Home / বাঘু সিরিজ / পাঠশালায় ধুন্ধুমার- মৌসুমী পাত্র

পাঠশালায় ধুন্ধুমার- মৌসুমী পাত্র

বই থেকে বিপদে
শিল্পী- গুঞ্জা

 

(শিয়ালনীর পাঠশালায় প্রচুর মজাদার ব্যাপার স্যাপার চলে, যার প্রথম হদিশটা দিয়েছিলাম ‘বাগে এলো বাঘু’ গল্পে। গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে পাঠশালার খবর ভেসে আসে মাঝেমধ্যে। এলেই তোমাদের জানাতে থাকবো। পাঠশালাটা কোথায় জানো? বনের ঠিক সেই জায়গায়, যেখানে প্রচুর গাছপালা মিলে মাথার উপরে একটা চাঁদোয়ার মত বানিয়েছে, আর দুটো সেগুনগাছের ইয়া মোটা মোটা গুঁড়ি দুদিক থেকে এসে একটা দরজার মতো তৈরি হয়েছে। জঙ্গলের যত ছানাপোনা জন্তুজানোয়ার, সবাই আজকাল সক্কালবেলা হলেই হাতমুখ ধুয়ে চাট্টি মুড়ি খেয়ে ওখানেই পড়তে যায়। তাদের মধ্যে আছে বাঘিনীর বাচ্চা ছেলে বাঘু, হাতির বাচ্চা মেয়ে হাতুশি আর হনুমানের ছানা মেয়ে হিনিমিনি। এছাড়াও আছে ভালুকের পুঁচকি মেয়ে ভালকি আর কুমীরের বাচ্চা ছেলে কুমরু।)

 

বার্ষিক বাঘোৎসব ছিল গতকাল। বাঘুদের জঙ্গলের পরে আরও দুটো জঙ্গল পেরিয়েই ঘন বনের মাঝে কিছুটা খোলা মাঠমতো জায়গা। জঙ্গলের জন্তুজানোয়ারেরা জায়গাটাকে ‘পশু প্রান্তর’ নামে ডাকে। পশু পার্বণ, জানোয়ার জলসা থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠান এখানে লেগে থাকে বছরভর। 

তা সেই পশু প্রান্তরেই বার্ষিক বাঘোৎসব হল কাল। সকাল থেকেই দেশ দেশান্তরের যত বাঘ, সব একে একে জড়ো হতে শুরু করেছে। কিছু বাঘ বরাবরই দোকান দিতে আসে। কোন বাঘ হয়তো মস্ত বড় কড়াইতে জ্বাল দিয়ে জিলিপি ভাজছে কোমরে গামছা বেঁধে, কারুর আবার চপ বেগুনির দোকানে ব্যাপক ভিড়। কেউ আবার বেলুন আর বাঁশি একটা লম্বা লাঠিতে ঝুলিয়ে মেলাময় বিক্রি করে বেড়ায়। কেউ যদি ‘হরেক মাল’, ‘হরেক মাল’ বলে চেঁচায়, তখন পাশ থেকে অন্য কোন বাঘ পাল্টা চেঁচায় ‘মাছ ধরার জাল’, ‘মাছ ধরার জাল’। রকমারি জিনিস, মেলা হইচই। নাচ- গান ইত্যাদির আসরও বসে একপাশে। বাঘাসঙ্গীত, বেঘোকীর্তন এসবও গাওয়া টাওয়া হয়। বাঘনাট্যম, বাঘিশি, বাঘেন্দ্রনৃত্য, বাঘাকলি- এসব ভালো ভালো নৃত্য পরিবেশন করে খ্যাতনামা সব বাঘনটেরা। বড় বাঘ, বুড়ো বাঘ, কচি বাঘ- সব মিলিয়ে সে এক রীতিমতো বেঘো ব্যাপার!

বাঘু গিয়েছিল বিকেলের দিকে। এবছর বাঘু অল্প হলেও বড় হয়েছে, তাই একা একাই গিয়েছিল। বাঘুর মা বাঘিন্নী পইপই করে বলে দিয়েছিল, “বাঘু, কাল কিন্তু তোর পাঠশালা আছে। যা ঘোরার, দেখার- তাড়াতাড়ি ঘুরে দেখে নিবি। টাকা নিয়ে যা। যদি কিছু কিনতে মন যায়, কিনবি। আমি একটু পরে যাচ্ছি। তোকে একেবারে নিয়ে আসবো।”

বাঘু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, “মা, তুমি বাঘাকীর্তন গাইবে না?”

বাঘিন্নী লেজ ঝাঁকিয়েছিল, “না রে। বাঘাকীর্তনের আসর বসতে অনেক রাত হয়ে যায়। আমার গলাটাও ধরে আছে। তার উপর তোর আবার কাল পাঠশালা আছে। দেখা যাক, তখন সামনের বছর হবে।”

শুনে বাঘু একটু মুষড়েই পড়েছিল। মা রাত অব্দি থাকলে সেও থাকার সুযোগ পেত। কয়েকটা ভালো ভালো  বাঘাটে গানও গলায় তুলতে পারত! কিন্তু কী আর করা!

যাই হোক, মেলায় পৌঁছে বাঘু তো পুরো তাজ্জব বনে গেল! উরিব্বাবা! কত রকমের কতো বাঘ! মোটা বাঘ, রোগা বাঘ, হুমদো বাঘ, কেঁদো বাঘ, হাঁড়িমুখো বাঘ, মেছো বাঘ- সবাই মিলে মহা হুটোপাটি লাগিয়ে দিয়েছে! নানা দোকান বসেছে চারিদিকে! একটা বাঘ নানারকমের লাল নীল লজেন্স নিয়ে ‘লজেন্স, লজেন্স, বেঘো লজেন্স- বাঘহাটির আসল এসেন্স’ বলে বিস্তর চেঁচাচ্ছে। বাঘু তার কাছে গিয়ে প্রথমেই এক টাকার লজেন্স কিনল। মেলায় জিনিসপত্র বেজায় সস্তা। এক টাকায় বাঘু পেল চারটে লজেন্স, সঙ্গে আবার একখানা ফাউ। একখানা লজেন্স মুখে পুরে ইতিউতি তাকিয়ে বাঘু দেখতে পেল, কাছেই একটা সিড়িংগে মতন বাঘ একখানা ধুতি পরে থাবায় ঘুঙুর বেঁধে গলায় একটা ঢোল ঝুলিয়ে সেটায় চাঁটি দিতে দিতে গান জুড়েছে-

বাঘের বরন, বাঘের ধরন – দেখবি যদি আয়!

আয় আয় আয়!

 

অ দিদি বাঘ গোওওও, অ দাদা বাঘ গোওওও…

খুকু বাঘ, খোকা বাঘ- আয়রে ছুটে আয়!

এমনতর বাঘের মেলা পাবি কোথায়?

