বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে বাংলায় যে ভিন্ন ধারার থিয়েটার গড়ে উঠেছিল তার প্রধান স্থপতি ছিলেন শম্ভু মিত্র। তাঁর জন্মের দু’বছর আগে গিরিশচন্দ্র ঘোষের মৃত্যু হয় এবং পরের দশকে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর বঙ্গ রঙ্গমঞ্চে আগমন ঘটে। মোটামুটিভাবে ১৯১২ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বাংলার পেশাদারী থিয়েটারের ‘Period of decline’ বলা যেতে পারে। তার পর শিশিরকুমারের যুগান্তকারী অবদানের ফলে বাংলা থিয়েটারের ধারা পরিপুষ্ট হয়েছিল। পরবর্তীকালে শম্ভু মিত্রের হাত ধরে আধুনিক বাংলা থিয়েটারের পথ পরিক্রমা শুরু হয়। সামগ্রিকভাবে গ্রুপ থিয়েটারের সামনে তখন তিনটি আদর্শ ছিল। প্রথমত, গণনাট্য সংঘ, যার নাট্যাদর্শের আওতায় থিয়েটারের অনেক প্রধান ব্যক্তিত্ব বেড়ে উঠেছেন। দ্বিতীয়ত, শিশিরকুমার ভাদুড়ি, যাঁর নাট্যচিন্তা সেই সময়ের তরুণদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তৃতীয়ত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালের পাশ্চাত্য থিয়েটার। শম্ভু মিত্র ও ‘বহুরূপী’ নাট্যগোষ্ঠী পেশাদারী থিয়েটার ও ‘গণনাট্য সংঘ’ উভয়ের থেকেই আলাদা একটা নাট্যধারা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সমাজ ও জীবনের প্রতি বৃহত্তর দায়ে বদ্ধ থিয়েটারের যে ঐতিহ্যের তিনি পুরোধা, তাকেই নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা আজও বহন করে চলেছি।
শম্ভু মিত্রের জন্ম ১৯১৫ সালের ২২ অগাস্ট। তাঁর পিতা শরৎকুমার মিত্র, মাতা শতদলবাসিনী দেবী। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শম্ভু মিত্র বালিগঞ্জ গভর্ণমেন্ট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। সেখানে বিভিন্ন নাটকের নির্বাচিত অংশ দিয়ে তৈরি অনুষ্ঠানে তাঁর প্রথম মঞ্চে নামা। পনের বছরের কাছাকাছি বয়স থেকেই তিনি নিজেকে অভিনেতা হিসাবে তৈরি করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। তখন বাংলা নাটকের জগতে নির্দেশক ও অভিনেতা উভয় ভূমিকাতেই স্বমহিমায় ভাস্বর ছিলেন শিশিরকুমার ভাদুড়ি। তাঁর পাশাপাশি উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন ছিলেন অহীন্দ্র চৌধুরী, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, নির্মলেন্দু লাহিড়ি, দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায় প্রমুখরা। সেই সময়ের অভিনয়রীতি অনুসারেই শম্ভু মিত্রের শৈলী গড়ে উঠেছিল। পুরনো নাটকের বিশেষ বিশেষ চরিত্রের সংলাপ আবেগময় গলায় অভিনয় করে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। তৎকালীন থিয়েটারে দেখা কিছু স্মরণীয় অভিনয়ের কথাও তিনি লিখেছেন।
১৯৩৯ সাল নাগাদ শম্ভু মিত্র পেশাদারী থিয়েটারে যোগ দেন। এই পর্যায়ে বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও ক্রমে ঘনিষ্ঠতা হয়। শম্ভু মিত্রের মধ্যে তিনি অভিনয় প্রতিভার স্ফুলিঙ্গ দেখেছিলেন, যাকে আগলে রাখা কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন। মহর্ষির পাশাপাশি তিনি শিশিরকুমার ভাদুড়ী-র স্নেহ ও সাহচর্য পেয়েছিলেন। শিশিরকুমারের কাছেই তিনি শিখেছিলেন মহৎ অভিনয়ের রীতি, জেনেছিলেন একটি সাধারণ নাটককেও কীভাবে সার্থক নাট্যরূপে নবজন্ম দেওয়া যায়।
