Home / কিশোর গল্প / শিনিমান্তা -মৌসুমী পাত্র

শিনিমান্তা -মৌসুমী পাত্র

অনেক অ-নে-ক দিন আগে এক দেশে একজন লোক ছিল। তার নাম ছিল শিনিমান্তা। শিনিমান্তা লোকটা ছিল বেজায় ভালোমানুষ। কিন্তু হলে হবে কী, সে ছিল বেজায় অলস। পরিশ্রম করে যে খাবার জোগাড় করবে সেটা তার ধাতে সইত না। তিনকূলে আর কেউ ছিল না বলে সেদিকেও বিশেষ চিন্তা ছিল না।

উত্তরাধিকার সূত্রে একটা কুঁড়েঘর পেয়েছিল বলে সেখানে তার মাথাগোঁজাটা কোনমতে চলত। আর গ্রামে ফলপাকুড়ের তো অভাব নেই। কোনদিন হয়তো ফলমূল খেত, কোনদিন হয়ত কোন সহৃদয় প্রতিবেশী কিছু খাবারদাবার দিয়ে যেত। যেদিন এসব কিছুই জুটত না, সেদিন কষ্ট করে একটু বেলায় উঠত। উঠে তার বাঁশিটা নিয়ে কোন হাটে বা মেলায় বা যেখানে লোকসমাগম আছে, সেখানে গিয়ে বাঁশি বাজাত। তবে তার বাঁশির হাত ছিল বড়ো মিঠা। বাঁশি যেন তার হাতে কথা বলত। বাঁশি বাজিয়ে যেটুকু পয়সাপাতি পেত, তাই দিয়ে খাবারদাবার কিনে খেত।

তা এভাবেই চলছিল। একদিন এখন সকাল থেকে শিনিমান্তার দানাপানি কিছু জোটেনি। শরীরটা ভালো ছিল না বলে বাঁশি নিয়েও সে বেরোতে পারেনি। দুপুরের পর থেকে তার এত অসম্ভব খিদে পেয়ে গেল যে খিদের জ্বালায় সে আর ঘরে টিকতেই পারল না। শেষে বাঁশি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। গ্রামের বাইরে একটা ছোটখাটো বন। বনের ভেতর দিয়ে একটা পথচলতি রাস্তা গেছে শহরের দিকে। সেই পথই ধরল শিনিমান্তা। বাঁশি বাজিয়ে চলতে চলতে একটু আনমনাই হয়ে পড়েছিল শিনিমান্তা। হঠাৎ তার চোখে পড়ল, ঠিক সামনেই একটা কমলালেবুর গাছ। থোকা থোকা কমলালেবু ধরে রয়েছে। এতোই খিদে পেয়েছিল শিনিমান্তার যে আর কিছু দেখার বা ভাবার মত অবসর ছিল না তার। হাত বাড়িয়ে একটা কমলালেবু ছিঁড়ে নিল সে, আর গবগব করে খেয়ে চোখের পলকেই সাবাড় করে দিল। কিন্তু লেবুটা খাওয়া শেষ হতে না হতেই অসম্ভব ঘুম পেয়ে গেল তার আর গাছের তলাতে বসেই ঘুমে ঢুলে পড়ল সে।