 

বাঘের মাসি, বাঘের পিসী- যে যেখানে আছো…

বুড়ো বাঘ, বুড়ি বাঘ- সবায় নিয়ে এসো…

বাঘের মেলার বাঘবেলুন

নিয়ে যত খুশি খেলুন-

বাঁশি বাজিয়ে গাওরে গান যত প্রাণ চায়…

আয় আয় আয়…

 

শিঙাড়া আছে, জিলিপি আছে, আছে পাঁপড়ভাজা-

ফেরার সময় নিয়ে যেও খাজা এবং গজা-

বাঘ ভুলোনো ছড়া আছে, আছে গল্পের বই-

খেতে দারুণ লাগবে শোনো মিষ্টি লাল দই…

ছোটো, খেলো, নাচো, গাও- মন যেদিকে ধায়…

আয় আয় আয়!

  বাঘু খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনল। তারপর তার নজর গেল একটু দূরের দিকে। সেখানে এক মোটাসোটা বাঘিনী মুখের সামনে একটা চোঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার গলায় একটা পোস্টারের মত ঝুলছে। সেখানে লেখা-  

_______________________________________________________________________________

হজমি বাঘিনীর প্রস্তুত আসল ‘শের- ই- হজমি গুলি’

আপনি কি পেটব্যথায় ভোগা বাঘ? কিংবা অম্বলে ভুগে ভুগে কাতর বাঘ? নাকি কোষ্ঠকাঠিন্যে কাবু বাঘ? না, এর কোনটাই নয়? আপনি আসলে খাবারে অরুচি বাঘ? বা, পেটে কৃমি হওয়া বাঘ?

আপনি যদি এর কোন একটি দলেও পড়েন, তাহলে আপনার অবিলম্বে প্রয়োজন আমার নিজস্ব গবেষণায় প্রস্তুত ‘শের-ই-হজমি-গুলি’। আমাদের নিজস্ব ব্যাঘ্র এষণাগারে প্রস্তুত এবং সম্পূর্ণ বৈঘিক পদ্ধতিতে। মানুষের নকল করা কারবার আমরা করি না।

এই হজমি গুলি খেলে আপনার দেহে যে হজম সংক্রান্ত সমস্যাই থাকুন না কেন, চিরতরে দূর হয়ে যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে টানা তিনদিন খালি পেটে তিনটি হজমিগুলি জল দিয়ে গিলে ফেলতে হবে। এবং এই তিনদিন মাছ মাংস ডিম ইত্যাদি আমিষজাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।

পুঃ- আজকাল কিছু বাঘ মানুষদের নকল করে বাঘ ঠকানো কারবার চালাচ্ছে! তাদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না।

*হজমি বাঘিনী দ্বারা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

________________________________________________________________________________

বাঘু মন দিয়ে লেখাটা পড়ল মন দিয়ে। এদিকে সেই মোটাসোটা বাঘিনী ততক্ষণে বলতে শুরু করে দিয়েছে- “নমস্কার! নমস্কার! নমস্কার! আমি হলাম হজমি বাঘিনী অর্থাৎ কিনা আমি বাঘকুলের হজমে সহায়তা করে থাকি। আপনারা সকলেই জানেন, আমরা, অর্থাৎ, বাঘ প্রজাতিরা সকলেই কমবেশি খাদ্যরসিক। কিন্তু এই রসিকতা নীরস হয়ে যায়, যদি আমাদের হজমের যন্ত্রগুলি গড়বড় করে। এইজন্যই আজ আমি আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি বিশেষ হজমিগুলি। যা নিয়মমত খেলে অচিরেই পেটরোগা বাঘের জায়গায় কেঁদো বাঘে পরিণত হবেন। আপনি কি পেটব্যথায় ভোগা বাঘ? নাকি অম্বলে ভুগে কাতর বাঘ?……”

বাঘু আর দাঁড়াল না। যা দেখার দেখে নিয়েছে। হজমি বাঘিনী এবারে লেখা কথাগুলোই আউড়ে যাচ্ছে। মা চলে এলে আর হয়তো ভালো ঘোরাই হবে না। বাঘুর ধান্দা অন্য। ভালকির মা সেবারে ভালকিকে মেলা যেমন বাঁশি কিনে দিয়েছিল, ওইরকম একটা বাঁশি তার চাই। তা খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেল বাঘু। বার্মুডা আর হাতকাটা গেঞ্জি পরা একটা জোয়ান বাঘ ঘুরে ঘুরে বাঁশি আর বেলুন বিক্রি করছে। একটা বাঁশি আর একটা বাঘবেলুন কিনল বাঘু। তিন টাকা লাগল। মা দিয়েছিল দশ টাকা। তার মানে বাঘুর থাবায় আর রইল ছয় টাকা। বাঘু ভাবছিল এবারে গিয়ে বাকি টাকায় ইচ্ছেমত খাওয়াদাওয়া করবে, এমন সময় কে যেন মিহি গলায় তাকে ডাকল, “ও ছোটবাঘ! দারুণ একটা গল্পের বই আছে! একবার দেখে যাও।”

পেছনপানে তাকিয়ে সে দ্যাখে, একদম বুড়ি একটা বাঘিনী। তার সামনে বেতের ডালায় রাখা খানকতক বই। তাকে তাকাতে দেখে বুড়ি বাঘিনী আবার ডাকল, “কী খোকাবাঘ? গল্পের বই ভালো লাগে না? পাঠশালে যাও না বুঝি? বই না পড়লে কি আর বাঘের মত বাঘ হওয়া যায়?”

বাঘু গল্পের বই তেমন একটা পড়ে না। হাতুশি আর ভালকি খুব পড়ে। বই পেলে নাওয়া খাওয়াও ভুলে যায়। কিন্তু এমন করে বললে কার না রাগ হয়? বাঘু একলাফে সামনে গিয়ে বলল, “পাঠশালে যাই না মানে? রোজ যাই। অনেক বই পড়তে হয়, বুঝেছো?”

বাঘিনী ফোকলা দাঁতে হাসল, “তবে তো খোকাবাঘ, এ বইটা তোমার জন্যই। বই না পড়লে কি আর বাঘের মত বাঘ হওয়া যায়?” বলতে না বলতেই একটা বই বেতের ঝুড়ির তলা থেকে বের করে আনল বাঘিনী। বাঘুর তো বইয়ের প্রচ্ছদ দেখেই চক্ষু চড়কগাছ! একটা কমবয়সী ছেলে বাঘ আর একটা কমবয়সী মেয়ে সিংহ মুখোমুখি গর্জন করছে। দুদিকে দুটো গাছ উপড়ে পড়ে আছে। বইয়ের ওপর নাম লেখা- ‘হাঁড়ুবাঘ ও ঢেঁকিসিংহীর হুহুংকার’।

   বুড়ি বাঘিনী খুব মন দিয়ে বাঘুর মুখের ভাব দেখছিল। এবারে বলল, “তাহলে খোকাবাঘ, বইখানা দিয়ে দিই?”

বাঘু এতক্ষণে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ভারিক্কি চালে প্রশ্ন করল, “কত দাম?”