প্রধানত বন্ধু বিনয় ঘোষের আগ্রহে শম্ভু মিত্র ‘ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী সঙ্ঘে’ যোগ দেন। তবে মতের দিক থেকে আদ্যন্ত ফ্যাসিবাদের বিরোধী হলেও তাঁর মূল আগ্রহ ছিল থিয়েটার, রাজনীতি নয়। চারের দশকের গোড়ায় তিনি রাসেলের দর্শন এবং ফ্রয়েডের মনোবিজ্ঞানের তত্ত্বে গভীরভাবে মগ্ন হয়ে ছিলেন, বয়স তখন তিরিশের নীচে। সেই সময় অভিনয়, আবৃত্তি এবং পুস্তকপাঠই ছিল তাঁর সবথেকে বড় নেশা। জীবনকে দেখার এবং বিচার করার ক্ষেত্রে তিনি কোনও কিছুকেই স্বতঃসিদ্ধ বলে মেনে নেননি। ফ্রয়েডীর মনোবিশ্লেষ পদ্ধতি তাঁর নাটকে ও অভিনয়রীতিতে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছে। বিনয় ঘোষ তাঁর যৌবনের বন্ধু সম্পর্কে বলেছেন – “শম্ভু যতই নাটক আর বহুরূপী আর অভিনয় করুক, আর যতই না কেন সে স্বনামধন্য হোক, চিরকালই সে বৌদ্ধভাবাপন্ন, অর্থাৎ নিস্পৃহ উদাসীন ও নিঃসামাজিক বা অ্যা-সোশ্যাল। . . .শম্ভু যেমন প্রাণ খুলে হাসতে পারে, তেমনই কারও কান্না দেখে আকাশের দিকে চেয়ে কবিতাও আবৃত্তি করতে পারে। সবই তার কাছে ‘ফ্যাক্ট’ – হাসিটাও ‘ফ্যাক্ট’, কান্নাটাও ‘ফ্যাক্ট’ – বেঁচে থাকাও ‘ফ্যাক্ট’, মরে যাওয়াও ‘ফ্যাক্ট’, মধ্যে আর কোনোকিছু নেই। খাঁটি ‘ইন্টেলেকচ্যুয়ালের’ একটা ‘সোসিওলজিকাল’ মডেল শম্ভু।”
শম্ভু মিত্রের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মাথায় রাখলে গণনাট্য সঙ্ঘের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্যের কারণগুলি বোঝা যাবে। আসলে যে আবেগ শিল্পের উপরে একটি রাজনৈতিক মতকে প্রচার করতে চায়, তাঁর মনের স্বাভাবিক প্রবণতা তা চর্চার পক্ষে অনুকূল ছিল না। তাই প্রত্যক্ষ রাজনীতির অনুশাসন থেকে সরে এসে ১৯৪৮ সালে ‘বহুরূপী’ নাট্যগোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছিল। এর memorandum-এ দলের আদর্শ সম্পর্কে বলা হয়েছিল – “To perform good dramas with social responsibilities and which help to build nobler lives.” এ কথা মানতেই হবে যে গণনাট্যের অন্যতম চালিকাশক্তি হল গণসংগঠন, যার চাহিদা ছিল কম খরচে ভাল নাটক পরিবেশন। তাই রঙ্গমঞ্চে ও প্রকাশ্য মঞ্চে কম খরচে নাট্য প্রযোজনার জন্য অবধারিতভাবে নাটককে হতে হবে সরল ও তার আবেদন হবে সরাসরি। আবার গণনাট্যের নাটকে শ্রমিক-কৃষক বা শ্রমজীবি-মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনসংগ্রাম যেভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তার মূল কথাই হল অবক্ষয় একমাত্র সত্য নয় এবং জীবন অবশ্যই মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। বিষয় ও প্রকাশভঙ্গীর এই সরলীকরণ বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর পছন্দ হয়নি। তাই তাঁরা এমন ধরনের নাটক করার কথা বলেছিলেন, যাতে সামাজিক দায়িত্ববোধ পালনের মধ্যে দিয়ে মহৎ জীবনে উন্নীত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়।