যখন ঘুম ভাঙল শিনিমান্তার, তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হব হব। ঘুম ভেঙ্গে ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগল তার। বাঁশিটা পড়েছিল তার পায়ের কাছেই। বাঁশিটা তুলে নিয়ে একটা সুর বাজাতে থাকল সে চোখবুজে।
বাঁশি বাজানো শেষ হতে চোখ খুলেই শিনিমান্তা অবাক। দ্যাখে, তার ঠিক সামনেই একটা টাকমাথা, গোঁফওলা, ভুঁড়িওলা বুড়ো বসে জুলজুল করে তাকেই দেখছে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে শিনিমান্তা শুধোল, “তুমি কে?”
সে বলল, “আমি কাপুগুরু। এই কমলালেবুর গাছে আমি ঘুমোচ্ছিলাম, জানিনা কত হাজার বছর ধরে। তোমার বাঁশির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে। এত সুন্দর বাঁশি বাজাও তুমি! বল, তুমি কী চাও?”
শিনিমান্তা রীতিমতো আশ্বর্য, “যা চাইব, তাই দেবে?”
“সব কি আর দিতে পারি? বাড়ি-গাড়ি এসব চেও না। দিতে পারব না। অন্য ছোটখাটো যা চাইবে দিতে পারব আশা করি।”
“যদি কিছু খাবারদাবার চাই, এনে দেবে?”
“কী খেতে চাও, বলো। দেখি চেষ্টা করে।”
একটু ভাবল শিনিমান্তা। কী খাওয়া যায়? কী খাওয়া যায়? তারপরে দম নিয়ে বলল, ‘‘যদি বলি রুটি আর পায়েস, তাহলে এনে দিতে পারবে?”
কাপুগুরু হাসল, “ও! শুধুমাত্র এইটুকু! আমি ভাবলাম, তুমি আবার কী না কী চেয়ে বসবে! এতো তো খুব সহজ ব্যাপার। এক্ষুণি এনে দিচ্ছি”, বলেই কাপুগুরু পলকে হাওয়া।
অল্প পরেই রুটি আর পায়েস এনে হাজির করল কাপুগুরু। সোনার থালায়, রূপোর বাটিতে। সাথে আবার একটা বাহারি কাজ করা চামচ। এক চামচ পায়েস খেয়েই মনে হল শিনিমান্তার, এতো ভালো পায়েস সে জীবনে খায়নি। যেমন স্বাদ, তেমনই সুঘ্রাণ। রুটিটাও অপূর্ব।
পেটপুরে খেল শিনিমান্তা। কাপুগুরু জলও এনেছে। হাতমুখ ধুয়ে নিল শিনিমান্তা। খুব তারিফ করল খাবারদাবারের। কাপুগুরু বলল, “প্রশংসা তো তোমার প্রাপ্য। এতো সুন্দর বাঁশি শোনালে। এবারে তুমি এসো। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”
কাপুগুরুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাঁশি বাজাতে বাজাতে বাড়ির পথ ধরল শিনিমান্তা।

এরপর থেকে খাবারের আর কোন অভাবই রইল না শিনিমান্তার। রোজ একবার করে সে সেই বনে কমলালেবুর গাছের কাছে যায়। একটা কমলালেবু পেড়ে খায়। খাওয়া শেষ হতে না হতেই ঘুমে ঢলে পড়ে। ঘুম থেকে উঠে বাঁশি বাজায়। বাঁশি বাজানো শেষ হবামাত্রই কাপুগুরু চলে আসে। আর তারপরই ভুরিভোজ। ইদানীং আবার খানিকটা করে খাবার বাঁচিয়ে রেখে শিনিমান্তা বাড়িতে নিয়ে যায়। ফলে তার আজকাল আর খাবারের কোন ভাবনা ভাবতেই হচ্ছে না। বেশ সুখেই তার দিন কাটছে। খালি খাও, দাও, আর বাঁশি বাজিয়ে ঘুরে বেড়াও।
তা এমনি চলতে চলতে একদিন দুপুরবেলা শিনিমান্তা সেই বনে গিয়ে দেখে, কমলালেবুর গাছে আর একটাও কমলালেবু নেই। মাথায় তো হাত তার! কী করে এখন? গাছতলায় বসে চুপচাপ ভাবল কিছুক্ষণ। খানিক ভেবেটেবে সে শেষমেষ ঘুমোনোই সাব্যস্ত করল। কিন্তু কমলালেবু খেয়ে ঘুমোনোটা তার এমনই অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে যে খালিপেটে তার আর ঘুমই এল না। তখন সে বাঁশি বাজানোই ঠিক করল। কিন্তু, খিদেয় গনগনে পেট নিয়ে কি আর ভালো বাঁশি বাজানো হয়? ফলে তার বাঁশিতে আজ সেভাবে সুরই খেলল না। ক্রমাগতঃ বেসুরো আওয়াজই বেরোতে থাকল শুধু। বাধ্য হয়ে সে জোরে জোরে ডাকতে থাকল, “কাপুগুরু! ও কাপুগুরু!”
কিন্তু তার বিস্তর ডাকাডাকিতেও আর কাপুগুরু সামনে এল না। সে বোধহয় আবার তার সেই হাজার বছরের ঘুমে তলিয়ে গেছে।
যখন শিনিমান্তা বুঝেই গেল যে কাপুগুরু কোনমতেই আসবে না, তখন সে সেই গাছতলায় বসে কাঁদতে শুরু করে দিল। কিন্তু কতক্ষণই বা আর খামোখা কাঁদা যায়? একসময় সে উঠে বাঁশিটা হাতে নিয়ে বনবাদাড় ভেঙ্গে হাঁটতে থাকল, হাঁটতেই থাকল যেদিকে দু’চোখ যায়।