বুড়ি বাঘিনী বলল, “দাম তো দশ টাকা। তা তুমি নাহয় ছ’ টাকাই দিও।”

বাঘুর শুনেই আক্কেল গুড়ুম। তার ত মোটে ছয় টাকাই আছে কাছে। বাঘু দরদামে তেমন পটু নয়, আর বুড়ি বাঘিনী দাম কমালো না কিছুতেই। তার এক কথা, “বোঝাই যাচ্ছে তুমি বিশেষ বইটই পড়ো না। পড়লে এর কদর বুঝতে! যা একখানা বই না, পড়লে তো বুঝবে। বুঝেই গেছি, তুমি হলে পেটুকদাস, খালি পেটের চিন্তাতেই গেলে! থাক, তোমাকে আর নিতে হবে না। বইয়ের মতন ভালো জিনিস তোমার জন্য নয়।”

তা এসব শুনলে কার না রাগ হয়? রাগের চোটে বইটা কিনেই ফেলল বাঘু। বুড়ি বাঘিনী পইপই করে বলে দিল- বইটা কিন্তু সাবধানে যত্ন করে রেখো। আর পারলে ফাঁকা জায়গায় বসে পোড়ো। এ বই পড়লে অনেক সময় অনেক মজাদার ব্যাপার ঘটে যায়।

বইটা কিনে বগলদাবা করে পিছু ফিরতে না ফিরতেই বাঘিন্নীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তারপর বাঘু মায়ের সঙ্গে মেলায় ঘুরেফিরে জিলিপি চাটনি পাঁপড়ভাজা এসব খেয়েদেয়ে কিছুটা দেরি করেই ফিরল।

 

তার ফলে রাতে আর বইটা পড়া হয়নি তার। সকালে পাঠশালা যাবার আগে বাঘু খেতে বসল বইটা হাতে নিয়ে। বাঘিন্নী থালায় গরম গরম ভাত আর বাটিতে করে ডিমের ঝোল বেড়ে দিয়েছে। বাঘু খানিকটা ডিমের ঝোল আর ঝোলের সবজি আলু এসব পাতের উপর ঢেলে মেখে খেতে খেতে পড়া শুরু করল-

এক ছিল ছোটোখাটো বাঘ। ছোট হলেও কিন্তু তার তেজ প্রচণ্ড। তার নাম নাড়ুবাঘ। সে যখন রেগে যায়, তখন সে ঘ্র্যায়াঁও করে এমন বিকট এক চিৎকার ছাড়ে যে সবাই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। এই নাড়ুবাঘের আবার যে দাদা, তার নাম হাঁড়ুবাঘ। তার যেমন চেহারা, তেমনই তেজ। সে যখন ঘড়ড়াড়াড়াম করে গর্জন করে তখন বনের গাছপালা অব্দি থরথর করে কাঁপে। আর তার ঘুঁষি? সামনে পিছনে ডাইনে বাঁয়ে এমন জোরে ঘুঁষি চালায় যে যেই তার কাছে আসতে যায়, সেই দুমদাম করে মাটিতে পড়ে যায়।

সকালে নাড়ুবাঘ আর হাঁড়ুবাঘকে তাদের মা রুটি আর মাংসের ঝোল সাজিয়ে দিয়েছে বাটিতে। একটু পরেই নাড়ুবাঘ এক লাফ দিয়ে তার দাদা হাঁড়ুবাঘের বাটি কেড়ে নিতে গেছে। অমনি হাঁড়ুবাঘ লাফিয়ে উঠেছে। রাগে তার দুই চোখ ভাঁটার মত জ্বলছে। গায়ের লোম সজারুর কাঁটার মত খাড়া খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। নাক দিয়ে যেন গরম আগুনের হলকা বইছে। একটা জ্বলন্ত আগুনের গোলার মত হাঁড়ুবাঘ লাফ দিল। মাটি যেন কেঁপে উঠল। ধূ ধূ করে জ্বলতে রইল হাঁড়ুবাঘের চোখ। নাড়ুবাঘ পালানোর চেষ্টা করল কিন্তু হাঁড়ুবাঘ ভয়ংকর জোরে তাকে চেপে ধরে তার মাথায় মাংসের ঝোলের বাটি উপুড় করে ঢেলে দিয়ে বলল, “খাবি? এই নে, খা! যত পারিস খা!”

ঝপাত! বাঘুর ডিমের ঝোলের বাটি উপুড় হয়ে পড়ল মেঝেতে। বাঘু শূন্যে একটা ঘুঁষি পাকিয়ে বলল, “নে, কত খাবি খা!”

বাঁ হাতে বই ধরে পড়ছে বাঘু, তার আর কোন হুঁশই নেই। বাঘু পড়ছে- হাঁড়ুবাঘ ভয়ংকর এক গর্জন করে শূন্যে লাফ দিয়ে ভীষণ জোরে এক লাথি কষাল নাড়ুবাঘকে।

 

বাঘুও এক লাফ দিয়ে একখানা লাথি হাঁকড়াল। আর তার লাথির চোটে ভাতের থালা ছত্রখান হয়ে ছড়িয়ে গেল আর ডিমখানা মেঝেতে গড়িয়ে চলল বলের মত।

কাণ্ডকারখানা দেখে বাঘিন্নী ভয়ানক হুংকার দিল, “এসব কী হচ্ছে, বাঘু? তুই খাবি না খাস না- তাই বলে এতসব খাবার জিনিস নষ্ট করবি?”

বাঘু বই পড়তে পড়তেই উত্তর দিল, “চোপরও, নাড়ুবাঘ! তোর এত বড় আস্পর্ধা তুই আমার মুখে মুখে কথা বলিস!”

রাগের চোটে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বাঘিন্নী ধেয়ে এল বাঘুর দিকে। গল্প পড়তে পড়তেই বাঘু দাঁত মুখ খিঁচিয়ে সামনের দিকে এক লাফ দিয়ে গর্জন করল, “তবে রে! আজ তোর একদিন কি আমারই একদিন!”

বাঘিন্নী আর বেশি কথার দিকে গেল না। বাঘুর কান আচ্ছাসে মুলে হাতের বই কেড়ে নিয়ে তাকে ফের ভাতের থালার সামনে বসিয়ে কোনমতে ভাত খাইয়ে দিল।

কিছুক্ষণ পরে। বাঘু বই পড়তে পড়তে চলেছে পাঠশালায়। বাঘু পড়ছে-

           নাড়ুবাঘের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভের পর হাঁড়ুবাঘের মনে বিশাল তেজ এল। তার রক্ত জল করা হুংকারে বনের সব পশুপাখি লেজ গুটিয়ে পালাতে লাগল, গাছেরা ভয়ে থরথর করে কেঁপে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে লাগল।

            এদিকে হাঁড়ুবাঘের পাশের বনেই থাকত ঢেঁকিসিংহী আর তার বোন বেঁকিসিংহী। ঢেঁকিসিংহীও হাঁড়ুবাঘের মতোই দোর্দণ্ডপ্রতাপ। তার গর্জনে জংগলের ছোটখাটো জন্তুজানোয়ারেরা ভয়েই অজ্ঞান হয়ে যায়। ভয়ংকর রাগে যখন সে ফোঁসফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়তে থাকে, তখন বনের ভেতর দিয়ে যেন ছোটখাটো ঝড়ই বয়ে যায়। তার রক্ত জল করা হুংকারে ভীতু জন্তুরা অজ্ঞান হয়ে যায় আর চরম সাহসী জানোয়ারদেরও গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।

