Home / কিছু ভাবনা কিছু চিন্তা / এত যুদ্ধ কেন ? – সুমেধা ভৌমিক

এত যুদ্ধ কেন ? – সুমেধা ভৌমিক

শিল্পী- পুণ্যতোয়া
শিল্পী- পুণ্যতোয়া

                                                   

আমাদের জন্মলগ্নে কোন নির্দিষ্ট দেশ বা কালের পূজিত কোন মহামানব কোন মন্ত্র, কোন দীক্ষা, ভাষা, বাণী বা ধর্ম কথা বলে দেন না। যে কোন ভাষা বা ধর্মাবলম্বী কোন মা আমাদের আশ্রয় দেন। সেই সমস্ত মায়েরা আমাদের গায়ের রঙটাও খেয়াল করে দেখেন না যে আমরা আসলে কোন বর্ণের সন্তান।

পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে যে অজস্র শিশু জন্মায় তারা কোন জাতি, বর্ণ বা ধর্মের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে না। তারা শুধুমাত্র পঞ্চ ইন্দ্রিয় কে ভরসা করে, প্রকৃতির আদিম নিয়ম মেনে, নিরাপত্তা আর ভালোবাসার আশ্বাস খোঁজে। খুব সহজ আর সরল সেই চাওয়া পাওয়ার হিসেব। আমরা বড়রা এতই অমানুষ যে অন্য দেশ, জাত, ধর্ম বা বর্ণের শিশুদের সেই সহজ আশার নিরাপদ পৃথিবীকেও মুহূর্তে বিষাক্ত করে তুলি। যে কাজটা কোন ধর্মের ঈশ্বরও করেন না, তা অবলীলায় কোনো না কোনো অজুহাতে আমরা করে থাকি। আর তা হলো নিজস্ব মনগড়া গণ্ডির বাইরের পৃথিবীর , মানুষ নামের প্রজাতির নির্বিচারে হত্যা। আমরা প্রকৃতির থেকে, পৃথিবীর থেকে অনেক উপরে গিয়ে নিজেদের সর্বশক্তিমান বলে ভাবতে শুরু করেছি। প্রকৃতি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সমস্ত প্রাণীদের জীবনচক্রের চাকা খুব ভেবে চিন্তে সবার অস্তিত্বের কথা খেয়াল রেখে তৈরি করেছে। আর আমাদের এক মুহুর্ত লাগে জীবন চক্রের ঘোরার দিক থামিয়ে দিতে আর সাধারণ ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে।

কে দিয়েছে আমাদের এই অধিকার ?!  আমাদের লোভ যখন অন্যের দেশকে কেড়ে নেওয়ার মন্ত্রণা দেয় তখন আমরা কেউ ভাবি না আমাদের নিজের নিজের দেহটাও অসলে পৃথিবীর ঋণ এবং যথাসময়ে তা প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দেওয়াটাই নিয়ম। আমরা তা চাই, বা না চাই।

আমরা যখন কিছু ভুল, ধর্মান্ধ লোকজনের ধর্মকথা কায়মনোবাক্যে মেনে নি তখন একবারও ভাবি না পৃথিবীর কোথাও কোন ধর্মের মনীষীরা অন্য কারুর ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার কথা বলে যাননি। অথচ আমরা ধর্মের নামে অন্য মানুষকে আমাদের হিংস্র রূপ দেখাতে দ্বিধা করি না। আমার ধর্ম যদি আমায় শান্তির দীক্ষা না দেয়, তাহলে আমি কেমন ধার্মিক?!

একইভাবে আমি যদি একটুও আলাদা দেখতে বা বর্ণের মানুষ কে নিজের প্রজাতির বাইরের কোন গোত্র ছাড়া জীব ভেবে থাকি, যে শুধুমাত্র আলাদা দেখতে বলে তাকে ঘেন্না করা যায় তাহলে আমি কিসের শিক্ষিত?! পৃথিবীতে একমাত্র মানুষই একটা প্রজাতি, যে নিজের প্রজাতির জীবদেরকেও সহজে মেনে নিতে পারে না।

অতীতের দুটো বিশ্বযুদ্ধের মত বীভৎস ভুল থেকেও  কোনরকম শিক্ষা নেওয়া বা যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা আমরা করিনা। পৃথিবীর অন্য কোন দেশ আমার দেশের থেকে হয়তো বেশি মারাত্মক অস্ত্র বানিয়ে ফেলছে এই ভয়ে আমরা নিজেদের অস্ত্র ভাণ্ডার খুব গোপনে আর অতি যত্নে সাজিয়ে তুলি। আইনস্টাইনের মতন মহান বিজ্ঞানী ও শান্তিকামী মানুষের জীবনের সব থেকে বড় ভুল থেকেও আমরা কোন শিক্ষা নিই না।

