পাঠশালার পোড়োগুলো বড্ডো ঝামেলা পাকাচ্ছে ক’দিন ধরেই। শিয়ালনী ক্লাস থেকে একটু উঠলেই চিৎকার, চেঁচামেচি, গণ্ডগোল, নাচানাচি। হয়তো শিয়ালনী ওদের একটু লিখতে দিয়ে নিজের ঝোপে এসে ওদের পরীক্ষার খাতাগুলো দেখা শুরু করেছে, এমন ওদিকে হইচই শুরু গেল যে কান পাতাই দায়!
কথাটা তাই ক’দিন ধরেই মাথায় ঘুরছিল শিয়ালনীর। এদের একটা মনিটর করে দিলে কেমন হয়? ভাবনাটা মাথার এককোণায় নিয়েই ক্লাসে ঢুকতে যাচ্ছিল শিয়ালনী। প্রবল চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে। বাঘুর গলা পাওয়া যাচ্ছে- “আমি আজ ক্লাসে বেঘো নৃত্য করব।” সঙ্গে সঙ্গেই কুমরুর সরু গলার চিৎকার, “খবরদার, তুই বেঘো নৃত্য করবি না বলে দিলাম। এক্ষুণি দিদিমণি ঢুকে পড়বেন।” বাঘুর ফের গলা পাওয়া গেল- “বলেছি যখন করব, করবোই।” তারপরই ধুপধাপ, ঝটাপট, দমাস দমাস করে বিস্তর শব্দ পাওয়া গেল।
শিয়ালনী তাড়াতাড়ি করে ঢুকেই দেখে, গোটা ক্লাস এলোমেলো, লণ্ডভণ্ড। রেগেমেগে বিশাল জোরে এক হাঁক পাড়ল শিয়ালনী- “অ্যাই, তোরা সব কী শুরু করেছিস রে? পড়তে এয়েছিস না কুস্তি করতে এয়েছিস?”
ভালকি শুকনো মুখে বলল, “দিদিমণি, এই বাঘুই তখন থেকে যত গোলমাল পাকাচ্ছে।”
শিয়ালনী বলল, “স্টপ! আমি কোন কথা শুনতে চাই না। একটাও কথা শুনতে চাই না। আজ ক্লাসে পড়াশুনা হবে পরে। আগে অন্য একটা জিনিস ঠিক হোক।”
হিনিমিনি বলল, “কী দিদিমণি?”
শিয়ালনী বলল, “তোদের আজ মনিটর ঠিক করবো।”
মনিটর? ওদের চোখমুখগুলো সব গোলগোল হয়ে গেল। মনিটর বলে কোন কিছু তো ওরা জানে না। শিয়ালনী চশমাটা একটা নরম দেখে পাতায় মুছে নিয়ে একগাল হাসল, “মনিটর কী তাই ভাবছিস তো? তোদের মধ্যে থেকেই একজন মনিটর হবে। সে তোদের সবার খেয়াল রাখবে। তোরা কেউ ক্লাসে কথা বলছিস কিনা, গণ্ডগোল করছিস কিনা এইসব। তোরা কেউ গোলমাল করলে সে বোর্ডে নাম লিখে রাখবে, আমি এসে দেখবো। মোট কথা, পুরো ক্লাস তার দায়িত্বে থাকবে। তোরা সকলে কিন্তু তার কথা শুনে চলবি।”
ভালকি বলল, “কিন্তু কে মনিটর হবে?”
শিয়ালনী বলল, “তোরাই আগে বল। তোরা কাকে দেখতে চাস।?”
এ কথায় হিনিমিনি লাফিয়ে উঠে বলল, “হাতুশিকে।”
ভালকি আর কুমরুও একবাক্যে সায় দিল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, হাতুশি।”
শিয়ালনী বলল, “আমিও তাই ভেবে রেখেছি। ও হলেই ভালো। ও ধীর স্থির। কী রে হাতুশি, মনিটর হবি তো?”
হাতুশি আর কী বলে? হাসি হাসি মুখে মাথা নাড়ল। সকলেই খুশি। খালি বাঘু বাদে। বাঘু ভেবেছিল, মনিটর হলে বেশ সবার ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারবে। শিয়ালনী এদিকে হাতুশিকে উপদেশ দিচ্ছে, “শোন, মনিটর হলে কিন্তু অনেক দায়িত্ব। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলতেও হবে, সবার খেয়ালও রাখতে হবে। আর ক্লাসে যাতে শান্তি থাকে, তোকেই দেখতে হবে। কেউ দুষ্টুমি করলে বোর্ডে নাম লিখে রাখবি। আমি এসে দেখবো। আর হ্যাঁ, বেশি কথা বলা কিন্তু চলবে না। মনে থাকবে?”