কতক্ষণ হেঁটেছে, কতদূর হেঁটেছে শিনিমান্তা নিজেই জানে না। কত রাস্তাঘাট, কতো বনজঙ্গল, কতো গ্রাম পেরিয়ে গেল সে। হাঁটতে হাঁটতে তার দু’পায়ে টনটন করে ব্যথা করতে থাকল, মাথা ঝিমঝিম করতে থাকল। দেখতে দেখতে বেলা গড়িয়ে বিকেল গেল। আর সেই পড়ন্ত আলোতে তার চোখে পড়ল অনেক দূরে একটা ছোট টিলার ওপর একটা কুঁড়েঘর। সাতপাঁচ না ভেবে সে পায়ে চলা পথ ধরে টিলা বেয়ে উঠতে থাকল।

সেই টিলাটা ছিল একটা বুড়ির কুঁড়েঘর। তিনকূলে তার কেউ ছিল না। বাইরে খচমচ আওয়াজ শুনে সে বেরিয়ে এল। ভর সন্ধেবেলা অপরিচিত একজনকে দেখে তো সে অবাক।
শিনিমান্তার তো বুড়িকে দেখে প্রায় হাতে চাঁদ পাবার মতো অবস্থা। বাড়ির বাইরে একটা চ্যাটালো পাথর অনেকগুলো খাঁজকাটা পাথরের ওপর বসানো। ধপ করে তার ওপর বসে পড়ে শিনিমান্তা শুধোল, “ও বুড়িমা, তোমার কাছে একটু খাবার আর জল হবে?”
বুড়িমা হাসল, দেখা গেল, তার দুপাটি দাঁতের অনেকগুলো দাঁতই ভাঙা। “জল এনে দিচ্ছি, খাও। আর কিছু বুনোকুল আছে খেতে পারো। তবে এর বেশি খেতে চাইলে তো বাছা, তোমাকেও হাত লাগাতে হবে।”
এতোই খিদে পেয়ে গেছে শিনিমান্তার যে খাবার জন্য সে তখন সব কিছু করতে রাজি। টক করে ঘাড় কাত করল সে।
বুড়িমা একটু পরে জল আর বুনোকুল এনে দিল। আর সাথে একটু চাটনি। খিদের চোটে তাই গোগ্রাসে গিলল সে।
তাকিয়ে তাকিয়ে তার খাওয়া দেখছিল বুড়িমা। শেষ হতে বলল, “বাছা, বুঝতে পারছি তোমার খুব খিদে পেয়েছে। তবে এর বেশি খেতে চাইলে, ওই যা বললাম, তোমাকেও হাত লাগাতে হবে।”
ঝট করে দাঁড়িয়ে উঠে শিনিমান্তা বলল, “কী করতে হবে?”
বুড়ি বলল, “আপাততঃ কুঁড়েঘরের পেছন দিকে যাও। দেখবে একটা কাঠের গুঁড়ি পড়ে আছে। সেটাকে চ্যালা করতে হবে। চ্যালা করে নিয়ে এসো। তারপরে আরো বলছি। এই নাও কুড়ুল।”
কুড়ুল হাতে নিয়ে কুঁড়েঘরের পেছনদিকে গেল। দেখল, সেখানে সত্যিই একটা কাঠের গুঁড়ি পড়ে আছে। কুড়ুল নিয়ে চ্যালা করতে শুরু করে দিল সে। দেখা গেল, কাজটা যতোটা সহজ হবে ভেবেছিল, আদৌ ততটা নয়। খানিকক্ষণের মধ্যেই তার হাত ব্যথা করতে শুরু করে দিল, আঙ্গুলগুলো মনে হল, যন্ত্রণায় ফেটে যাবে। বহুকষ্টে বেশ খানিকটা কাঠ চ্যালা করতে পারল সে। অতোগুলো কাঠ বয়ে নিয়ে আসা আরো এক হ্যাপা। কাঠ বয়ে আনার পর বুড়ির হুকুম, “এবারে এই উনুনটা ধরিয়ে দাও দেখি।”
সে এক মান্ধাতার আমলের কাঠের উনুন। তাতে ফুঁ দিয়ে আগুন ধরাতে গিয়ে তার প্রায় প্রাণান্তকর অবস্থা। অনেক পরিশ্রমে সেটায় আগুন জ্বালতে পারল সে। উনুন ধরানোতেও তার কাজ শেষ শেষ হল না। বুড়ি ফরমান দিল, “এবারে ওই যে বালতিটা দেখছ, ওই দড়ি-বালতি নিয়ে নিচে যাও। যে পথ দিয়ে এসেছিলে, সেই পথ ধরেই নামবে। নেমেই ডানদিকে দেখবে একটা বড়ো ঝাঁকড়া গাছ। গাছটার পেছন দিকে গেলেই দেখতে পাবে একটু দূরে এক জায়গায় থোকা থোকা বাদামী ফুল ধরে আছে। ওই ফুলের কাছে গেলেই চোখে পড়বে একটা ঝোরা। ভারি সুন্দর টলটলে জল। সেই জল তিন বালতি ভরে আনবে। এক বালতি রান্নার কাজে লাগবে, বাকী অন্যান্য কাজে লাগবে। তাড়াতাড়ি যাও। সন্ধে পুরোপুরি নেমে গেলে আর পারবে না।”
অগত্যা শিনিমান্তা বালতি নিয়ে নিচে নামল। কিন্তু শরীর আর তার চলছে না। এতোদিন কাপুগুরুর এনে দেওয়া ভালোমন্দ খাবারদাবার খেয়ে পরিশ্রম করার যেটুকু অভ্যাস ছিল, তাও চলে গেছে। অন্যদিন হলে এতক্ষণ সে ভরপেট খেয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়ত।

