুর্তে আমি আমার আঙ্গুল দিয়ে উপরের মাটি স্পর্শ করলাম, আমার চাষার বুক এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। সেই পুকুরের তলটা কালো রেশমের মতো নরম এবং সমৃদ্ধ ব’লে অনুভব করলাম । ‘প্রিয় মেলিসা!’ আমি ডাকলাম। ‘এস দেখো! এই উপরের মাটি এতটাই সমৃদ্ধ যে এটা একটা ব্যাংকে রাখা উচিত।’
আমার মনে হলো হঠাৎ উত্তেজনায় আমার যেন জ্বর এসে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল, সেই দারুণ উর্বর উপরের মাটি যেন বীজের জন্য চিৎকার করছে। আমার প্রিয় মেলিসার সাথে এক বস্তা শুকনো বিন ছিল, আমি উইল এবং চেস্টারকে তা আনতে পাঠালাম। দেখলাম লাঙ্গল দিয়ে ক্ষেত চাষের ঝামেলা করার কোনো দরকারই নেই। আমি পলিকে একটি লাঠি দিয়ে সোজা খাঁজ টেনে যেতে বললাম আর তাকে অনুসরণ ক’রে টিমকে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে যাবার নির্দেশ দিলাম । তাদের সাথে সাথে আমিও চললাম। আমি প্রতিটা গর্তে একটা ক’রে বিন ফেলতে লাগলাম আর আমার গোড়ালি দিয়ে তা সাঁটিয়ে দিতে থাকলাম ।
সব বেশ চলছে, আমি বড়োজোর কয়েক গজ এগিয়েছি, হঠাৎ সবুজ এবং পাতাওয়ালা কিছু একটা আমার পায়ে জট পাকিয়ে গেল। আমি পিছনে ঘুরে তাকালাম। দেখি, লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা বিনের একটা চারা দ্রুত পিছু পিছু আসছে আর জড়িয়ে ধ’রে উঠবে ব’লে একটা খুঁটির জন্য খোঁজাখুঁজি করছে।
‘জয় ভগবান!’ আমি চিৎকার করে উঠলাম। এই মাটি সত্যি সমৃদ্ধ! বিনের ডালপালা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল । সেগুলোর আগে আগে থাকার জন্য আমাকে রীতিমতো ছুটতে হচ্ছিল।
আমি যতক্ষণে খাঁজের শেষ পর্যন্ত পৌঁছেছি, ততক্ষণে প্রথমের ডাঁটাগুলোতে ফুল ফুটে গিয়েছে, এবং বিনের শুঁটিগুলো তৈরি হয়ে গেছে এবং তারা তোলার জন্য প্রস্তুত।
আমাদের উত্তেজনার বহর তুমি কল্পনা করতে পারো! উইলের কান দুলছে। জিলের চোখ ছানাবড়া। চেস্টারের নাক কাঁপছে। হেস্টারের বাহু ঝাপট খাচ্ছে । পিটারের অনুপস্থিত সামনের দাঁত শিস দিয়ে উঠছে । আর টম তার মাথার উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
‘উইল জিল হেস্টার চেস্টার পিটার পলি টিম টম মেরি ল্যারি এবং খুদে ক্লারিন্ডা,’ আমি চিৎকার করে উঠলাম। ‘বিনের ফসল তোলো!’
এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা সেই বিনের পুরো ফসল রোপণ করে, কেটে ও ফেললাম। কিন্তু সেই রোদের তাতে কাজ করা, উহঃ! রাস্তা বরাবর একটা ভালো ওক গাছের ফল খুঁজতে আমি ল্যারিকে পাঠালাম । আমরা সেটা পুঁতে দিলাম, কিন্তু যতটা ভেবেছিলাম সেটা তত তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠেনি ।
ছায়াওয়ালা একটা গাছের জন্য আমাদের পুরো তিনটি ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো ।
আমরা আমাদের ওক গাছের নীচে তাঁবু খাটালাম এবং পরের দিন আমরা আমাদের বিনের ফসল নিয়ে বার্নসভিলে চলে গেলাম। আমি সেগুলোর বদলে বিভিন্ন বীজ-গাজর, বীট, বাঁধাকপি এবং অন্যান্য আরও সব নিলাম । বিনের একদম নিচে দোকানদার কতগুলো ভুট্টার দানা খুঁজে পেল যেগুলো তখনও ফোটেনি। কিন্তু আমরা ধরতে পেরেছিলাম যে, ভুট্টা রোপণ গাছের জন্য নিয্যস মারাত্মক । এর চারাগুলো এত দ্রুত বেড়ে ওঠে যে, তোমার নাকের চামড়া ভেদ ক’রে চলে যাবে।
অবশ্যই, সেই উপরের মাটির একটা রহস্য ছিল। একজন সরকারি লোক হাজির হয়েছিলেন এবং বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন । তিনি বলেন, আইওয়ার ওই অংশে একসময় একটি সুবিশাল হ্রদ ছিল । আমাদের পুকুর পর্যন্ত সঙ্কুচিত হয়ে আসতে আসতে সেটার হাজার হাজার বছর লেগে গিয়েছে, ব্যাপারটা তুমি কল্পনা করতেই পারছ । হ্রদের মাছগুলো নিশ্চয়ই সার্ডিনের চেয়েও খারাপভাবে ঠাসাঠাসি ক‘রে তার মধ্যে ভরে গেছিল। আর মাটিতে নাইট্রোজেনের যোগান দিতে মাছের মত আর কিছুই হয় না । এটা একটা বৈজ্ঞানিক সত্য। নাইট্রোজেন সবকিছুকে ছাড়িয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। এবং মাঝে মাঝেই আমরা দু-একটা মাছের কাঁটা পেয়ে যেতাম ।
খুব বেশি দিন গেল না, মিঃ হেক জোনস আমাদের প্রতিবেশীসুলভ দেখা দিতে এলেন । তিনি একটা কাঁচা শালগম খাচ্ছিলেন । আমরা যেভাবে বাঁধাকপি রোপণ করছিলাম এবং ফসল কাটছিলাম তা দেখে তাঁর চোখ মাথা থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসার জোগাড়। তিনি প্রায় দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেন আরকি।
তিনি নিজের মনে কীসব বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন।
‘আমার প্রিয় মেলিসা,’ আমি বললাম । ‘ওই লোকটার মাথায় কোনো দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরছে ।’
শহরের মানুষজনেরা আমাকে বলেছিল যে, মিঃ হেক জোনসের কৃষিজমিটা আইওয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ছিল । তিনি তা ছাড়তেও পারেননি ।
টর্নেডো বাতাস তাঁর কর্ষণীয় জমি উড়িয়ে নিয়ে গেছে এবং একদম উপরে রুক্ষ্ম শক্ত মাটি ছেড়ে দিয়ে গেছে । গোদা হাতুড়ি এবং গোঁজ দিয়ে তাঁকে ওটা হাল চাষ করতে হয়। একদিন আমরা পাহাড়ের ওপারে প্রচুর গর্জন শুনতে পেলাম, আমার ছেলেরা উপরে উঠে দেখতে গেল ব্যাপারটা কী ঘটছে। দেখা গেল তিনি ছররা-বন্দুক দিয়ে বীজ রোপণ করছেন।
এদিকে, আমরা আমাদের খামার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বলতে আপত্তি নেই যে, অচিরেই আমরা বেশ বড়োসড়ো একটা লাভের মুখ দেখলাম। কানেকটিকাটে থাকার সময় বছরে একটা ফসল কাটতে পারলে আমরা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছে বলে মনে করতাম । এখন আমরা রোপণ করছি আর ফসল কাটছি, দিনে তিন, চারটে ক’রে ।
কিন্তু কিছু বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হতো । এমনই একটা জিনিস হচ্ছে আগাছা । আমার ছেলেপিলেরা পালা করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগাছা পাহারা দিত । যেই মুহূর্তে একটা আগাছা মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে পড়ত, তারা সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেটার দিকে ছুটে যেত, এবং নিড়ানি দিয়ে দলেপিষে সেটাকে মেরে ফেলত । তুমি কল্পনা করতে পারো, আমাদের ওই উর্বরা মাটিতে যদি একবার একটা আগাছা মাথা তোলে তবে কী ঘটে যাবে।