বস্তুত শিল্পীর এই সামাজিক দায়িত্ববোধ শম্ভু মিত্রকে সেই সব নাটক প্রযোজনার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল, যা সত্যকে প্রকাশের জন্য প্রয়োজনে নির্মম হতে পারে। ‘বহুরূপী’-র প্রথম প্রযোজনা ‘নবান্ন’ অভিনীত হয়েছিল রঙমহল মঞ্চে, তারিখটা ছিল ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮। এই নাটকটিকে বাদ দিলে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ‘পথিক’, ‘ছেঁড়াতার’, ‘উলুখাগড়া’ এবং ‘বিভাব’ নাটকগুলিতে সমকালকেই অবলম্বন করা হয়েছে। এই নাটকগুলিতে যেন এক ধরনের নিরূপায়তার সংক্রমণ ঘটেছে, একমাত্র ‘পথিক’ ছাড়া বাকি তিনটি নাটকেরই মূল সুর ব্যর্থতা বা হতাশার। সেই হতাশাকে প্রকাশ করার জন্য ‘বহুরূপী’-র এই পর্যায়ের নাটকে অনেক সময় ব্যঙ্গকে অবলম্বন করা হয়েছে। এই নাটকগুলি মোটের উপর অবক্ষয়-সঞ্জাত বেদনা, ক্রোধ ও ব্যঙ্গে ভরা। ‘পথিক’ নাটকে রয়েছে আনন্দের হিংস্র বিশ্লেষণ, যাতে স্বাধীনতার পরবর্তীকালে দেশের অবস্থা সম্পর্কে মননশীল বাঙালির মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। ‘উলুখাগড়া’ ও ‘বিভাব’ নাটক সমকালের পটে রচিত, যেখানে এই সময়কে তিক্ত ব্যঙ্গের ধরনে দেখা হয়েছে। ‘উলুখাগড়া’ নাটকটি শম্ভু মিত্রের লেখা এবং ‘বিভাব’ রচনার পিছনেও তাঁর প্রভাব ছিল খুব বেশি। তাঁর মধ্যে গভীর আবেগ আর ব্যঙ্গপ্রবণতার এক আশ্চর্য সমাহার ঘটেছিল, যার একটা বড় কারণ হয়তো জীবন সম্পর্কে নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গী।
‘উলুখাগড়া’ নাটক লেখা শুরু হয় ১৯৪১ সাল নাগাদ, শেষ হয় ১৯৪৩-এর গোড়ার দিকে। অর্থাৎ এই নাটক রচিত হয়েছিল ‘নবান্ন’ বা ‘দুখীর ইমান’ এর সমকালে। কিন্তু বিজন ভট্টাচার্য বা তুলসী লাহিড়ির সরল আশাবাদ দিয়ে শম্ভু মিত্রের নাটক শেষ হয় না, বরং তার উল্টোটাই ঘটে। কোথাও কোথাও সংলাপে সামাজিক মানুষের দায়িত্বের কথা বলা হয় বটে, কিন্তু সে কেবল মানুষকে সচেতন করে দেওয়ার জন্য। শম্ভু মিত্র কোনও ঘটনার সমর্থন দিয়ে অন্য দুই নাট্যকারের মতো তাকে সত্য করে তোলেন না। ‘একটা দৃশ্য’ নামক যে নাট্যংশটি বহুরূপীতে ছাপা হয়েছিল তাতেও একই মনোভাব প্রকাশ পায়। তিনি যখন ‘ঘূর্ণি’ নাটকটি লিখতে শুরু করেন তখন ১৯৫০ সালের শুরুর দিক। ‘ঘূর্ণি’-তেও আছে এক সর্বগ্রাসী অন্ধকারের ছবি। ‘ঘূর্ণি’র পরে-পরেই রচিত হয়েছিল ‘বিভাব’, যা কোনও বিশেষ একজনের লেখা নয়, সকলে মিলে তৈরি করা। এ নাটকেও এক ধরনের নিষ্ঠুর ব্যঙ্গ আছে, হাসির নাটকের গল্প খুঁজতে বেরনোর মজা দেখে দর্শক যখন হাসে তখনই তাঁদের স্তব্ধ করে দিতে একটি রাজনৈতিক সত্যের আকস্মিক আঘাত নামিয়ে আনা হয়।
স্বাধীনতার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে যদি আমরা শম্ভু মিত্রের এই সমকাল-নির্ভরতাকে দেখি, তাহলে মানতেই হবে যে ১৯৫১ সালের ‘চার অধ্যায়’ থেকে তাঁর নাট্য-প্রযোজনা কিছুটা অপ্রত্যক্ষতার দিকে চলে যায়। এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলা তথা বিশ্বসাহিত্যের ঐতিহ্যকে মঞ্চে নিয়ে আসা এবং তার দ্বারা সমকালের একটা চিরায়ত ভাষ্য তৈরি করা। পাশাপাশি আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল অভিনেতার প্রকাশক্ষমতাকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করানো। কারণ কেবল সমকাল নির্ভর বাস্তব-অনুসারী নাটক অভিনয়ের মধ্যে আটকে থাকলে প্রকাশক্ষমতা কমতে বাধ্য। প্রকৃতপক্ষে যে মহত্তর জীবন গঠনের আকাঙ্ক্ষা বহুরূপীর ছিল, ধ্রুপদী সাহিত্য ছাড়া তা সম্ভব নয়। শম্ভু মিত্র নিজেই বলেছিলেন – “অভিনয়ে naturalism-এ আমি কোনও দিন আনন্দ পাইনি। বিরাট মানুষের বিরাট দুঃখ বা বিরাট আবেগ আমাকে অনেক বেশি মুগ্ধ করে। অভিনয়ের চরিত্র যদি অভিনেতার চরিত্রের থেকে অনেক সরল ও সহজতর হয় তাহলে অভিনয়ের মধ্যে সেই দ্যুতির মুহূর্তগুলি আসে না, যার অভাবে ভাল অভিনয়ও স্মরণীয় অভিনয় হয় না।” তাঁর স্মৃতিতে যে ধরনের স্মরণীয় অভিনয়ের বিবরণ তিনি দিয়েছেন, তার সবকটির মধ্যেই প্রচণ্ড আবেগের প্রকাশ আছে। তাঁর কন্ঠ, শরীর ও মনন সেই আবেগকে আধুনিক রূপে প্রকাশ করতে পেরেছিল।
পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকে শম্ভু মিত্র নাটকের উপর থেকে সমকালীনতার প্রত্যক্ষ চাপ সরিয়ে নিতে চেয়েছেন। চিরায়ত নাটকের মধ্যে দিয়ে তিনি কিছু জরুরী কথা বলতে চেয়েছেন এবং লিখিত নাটকের ভেতর থেকে নির্দেশকের ভাষ্য উদ্ভাবন করতে চেয়েছেন। তিনি বিদেশী নাটকের রূপান্তর চেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পটভূমি অপরিবর্তিত রেখে অনুবাদে তাঁর একেবারেই সায় ছিল না। এর একমাত্র ব্যতিক্রম হল ‘রাজা অয়দিপাউস’ নাটকটি, যা এভাবে রূপান্তর করা সম্ভব নয়। আবার হেনরিক ইবসেনের দুটি নাটককে তিনি দেশি করে তুলেছিলেন, তবে তা ওপর ওপর দেশি পটভূমিতে স্থাপন করে নয়। চরিত্রের অন্তর্সম্পর্কে তিনি দর্শকের পরিচিত ধরণ আনতে চেয়েছেন এবং এই পদ্ধতিতে ঊনবিংশ শতকের শেষ পর্বে লেখা নাটকদু’টিকে তিনি বিংশ শতাব্দীর মধ্যপর্বের কলকাতায় প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন। এই সূত্রে উল্লেখ করব ‘দশচক্র’, ‘পুতুল খেলা’ ও ‘রাজা অয়দিপাউস’ নাটকে দেখা যায় একজন ব্যক্তি তার চারপাশের পৃথিবী থেকে ছিটকে এসে সোজা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তিনটি বিদেশি নাটকেই এই কেন্দ্রীয় ভাবটি খুঁজে পাওয়া যাবে। আলাদা রকমের ক্ষমতাবান ব্যক্তি এবং সমাজের টানাপোড়েন নিয়ে তাঁর ভাবনা প্রকাশ পেয়েছিল ‘পথিক’, ‘ছেঁড়াতার’ ও ‘উলুখাগড়া’ নাটকে।
বহুরূপীর প্রথম রবীন্দ্র নাটকের প্রযোজনা ‘চার অধ্যায়’, এর প্রথম অভিনয় ১৯৫১ সালের ২১ আগস্ট শ্রীরঙ্গম মঞ্চে। ‘চার অধ্যায়’ প্রযোজনা করতে গিয়ে শম্ভু মিত্র রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের আকারটাই রাখতে চেয়েছিলেন, নাট্যরূপ দেওয়ার জন্য তাতে বিশেষ অদলবদল করেননি। এর পর তাঁর নির্দেশনায় বহুরূপী যে সব রবীন্দ্রনাটক মঞ্চস্থ করেছিল সেগুলি হল ‘রক্তকরবী’ (১৯৫৪), ‘মুক্তধারা’ (১৯৫৯), ‘বিসর্জন’ (১৯৬২) এবং ‘রাজা’ (১৯৬৪)। রবীন্দ্র-নাটকের ক্ষেত্রে প্রযোজনার সমস্যা আরও বেশি জটিল, কারণ চরিত্র বা ঘটনা প্রায় কখনওই আমাদের চেনা অভিজ্ঞতার অন্তর্গত নয়। এই ধরণের নাটকগুলির ক্ষেত্রে শম্ভু মিত্রের মূল লক্ষ্য ছিল