          ঢেঁকিসিংহীর বোন বেঁকিসিংহীর দাপট কিছু কম নয়। ঢেঁকিসিংহীর মত অতটা না হলেও সেও বিশেষ কম যায় না। এখন হয়েছে কী, সেদিন বিকেলের মুখে বেঁকিসিংহী একটা হরিণকে তাড়া করে তাদের বনের বাইরে বেরিয়েছিল। এমন সময়ঘ্র্যাঁয়াও ঘ্র্যাঁয়াও! মেঘগর্জনের মত ভয়ংকর আওয়াজ! সেই আওয়াজে বনের জন্তুদের বুক ধুকধুক করতে থাকে, আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার উপক্রম করে! বেঁকিসিংহী কিন্তু ঘাবড়ায়নি। সেও বিশাল এক লাফ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করল যে কে গর্জন করছে! নাড়ুবাঘকে দেখে সে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গর্জন করল, “তবে রে নাড়ুবাঘ! তোর এতবড় দুঃসাহস!”

          নাড়ুবাঘ ভীষণ এক গর্জন করে বিশাল এক লাফ দিল, “তবে রে, বেঁকিসিংহী!”

            পড়তে পড়তে বাঘুও দিল বিশাল এক লাফ। আর লাফ দিয়ে পড়বি তো পড়, পড়ল কুমরুর পিঠে। কুমরু আপনমনে হেলতে দুলতে যাচ্ছিল পাঠশালায়, বাঘুর ঠিক আগে আগেই। আর এদিকে কুমরুর গায়ে পড়া মাত্রই বাঘুর সারা গায়ে কুমরুর কাঁটার খোঁচা লাগল বেদম। তখনও বাঘুর গল্পের ঘোর পুরোপুরি কাটেনি। তীব্র এক চিৎকার ছাড়ল বাঘু, “হা রে রে বেঁকিসিংহী! দুরাচারী পাপিষ্ঠা!”

আচমকা এরকম আক্রমণে কুমরু কিছুটা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল প্রথমটায়। সামলে নিয়ে কুমরুও খানকতক ঘুঁষি চটপট চালিয়ে দিল বাঘুর গায়ে। তারপর আচ্ছাসে বাঘুর লেজ মুলে দিয়ে বলল, “এইসব নতুন কায়দাবাজি শুরু করেছিস, না বাঘু?”

মারধোর খেয়ে বাঘুর ততক্ষণে হুঁশ ফিরেছে। কোনমতে কানটান চুলকে নিয়ে বলল, “ইসসস! মিসটেক! আসলে এই বইটা পড়ছিলাম তো, তাই মানে ইয়ে… মানে হুঁশ ছিল না আর কী… মানে ইয়ে তোকে বেঁকিসিংহী ভেবেছিলাম আর কী!”

“বেঁকিসিংহী! সে আবার কে? কায়দা মারার জায়গা পাসনি, না?”, বেদম রাগে লেজ আছড়াচ্ছে কুমরু।

আমতা আমতা করল বাঘু, “ইয়ে মানে… এই বইটাতে আছে রে কুমরু! দুর্দান্ত বই রে! নাড়ুবাঘ, হাঁড়ুবাঘ, বেঁকিসিংহী, ঢেঁকিসিংহী…”

“তাহলে আর ওই বই পড়ে তোর কাজ নেই”, বলতে বলতেই কুমরু বইটা ছিনিয়ে নিয়েছে বাঘুর হাত থেকে, “যে বই পড়ে অত মারদাঙ্গা করার ইচ্ছে হয়, সে বই না পড়াই ভালো।”

বইখানা বগলে নিয়ে পাঠশালের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হনহন করে হাঁটা লাগাল কুমরু। পিছন থেকে বাঘু কত ডাকল কিন্তু কুমরু আর পাত্তাই দিল না।

 

পাঠশালায় থাবালেখা করতে দিয়েছে শিয়ালনী ওদের সবাইকে। মানে থাবায় পেনসিল নিয়ে হাতের লেখা। ‘আদর্শ থাবালেখা’ বইটা খুলে সেখানে লিখছে সবাই। বইতে প্রতি পাতায় একটা করে বাক্য লেখা। তার নিচে দশটা করে খালি লাইন। ওরকম চারপাতা লিখতে দিয়েছে শিয়ালনী। প্রথম পাতায় লেখা আছে- যার যেমন লেজ, তার তেমন তেজ। দ্বিতীয় পাতার বাক্য- জলে কুমীরের নর্তন, ডাঙায় বাঘের কীর্তন। তৃতীয় পাতার লেখা- জানোয়ার মোরা এক দঙ্গল, কাঁপাই বন জঙ্গল। শেষের পাতায় আছে- কাঁঠালেতে আছে আঠা, জন্তু হও সাদামাঠা

থাবালেখা করছে সবাই যে যার মত। কুমরুর এদিকে মন পড়ে আছে ওই বইটার দিকে। কোনমতে তাড়াতাড়ি করে লেখা শেষ করে খাতা জমা দিয়েই ‘ভূগোল ভাবনা’ বইয়ের আড়ালে কুমরু চুপিচুপি খুলে বসল বইখানা। তারপর পড়তে শুরু করল তন্ময় হয়ে।

হাতুশি, হিনিমিনি, বাঘু, ভালকি সবাই খাতা জমা দিয়ে এল একে একে। হিনিমিনি খাতা জমা দিয়ে এসে একটা গাছের ডাল দিয়ে হিজিবিজি কাটছে পাশের মাটিতে। এদিকে বই পড়তে পড়তে কুমরুর চোখ কমলালেবুর মতো বড়ো বড়ো গোল গোল হয়ে উঠেছে, লেজখানা পিছনে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে বাঁশের ডালের মতো, লু বাতাসের মতন গরম বাতাস বইছে নাক দিয়ে আর তার বুকের ভিতরে যেন দুমদুম করে হাতুড়ির ঘা পড়ছে। কুমরু পড়ছে-

ঘড়ড়ড়ড়াম! আচম্বিতে রক্ত জল করা এক হুংকার ছাড়ল হাঁড়ুবাঘ! সেই গগনভেদী প্রচণ্ড আওয়াজে পাখিরা তীব্র আর্তনাদ করে বাসা ছেড়ে উড়ে পালাল, জঙ্গলের এপ্রান্ত ওপ্রান্ত খানখান হয়ে গেল সেই বীভৎস চিৎকারে। গদাম! সপাটে এক ঘুঁষি চালাল হাঁড়ুবাঘ আর ছত্রখান হয়ে গেল নেকড়ের দল!