রোপণের সময় সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক থাকতে হতো। একবার আমার প্রিয় মেলিসা খাবারের জন্য দুপুরের ঘণ্টা বাজানোর ঠিক আগে আমরা লেটুস লাগিয়েছিলাম। আমরা যখন খাচ্ছিলাম, তার মধ্যেই, লেটুস মাথা তুলে দাঁড়াল এবং বীজে পরিণত হয়ে গেল। আমাদের গোটা ফসলটাই জলে চলে গেল ।
এরপর একদিন এক মুখ হাসি নিয়ে মিঃ হেক জোনস ফিরে এলেন । তিনি একটা ফাঁক খুঁজে বের করেছেন দলিলের ভিতর, যা খামারটাকে আমাদের করেছে ।
‘হি-হাও!’ তিনি হেসে উঠলেন। একটা মুলো চিবোচ্ছিলেন তিনি। ‘এবার আমি তোমায় ধরতে পেরেছি, ম্যাকব্রুম। দলিলে বলা আছে যে, তোমার জেবে যা কিছু আছে তার সবটাই আমাকে দিতে হবে, কিন্তু তুমি তা দাওনি ।’
‘এর ঠিক উল্টোটা, মহাশয়,’ আমি উত্তর দিলাম। ‘দশ ডলার | আমার জেবে আর একটা সেন্টও ছিল না।’
‘তোমার জেবে মথ ছিল। আমি ওদের ঝাপটানি দিয়ে বের হয়ে যেতে দেখেছি। তিনটে দুধ-সাদা মথ, ম্যাকব্রুম। আমি আজ বিকেল তিনটার মধ্যে তিনটে মথ চাই, নইলে আমি খামারটা ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য রাখি। হি-হাও!’
এবং তিনি চলে গেলেন, মুচকি হাসি হাসতে হাসতে ।
বাচ্চাদের মা ঠিক তখন দুপুরের ঘণ্টা বাজাল, সুতরাং আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই। ওই লোকটাকে বিভ্রান্ত করতে হবে! যদিও আইনগতভাবে সে ঠিকই আছে ।
‘উইল জিল হেস্টার চেস্টার পিটার পলি টিম টম মেরি ল্যারি এবং খুদে ক্লারিন্ডা! আমি বলে উঠলাম, আমাদের তিনটে দুধ-সাদা মথ ধরতে হবে! খুব তাড়াতাড়ি!’
আমরা সব দিকে ছোটাছুটি করতে লাগলাম । কিন্তু দিনের বেলায় মথ খুঁজে পাওয়া একরকম অসম্ভব। তুমি নিজে চেষ্টা ক’রে দেখো। আমরা প্রত্যেকেই খালি হাতে ফিরে এলাম।
আমার প্রিয় মেলিসা কাঁদতে শুরু করল, কারণ আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, খামারটা আমাদের হারাতেই হচ্ছে। তোমাকে বলতে কোনো বাধা নেই যে, সমস্ত ব্যাপারগুলো কেমন অন্ধকার দেখাচ্ছিল। অন্ধকার ! আরে, এই তো পেয়েছি! আমি ছেলেপিলেদের রাস্তা ধ’রে ছুটে গিয়ে নিঃসঙ্গ পুরানো পাইন গাছটার কাছে পাঠিয়ে দিলাম আর বললাম তারা যেন এক বুশেল পাইনকোন নিয়ে দ্রুত ফিরে আসে ।
তারপর, আমরা কিছু ব্যস্ত হয়ে পড়লাম বটে! প্রতি তিন ফুট অন্তর একটা ক’রে পাইনকোন পুঁতে দিলাম আমরা । তারা বড়ো হতে লাগল। আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে চারপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম, এবং আমি থেকে থেকেই আমার পকেট ঘড়ির দিকে তাকাতে থাকলাম। তরমুজগুলো সম্পর্কে আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমায় বলব।
নিশ্চিতভাবেই, তিনটে বাজতে দশ মিনিটের মধ্যে, সেই কোনগুলো একটি ঘন পাইন বনে পরিণত হলো।
তার ভিতরটা অন্ধকারও ছিল! সবুজ পাইনের সুবিশাল শাখা-প্রশাখা দিয়ে সূর্যালোকের একটি রশ্মিও সেখানে প্রবেশ করতে পারছিল না । বনের গভীরে গিয়ে আমি একটা লণ্ঠন জ্বালালাম। এক মিনিটও পার হলো না, দুধ-সাদা মথেরা আমায় ঘিরে ধরল- ওরা ভেবেছিল রাত হয়ে গেছে। আমি তিনটের ডানা ধ’রে জঙ্গলের বাইরে ছুটে বেরিয়ে এলাম ।
দেখি সেখানে মিঃ হেক জোনস শেরিফের সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, ফোরক্লোজ করার জন্য অপেক্ষা করছেন।
‘হি-হাও! হি-হাও!’ বুড়ো হেক হাসতে থাকলেন । তিনি একটি কুইন্স আপেল খাচ্ছিলেন। ‘প্রায় তিনটা বাজে, এবং দিনের বেলা তুমি কোনো মথ ধরতে পারবে না। খামার এখন আমার!’