দু’টি। প্রথমত, প্রতিদিনের বাস্তবতার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেও এই সব ঘটনায় বা চরিত্রে চিরায়ত সত্যের আলো ছড়িয়ে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, নাটকের আপাত অলৌকিক চরিত্রগুলির টানাপোড়েনকে সুদূর অথচ স্পর্শগ্রাহ্য রূপ দেওয়া, যাতে দর্শকদের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য ঠেকে। নাটকীয় সংলাপ উচ্চারণ, অভিনয়ে শরীরের ব্যবহার থেকে শুরু করে প্রযোজনার প্রতিটি ক্ষেত্রে এই স্তরগুলির প্রকাশে এখনও তাঁর কাজই উত্তরসূরীদের কাছে আদর্শ হয়ে আছে। তবে এই কথাগুলো ‘রক্তকরবী’, ‘রাজা’ প্রভৃতি নাটকের বেলায় যতটা প্রাসঙ্গিক ‘চার অধ্যায়’, ‘বিসর্জন’ বা ‘মুক্তধারা’ প্রসঙ্গে ততটা নয়। কারণ এই তিনটি নাটকে কম-বেশি ধারাবাহিক কাহিনির বুনন আছে। এক্ষেত্রে শম্ভু মিত্রের প্রধান কৃতিত্ব ছিল অভিনয় পদ্ধটির সঠিক ধরন খুঁজে বার করা এবং নিছক কাহিনীর ভেতর থেকে অপ্রথাগত আধুনিক নাটকের প্রকাশভঙ্গি আবিষ্কার করা।
‘চাঁদ বণিকের পালা’ লেখার আগে রচিত নাটকগুলিতে নাটককার শম্ভু মিত্রের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে। ‘কাঞ্চনরঙ্গ’ বাদে সবক’টি নাটকই লেখা হয়েছে বাংলার কোনও একটি রাজনৈতিক সংকটের তীব্রতার মুহূর্তে, যখন কোনও রাজনৈতিক দর্শন বা দেশনেতার আদর্শ বা সাধারণ মানুষের জীবনবোধও তাঁকে আশার আলো দেখাতে পারছে না। নাটকের নামকরণেই এর ছায়া আছে। ‘উলুখাগড়া’ বা ‘ঘূর্ণি’ নামের মধ্যেই আশ্রয়হীনতা ও অস্থিতির অনুষঙ্গ মিশে আছে। তাঁর পরের দিকের নাটকের নামকরণে এক ধরনের নাগরিক কৌতুক চলে এসেছে। সংস্কৃত অলঙ্কার শাস্ত্রে তাকেই ‘বিভাব’ বলে, যাকে অবলম্বন করে মনের মধ্যে রস জাগ্রত হয়। সকলের সহযোগে লেখা এই নাটকের নামকরণে তিনি প্রশ্ন করেছেন কোন্ পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বাঙালিকে হাসতে বলা হচ্ছে। ‘কাঞ্চনরঙ্গ’ লেখা হয় ১৯৬০-৬১ সাল নাগাদ। এই নাটকটির মধ্যে শম্ভু মিত্রের জীবনদর্শন খুব একটা ফুটে উঠেছে এমন কথা বলা যাবে না।
কিন্তু শুকনো নাগরিকতাই নাটককার শম্ভু মিত্রের সম্পূর্ণ পরিচয় নয়। তাঁর কিছু চরিত্রের সংলাপে আবৃত্তিপ্রেমের প্রকাশ দেখা যায়। রচয়িতার অন্তরের আবেগ সেখানে কবিতাপ্রতিম ভাষা পেয়ে যায়, যে ভাষায় তীব্র রাগ, ক্ষোভ ও ভালবাসা উঠে আসে। প্রারম্ভিক পর্বে রচিত নাটকের মধ্যে একটা চরিত্র থাকেই যে নাট্যকারের প্রতিনিধিত্ব করবে – যেমন ‘উলুখাগড়া’-য় সুরেশ বা ‘ঘূর্ণি’-তে বিকাশ। ছয়ের দশক থেকে অবশ্য এই জাতীয় চরিত্র তাঁর লেখা থেকে সরে গেছে, এমন কী ‘বিভাব’ নাটকেও তাঁর নামের চরিত্রটি ঠিক তাঁর সত্য প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং তাঁর নাটকে আবেগের জায়গা নিয়েছে ব্যঙ্গ। সম্ভবত এই সিনিসিজম এবং এবং নিজেকে লুকিয়ে রেখে ঠাট্টা করার প্রবণতার মধ্যে ব্যাপ্ত পটভূমিতে নিজের অন্তরের রূপকে প্রকাশ করার ইচ্ছা কাজ করছিল – তাঁর মনের মধ্যে গড়ে উঠছিল ‘চাঁদ বণিকের পালা’।