হিটলার এর নেতৃত্বে জার্মানরা পরমাণু অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে এই আশঙ্কায় যাতে আমেরিকা ও পরমাণু অস্ত্র বানাতে শুরু করে সেই মর্মে  আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট কে লেখা চিঠিতে আইনস্টাইন স্বাক্ষর করেন। ওনার  কথায় – ” I made one great mistake in my life when I signed the letter to President Roosevelt recommending that atom bombs be made, but there was some justification – the danger that the Germans would make them. ”

আমাদের রেষারেষিতে জমানো অস্ত্র পৃথিবীকে জতুগৃহ বানিয়ে তুলেছে। সমস্ত অস্ত্র যদি প্রয়োগ হয় পুরো পৃথিবী কে বেশ কিছু বার ধ্বংস করা যাবে।  আইনস্টাইনের কথায় – ” I know not with what weapons World War 3 will be fought, but World War 4 will be fought with sticks and stones. ”

শান্তিকামী, অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী আইনস্টাইন বলেন  – ” Taken on the whole,  I would believe that Gandhi’s views where the most enlightened of all the political men in our time. We should strive to do things in his spirit… not to use violence in fighting for our cause, but by non – participation in what we believe is evil. ”

তবুও পৃথিবীতে যুদ্ধ হয় ! হতেই থাকে !  সিরিয়া ইয়েমেনে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। অসংখ্য শিশু শুধু পুষ্টির অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। আমরা নীরব দর্শক। ‘আমার ঘরে তো যুদ্ধের আঁচ লাগেনি, ‘ ভেবে নিশ্চিন্ত হয়ে যুদ্ধের কিছু ভয়াবহ বীভৎস চিত্রকে দুঃস্বপ্ন ভেবে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলি। ‘ন্যায়দণ্ড’ কবিতায় বলা রবীন্দ্রনাথের কথা –  ” অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে  ” শব্দগুলো শুধু পাঠ্য পুস্তকের অঙ্গ হিসাবে থেকে যায়। অন্যায় করার এত সূক্ষ্ম তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্লেষণ আমাদের কারুর ঘুম ভাঙায় না। হয়তো ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা বদল হয়ে গেছে।

আমাদের ওপর থেকে দেখতে যেমনই হোক, আসলে আমরা প্রতিটি মানুষ কি দিয়ে তৈরি তা খুব ভালোভাবে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন আইনস্টাইন।  তাঁর কথায়  – “We are slowed down sound and light waves,  a walking bundle of frequencies tuned into the cosmos . We are souls dressed up in sacred biochemical garments and our bodies are the instruments through which our souls play their music. ”

আশা করবো সবাই একদিন বুঝতে পারবে যে, এক অপরিসীম উদার সম্ভাবনার অন্য নাম মানুষ। বিশ্বনাগরিক রবীন্দ্রনাথ মানবতার ওপর ভরসা রেখে  বলেছিলেন  – ” আমাদের জন্য একটিমাত্র দেশ আছে সে হচ্ছে বসুন্ধরা একটি মাত্র নেশন আছে সে হচ্ছে মানুষ। ”

 

 

 

 

 

Leave a comment

Check Also

Tagore কে আমি like করি

Tagore কে আমি like করি – মৌসুমী পাত্র

  হ্যাঁ, এটা ট্রু যে আমি টেগোরকে লাইক করি। আর করবো নাই বা কেন? এই …

ঈশ্বরঃএজেন্ট ও মার্কেটিং

ঈশ্বরঃ এজেন্ট ও মার্কেটিং – সুদীপ্ত বিশ্বাস

    যে কোনও প্রোডাক্ট মার্কেটে বিক্রির জন্য ভালো মার্কেটিং এর জুড়ি নেই। মার্কেটিং ঠিকঠাক …

হেসে কেশে ভালোবেসে

হেসে কেশে ভালোবেসে- সোমক সেনগুপ্ত

    বড়, উন্নত শহর মানেই পেল্লাই সব বাড়ি। যেমন বই এর তাকে বই রাখা …

দীপালিকায় জ্বালাও আলো- মৌসুমী পাত্র

অন্ধকার কি দূর হয় এতোই সহজে? এতোই সহজ? দীপাবলি আলোর উৎসব। এবং শব্দের। এবং অপরিণামদর্শিতার। …