‘এত তাড়াতাড়ি না, প্রতিবেশী জোনস,’ আমি হাত দুটো আঁজলা ক’রে এগিয়ে ধ’রে বললাম। ‘এই যে এখানে আপনার তিনটে মথ। এখন ঝটপট সরে পড়ুন মশাই, আপনার পায়ের গোড়া পেঁচিয়ে গাছের মূল আর কান থেকে বিষাক্ত আইভি গজিয়ে ওঠার আগেভাগেই!’
নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে তিনি দ্রুতবেগে ছুটে চলে গেলেন ।
‘আমার প্রিয় মেলিসা,’ আমি বললাম। ‘ওই লোকটার মাথায় দুষ্টুমি ঘুরছে। ও আবার ফিরে আসবে ।’
কাঠগুলো সাফ করতে বেশ ভালো রকম খাটতে হলো, সবই বলছি তোমাকে। আমরা কিছু পাইন করাত কলে চিরে, খামারের কোণে নিজেরাই একটি ঘর তৈরি করলাম। যা অবশিষ্ট ছিল আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের বিলিয়ে দিলাম। মাটি থেকে শিকড় উপরে ফেলার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধ’রে আমরা বিনাশকর্ম চালালাম।
কিন্তু আমি চাই না তুমি ভাবো যে, আমাদের খামারে কাজ ছাড়া আর কিছুই হতো না। কিছু ফসল আমরা শুধুমাত্র মজা করার জন্যই চাষ করতাম । এই যেমন ধরো, কুমড়ো । ওদের ডগাগুলো এত ঝটপট বেড়ে উঠত যে আমরা খুব কম সময়তেই কুমড়োগুলো তুলতে পারতাম। সে এক দেখার মতো ব্যাপার বটে ।
বাচ্চারা সেই কুমড়োগুলোর পিছনে ছুটতে ছুটতে হেঁদিয়ে পড়ত। মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে কুমড়ো ধরার জন্য প্রতিযোগিতা হতো।
রবিবারের বিকেলে, কেবল খেলা করার জন্যই, বড় ছেলেরা কুমড়োর বীজ রোপণ করত এবং তাতে চড়ার চেষ্টা করত। এটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না । যেই মুহূর্তে কুমড়োর ফুল মুড়ে যাবে, এবং কুমড়োটা ফুলতে শুরু করবে, অমনি সেটাকে জাপ্টে ধরতে হবে তোমাকে । হুশ! তোমার পা ধরে এক হ্যাঁচকা টান মারবে সেটা এবং তোমাকে শোঁ শোঁ ক’রে খামারের উপর দিয়ে ঘোরাতেই থাকবে যতক্ষণ না সেটা নিজে নিজেই বেহাল হয়ে যায়। কখনও কখনও ছেলেরা ব্যানানা স্কোয়াশ ব্যবহার করত, যা ব্যাপারটাকে আরও দ্রুত করে তুলত। এবং মেয়েরা পোগোস্টিকের মতো ভুট্টার ডাঁটায় চড়তে শিখে গেছিল। ব্যাপারটা আর কিছুই না, মাটি ফুঁড়ে ডাঁটা বেরোনো মাত্র শাঁসের উপর দাঁড়িয়ে পড়ার ব্যাপার ছিল। জম্পেশ একটা লাফ মারার জন্য এটা ভারী চমৎকার ছিল ।
আমরা দেখতে পেতাম মিঃ হেক জোনস দূরের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সব লক্ষ করছেন। যতক্ষণ না তিনি আমাদের জমি থেকে উৎখাত করছেন, ততক্ষন পর্যন্ত তিনি মনে হয় বিশ্রাম নেবেন না।
