আত্মারামের বিয়ে, কনে বিল্ববাসিনী। আগে আত্মারাম কনে দেখেনি। বাবা, মামা সম্বন্ধ করে ঠিক করেছেন। পাত্রী দেখে এসে বাবা বলেছিলেন, “আহাও নয়, ছিছিও নয়, চলনসই!”
বরাসনে বসে থেকে আত্মারামের ঘুম পেয়ে গেল, কোমর কটমট। এক কাপ কড়া লিকার চা হলে বেশ হতো! বোশেখের শেষ রাতে লগ্ন। এখন খানা-পিনায় সব ব্যস্ত, দীয়তাং ভুজ্যতাং। ওর দিকে তাকানোর কেউ নেই। বলির পাঁঠার মতো একপাশে বাঁধা। কিছুক্ষণের মধ্যে অং বং মন্তর পড়ে উচ্ছুগু, তারপর ঘ্যাচাং-ফু, এক কোপে ধড়-মুণ্ডু দু-ফাঁক।
যথালগ্নে বরকে উঠিয়ে নিয়ে গেল ছাদনাতলায়। ছাদনাতলা ফাঁসির মঞ্চ, ও যেন ফাঁসির আসামী। ফাঁসির আসামীর তবু একটা শেষ ইচ্ছা বলে ব্যাপার থাকে, ওর তাও নেই। ফাঁসুড়ের একটানে ঘাড় কাত। সে ঘাড় আর সারাজীবনে সোজা হল না। ন্-না, ঠিক তা নয়, এ যেন আজীবন কারাবাস। একটা বাঁধন ছেঁড়া এঁড়েকে খোঁয়াড়ে পোরা। তখন বোঝেনি আত্মারাম যে এ মালা মালা নয়, নাইলনের দড়ি নিশ্চয়! নন্- বায়োডিগ্রেডেবল্! একদিক তার গলায় বাঁধা, অন্যদিক তার বৌয়ের হাতে। বাজিকরের বাঁদর, যেমন নাচায় তেমনি নাচো, যেমন সাজায়, তেমনি সাজো।
এবারে বাসর। বাসরে নতুন বউ-এর সঙ্গে রসালাপের একটা জবরদস্ত নাটক মনে মনে মকশো করেছিল। এক নজর নতুন বউয়ের দিকে তাকিয়ে মনে হলো বাবা ঠিকই বলেছেন,- ঠেলেঠুলে চলে যাবে। তবে মুখটা বেশ টসটসে, যেন গার্ডেন-ফ্রেশ চালকুমড়ো। সারা ঘরে ছড়িয়ে একটা মন-কেমন-করা গন্ধ।
আত্মারাম ভাবল সামান্য একটু আলাপ সেরেই সটান শুয়ে বিশ্রাম নেবে। যা ধকল গেল সারাদিন। ভাবল একবার টয়লেট থেকে ঘুরে এসে নিশ্চিন্তে ঘুমোবে। নতুন বরকে কেউ ভোরবেলার মর্নিং-ওয়াকের জন্য ডাকবে না!
টয়লেট যাবার সময় দেখে, বাবা আর তাঁর এক বন্ধু গল্পগাছায় মত্ত। চক্ষুলজ্জার খাতিরে তাঁদের পাশে একবার বসল। ভাবখানা এই যে বাবা বলবেন, – “বাছা ঘরে যাও, বাসর রাতে বাইরে থাকতে নেই, বউ-মা একা আছে।” কিন্তু পোড়া কপাল, বাবা সেকথা বলতে বোধহয় ভুলে গেলেন। বন্ধুও গল্পে ব্যস্ত।
বোশেখের ছোট রাত, কিছুক্ষণের মধ্যে পুবের আকাশ ফর্সা হলো। কাকেরা মনে হয় বাকি সব পাখিদের আগে জাগে, তারা ওড়াউড়ি শুরু করেছে। দোতলার কার্নিশে সকালের হলদে রোদ। বিয়েবাড়ির লোকজন দু-একজন করে জাগতে শুরু করেছে।
এইভাবেই শেষ হলো আত্মারামের বাসর- যাপন।
আহাও নয়, ছিছিও নয়, চলনসই!
……০……