            খাতা জমা দিয়ে এসে হিনিমিনি আপনমনে গাছের ডাল দিয়ে মাটিতে আঁকিবুঁকি কাটছিল। এমন সময় ধমাস ধাঁই করে একখানা বিরাশি সিক্কার ঘুঁষি এসে পড়ল তার পিঠে। তার সঙ্গেই জোরে একখানা লাথি। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কুমরুর কাঁটা ফুটে গেল হিনিমিনির পিঠে। কুমরুর তখনও হুঁশ নেই। সে বই পড়তে পড়তে আরও একখানা ঘুঁষি মারার জন্য থাবা তুলেছে হিনিমিনির দিকে। হিনিমিনি লাফ দিয়ে সময়মতো সরে গেল বলে রক্ষে আর কুমরু এসে সটান ধাক্কা মারল সেগুনগাছের গুঁড়িতে।

          ধাক্কা খেয়ে কুমরু তো চিৎপাত! হাতের বইও ছিটকে গেছে একপাশে। তবু কুমরুর গল্পের নেশা কাটেনি। ওই অবস্থাতেই কুমরু তার সরু গলায় যথাসম্ভব গর্জন করে উঠল, “আমি হাঁড়ুবাঘ! দেখিবি তোরা মোর প্রতাপ!”

          আর যায় কোথা! হিনিমিনি অমনি তুড়ুক তাঁই করে এক লাফ দিয়ে এসে বসল কুমরুর ঘাড়ে। খাতা দেখতে দেখতে শিয়ালনীর চোখ ঢুলে এসেছিল, মাথা একপাশে ঝুলে পড়েছিল। সেই অবস্থাতেই গোলমালের আওয়াজ পেয়ে শিয়ালনী বেজায় বিরক্ত হয়ে চোখ না খুলেই হাতুশিকে হাঁক দিল, “হাতুশি, দ্যাখ দিকিনি। অত কিসের গোলমাল? যে গোলমাল করছে, তার শাস্তি তিপ্পান্নবার লেজবোস।” এই বলেই শিয়ালনীর চোখ পুরোপুরি মুদে গেল আর তার নাকের ভিতর থেকে ফুড়ুৎ ফুঁৎ করে দিব্যি গমগমে আওয়াজ বেরুতে লাগল।

          হাতুশি এদিকে সবই দেখেছে। পুরোটাই ঘটেছে তার চোখের সামনে। সে গিয়ে সোজা কুমরুর সামনে কোমরে থাবা দিয়ে দাঁড়াল, “অ্যাইয়ো কুমরু, এক্ষুণি গুনে গুনে তিপ্পান্নবার লেজবোস কর। হ্যাঁ, নিজের লেজ ধরে। আর তোরই বা কি আক্কেল কুমরু, হিনিমিনির ঘাড়ে পড়তে গেলি কেন?”

          কুমরুর ততক্ষণে টনক নড়েছে। কাঁচুমাঁচু মুখে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলে বলল, “ইয়ে, মানে হাতুশি, ওই বইটা পড়ছিলাম তো। পড়তে পড়তে কেমন জানি ঘোর লেগে গিয়েছিল।”

          হিনিমিনি এদিকে সেগুন গাছের ডালে উঠে বসেছিল। পত্রপাঠ সেখান থেকে নেমে এসে বইটা বগলদাবা করে আবার গাছেই ফেরত গেল। সেখান থেকেই চেঁচাল, “বইটা আমি বাজেয়াপ্ত করলাম রে, কুমরু। এটা এখন আমার কাছেই থাক।”

          সেকথা শুনে বাঘু গলার শির ফুলিয়ে কী যেন একটা বলতে গেল, কিন্তু ততক্ষণে কুমরুর লেজবোস শুরু হয়ে গেছে আর হাতুশি জোর গলায় গুনছে “চার পাঁচ ছয়…”, ফলে বাঘুর কথা আর ভালোমত কানে গেল না কারুরই।

          হিনিমিনি বইটা নিয়ে গাছের উপরে লেজ ঝুলিয়ে বসে পড়তে শুরু করল। এদিকে শিয়ালনী এক একবার ঝিমোচ্ছে আর এক একবার চমকে উঠে খানিক খাতা দেখছে। কুমরু আর ভালকি গাছের ডাল দিয়ে মাটিতে কাটাকুটি খেলছে, হাতুশি নিজের মনে ছবি আঁকছে। আর বাঘু? সে একটা গাছের আড়াল বেছে নিয়ে দুই থাবাতে মাথা দিয়ে বাকি এক থাবার উপর আর এক থাবা তুলে দিয়ে চিৎপাত হয়ে শুয়ে আছে।

          শিয়ালনীর ফুঁড়ুৎ ফুঁৎ করে নাকা ডাকার আওয়াজ কমে এসে ঘুঁৎ ঘুঁৎ করে আওয়াজ হল কিছুক্ষণ। তারপর নাকের ভেতর থেকে পুঁ-ই-ই-ই পুঁ-ই-ই-ই করে শব্দ হল কিছু সময় ধরে। তারপরে ঘুট  ঘুট ঘুটুস করে একখানা জোর শব্দে নাক ডাকা থেমে গিয়ে চোখ খুলল। চোখ খুলে ভালো করে চোখ কচলে খাড়া হয়ে বসল শিয়ালনী। বাঘুর খাতা। খুব সতর্ক হয়ে দেখতে শুরু করেছে। প্রথম লাইন পড়েই শিয়ালনী হোয়া-আ-আ-আ করে বিকট এক চিৎকার ছাড়ল। বাঘু লিখেছে প্রথম পাতায়- নাড়ুর যেমন লেজ, বেঁকির তেমন তেজ।   

            খুঁচ খুঁচ করে কাঁদতে কাঁদতেই পরের পাতার দিকে নজর গেল শিয়ালনীর। সেখানে বাঘুর থাবাক্ষরে লেখা- বনে হাঁড়ুর গর্জন, রণে ঢেঁকির তর্জন।   

আচমকাই এক বিকট আর্তনাদ করে উল্টে পড়ে গেল শিয়ালনী। হাতুশি আর বাকি পশুয়ারা তো কিছুই বুঝল না, খালি অবাক হয়ে দেখল যে দিদিমণি ধুপ করে মাটিতে উল্টে গেলেন! হাতুশি চাপা স্বরে বলল, “এই রে! সেরেছে! নির্ঘাত বাঘুর খাতা দেখছিলেন!” ভালকি সায় দিল, “হুমম। ঠিকই বলেছিস। ঐ দ্যাখ, দিদিমণির হাতে বাঘুর খাতা।”      

          হাতুশি আর ভালকি গিয়ে কোনমতে ধরাধরি করে বসাল দিদিমণিকে। কুমরু বেশি কাছে যায়নি, পাছে দিদিমণির গায়ে আবার কাঁটা ফুটে যায়! কোনমতে বসেই কপাল চাপড়াতে শুরু করেছে শিয়ালনী, “ও হো হো হো! বাঘু, বাঘুউউউউ! ইদিকে আয়, আয় বলছি?”

