হ্যাঁ, এটা ট্রু যে আমি টেগোরকে লাইক করি। আর করবো নাই বা কেন? এই যে, উনি যে নোবেল প্রাইজ অ্যাচিভ করেছেন, সেটা তো অ্যাপ্রিসিয়েট করার মতোই ম্যাটার! আর তারপর, এই যে আজ টেগোরের বার্থডে সেলিব্রেশন, এটা তো সিম্পলি ওয়াও! আমি বাড়িতে বলেই দিয়েছি, মাটন ছাড়া আজ চলবে না! এরকম একটা গর্জাস থিং, মাটন ছাড়া জমে নাকি? মা-বাবা অবশ্য বলে দিয়েছে, স্কুলের অনলাইন শেরিমনিতে ঠিকঠাক করে টেগোরের পোয়েম বলতে পারলে তবেই মাটন! তবে ওটা, নো চাপ! আমার ভালোই লাগে বলতে, “আই অ্যাম নাউ রিসাইটিং ওয়ান পোয়েম অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর!”, এই পর্যন্ত ইংলিশে বলতে হয়। তারপর বাংলায় কবিতাটা বলে শেষে ‘থ্যাংক ইউ’! আগের বার মিস ‘ওয়াণ্ডারফুল’ বলেছিলেন। এবার কী বলবেন কে জানে? আমাদের ক্লাসের আভান্তিকা আগের বার ভুল করে বাংলায় ‘নমস্কার’ বলে ফেলে বকা খেয়েছিল। এবারে সার্টেনলি ওর ভুল কারেকশন করে নেবে!
অ্যাকচুয়ালি, আমাদের স্কুল এসব ব্যাপারে খুব রিজিড! আর তার জন্যই না এখানে আমরা অ্যাডমিশন নিয়েছি! এমনিতেই স্কুলে বাংলা বলা অ্যালাউ নেই, সেখানে এরকম মিসটেক করে কী করে কে জানে! ইভন সেকেণ্ড ল্যাংগুয়েজ ক্লাসে পর্যন্ত মিস পড়াটুকুর বাইরের বাকি সব কথাই ইংলিশে বলেন। ও হ্যাঁ, আমাদের স্কুলে বেংগলি সাবজেক্টকে বেংগলি বলে না, বলে সেকেণ্ড ল্যাংগুয়েজ। ইংলিশকে অবশ্য ফার্স্ট ল্যাংগুয়েজ বলে না। ইংলিশ গ্রামার, ইংলিশ লিটারেচার এরকম ভাগ আছে কিনা!
তবে টেগোরের পোয়েমগুলো আমি ট্রুলি লাইক করি। ওই যে, তালগাছ পোয়েট্রিটা, ওই যে স্ট্যান্ডিং অন ওয়ান ফুট- ওটা আমার টেরিফিক লাগে! ওয়ান ফুটে স্ট্যাণ্ড করাটাও আমি অনেকবার প্র্যাকটিস করি বাড়িতে। আর একটা কবিতা – ওই যে যেটাতে একটা ফেয়ারে একটা মেয়ে ওয়ান পয়সা দিয়ে একটা ফ্লুট কিনেছিল- ওইটা পড়লে আই ফিল লাইক ক্রায়িং! ওই পোয়েমটা আমি তাই তাড়াতাড়ি করে পেজ উলটে চলে যাবার চেষ্টা করি। উনি নাকি আরও অনেক পোয়েম, নভেল, স্টোরি, প্লে- এসব এসব লিখেছেন। মিস আরও বলছিলেন যে উনি নাকি এশিয়ার মধ্যে ফার্স্ট নোবেল পেয়েছেন। আইশারিয়াটা এমনি হাঁদা যে তাই শুনে আস্ক করল, মিস, উনি ইংলিশে লেখেননি কেন? সিলি কোয়েশ্চেন! ক্লাসের সবাই হাসল। আমিও হাসলাম। তবে হাঁদামোর জন্য ততটা নয়, আগের দিন আমার ফ্রেণ্ডকে বাঙালি বলেছিল বলে। বেংগলি বলতে পারত না?