তারপর, এক গভীর রাতে, বাড়ির বাইরে একটা হি-হাও শব্দে আমি জেগে উঠলাম। আমি জানালার কাছে গিয়ে চাঁদের আলোয় বুড়ো হেককে দেখতে পেলাম। তিনি কখনো কর্কশ স্বরে হাসছিলেন, কখনো বা মুখ টিপে হাসছিলেন, হি-হাও করছিলেন, এবং যত্রতত্র বীজ ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন।
আমি আমার স্লিপিং ক্যাপ খুলে বাইরে ছুটে গেলাম। ‘আপনি কি অপকর্ম করছেন, প্রতিবেশী জোনস!” আমি চিৎকার করে বললাম।
‘হি-হাও!’ তিনি উত্তর দিলেন, এবং মুচকি হাসতে হাসতে দ্রুত পায়ে পালিয়ে গেলেন ।
তুমি নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছো, সারা রাত আমি কেমন নিদ্রাহীন কাটালাম । পরদিন সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে আমাদের সেই খামার আগাছায় ভেঙে পড়ল । এমন আগাছা তুমি ভাবতে পারবে না! তারা মাটি ভেদ করে দঙ্গলে দঙ্গলে বেরিয়ে আসছে এবং পাগলের মতো একে অপরের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে – চিকউইড এবং মিল্কউইড, থিসলস এবং বুনো মর্নিং গ্লোরি। মুহূর্তের মধ্যেই আগাছাগুলো কয়েক ফুট পুরু একটা জট পাকিয়ে ফেলল, এবং বেড়ে উঠতেই থাকল আরও আরও ।
আমাদের সামনে যেন একটা যুদ্ধ লেগে গেছে, আমি তোমাকে সব বলছি!
‘উইল জিল হেস্টার চেস্টার পিটার পলি টিম টম মেরি ল্যারি এবং খুদে ক্লারিন্ডা!’ আমি চিৎকার করে উঠলাম। ‘কাজে লেগে পড়ো সকলে !’
আমরা মাটি নিড়ানো এবং কুড়ুল দিয়ে কোপানো শুরু করলাম । আমরা একটা করে আগাছা উপড়ে ফেলছি, অমনি আরেকটা সেখানে গজিয়ে উঠছে। গোটা একটা মাস সেই আগাছার সাথে আমাদের কঠিন এক লড়াই করতে হয়েছিল। আমাদের প্রতিবেশীরা যদি সাহায্যের জন্য এগিয়ে না আসত, আমরা এখনও সেখানে আগাছা পোড়াতেই থাকতাম।
অবশেষে সেই দিনটা এল যখন খামারটা পুরো পরিষ্কার হয়েছে, আর ঠিক তখনই বুড়ো হেক জোনসের উদয় হলো । তিনি তরমুজের একটা বড় ফালি খাচ্ছিলেন। এই সম্পর্কেই আমি তোমাকে বলতে
যাচ্ছিলাম ।
‘কেমন আছো, প্রতিবেশী ম্যাকব্রুম,’ তিনি বললেন । ‘আমি বিদায় জানাতে এসেছি।’
‘আপনি কি চলে যাচ্ছেন মশাই?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
‘আমি না, তুমি।”
আমি সোজা তাঁর দিকে তাকালাম। ‘আর আমি যদি তা না করি মশাই?’