ছয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকেই শম্ভু মিত্র ধ্রুপদী নাটকের জগৎ থেকে সরে আসছিলেন। এই সময়টা ছিল গোটা দেশ ও জাতির স্বপ্নভঙ্গের কাল। সামগ্রিকভাবে তখন পরিবেশ যে অসহনীয় অবস্থায় এসে পড়েছিল তার থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা শুরু হয়, যার ফলশ্রুতিতে নকশাল আন্দোলন। এই সময় থেকেই শুরু হয়েছিল ‘চাঁদ বণিকের পালা’ নাটকটির রচনা। প্রচলিত মঙ্গলকাব্যের কাহিনি-কাঠামো নিয়ে তার মধ্যে দিয়ে তিনি এমন এক মানুষের কথা বলতে চেয়েছিলেন যে সিদ্ধির নতুন অভিযানে মেতেছিল। এখানে ব্যতিক্রমী চরিত্র চাঁদের সঙ্গে চার-পাশের পৃথিবীর সম্পর্ককে যেভাবে ধরা হয়েছে তা থেকে নাট্যকারের আত্মজীবনীরই একটা আদল বেরিয়ে আসে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই নাটকটি লিখেছেন, নিজের জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতাকে এর মধ্যে ভরে দিতে চেয়েছেন। আর তা করতে গিয়ে তাঁকে চাঁদ সদাগরের কাহিনি বেছে নিতে হয়েছে। কোনও আড়াল ছাড়াই নাটকে নিজের জীবনের কথা বলা অস্বস্তিকর ঠেকতে পারে। এর আগে লেখা তাঁর দু’-একটি গল্পে আত্মজীবনের কিছুটা ছায়াপাত ঘটেছিল, তাই সেগুলি লেখার সময় তিনি ছদ্মনাম নিয়েছিলেন ক্ষণেশপ্রসাদ গুপ্ত। ‘চাঁদ বণিকের পালা’ রচনার সময়ও তিনি ছদ্মনাম নিয়েছিলেন। একজন আধুনিক সৃজনশীল মানুষ পুরাণের কাহিনিকে যে যে কারণে ব্যবহার করেন তিনিও সেই সব কারণেই তা করেছেন। এর ফলে কাহিনি, চরিত্র বা অনুষঙ্গগুলো প্রতীকের চেহারা পেয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ এক দশকের পর যখন এ নাটক লেখা শেষ হয় তখন সর্বস্ব হারানো চাঁদ চলে যাচ্ছে এক আশাহীন নস্ট্যালজিয়ার গভীরে। মনে রাখতে হবে শম্ভু মিত্রও তখন নিজেকে ধীরে ধীরে মঞ্চের আলো থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে শম্ভু মিত্র জীবন ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত থিয়েটারকে কী নজরে দেখেছেন তা বুঝতে পারা যাবে ‘চাঁদ বণিকের পালা’ ছাড়াও তাঁর লেখা ‘গর্ভবতী বর্তমান’ বা ‘অতুলনীয় সম্বাদ’ নাটকগুলি থেকে। ১৯৬৪-৬৫ সালে লেখা এই রচনাদু’টিকে তিনি বলেছেন কৃষ্ণ কৌতুকীয় নাটিকা (অর্থাৎ Black Comedy)। এই ছোট নাটকদুটিতে এক ধরনের নিরাসক্ত রাগী বিদ্রূপ ফুটে বেরোয়, আবার নামকরণে ঠাট্টার মেজাজ পাওয়া যায়। আবার এই সময়েই তিনি লিখেছেন ‘অসাময়িক’ বা ‘অরণ্যে’–র মতো গল্প। তাঁর নাটকের বৈশিষ্ট্যগুলি ছোটগল্পের মধ্যেও প্রবলভাবে পাওয়া যায়। দু’টি গল্পেরই পটভূমি গ্রুপ থিয়েটারের জগত এবং কেমন করে সে জগতের ভেতরে বা বাইরে পতন ঘটছে। নাটকের মতো তাঁর গল্পও সেই একই অন্ধকার, একই নিষ্ঠুর বাস্তবতায় ভরে উঠেছে। মিলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে ‘উলুখাগড়া’ বা ‘ঘূর্ণি’ নাটকে চিত্রিত সমাজের একটা ক্ষুদ্র সংস্করণকেই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। ‘উলুখাগড়া’ ও ‘বিভাব’ নাটক থেকে জীবনকে নির্দয় ঠাট্টার চোখে দেখার যে প্রবণতা তাঁর ছিল, এই পর্বে তা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই সব রচনার পাশাপাশি ফিরিয়ে আনা হয়েছিল ‘ছেঁড়াতার’ নাটকটি, যেখানে অখণ্ডিত বাংলার কাহিনিকে দেখানো হয়েছিল রূপকথার মতো করে। তখন বাংলায় যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল সে সম্পর্কে নাটককার বলেছেন – “আমাদের সমাজে অন্যায় আরও বেশি উলঙ্গ হয়ে উঠছে, দুর্নীতির প্লাবনে আমাদের যেন আজ শ্বাসরোধ হয়ে আসছে।” এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল শম্ভু মিত্র আবার সমকালের প্রত্যক্ষতায় ফিরতে চলেছেন।