          বাঘু আরাম করে শুয়ে শুয়ে আকাশপাতাল ভাবছিল, হঠাৎ করে দিদিমণির গলার আওয়াজে ঘাবড়ে গিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে এসে হাজির হল। বাঘুকে দেখেই শিয়ালনী দ্বিগুণ জোরে গর্জে উঠল, “ব্যাপার কী, বাঘু? থাবালেখা অব্দি যা খুশি তাই লিখবি? নাড়ু, হাঁড়ু, বেঁকি, ঢেঁকি- কী সব আবোলতাবোল লিখেছিস তুই? তোকে নিয়ে যে আমি কী করি?”

          লজ্জায় একহাত জিভ কাটল বাঘু, “ইয়ে… মানে… একটা বই… মানে ইয়ে একটা বই পড়ছিলাম দিদিমণি… হাঁড়ুবাঘ আর ঢেঁকিসিংহী… মানে লিখতে লিখতে বইটার কথা ভাবছিলাম কিনা… তাই আর কী… আহহা… কী দুর্দান্ত বই… যেন জিভে লেগে আছে… যেন মোচার ঘন্ট… আহহা… যেন ইলিশ মাছের ঝাল…।”

          “আহহা… যেন মোচার ঘন্ট? যেন ইলিশ মাছের ঝাল? মুখে লেগে আছে?”, প্রায় ভেংচেই ওঠে শিয়ালনী, “বাঘু, কায়দাবাজি হচ্ছে আমার সঙ্গে? এইসব উষ্টুম ধুষ্টুম বলে আমায় ভোলাবি, না? আজ তোর একদিন কি আমারই একদিন! তোকে যদি না আমি আজ লেজে ধরে পাঁইপাঁই চরকিপাক খাইয়েছি!”

          বলতে না বলতে শিয়ালনী এক থাবা বাড়িয়েছে বাঘুর দিকে। ওদিকে হিনিমিনি গাছের মগডালে উঠে একমনে পড়ছিল হাঁড়ুবাঘ আর ঢেঁকিসিংহীর রোমাঞ্চকর কীর্তিকলাপ। পড়তে পড়তে তার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে, লেজ টানটান হয়ে গেছে, দু’কান দিয়ে গরম বাতাস বইছে। চরম উত্তেজিত হয়ে হিনিমিনি পড়ছিল- 

টিলার ওপরে ঢেঁকিসিংহী আর নিচে হাঁড়ুবাঘ! বনের যত জন্তু-জানোয়ার ভয়ে আর্তনাদ করে উঠেছে! আচমকা রক্তজল- করা এক হুংকার দিল ঢেঁকিসিংহী আর তার সঙ্গেই প্রবল বিক্রমে এক ঝাঁপ দিল টিলার উপর থেকে হাঁড়ুবাঘকে লক্ষ্য করে।

  

          শিয়ালনী সবে বাঘুর লেজ ধরেছে, এমন সময় মড়মড় করে ডালপালা ভেঙে গাছের ওপর থেকে পড়ল হিনিমিনি। আর পড়বি তো পড়, পড়ল একেবারে ভালকির গায়ের উপরে। সে তখন একটু সরে গিয়ে দিদিমণির কাছে বাঘুর নাকাল হওয়ার ব্যাপারস্যাপার দেখছিল ভারি মন দিয়ে। আচমকা ঘাড়ের ওপর হিনিমিনি এসে পড়ায় ভালকির লেগেছে বেজায়। রেগেমেগে তেড়ে গেল হিনিমিনির দিকে, “তুই আমার ঘাড়ের ওপর পড়লি কেন রে?”

          হিনিমিনি তখনও বইয়ের ঘোরে বিভোর, “তবে রে ঢেঁকিসিংহী! তোর এতোবড়ো সাহস?”, বলতে বলতে হিনিমিনি তেড়ে এসেছে ভালকির দিকে। ভালকিও সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যালাটের এক প্যাঁচে পেড়ে ফেলেছে হিনিমিনিকে। বইখানাও কেড়ে নিয়েছে।

          হাতুশির মাথা বরাবরই ঠাণ্ডা। সে দেখল, আজের পড়াশুনো বুঝিবা সমস্তই মাটি হয়! তাই আলতো করে শুঁড় দুলিয়ে বলল, “দিদিমণি, টিফিনের সময় বোধহয় হয়ে গিয়েছে।”

          শিয়ালনীও কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে ততক্ষণে। বলল, “ঠিক আছে। যা তোরা। এখন টিফিন। ভালকি, ওই বইটা তোর কাছেই রাখ। বাঘু বা হিনিমিনি- কাউকেই আর দিয়ে কাজ নেই।”

          ঢং ঢং ঢং ঢং করে টিফিনের ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে শিয়ালনী। হাতুশি, হিনিমিনি, কুমরু আর বাঘু মিলে কুমীরডাঙ্গা খেলছে। ভালকির দিকে কারুরই খেয়াল নেই। ভালকি একেই গল্পের বই পড়তে ভালোবাসে, বইটা দেখা ইস্তক তার আর তর সইছিল না। কোনমতে তাড়াতাড়ি করে একচাক টাটকা মধু দিয়ে টিফিন সেরেই সে একটা গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে গেল বইটা পড়তে।

          পড়তে পড়তে বাইরের দুনিয়ার কথা একেবারেই ভুলে গেছে ভালকি। চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে, সারা শরীর কাঁপছে থরথর করে। ভালকি পড়ছে-

            তারপর শুরু হল এক ভীষণ যুদ্ধ। সে যুদ্ধের কথা ভাবলে গা শিউরে ওঠে, দম বন্ধ হয়ে আসে, আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার উপক্রম হয়। হাঁড়ুবাঘের চোখ জ্বলজ্বল করছে। ভীষণ রাগে সে গর্জন করে উঠল, “তবে রে ঢেঁকিসিংহী! তোকে আমি আজ পিটিয়ে ছাতু বানাবো।”

            ঢেঁকিসিংহীও পালটা গর্জন করল, “তবে রে হাঁড়ুবাঘ! তোকে আমি আজ যদি না চটকে চাটনি বানিয়েছি!”

            হাঁড়ুবাঘের দুই চোখ লাল আগুনের গোলার মতো রাগে দপদপ করছে, “কী! আমার সঙ্গে লড়াই করবি তুই? তুইইইই?”

            ঢেঁকিসিংহী বিকট এক চিৎকার ছাড়ল, “তবে রে! থাবা থাকতে মুখে কথা বলি না আমি!” বলেই মাটি কাঁপানো এক প্রবল লাফ দিল, “রে হাঁড়ুবাঘ! যা এখান থেকে, ভাগ!” 

 

    এদিকে কুমীরডাঙ্গা খেলতে খেলতে কুমরু ধেয়ে এসেছে হাতুশির দিকে। হাতুশি দৌড়োতে দৌড়োতে কোনোরকমে এসে পৌঁছেছে ভালকি যেখানে আছে সেই জায়গায়। হাতুশিও পৌঁছেছে, আর ভালকিও ঢেঁকিসিংহীর লাফের কথা পড়তে পড়তে প্রবল উত্তেজনায় এক লাফ দিয়ে পড়েছে হাতুশির পিঠে। হাতুশি তখনও দৌড়োচ্ছে, ফলে ভালকি সোজা মাটিতে পড়েই চিৎপটাং।

          ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়েই জ্বলজ্বলে চোখে চাইল ভালকি, “কী ব্যাপার হাঁড়ুবাঘ, তোর এত বড় দুঃসাহস যে তুই আমাকে মাটিতে ফেলে দিস!”