হাতুশি টকাত করে শুঁড় নাড়ল। মনিটরের কাজ শুরু হয়ে গেল।
তা হাতুশি মনিটরের কাজ চালাচ্ছিল ভালই। বাঘুও ততটা আর দুষ্টুমি করে না। হাতুশির একটু বড়সড় চেহারা, তাই বাঘু কিছুটা হলেও ভয় পায়।
বর্ষা নেমেছে বনে। এলোমেলো ঠাণ্ডা হাওয়া দোল দিয়ে যাচ্ছে গাছেদের পাতায় পাতায়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি বাতাসের গায়ে আলপনা এঁকে এঁকে নামছে মাটিতে। বড় বড় গাছেদের ঘন পাতায় ঢাকা বলে শিয়ালনীর পাঠশালায় সহজে বৃষ্টি পড়ে না। হালকা মিষ্টি সোঁদা গন্ধে ভরে আছে জায়গাটা। প্রার্থনার পরে ক্লাস শুরু হয়েছে। হাতুশি দু’দিন ধরে ক্লাসে আসছে না। হিনিমিনির তাই মন কিছুটা খারাপ। হাতুশি নেই বলে বাঘুও ক্লাসে বেশি ঝামেলা করে। এই তো, ভালকিকে কাল ঠেলে দিয়েছিল। কুমরুর আঁকার খাতায় হিজিবিজি কেটে দিয়েছে। আর আজ সকালে এসেই শুরু করেছে, “আমি আজ বাঘাকীর্তন গাইবো। সবাই মন দিয়ে শোন।”
হিনিমিনি বলেছে, “তোর ওই বিকট গলার গান শুনবো না।”
ভালকি সায় দিয়েছে, “একদম গাইবি না বাঘু, বলে দিলাম।”
কুমরু লেজটা জোরে জোরে দুলিয়েছে, “তোর যদি অতোই গাইবার ইচ্ছে, তো অন্য জায়গায় গিয়ে গা না যত খুশি। এখনই দিদিমণি আসবে । সবাইকেই বকবে।”
সেসব কথায় কান না দিয়ে বাঘু নিজের মনে গান ধরলো-
প্যাঁ প্যাঁ প্যাঁ প্যাঁ প্যাঁ
ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ—-
ওরে, কাগজি গাছে কমলালেবু
তেঁতুলপাতায় শাক-
মাদল ছাড়া বাজবে নাকি
আমার সাধের ঢাক!
ওরে, তেঁতুলপাতায় শাক…
কাঁচকলা আর বেগুন দিয়ে
দুব্বোঘাসের ঝোল-
এমনধারা রাঁধলে পরে
ফেঁসে যাবে ঢোল।
আর… ঢোলের সঙ্গে ঢাক…
আহাহা, ঢোলের সঙ্গে ঢাক-
ওরে, তেঁতুলপাতায় শাক…
বাঘুর গান কতক্ষণ চলত বলা যায় না, শিয়ালনী বগলে বই-খাতা নিয়ে ক্লাসে ঢুকল। ঢুকেই এক হুংকার- “বলি, কী ভেবেছিস সব? সক্কাল সক্কালই চিৎকার –চেঁচামেচি শুরু করেছিস?”
সকলেই চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। খালি বাঘু উঠে দাঁড়িয়ে অভিমানের সুরে বলল, “চিৎকার কোথায় দিদিমণি? আমি তো বাঘাকীর্তন গাইছিলাম।”
“অ।”, বলেই চমকে উঠেছে শিয়ালনী, “অ্যাঁ? কী? ক্কী বললি? বাঘাকীর্তন? তা বাপু, বাঘাকীর্তনই বটে। যা বিকট আওয়াজ জুড়েছিলি!”
চশমাটা নাকের ডগায় নামিয়ে সোজা তাকাল শিয়ালনী, “হাতুশি নেই বলেই যত ঝামেলা। মনিটর না থাকলেই তোরা ঝামেলা পাকাবি। হাতুশিটা ছিল, ক’দিন সব ঠিকঠাক চলছিল। হাতুশিটার জ্বর, কবে ক্লাসে আসে ঠিক নেই।”
হাতুশির জ্বর শুনে হিনিমিনির ভারি মন খারাপ হয়ে গেল। তার প্রিয় বন্ধু। কোনমতে বলল, “দিদিমণি, হাতুশির জ্বর?”