ভাবতে ভাবতেই পায়ে এক ঠোকর খেল শিনিমান্তা। দেখল সে টিলার নিচে নেমে গেছে, আর একটা ঝাঁকড়া গাছে ধাক্কা খেয়েছে। গাছের পেছনে যেতেই বুড়িমার কথামতো কিছু দূরে থোকা থোকা বাদামী ফুল নজরে এল তার। ফুলগাছগুলোর কাছে গিয়ে দেখে, অল্প দূরেই একটা ঝোরা। সুন্দর টলটলে জল ঠিকই, কিন্তু তীব্র স্রোত।
বহুকষ্টে বালতিতে জল ভরল শিনিমান্তা। কিন্তু ওই ভারি বালতি টিলার ওপরে তুলতে তার দম প্রায় ছুটে গেল। তিন নম্বর বালতিটা ওপরে পৌঁছে শিনিমান্তা আর পারল না। সোজা মাটির ওপরেই লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল।
বুড়ি জিজ্ঞেস কল, “কী হল? শুয়ে পড়লে যে?”
শিনিমান্তা প্রায় ঝাঁঝিয়েই উঠল, “ আর পারা যায়? কখন থেকে কতো কাজ করলাম বলো দেখি। কাঠ চ্যালা করা, উনুন ধরানো, ভারি ভারি জল-ভর্তি বালতি বয়ে আনা, কম কথা নাকি?”
শুনে বুড়ি তার ভাঙা দাঁতে একচোট হাসল, “এই বলছ? ভেবে দ্যাখো, এসব কাজ তো তুমি আমার একার জন্য করো নি। নিজের জন্যও করেছ। পেটভর্তি খাবার পেটে যেতে গেলে তো এটুকু পরিশ্রম করতেই হয়। সারাজীবন কি কেউ কাউকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ায়? আর একটা জিনিস ভাবো। অন্যদিন তো তুমি থাকো না। এইসব কাঠ চ্যালা করা, উনুন ধরানো, জল আনা-এসব তো আমাকেই করতে হয়। আমি যদি আমার এই বুড়ো শরীরে এতো কাজ করি, তুমি তোমার জোয়ান দেহে পারবে না?”
শুনে শিনিমান্তা সত্যিই লজ্জা পেল। আগেই বলেছি, শিনিমান্তা অলস ছিল ঠিকই, কিন্তু সে ছিল ছিল ভারি সরল আর সাধাসিধা। অকপটেই স্বীকার করল সে, “ঠিকই কথা, বুড়িমা। আসলে এভাবে তো কখনো ভেবে দেখিনি।”