          হাতুশিও রুখে এল, “ভালকি, একে তুই আমার ঘাড়ের উপর এসে পড়লি, আবার চোখ রাঙিয়ে কথা বলছিস!”

          ভালকি কী একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই ঢং ঢং ঢং ঢং করে টিফিন শেষের ঘন্টা বাজল। আর সেই শব্দেই হুঁশ ফিরল ভালকির। চুক চুক চুক চুক করে মুখ দিয়ে একটা আওয়াজ করে ভালকি বলল, “ইস রে! আসলে আমি ওই বইটা পড়ছিলাম তো, তাই নিজেকে ঢেঁকিসিংহী ভাবছিলাম!”

          হাতুশির রাগ তখনও যায়নি। খপাত করে বইটা ভালকির থেকে কেড়ে নিয়ে বলল, “ওই বইয়ের জন্য যখন এত কাণ্ড তখন ঐ বই পড়ে তোর আর কাজ নেই। ওটা বরং আমার কাছেই থাক!”

          বলেই হাঁটা লাগাল পাঠশালার দিকে। ভালকি আর কী করে, সেও বেজার মুখে পিছু পিছু হাঁটা শুরু করল।

 

          টিফিনের পরের ক্লাস। ‘আশ্চর্য আকাশ’ বই থেকে প্রশ্নোত্তর লিখতে দিয়েছে শিয়ালনী। হাতুশি তাড়াতাড়ি করে উত্তর লিখে খাতা জমা দিয়ে এল। তার মন পড়ে আছে বইয়ের দিকে। এত কাণ্ড সকাল থেকে ওই বই নিয়ে, কী এমন আছে?

          হাতুশি পড়তে শুরু করেছে তন্ময় হয়ে। এদিকে এক এক করে পশুয়ারা খাতা জমা দিয়ে আসছে দিদিমণির কাছে। শিয়ালনী খাতা দেখছে একমনে। হাতে একটা লাল কলম। এদিকে হাতুশি পড়ছে, পড়েই যাচ্ছে-

হাঁড়ুবাঘের বীভৎস চিৎকারে গোটা বন যেন ভয় পেয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকল। ভয় পেল না কেবল ঢেঁকিসিংহী। অন্ধকার ঘন হয়ে এসেছে, বনের গাছেরা যেন কোন অশরীরী প্রহরীর মত জেগে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে ভালো দেখা যাচ্ছে না হাঁড়ুবাঘকে। খালি তার দুই চোখ লণ্ঠনের আলোর মতো দপদপ করছে। ঢেঁকিসিংহী কোন কথা বলল না। অন্ধকারে মিশে গেল সে। তারও চোখ জ্বলজ্বল করছে। তারপর… সজোরে ধেয়ে এল উল্কার মতো হাঁড়ুবাঘের দিকে। তারপরই… ভয়ঙ্কর এক আওয়াজ!

 

            গদাম! হাতুশি গিয়ে সজোরে ধাক্কা মেরেছে শিয়ালনীকে। আচমকা এরকম একটা বিপর্যয়ে শিয়ালনী প্রথমে দিশেহারা হয়ে গেল, তারপর সামলে উঠে হাতুশিকে এই মারে তো সেই মারে! কুমরু, হিনিমিনি, ভালকি এগিয়ে এল। ওরা তো বুঝেছে  ব্যাপারটা। হিনিমিনি জোরে ঝাঁকানি দিল হাতুশিকে। কুমরু জল ছিটিয়ে দিল হাতুশির চোখে-মুখে-শুঁড়ে। ভালকি বলল, “দিদিমণি, হাতুশির দোষ নেই। ওই বইটা পড়ছিল কিনা। ওই বইটা পড়লেই এইসব যত কাণ্ড ঘটে!”

          “বটে?”, কোমরে থাবা দিয়ে দাঁড়িয়েছে শিয়ালনী, “ওই বইটা পড়তে গিয়ে এত কাণ্ড? তবে আর তোদের কারুর ওই বইটা পড়ে কাজ নেই। ওটা আমিই পড়বো।”

          শুনেই এ ওর মুখের দিকে চায়। বুক দুরুদুরু করছে সবার। কী জানি, এবারে কী হয়? হাতুশি ভয়ে ভয়ে বললো, “দিদিমণি, তাহলে আমরা কী করবো?”

          বাঘু চুপচাপ সব শুনছিল। ভারি উৎফুল্ল হয়ে একলাফ দিয়ে এবারে সামনে এসে জিজ্ঞেস করল, “দিদিমণি, আমরা বরং মাঠে গিয়ে খেলি!”

          কটমট করে চেয়ে শিয়ালনী এক ধমক দিল বাঘুকে, “তোদের আর মাঠে গিয়ে কাজ নেই। আমিই মাঠে গিয়ে পড়ছি। তোরা এখানেই যে যার খাতায় ইচ্ছেমতন ছবি আঁক। আমি এসে দেখছি।”

          এই বলে শিয়ালনী বইটা বগলদাবা করে মাঠে চলে গেল। মাঠের একপাশে একটা ছাতিম গাছের গুঁড়িতে আরাম করে হেলান দিয়ে বসে শিয়ালনী একমনে পড়তে শুরু করল।

          পড়ে যাচ্ছে, পড়েই যাচ্ছে শিয়ালনী। বুঁদ হয়ে পড়ছে। কতক্ষণ পড়েছে তার নিজেরই কোন হুঁশ নেই। সে পড়ছে-

            হুহু হুহু করে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেন দীর্ঘশ্বাসের এক ঝড় বয়ে গেল। বনের যত পশুপাখি- ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে সেই মহারণ। ধড়াম! ধড়াম! জোরে জোরে আওয়াজ হল পরপর দুবার। ঢেঁকিসিংহীর লাথিতে দু’খানা মহীরুহ ভূলুণ্ঠিত। ধমাস! বদাম! ভয়ঙ্কর দুখানা শব্দ ভেসে এল এবার জঙ্গলের উল্টোদিক থেকে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেখল সবাই, ঊর্ধ্বশ্বাসে ধেয়ে আসছে হাঁড়ুবাঘ। হাঁড়ুবাঘের গর্জন মিলিয়ে যাবার আগেই অন্ধকারে একটা কালো মেঘের মতোই যেন ধেয়ে এল ঢেঁকিসিংহী। তারপর… তারপর… যেন দুই জ্বলন্ত মশাল শূন্যে পরস্পরের মুখোমুখি হল। আর তারপরই… তুমুল এক বিস্ফোরণ…

           মশগুল হয়ে পড়তে পড়তেই বিশাল এক লাফ দিল শিয়ালনী। বেজায় লাগার কথা কিন্তু লাগল না কারণ শিয়ালনী পড়েছে অন্য কারুর ঘাড়ে। পাঠশালার পশুয়ারা সবই নজর রাখছিল আড়াল থেকে। হইহই করে ছুটে এসে তুলল দুজনকে। শিয়ালনীর সঙ্গে আর যাকে তোলা হল, তাকে দেখেই তো বাঘুর আক্কেলগুড়ুম! আরে, এ যে বাঘিপিসী!