“হ্যাঁ রে। কাল ওর মায়ের সঙ্গে বিকেলে দেখা। ওর মা খরগোশ ডাক্তারদিদির ওষুধ আনতে যাচ্ছিলেন। বললেন যে, দিন সাতেক কমপক্ষে লাগবে।”
শুনে সবারই মনখারাপ। এমনকি, বাঘুরও। শিয়ালনী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, “যাই হোক, যে কদিন হাতুশি না আসতে পারে, সে ক’দিনের জন্য তো অন্য কাউকে তো মনিটর করতে হয়। হিনিমিনি, তুই-ই মনিটর হ।”
হিনিমিনি কিছু বলার আগেই বাঘু ফস করে বলে বসল, “দিদিমণি, আপনি কক্ষণো আমার কথা ভাবেন না। আপনি খালি অন্য সবাইকে মনিটর করেন। এবারে আমি মনিটর হবো-ও-ও।”
শিয়ালনী প্রায় আঁতকেই ওঠে আর কী, “কী বললি বাঘু? ক্কী, ক্কী বললি? তুই মনিটর হবি? তুউউউই?”, বলেই মিচিক মিচিক হাসি দিল শিয়ালনী, “তোকে নিয়েই ক্লাসে যত রাজ্যের ঝামেলা, বাঘু। তুই মনিটর হলে তো নিত্যিদিন তোর ওই বাঘাকীর্তন না বেঘোসংগীত কী বললি, তার আসর বসবে।”
বাঘুর গলায় অভিমানের সুর, “দিদিমণি, আপনি আমার অত সুন্দর বাঘাকীর্তন নিয়ে হাসছেন! বেঘোসংগীত তো আলাদা। গাইবো?”
এ কথায় শিয়ালনী ভয়ানক ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি বলল, “আবার বেঘোসংগীতও আছে? বাবা বাঘু, আর বেঘোসংগীত শুনিয়ে এখন কাজ নেই, পরে হবে’খন।”
বাঘু তবু পোঁ ছাড়ে না, “দিদিমণি, আপনি আমাকে গানবাজনা করতে দিলেন না, মনিটরও করতে চাইছেন না। এরকম করলে কী করে হয়? আর মনিটর হলে তো আমি ব্যস্ত থাকবো, সবার নাম বোর্ডে লিখতে হবে। নিজে আর ঝামেলা করার সময় পাবো কখন?”
যুক্তিটা মনে ধরলো শিয়ালনীর। বললও, “ঠিক আছে, তবে তুইই মনিটর হ। কিন্তু মনে রাখিস, বেশি কথা বলবি না মোটে। আর যদি কোনরকম বেচাল দেখি, তাহলেই কিন্তু আর মনিটর থাকবি না।”
এ কথায় বাঘু বেজায় খুশি হয়ে টকাত করে ঘাড় হেলিয়ে সায় দিল, “ঠিকাছে, দিদিমণি। তাই হবে।”
মনিটর হয়ে তো বাঘু আহ্লাদে আটখানা। পরের ক্লাসদুটোতে ফুর্তির চোটে কিচ্ছু পড়া বলতেই পারল না বাঘু। বাংলা ক্লাসে শিয়ালনী বাক্যরচনা দিয়েছিল- আকাশ। বাঘু লিখল, আকাশে একপাল হাতি ঘাস খাচ্ছে। মাটি শব্দের অর্থ বাঘু লিখেছে, মা যে টি মানে চা বানায়। মানে মায়ের বানানো চা।
তা এরকম লিখলে চটারই কথা। তা শিয়ালনীও রাগল। রাগে গরগর করছে শিয়ালনী, “বাঘু এসব কী হচ্ছে? হাতিরা আকাশে ঘাস খায়? আর মাটি মানে মায়ের বানানো চা? ওরে গাধা, এ টি সে টি নয়। ওই টি হচ্ছে ইংরেজি টি ই এ- টি। ইচ্ছে হচ্ছে, তোর গায়ে মাটিই লেপে দিতে। এরকম উল্টোপাল্টা যদি লিখেছিস বাঘু, তাহলে আর তোকে মনিটর রাখবো না।”
শুনেই আঁ আঁ করে চিৎকার জুড়ল বাঘু, “না, দিদিমণি, না। আমি আর ভুলভাল লিখবো না-আ-আ। আমি মনিটর হবোই হবো।”
শিয়ালনী সোজা তাকাল বাঘুর দিকে, “শোন বাঘু, এবারের মতো ছেড়ে দিলাম। ফের যদি ভুলভাল লিখেছিস না, তাহলে তোর মনিটর হওয়া বন্ধ করে দেবো।”
শুনেটুনে বাঘু তো বেজায় দমে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল। টিফিন অব্দি আর বিশেষ কিছু গোলমাল হোল না।
ঢং ঢং ঢং ঢং করে টিফিনের ঘন্টা পড়তেই কলাপাতায় মোড়া টিফিনের মোড়কটা খুলল হিনিমিনি। হিনিমিনির দিদা কাল কোন্দিকে গিয়েছিল, দারুণ পুরুষ্টু সব মর্তমান কলা এনেছে। যেমন রঙ তেমনি তার সোয়াদ। মা এক ডজন কলা দিয়েছে টিফিনে। সবে চোখ বন্ধ করে একটা মুখে পুরতে যাবে সে, অমনি পেছনে বাঘুর গলার আওয়াজ, “একা একা কলা খাচ্ছিস যে বড়? জানিস না, আমি মনিটর। দে আমাকে আদ্ধেক।”
হিনিমিনি রেগেই গেল, “শোন বাঘু, কলা দিতে হলে তোকে এমনিই দেব। মনিটর বলে নয়। আর অর্ধেক তোকে মোটেই দেব না। হাতুশি তোর মত কখনো চেয়ে খায়?”