ছয়ের দশক থেকে গোটা পৃথিবীতেই ব্যক্তির সংকট প্রবল হয়ে উঠছিল। এই পর্বে শম্ভু মিত্রের নাটক নির্বাচন দেখলে দুটি কথা মনে হয়। প্রথমত চরিত্রায়ণের ক্ষেত্রে তাঁর প্রধান প্রবণতা কোনও বিরাট মাপের ব্যক্তিকে প্রকাশ করার দিকে। দ্বিতীয়ত, নাটক নির্বাচনে তিনি ক্রমশ গোষ্ঠী থেকে ব্যক্তির দিকে যেতে চেয়েছেন। তার কারণ বোঝাও কঠিন নয়। বর্তমান সমাজে আদ্যোপান্ত যুক্তিনির্ভর কোনও সৎ এবং সংবেদনশীল শিল্পীকে সমাজের প্রতিরোধে আহত হতেই হয়। ‘চার অধ্যায়ে’র অতীন, ‘দশচক্রে’র পূর্ণেন্দু গুহ, ‘রক্তকরবী’র রাজা, ‘পুতুল খেলা’র বুলু, ‘বিসর্জনে’র জয়সিংহ, ‘রাজা অয়দিপাউসে’র অয়দিপাউস বা ‘ছেঁড়া তারে’র রহিমের মধ্যে দিয়ে এক উতরোল পর্বে একক ব্যক্তির অসহায়তাকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই পটভূমিতেই নির্দেশক শম্ভু মিত্র তাঁর শেষ পর্বের প্রযোজনাগুলি করেছিলেন, জীবনের মধ্যপর্বে দেশি এবং বিদেশি ধ্রুপদী নাটক প্রযোজনায় তাঁর যে আসক্তি সেখান থেকে সরে এসে আবার সমকালকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
শম্ভু মিত্রের সমকালে প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল একেবারে অন্য রকম নাটক দিয়ে। তাঁর নির্দেশনায় প্রযোজিত ‘বাকি ইতিহাস’, ‘বর্বর বাঁশী’, ‘পাগলা ঘোড়া’ বা ‘চোপ, আদালত চলছে’ প্রভৃতি নাটকের চলন নিশ্চিতভাবেই প্রথম পর্বের নাটকগুলির থেকে আলাদা। ১৯৬০ পরবর্তী আধুনিক ইউরোপীয় নাটকভাবনার সঙ্গেই তার প্রধান যোগ। এগুলি দেশভাগ বা মন্বন্তরের মতো কোনও ঘটনা বা তার প্রতিক্রিয়াকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে লেখা নয়, বরং ইতিহাস ও সমকালকে আত্মীকরণ করে একটা নাট্যদর্শন তৈরি করতে চাওয়া হয়েছে। আসলে এই সব নাটকে জীবনকে দেখার একটা জটিল ভঙ্গী সচেতনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্ধকারের আধিপত্য খুব বেশি। সেই দর্শনের চাপ নাটকগুলির স্বাভাবিক গড়নকে যেন বাঁকিয়ে দিয়েছে। ‘বর্বর বাঁশী’ ছাড়া অন্য নাটকগুলিতে মনে হতে পারে যে এ হল কাহিনীর নিটোল ভাবকে ভেঙে চুরমার করে ঘটনা কমিয়ে তর্কের দিকে যেতে চাওয়ার ইচ্ছাকৃত প্রয়াস। সে তর্ক হতে পারে নিজের সঙ্গে, যেমন ‘পাগলা ঘোড়া’। সে তর্ক হতে পারে নিজের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা চরিত্রের সঙ্গে, যেমন ‘বাকি ইতিহাস’-এ সীতানাথ। আবার তা হতে পারে একেবারে আদালতের চেহারায়, যেমন ‘চোপ, আদালত চলছে’। বাদল সরকার, নীতিশ সেন বা বিজয় তেণ্ডুলকরের এই নাটকগুলির প্রযোজনায় তিনি গল্প বলার প্রচলিত ছককে ভেঙে দিতে চেয়েছেন। এটাও লক্ষ্য করার যে ‘বাকি ইতিহাস’, ‘পাগলা ঘোড়া’ বা ‘চোপ, আদালত চলছে’ নাটকগুলি এক বা একাধিক গল্প বানায়, আর সেই বানানো গল্প আর জীবনের বাস্তবতার মধ্যে সংঘাত অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে ওঠে।