          আচমকা অমন একটা ধাক্কা খেয়েও বাঘিপিসী ঘাবড়ায়নি। দাঁত ছরকুটে হাসল, “কী ব্যাপার, শিয়ালনী? অমন ধুমধাড়াক্কা লাফ দিলে যে? তোমাদের কি আজ মাঠে খেলার ক্লাস হচ্ছে নাকি?”

          হাতুশি বুদ্ধি করে শুঁড়ে খানিকটা জল ভরেই রেখেছিল। কথার ফাঁকে ফাঁকেই অল্প অল্প করে জল ছিটিয়ে দিয়েছে শিয়ালনীকে। সামান্য ধাতস্থ হয়েই শিয়ালনী তোতলাতে শুরু করেছে, “হ্যাঁ… মানে ইয়ে… মানে এই বইটা…”, বলতে বলতেই কথা ঘোরাবার চেষ্টা করল, “তা তুমি কবে এলে?”

          বাঘিপিসী মোলায়েম হাসল, “আরে, কাল বাঘোৎসবে এসেছিলাম। আমার একটা একক নৃত্যানুষ্ঠান ছিল। বাঘাত্থক নাচের। তা আসতে দেরিও হয়েছিল। বাঘুরাও তখন চলে গেছে। বড় একটা আসা হয়না এদিকে, তার ওপর ওদের সঙ্গে দেখাও হল না। সকালে যখন গেলাম ওদের বাড়ি, বাঘু তখন বেরিয়ে গেছে। ওদিকে বাঘনিও বাঘুর জন্য ছটফট করছে। তাই ভাবলাম নিয়েই আসি ওকে, তোমার সংগেও দেখাটা হবে। তা কী বই ওটা তোমার হাতে?”

          শিয়ালনী আর কী করে? বইটা দিল বাঘিপিসীর হাতে। বাঘিপিসী বইটা নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে বলল, “আরে, এ বই তো আমিও ছোটবেলায় পড়েছি। দারুণ বই। তবে কিনা, শেষটা আর পড়া হয়নি। একটা মানে… ইয়ে … মানে একটা ঝামেলা হয়ে গিয়েছিল কিনা। আরে, এখানে যে ‘বাঘু’ নাম লেখা আছে! তা হ্যাঁ রে বাঘু, এটা কি তোর বই?”

          বাঘু কিছু একটা বলার সুযোগ পেয়ে বেজায় গর্বে বুক ফুলিয়ে বলল, “হ্যাঁ বাঘিপিসী, আমারই বই। কাল মেলাতে কিনলাম।”

          বাঘিপিসী চোখ কুঁচকোল, “হুমমম। তা শিয়ালনী, তোমার পাঠশালা কি ছুটি না আর পড়া হবে?”

          শিয়ালনী তাড়াতাড়ি করে বলল, “না না, আর পড়াটড়া হবে না আজ। নে তোরা, বইটই সব গুছিয়ে ফ্যাল। ভালোই করেছো বাঘিদি, পাঠশালায় এসে। বইটা তোমার কাছেই থাক। বাঘুউউউ, এসব খুব বিপজ্জনক বই, বাচ্চাদের বেশি না পড়াই ভাল।”

বাঘিপিসী এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ল, “এইবারে বুঝেছি। তুই পাঠশালায় পড়া ফাঁকি দিয়ে এইসব বই পড়িস বলেই দিদিমণি এই বইটা কেড়ে নিয়েছেন তোর থেকে। ঠিক আছে, এটা বরং আমার কাছেই থাক। রাত্তিরে পড়া যাবে।”     

          শুনেই বাঘুর মুখচোখ গেছে শুকিয়ে। কেঁদেই ফেলে আর কী! রীতিমতো থাবাজোড় করল সে, “ও বাঘিপিসী গোওওওও…… তুমি অমন নিষ্ঠুর হোয়ো না গো… আঁই আঁই আঁই আঁই (কান্না)… আমার সোনা পিসী গোওওওও… তোমার চারটি থাবায় পড়ি গোওওওও…  আঁই আঁই আঁই আঁই (কান্না)… বইটা কেড়ে নিও না গোওওও… ওরে আমার হাঁড়ুবাঘ রে… আঁই আঁই আঁই আঁই (কান্না)… ওরে আমার ঢেঁকিসিংহী রে… আঁই আঁই আঁই আঁই (কান্না)…।”

……0……

                                                                                                                  অংকনঃ গুঞ্জা

বাঘু সিরিজের অন্যান্য গল্পগুলি থাবাছানি দিচ্ছে নিচের লিঙ্কেঃ-

১। বাগে এলো বাঘু

২। গিঁটের গেরোয় বাঘু

৩। বাঘু খেল ঘাস

৪। বাঘু হলেন মনিটর

৫। শিয়ালনী কুপোকাত

৬। অযোধ্যা পাহাড়ে বাঘু 

৭। পরীক্ষা দিলেন বাঘু

৮। গণ্ডারনী ও গণ্ডগোলিক্স

৯। নামতা শেখেন বাঘুবাবু

১০। শিয়ালনীর পাঠশালায় সিংহালু

১১। বাঘু হল চিৎপটাং 

১২। ঘুম দিলেন বাঘুবাবু                   

Leave a comment

Check Also

বিদেশি মোলাকাতে বাঘু- মৌসুমী পাত্র

            ধুস! ধুস! ধুস! ‘দূর ছাতা’ বলে যেদিকে দুচোখ যায়, সেদিকে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে …

baghu_kobi sommelan

কবি সম্মেলনে বাঘুবাবু – মৌসুমী পাত্র

            পাঠশালায় আসছিল শিয়ালনি। আজ দেরিই হয়েছে কিছুটা। কাল সন্ধেবেলা খরগোশাই ডাক্তারদিদির বাড়ি নিমন্ত্রণ …

উল্কার কবলে বাঘু

উল্কার কবলে বাঘু – মৌসুমী পাত্র

(শিয়ালনীর পাঠশালায় প্রচুর মজাদার ব্যাপার স্যাপার চলে, যার প্রথম হদিশটা  তোমাদের দিযছিলাম ‘বাগে এলো বাঘু’ …

শিল্পী- সোমক সেনগুপ্ত/ জানোয়ার বার্তা ও বাঘুবাবু

জানোয়ার বার্তা ও বাঘুবাবু – মৌসুমী পাত্র

  পিঠে থলে ঝুলিয়ে বাঘু চলেছে পাঠশালার পানে। মনে বেশ খুশি খুশি ভাব। একটা গাছের …