বাঘু মিটিমিটি হাসে, “আরে, রাগছিস কেন? নাহয় চারটেই দে। তুইও আমার টিফিনের ভাগ পাবি।”
গজগজ করছে হিনিমিনি, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তুই কত দিবি আমার ঢের ঢের জানা আছে।”, বলতে বলতেই হিনিমিনি চারটে কলা বের করে বাঘুকে দিল, “শোন, এর বেশি আর চাইতে আসবি না।”
বাঘু কলাগুলো নিয়ে হিনিমিনিকে জিভ ভেংচে দৌড়ে পালাল।
ভালকি তার টিফিনের শালপাতার মোড়কটা খুলেই খুব খুশি! মা একটা নতুন চাক ভাঙা মধু দিয়েছে! ভালকি বেশ তরিবত করে খাওয়া শুরু করতে যাবে, অমনি পেছনে বাঘুর গর্জন, “হ্যাঁ রে, ক্লাস মনিটরকে না দিয়ে খাওয়া শুরু করছিস যে বড়!”
ভালকি থতমত খেল, “মনিটরকে দিয়ে খাবার নিয়ম আছে বুঝি? কই, হাতুশি তো…”
এক দাবড়ানি দিয়ে ভালকিকে থামিয়ে দিল বাঘু, “আরে, হাতুশির কথা টথা ছাড়! আমিই মনিটর। টিফিন খাবার সময় রোজ আমাকে দিয়ে খেতে হবে, বুঝলি?”
বলেই ভালকিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জোর করে মধুর চাকটা ভেঙে অর্ধেকটা নিয়ে নিল বাঘু। ভালকি রেগে গেছে ততক্ষণে, “বাঘু, তুই আমার অতটা মধু নিলি? আমি কিন্তু দিদিমণিকে বলে দেবো।”
“বলগে যা। আমার ভারি বয়েই গেল।”, বলেই বিচ্ছিরি রকমের খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হাসতে ছুট দিল বাঘু।
বাঘুর পরের লক্ষ্য কুমরু। সে বড়সড় দুটো মাছভাজা এনেছে টিফিনে। একটা মাছভাজা সবে শেষ করে এনেছে কুমরু, বাঘু এসে হাজির। এসেই চোটপাট, “কুমরু, ওই মাছভাজাটা আমাকে দিয়ে দে।”
কুমরু বেচারি মন দিয়ে খাচ্ছিল, হঠাত বাধা পেয়ে কিরকম ঘাবড়ে গেল। কোনমতে সামলে নিয়ে বলল, “না, দেব না। আমার এখনো মোটেই খাওয়া হয়নি।”
“অত খাওয়া ভালো নয়, কুমরু। দিন দিন তুই পেটুক হয়ে যাচ্ছিস। অত খাস না। শরীর খারাপ হবে।”
“না, আমার শরীর খারাপ হবে না। তুই চেয়ে চেয়ে খেয়ে বেড়াচ্ছিস, লজ্জা করে না তোর?”, কুমরুও ফুঁসছে রাগে।
“লজ্জা? লজ্জা আবার কিসের রে? ঘৃণা লজ্জা ভয়- তিন থাকতে নয়। আমি মনিটর, তোর তো নিজেরই আমাকে দেওয়া উচিত।”
“না দেবো না। যা পারিস করে নে।”
“ঠিক আছে।”, বলেই বাঘু খপাত করে গোটা মাছভাজাটা নিয়ে লাফাতে লাফাতে কোনদিকে যে চলে গেল, কুমরু টেরই পেল না।
টিফিনের পরে ক্লাস শুরু হতে না হতেই শোরগোল বাধল। সব্বার প্রথমে রাগ রাগ মুখ করে উঠে দাঁড়িয়েছে ভালকি, “দিদিমণি, বাঘু টিফিনের সময় জোর করে আমার অর্ধেক টিফিন খেয়ে নিয়েছে। মা এত ভালো একটা গোটা চাক মধু দিয়েছিল, দিদিমণি।”
ভালকির কথা শেষ হতে না হতেই হিনিমিনি হাঁউমাঁউ করে উঠল, “দিদিমণি, বাঘু আমার চারটে কলা খেয়ে নিয়েছে। বলল, ও মনিটর হয়েছে, তাই ওকে টিফিনের ভাগ দিতে হবে।”
অমনি টক করে ঘাড় নাড়ল কুমরু, “হ্যাঁ দিদিমণি, আমারো একটা গোটা মাছভাজা বাঘু কেড়ে নিয়েছে। আমার ভালো করে খাওয়াই হোল না। অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ…”, বলেই ফোঁপাতে শুরু করল কুমরু।
শিয়ালনীর চোখ গোলগোল, লাল টকটক করছে, “বাঘু! বাঘুউউউউ! বলি এসব কী? তোর কিছু বলার আছে?”