মা বলছিল, টেগোর নাকি শান্তিনিকেতনে একটা স্কুল খুলেছিলেন। সেটা নাকি এখনও চলে। সেই স্কুলে নাকি ফাঁকি মারাটাও টু সাম এক্সটেন্ট অ্যালাউড! এটা হিয়ার করে আমার ভালোও লাগল, কষ্টও লাগল। ওখানে গরমে কোট, প্যান্ট, টাই কি স্কার্ট-ব্লাউজ-টাই পরে ছটফট করতে হয় না। বেংগলি পোশাক নাকি চলে! সামারে ওই স্কুলটার কথা আমার খুব মনে হয়! ইয়েস, সেদিন কে যেন বেশ বলছিল যে টেগোর নাকি স্কুল বাংক করতেন! স্কুল পালিয়ে কোথায় কোথায় গিয়ে বসে থাকতেন! আচ্ছা, ওঁদের স্কুলে সিকিউরিটি ছিল না? গার্ডিয়ান কল হোতো না? অবশ্য ওঁর বাবা শুনেছি বেশিটা হিমালয়ে থাকতেন, আর মা কোথাও গেলে পালকি চেপে বেরোতেন! গার্ডিয়ান কল হলে সেটা নিশ্চয়ই একটা মজাদার ব্যাপার হত! হিহি, ভাবতেও আমার laugh আসে!
ভালো জিনিস মনে পড়ল! আজ 25th বৈশাখে আমাদের apartment এ রবীন্দ্র গেট টুগেদার অ্যারেঞ্জ হয়েছে! সবাই বেংগলি ড্রেস পরে আসবে। ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবি, মেয়েরা শাড়ি- পোড়ামাটির গয়না, আরও কত কী! ওতে নাকি বেশ একটা টেগোর টেগোর ফিলিং আসে! আমি ভাবছি, আরেকটু বড় হয়ে ওইরকম কিছু একটা এক্সকুইজিট সেজে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেবো- ফিলিং টেগোর টেগোর! বেশ হবে, তাই না?
এই দ্যাখো, আজ এত অ্যারেঞ্জমেন্ট, আর অমনি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল! কে জানে, রেনি সিজন ওঁর ফেভারিট সিজন বলে হয়তো! রেন হলেই নাকি ওঁর ক্রিয়েটিভিটির ফ্লাড আসত আর একের পর এক পোয়েম লিখে যেতেন! এই ব্যাপারটা শুনে আমার বেশ ভালো লেগেছে। আমার যদিও পোয়েম কি পোয়েট্রি আসে না, but রেন হলে আমার মনের ভেতরে কেমন জানি একটা হয়! আর তখন মনে হয়, সব ইংলিশ বাদ দিয়ে যদি ঠিকঠাক বাংলায় কথা বলতে পারতাম! আমাদের স্কুলের নিচু ক্লাসে একটা রাইম পড়িয়েছিল, রেন রেন গো অ্যাওয়ে, কাম এগেন অ্যানাদার ডে! ওই রাইমটা আমার মোটেও পছন্দ ছিল না। বাজে লাগত খুব। আমার এত ভালো লাগে বৃষ্টি, চুপচাপ জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখতে ইচ্ছে করে, মনটা কিরকম নেচে নেচে ওঠে, মনের ভেতর গুনগুনিয়ে ওঠে- কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা! আমাদের দোতলার জানালার পাশে কনকচূড়া গাছটা তার হলুদ হলুদ ফুল নিয়ে ভিজতে থাকে আপনমনে! একটা- দুটো ফুল, দুটো- চারটে পাতাও ভুল করে ভেতরে ঢুকে পড়ে খোলা জানালা দিয়ে! আমায় ওরা ডাকতে থাকে, ডাকতেই থাকে…। ওই ডাক কি তোমার, গুরুদেব?
এই দ্যাখো, কতগুলো কথা আমি ঠিকঠাক বাংলায় বলে ফেললাম! এই দ্যাখো, আমি বেংগলি না বলে বাংলা বললাম, উইণ্ডো না বলে জানালা বললাম। তোমায় গুরুদেব বলে ডাকলাম! তার মানে তুমি আছো, সত্যিই আছো, ভীষণ রকমভাবে আছো…
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ টেগোর! না না! শুভ জন্মজয়ন্তী, গুরুদেব!
……০……
অঙ্কন- পুণ্যতোয়া ধর