‘কেন, হি-হাও, ম্যাকব্রুম! সেখানে আগাছা-বীজের আরও স্তূপ আছে যেখান থেকে সেগুলো এসেছিল!’
আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল। আমি তৈরি হয়ে নিলাম, তাঁকে এমন এক শিক্ষা দিতে হবে যা তিনি জীবনেও ভুলে যাবেন না। কিন্তু পরক্ষণেই যা ঘটল তার ফলে আমাকে আর কষ্ট ক’রে কিছু করতে হলো না।
আমার ছানাপোনারা ততক্ষণে চারপাশে জড়ো হয়ে গেছে, আর মিঃ হেক জোনস ভুল ক’রে মুখভর্তি তরমুজের বীজ থু করে ছিটিয়ে দিলেন ।
ব্যাপারটা দ্রুতই ঘটে গেল!
তিনি কী করেছেন তা আমি ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই, একটি তরমুজ লতা বুড়ো হেকের সিড়িঙ্গে পায়ের চারপাশে চাবুকের মতো জড়িয়ে ধরেছে এবং তাঁর পায়ে এক হ্যাঁচকা টান মেরেছে । তিনি খামারের উপর দিয়ে সাঁইসাঁই করে এলোপাথাড়ি ঘুরতে লাগলেন। তরমুজের বীজ চারধারে উড়ে বেড়াচ্ছিল। শীঘ্রই তিনি ঘূর্ণি খেতে খেতে সবেগে ফিরে আসলেন এবং রবিবার থেকে পড়ে থাকা একটা কুমড়োর অবশিষ্ট অংশের সাথে ধাক্কা খেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত জায়গা জুড়ে তরমুজ আর কুমড়োর দল লম্ফঝম্প করতে লাগল, এবং সেগুলো প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়ে তাঁকে ধরাশায়ী করছিল । তাঁর এখানেসেখানে দাগ ধরে যাচ্ছিল । তরমুজগুলো আছড়ে পড়ছিল এবং সজোরে ফেটে যাচ্ছিল । বুড়ো হেক তরমুজের মণ্ড দিয়ে এমনভাবে ঢাকা প’ড়ে গিয়েছিলেন যে তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন একটা কেচাপ ভর্তি বোতলের ভিতর থেকে তাঁকে গুলি করে বের করা হয়েছে।
সে এক দেখার মতো বস্তু ছিল বটে । উইল সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান নাড়াতে লাগল । জিল তার চোখ ট্যারা করল। চেস্টার তার নাক মটকাতে লাগল। হেস্টার পাখির মতো তার হাত ঝাঁকাতে লাগল। পিটার সিটি বাজাল তার সামনের দাঁত দিয়ে, যেগুলো এর মধ্যে ভিতরে গজিয়ে উঠেছে। টম তার মাথায় ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এবং ছোট্ট ক্লারিন্ডা প্রথম হাঁটি হাঁটি পা পা করল।
ততক্ষণে তরমুজ ও কুমড়োগুলো নিজেদের মধ্যে খেলাখেলি শুরু করেছে। আমি বুঝতে পারলাম মিঃ হেক জোনস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে ফেরত যেতে চাইছেন। তাই আমি ল্যারিকে একটা বড়ো ব্যানানা স্কোয়াশের বীজ আনতে বললাম।
‘হি -হাও! প্রতিবেশী জোনস, আমি বললাম, এবং তাঁর পায়ের কাছে বীজটা ছুঁড়ে দিলাম। আমি তাঁকে বিদায় জানানোর সময়টুকুও পেলাম না, তার আগেই ডালপালা তাঁকে কব্জা করে নিল। দীর্ঘ ব্যানানা স্কোয়াশটা দ্রুত তাকে সোজা বাড়ি অবধি পৌঁছে দিল । উঃ, তুমি যদি সেটা দেখার জন্য সেখানে থাকতে পারতে ।
এটাই হচ্ছে পুরো বিষয়টির সত্যতা। ম্যাকব্রুমের বিস্ময়কর এক একর খামার সম্পর্কে যদি অন্য কিছু তুমি শুনে থাকো, তা আর কিছুই নয় একটা আস্ত গাঁজাখুরি ।