বাঘু তো সঙ্গে সঙ্গেই ফোঁস করে উঠেছে, “না দিদিমণি। আমি তো মোটেই কেড়ে নিইনি। হিনিমিনির কলা দেখে লোভ লাগল, তাই চাইলাম। তাও তো ও মোটে চারটে দিল, তাইই নিলাম। আমি তো ওকে আমার মুড়ির ভাগ দেবো বলেছিলাম।”
“সে তো তুই মুখে বললি, দিয়েছিলি কী?”, হিনিমিনি প্রায় তেড়েই আসে আর কী!
বাঘুর কোন হেলদোল নেই। সে একগাল হেসে একহাত জিভ কেটে বলল, “এই যা! ভুলেই গেছি। মশলা মুড়ি তো, দারুণ টেস্টি। বুঝলি হিনিমিনি, তুই খেলে বুঝতিস।”
“বাঘুউউউউ! তুই থামবি? টিফিনের সময় সকলের খাবার কেড়ে খেয়েছিস, আবার বড় বড় কথা! আমি আর তোকে মনিটর রাখবো না। কাল থেকে হিনিমিনি মনিটর।”
“না, দিদিমণি, না”, বাঘু প্রায় কেঁদেই ফেলে আর কী, “একদিন মোটে এট্টু টিপিন খেয়েছি, তাই বলে এত বড় শাস্তি দেবেন! ভুল তো জন্তু মাত্রেরই হয়!”
“ভুল তো জন্তু মাত্রেরই হয়! খুব কথা শিখেছিস? যা, তোর আর মনিটর হওয়া বন্ধ।”, রাগের চোটে প্রায় নাচছে শিয়ালনী।
শুনেই হাঁউমাঁউ জুড়ল বাঘু, “না দিদিমণি, আমি মনিটর থাকবো। আমার ভালো করে মনিটর হওয়াই হোল না। আর কারো খাবার জোর করে খাবো না। তবে কেউ যদি ভালোবেসে দেয় তো আলাদা।”
কী মনে করে শিয়ালনী বলে, “যা, এবারের মত ছেড়ে দিলাম। কিন্তু ফের যদি বেচাল দেখি, তাহলে কিন্তু… তোমার মনিটর হওয়া বেরোবে।”
পরের দিনের টিফিনের আগের পিরিয়ড। শিয়ালনী অঙ্ক করতে দিয়েছে সবাইকে। যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ। করছেও সবাই। বাঘুও চেষ্টা করছে, যেমন পারে। ঝিরিঝিরি ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে জঙ্গলের ইতিউতি। শিয়ালনীর চোখ ধীরে ধীরে বুজে এল, মাথা একপাশে হেলে পড়ল, তারপর ফুৎ ফুৎ করে নাক ডাকতে থাকল।
ভালকি রাবার আনতে ভুলে গেছে। পাশে বসে থাকা কুমরুকে বলল, “কুমরু তোর রাবারটা একবার দে না।”
কুমরু রাবারটা দিয়েছে কী দেয়নি, অমনি একটা কাঠপিঁপড়ে কোনদিক থেকে এসে কুমরুকে দিয়েছে কামড়ে। কুমরু তো লাফ দিয়েছে তিড়িং বিড়িং করে। ওদিকে হিনিমিনির লেজের চারপাশে একটা মশা অনেকক্ষণ ধরেই ঘুরঘুর করছে আর সুযোগ পেলেই টুকুস টুকুস করে কামড় বসাচ্ছে। হিনিমিনি তাই সমানে লেজ চুলকে যাচ্ছে, চুলকেই যাচ্ছে। তা এসব দেখে বাঘু কি আর স্থির থাকতে পারে? বাঘু অমনি চলল বোর্ডে নাম লিখতে।
একটু পরেই চোখ খুলেছে শিয়ালনী। চোখ খুলেই এক হুঙ্কার, “কী রে, কেউ গোলযোগ করিস নি তো?” বলতে বলতেই শিয়ালনীর চোখ গেছে বোর্ডের দিকে। “এই তো বাঘু, সব নামটাম লিখে রেখেছিস। গুড। গুড। নাহ্, আমি দেখতে পাচ্ছি তুই খুব ভালো মনিটর হবি।”, বলতে বলতেই বোর্ডের লেখা পড়া শুরু করেছে শিয়ালনী, “সবচেয়ে বেশি কথা বলেছে- ভালকি। অ্যাঁ ভালকি? তুই বেশি কথা বলেছিস? দাঁড়া, তোর হচ্ছে। আচ্ছা, তারপর… সবচেয়ে বেশি লাফিয়েছে- কুমরু। কুমরুউউ, তোর লাফালাফি বের করছি। বেশ, তারপর… তারপর… সবথেকে বেশি লেজ চুলকেছে- হিনিমিনি। অ্যাঁ, ক্লাসের মধ্যে অত লেজ চুলকোনোর কী আছে? অ্যাঁ? অ্যাঁ? তারপরে… তারপরে…সবথেকে বেশি ঘুমিয়েছে- শিয়ালনী দিদিমণি। অ্যাঁ? অ্যাঁ? বলি, এটা কী লিখেছিস বাঘু?”
রাগের চোটে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে শিয়ালনী, “বাঘু, খুব বেশি বেড়ে গিয়েছিস তুই। তোকে মনিটর করেছি বলে যা খুশি তাই লিখবি? আমার নামে অব্দি লিখলি? আমি ঘুমিয়েছি?”
বাঘু বেজায় অবাক হয়ে বলল, “তবে যে দিদিমণি, আপনার ফুৎ ফুৎ করে নাক ডাকছিল!”
“ওটা তো সর্দি হয়ে আমার নাক বন্ধ বলে। আমি তো চোখ বন্ধ করে তোদের পরের ক্লাসের পড়া ভাবছিলাম। তাই বলে আমার নামে তুই লিখবি? যা, আজ থেকে তুই আর মনিটর নেই।”
বাঘু বেচারির তো চোখমুখ কাঁদোকাঁদো, “দিদিমণি, এবারটির মত মাপ করে দিন। আর আপনার নামে কোনদিন লিখবো না। ওটা লিখতে লিখতে চক মিসটেক হয়ে গেছে।”
“চক মিসটেক? মজা হচ্ছে বাঘু? আমার সঙ্গে ইয়ার্কি? আমার সঙ্গে চালাকি? তুই আর মনিটর নেই বাঘু, কোনমতে নেই।”
বাঘু এবারে কেঁদেই ফেলে আর কী, “আর কোনদিন হবে না, দিদিমণি। আমাকে আর একটা সুযোগ দিন। লাস চান্স। আর চাইবো না।”
“লাস চান্স নয়, ওটা লাস্ট চান্স।”, শিয়ালনী খানিকটা নরম হয়েছে, “ঠিক আছে। কিন্তু মনে থাকে যেন। এটাই লাস্ট চান্স।”
“তাই হবে, দিদিমণি। আর চাইবো না। ওই লাশ না লাস্ট চান্স কী যেন বললেন, ওটাই হবে।”
টিফিনের সময় বাঘু আর কারুর কাছে আজ টিফিন চাইল না। নিজে যেটুকু টিফিন এনেছিল, একা একা শেষ করল। তারপর যেই দেখল, বাকি সবার খাওয়া হয়ে গেছে, অমনি গুটি গুটি পায়ে গিয়ে হিনিমিনি, ভালকি, কুমরুকে ইশারায় ডাকল। মনিটর ডাকছে বলে কথা, ছুটে ছুটে এল সবাই। বাঘু বলল, “শোন, আমি না একটা মজার খেলা ভেবেছি।”
খেলার কথায় সকলেই বেজায় খুশি। হিনিমিনি জিজ্ঞেস করল, “বল্ বাঘু, কী খেলা?”
বাঘু মিটিমিটি হাসল, “শোন, আজ আমরা সবাই এখান থেকে দৌড় শুরু করব। দেখবো যে, জঙ্গলের মধ্যে কে কতদূর যেতে পারে? যে যত বেশিদূর যেতে পারবে, সে জিতবে।”
এ কথায় ওরা খুব খুশি। ভালকি তো থাবাতালি দিয়ে বলেই উঠল, “দারুণ ব্যাপার। দারুণ আইডিয়া রে বাঘু! এই না হলে আমাদের মনিটর!”
ঠিক হোল, বাঘু ‘রেডি, স্টেডি গো’ বললেই সবাই দৌড়তে শুরু করবে। হিনিমিনি বলল, “আমি তো ভালো দৌড়তে পারি না।”
বাঘু ভারি উদারতা দেখিয়ে বলল, “ঠিক আছে, তুই নাহয় গাছে গাছে লাফিয়ে লাফিয়েই যাবি। মোট কথা, কে কতদূর যেতে পারে।”
যাইহোক, একটু পরেই বাঘু জোরে জোরে বলে উঠল, ‘রেডি স্টেডি গো’ আর অমনি সঙ্গে সঙ্গে যে যেমন পারে দৌড়তে শুরু করে দিল। বাঘু কিন্তু বেশিদূর গেল না। কিছুদূর গিয়েই দৌড়ে ফিরে এল। এসে চুপচাপ ভালোবাঘের মত ক্লাসে বসে রইল। এদিকে শিয়ালনী তো ততক্ষণে ঢং ঢং করে টিফিন শেষের ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে। বাঘু সোনামুখ করে বইখাতা ওল্টাতে থাকল, যেন পড়াশুনোয় তার কতোই না মনোযোগ।
একটু পরেই শিয়ালনী ঢুকেছে। একা বাঘুকে দেখে বেজায় অবাক, “কী ব্যাপার রে, বাঘু? আর সব গেল কোথায়?”
এ কথায় বাঘু ভারি দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলল, “কী যে বলি দিদিমণি, ওরা সব দেখি জঙ্গলের এধার ওধার দৌড়তে শুরু করে দিল। আমি কত করে বললাম, “ওরে, এখন আর অত ছুটিসনে। এখুনি ক্লাস শেষের ঘন্টা পড়ে যাবে। দিদিমণি তোদের কত ভালোবাসেন। দিদিমণি তোদের খোঁজ করবেন। তখন আমি দিদিমণিকে কী বলবো? তা ওরা আমার সে কথা কানে নিলে তো?”
শুনে তো শিয়ালনী রেগে আগুন, “অ্যাঁ? বলিস কী রে বাঘু? এতো বদমাশ হয়েছে ওরা সব? ঠিক আছে, ওরা সব ফিরুক। তারপর ওদের মজা দেখাচ্ছি। তুই ততক্ষণ ভালো করে মন দিয়ে পড়াশুনো কর তো, বাঘু। নাঃ, তোকে মনিটর করে সত্যিই একটা কাজের কাজ করেছি।”
বাঘু তো শিয়ালনীর কাছে মন দিয়ে পড়া শুরু করল। ওদিকে হিনিমিনি, ভালকি আর কুমরু যে যেমন পারে জংগলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। সবাই আলাদা আলাদা হয়ে গেছে। হিনিমিনি গাছপালায় লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছিল। হঠাৎ করে তার মনে হোল, তাই তো, ক্লাস শুরুর ঘন্টা বেজে যাবে। মনে হতেই হিনিমিনি আর এগোল না। পিছন ফিরে পাঠশালার দিকে আবার লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে থাকল।
ভালকি ওদিকে বনের মধ্যে অনেকদূর যাবার পর নদীর ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা টের পেল। তেষ্টাও খুব পেয়ে গিয়েছিল ভালকির। ভাবল, নদীর জল একটু খাই, তারপর কোন্দিকে যাবো ভাবব। জল খেতে গিয়ে ভালকি দেখে, সামনেই একটা কাঠ নদীর জলে ভাসছে। কাঠটাকে সরিয়ে দিতে গিয়ে ভালকি শুনল, কাঠটা হিহি করে হাসছে। কাঠ আবার কখনো হাসে নাকি? ভালো করে চোখ কচলে ভালকি দেখে, ও বাবা! কাঠ কোথায়? এ যে কুমরু!
কুমরু বলে, ভালকি, “এতক্ষণ ধরে দৌড়ে দৌড়ে গা খুব গরম হয়ে গিয়েছিল। তাই ভাবলাম, নদীর জলে একটু গা ঠাণ্ডা করি।”
ভালকি পেটপুরে জল খেল। শরীর-মন শীতল হতেই ভালকির মাথায় একটা ভাবনা চিড়িক করে উঠল, “হ্যাঁ রে, কুমরু, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে না তো?”
শুনে কুমরুও তড়াক করে লাফিয়ে উঠল, “তাই তো রে। ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তো রে। শিগগীর চল, দৌড়োই।” অমনি দুজনে ঝোপঝাড়, বনজঙ্গল, লতাপাতার ভেতর দিয়ে ছুট, ছুট, ছুট।
শিয়ালনীর পাঠশালায় ততক্ষণে হাঁফাতে হাঁফাতে ঢুকেছে হিনিমিনি। হিনিমিনিকে দেখেই গমগমে গলায় শিয়ালনী ডেকেছে, “হিনিমিনি, ক্লাসের সময় বনেবাদাড়ে কোথায় কোথায় ঘোরা হচ্ছিল, শুনি?”
হিনিমিনি কিছু একটা বলতে গেল, কিন্তু শিয়ালনী থামিয়ে দিয়ে বলল, “তোর কোন কথা আমি শুনতে চাই না। ক্লাসের সময় ফাঁকি দিয়ে ঘুরে বেড়াবি, আর ফিরে এসে আমায় এটা ওটা বলে ভোলাবি? উটি হচ্ছে না। নিজের লেজ ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি বরং বাঘুকে পড়াই।”
বেচারা হিনিমিনি আর কী করে? লেজ ধরে দাঁড়িয়ে রইল। লেজ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই বাঘুর দিকে চোখ গেল হিনিমিনির। বাঘু আড়চোখে একবার করে চেয়ে ফিকফিক করে হাসছে আর খাতায় অঙ্ক কষছে। ফিকফিক করে হেসে যাচ্ছে তো হেসেই যাচ্ছে। ব্যাপারটা আর বুঝতে বাকি রইল না হিনিমিনির। পুরোটাই বাঘুর চালাকি। মিছিমিছি ওদের বনের মধ্যে দূরে পাঠিয়ে দিয়ে দিদিমণির কাছে বকুনি খাওয়ালো।
ভালকি আর কুমরু যখন এসে পৌঁছোল, দুজনেই ঘেমে নেয়ে একাকার। শিয়ালনী রাগে গরগর করছে, “যত ফাঁকিবাজ ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার কাজকারবার হয়েছে! খালি ফাঁকি! খেলা পেলে তোমাদের আর কিছু মনে থাকে না, না? বলি, বাবামায়েরা কিসের জন্য পাঠশালায় পাঠাচ্ছে, অ্যাঁ?”
ভালকি মাথা নিচু করে বলল, “দিদিমণি, ভুল হয়ে গেছে।”
কুমরু সামনের থাবাদুটো জোড় করল, “আর হবে না, দিদিমণি।”
শিয়ালনীর রাগ তবু যায় না, “আর হবে না? ভুল হয়ে গেছে? অ্যাঁ? এখন এসব ভালো ভালো কথা মনে হচ্ছে, না? আর বাঘু যখন পইপই করে তোদের যেতে বারণ করেছিল, তখন এসব ভালো ভালো কথা মনে হয়নি, না?”
এ কথায় তো সবাই অবাক! হিনিমিনি লেজ ছেড়ে দিয়ে বলে উঠল, “দিদিমণি, বাঘুই তো বলল, কে কতদূর বনের মধ্যে দৌড়তে পারিস দেখি।”
ভালকি সায় দিল, “হ্যাঁ, দিদিমণি। আমাদের টিফিন খাওয়া হলে ‘পর বাঘুই তো সবাইকে ডাকল। তারপরে বলল, বনের মধ্যে কে কতদূর যেতে পারে দেখা হবে।”
কুমরু ঘাড় নাড়ল, “তারপরে নিজেই রেডি স্টেডি গো বলে ছুটতে শুরু করল। একটু পরে আর ওকে দেখতে পাইনি।”
শিয়ালনী তো বুঝল যা বোঝার। বাতাস কাঁপানো এক আওয়াজ ছাড়ল, “বাঘু! বাঘুউউউউ!”
বাঘু বেচারি মুখ কাঁদোকাঁদো করে উঠে দাঁড়াল। শিয়ালনী চোখ লাল টকটক করছে, “বাঘুউউ! এরা যা বলছে, সেটা সত্যি?”
বাঘু একবার সামনের দু থাবায় ভর দেয়, একবার পিছনের দুই থাবায়। সেই অবস্থাতেই কাঁউমাঁউ করে বলল, “ইয়ে… মানে… হ্যাঁ দিদিমণি… মানে না, দিদিমণি… মানে, ইয়ে… মানে ছুটতে বলেছিলাম, মানে ঠিক বলিওনি… মানে ওই আর কি…মানে ইয়ে ওই মানে একটা খেলা… মানে একটু মজা হোল আর কী! … মানে বেশ একটু মজা হোল, না দিদিমণি? হিহি হিহি!”
শিয়ালনীর লেজ বনবন করে ঘুরছে, “ও, খেলা হচ্ছিল, না বাঘু? খুব মজা লেগেছে, না? হতভাগা, পুরো ক্লাসটা তুই পণ্ড করলি! অ্যাঁ? ইয়ার্কি হচ্ছে? দাঁড়াও। আর একটু মজা তো বাকি আছে, বাঘু বাছাধন!”, বলেই শিয়ালনী হিনিমিনিকে ডাকল, “হিনিমিনি, এদিকে আয়।”
হিনিমিনি গুটিগুটি পায়ে গেল দিদিমণির কাছে। শিয়ালনী হিনিমিনির মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, “হিনিমিনি, তুই মিছিমিছি এতক্ষণ শাস্তি পেলি রে। তোর মতো ভালো মেয়েকেও আমি ভুল বুঝলাম। খুব খারাপ লাগছে রে। যাইহোক, কাল থেকে তুই-ই মনিটর হাতুশি না ফেরা অব্দি। এদের ভালো করে খেয়াল রাখবি। বিশেষ করে বাঘুর। আর বাঘু বাবাজীবন, তোমার মনিটরি আজ থেকে খতম। ব্যস, এটাই ফাইনাল।”
শিয়ালনীর কথা ফুরোতে না ফুরোতেই পিছনের দুই থাবায় ভর দিয়ে সামনের থাবাদুটো জড়ো করে জোর কান্না জুড়ল বাঘু, “আঁই আঁই আঁই আঁই…আমি আর মনিটর নাই… আঁই আঁই আঁই আঁই… ওরে, তোরা মজাটাও বুঝলি নাই… আঁই আঁই আঁই আঁই… আমি এখন কী করবো… আঁই আঁই আঁই আঁই… কারুর টিফিন আর পাবো নাই… আঁই আঁই আঁই আঁই… বোর্ডে এবার খালি আমার নাম লিখবে… আঁই আঁই আঁই আঁই… ওরে, এ কী সর্বনাশ হল রে ভাই… আঁই আঁই আঁই আঁই… আঁই আঁই আঁই আঁই)
(অংকনঃ- রিমিল জানা)
………০………
বাঘু সিরিজের অন্যান্য গল্পগুলি পড়তে ক্লিক করুনঃ-