অন্ধকারের প্রাধান্য থাকার জন্যই বোধহয় এই নাটকগুলি শম্ভু মিত্রকে এতটা টেনেছিল। নাট্য প্রযোজনায় দেখা গেছে কীভাবে গোটা মঞ্চ অন্ধকারে ভরে উঠেছে, কীভাবে নিজেরই তৈরি করা ধ্রুপদী নাটক প্রযোজনার আদর্শকে তিনি ভেঙে তছনছ করেছেন। যেমন ‘পাগলা ঘোড়া’-র গোটা প্রযোজনার বিন্যাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যৌনতার নানা চিহ্ন, ‘বর্বর বাঁশী’-তে ছিল তীক্ষ্ণ খোঁচা মারা দেওয়ালের মঞ্চসজ্জা। ১৯৭১ সালের মে মাসে শম্ভু মিত্রের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়েছিল শেষ নতুন নাটক ‘চোপ, আদালত চলছে’। ১৯৭৬ সালে কুমার রায় নির্দেশিত ‘গীতরত্ন’ নাটকের মহলায় তিনি নির্দেশকের দায়িত্ব অনেকটাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারণে একটিমাত্র রুদ্ধদ্বার অভিনয়ের পর নাটকটি বন্ধ হয়ে যায় (পরে বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠী ‘পিরীতি পরমনিধি’ নামে নাটকটি প্রযোজনা করেছিল)। এর পর ‘চাঁদ বণিকের পালা’-র মহলা শুরু হয়েছিল, কিন্তু ১৯৭৬ সালে তিনি ম্যাগসাইসাই সম্মান পাওয়ার প্রায় সমকালেই তা বন্ধ হয়ে যায়।
১৮ মে ১৯৭৭ শম্ভু মিত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলা নাটকের ইতিহাসে তাঁর নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। অভিনয়, প্রযোজনা ও নির্দেশনার পাশাপাশি তিনি মৌলিক নাটক লিখেছেন, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন। এ ছাড়া তিনি বিদেশি নাটকের অনুবাদ ও বঙ্গীকরণ করেছেন; গভীর মনন দিয়ে নাটককার রবীন্দ্রনাথকে চিনিয়েছেন। আবৃত্তিকার হিসাবেও তাঁর খ্যাতি সর্বজনবিদিত। কিন্তু তিনি কেন নিজেকে নাট্যজগত থেকে অকালে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। ‘চোপ, আদালত চলছে’ নাটকের সময় তাঁর বয়স ছিল ছাপ্পান্ন বছরের কিছু বেশি, যা কখনওই তাঁর মাপের একজন নাট্যব্যক্তিত্বের নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার বয়স হতে পারে না। তবে শম্ভু মিত্রের স্বপক্ষে বলা যায় যে সামাজিক ও শৈল্পিক দায়বদ্ধতা সত্বেও একজন ব্যক্তিগত মানুষের সব সময়েই গোষ্ঠী থেকে একাকীত্বে চলে যাওয়ার স্বাধীনতা আছে।
সহায়ক গ্রন্থাবলী ও পত্রপত্রিকা :
১. প্রশ্নের উত্তরে : শম্ভু মিত্র, বহুরূপী (পত্রিকা), জুন ১৯৭০।
২. এক পুরুষের দুস্তর ব্যবধান : বিনয় ঘোষ, বহুরূপী (পত্রিকা), অক্টোবর ১৯৬৯।
৩. The Story of the Calcutta Theatres (1753-1980) : Sushil Kumar Mukherjee, K. P. Bagchi & Co, 1982।
৪. Shadow Over Stage : Prabhat Kumar Bhattacharya, Barnali, 1989।
৫. প্রসঙ্গ নাট্য, সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার, ১৯৭১।
৬. বহুরূপী ১৯৪৮–১৯৮৮ : স্বপন মজুমদার, বহুরূপী, ১৯৮৮।
৭. নাট্যচর্চা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ : ড. সৌমিত্র বসু, পূর্বাশা, ২০০৬।
৮. বাংলার নট-নটী (দ্বিতীয় খণ্ড) : দেবনারায়ণ গুপ্ত, সাহিত্যলোক, ১৯৯০।
………০………