বুড়ি খুশি হল তার সরল স্বীকারোক্তিতে, “তাহলেই দ্যাখো। তুমি বরং একটু বিশ্রাম করে নাও, আমি রান্নার জোগাড়যন্ত্র করি, তুমি আমাকে সাহায্য করে দিও।”
রাতে মাটির থালায় খাবার বেড়ে দিয়েছে বুড়ি। কাঠপাতা জড়ো করে আগুন জ্বালিয়েছে। সেই আগুনের আলোয় মাটিতে বসে খাচ্ছে দু’জনে। খেতে খেতে শিনিমান্তা বলে উঠল, “দুর্দান্ত রান্না হয়েছে বুড়িমা। কাপুগুরুর রান্নার চাইতেও ভালো।”
বুড়ি অবাক হয়ে শুধোল, “কাপুগুরু? সে আবার কে?”
শিনিমান্তা তখন সব কথা খুলে বলল বুড়িমাকে। কিভাবে সে কমলালেবু খেলেই ঘুমিয়ে পড়ত, ঘুম থেকে উঠে বাঁশি বাজাত, আর বাঁশি বাজালেই কাপুগুরু হাজির হত, আর কত কত ভাল ভালো খাবার আনত।
চুপচাপ সব শুনল বুড়ি। তারপর মুখ খুলল, “দ্যাখো, যা হবার ভালোই হয়েছে। পরিশ্রম না করে করে তুমি আরো অলস হয়ে যাচ্ছিলে। এরকম চললে হয়তো বাঁশি বাজানোও ভুলে যেতে কয়েকদিন পরে। তা দ্যাখো, তিনকূলে তোমারো কেউ নেই, আমারো নেই। তুমি আমার এখানে পাকাপাকি ভাবে থেকে যেতে পারো। পেছনে আমার অনেক খেতিজমি আছে। আগে নিজেই চাষ করতাম, এখন আর পেরে উঠি না। মেহনত করলে সোনা ফলাতে পারবে। ”

থেকেই গেল শিনিমান্তা সেখানে। এখন সে অনেক উদ্যমী হয়েছে। সারাদিন চাষবাস করে, বুড়িকে ঘরের কাজকর্মেও সাহায্য করে। সপ্তাহে একদিন হাটে গিয়ে বিক্রিবাটা সেরে আসে আর প্রয়োজনের জিনিস কেনে। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর বাঁশি নিয়ে নিয়ে বসে। সে তন্ময় হয়ে বাজায়, বুড়ি মুগ্ধ হয়ে শোনে। আর একটা জিনিস সে বুঝে গেছে। নিজের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের বিনিময়ে খাবার যে তৃপ্তি, তা আর কোন কিছুতে নেই।

shinimanta

Leave a comment

Check Also

ভুতুম থুম- মৌসুমী পাত্র

পূর্ণিমার চাঁদটা ভেসে আছে বিরাট একটা গোল থালার মতো। একটা শিশুগাছের ডালের কয়েকটা পাতার ছায়া …

 ছেঁড়া রামধনু – মৌসুমী পাত্র

আমার মা বেজায় দুষ্টু হয়েছে আজকাল। একটা কথাও শুনতে চায় না। এই তো পরশুদিন, বললাম, …

chitrogupter-computer-mp

চিত্রগুপ্তের কম্পিউটার- মৌসুমী পাত্র

“যত্ত সব আদ্যিকালের জিনিস নিয়ে কাজকারবার! আর পারা যায় না বাপু!”, নিজের মনেই গজগজ করতে …

শিল্পী- গুঞ্জা

ফুল-পাখি কথা – মৌসুমী পাত্র

সে ছিল এক গভীর বন। আর সেই বনের ঠিক মধ্যিখানে খানিকটা ফাঁকা জায়গায় ছিল এক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *